ভূমিকা :
জেহাদ ইসলামের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়। কুরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য সম্ভারে এর বিস্তারিত উল্লেখ পাওয়া যায়। মহানবী (স) সাহাবী মুয়ায ইবনে জাবাল (রা)-এর এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মূল সূত্র নামায আর সর্বোচ্চ চূড়া জেহাদ'। বস্তুত জেহাদ ব্যতীত ইসলামের পূর্ণ প্রকাশ ও প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে জেহাদ মুসলমানদের ওপর অপরিহার্য করা হয়েছে।
জেহাদের সংজ্ঞা :
সাধারণত জেহাদ অর্থে যুদ্ধ বিগ্রহ বোঝালেও এর অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। জেহাদ শব্দের আভিধানিক অর্থ কোনো উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম, সর্বশক্তি নিয়োগপূর্বক কঠোর সাধনা করা। পারিভাষিক অর্থে, আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী ও প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সর্বপ্রকার প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে জীবন, সম্পদ, বুদ্ধি—জ্ঞান, শক্তি-সামর্থ্য উৎসর্গ করে সর্বাত্মক সংগ্রাম করাকে জেহাদ বলে।
আরও পড়ুন : রচনা : ইবাদত অথবা ইবাদতের তাৎপর্য
জেহাদের প্রয়োজনীয়তা :
জেহাদ আল্লাহর দ্বীন সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে একটি উত্তম ইবাদত। খোদাদ্রোহী নাস্তিক্যবাদী শক্তি ইসলামের ঘোর বিরোধী চিরশত্রু। তারা সবসময়ই ইসলামের ক্ষতি সাধন করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। তারা শান্তিকামী মুসলমানদের জীবন ও সম্পদের অনিষ্ট সাধন করতে সদা তৎপর। এমতাবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে তাছাড়া কোথাও ইসলাম অবহেলিত ও বিপন্ন হলে তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য জেহাদ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। পবিত্র কালামে ইসলামের জন্য জেহাদ ফরয ঘোষণা করা হয়েছে।
জেহাদের গুরুত্ব :
প্রয়োজনীয়তার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে জাতীয় ও সামাজিক জীবনে এর গুরুত্ব এবং সমাজ ব্যবস্থাকে সুস্থ ও বিকারমুক্ত রাখার জন্য এর অপরিহার্যতা কতখানি, তা সহজেই বোঝা যায়। কুরআন হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য সম্ভারে এর ব্যাপক প্রয়োজনীয়তার কথা অত্যন্ত গুরুত্ব এবং যৌক্তিকতার সাথে বর্ণনা করা হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে জেহাদের গুরুত্ব অপরিসীম।
জেহাদের মর্যাদা :
ইসলামে জেহাদ ও জেহাদকারীদের মর্যাদা সর্বোচ্চ। কুরআন হাদীসে এ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা যথেষ্ট গুরুত্বের সহিত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন, “যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহর পথে জীবন ও সম্পদ দিয়ে সংগ্রাম করেছে, তাদের জন্য আল্লাহর নিকট উঁচু মর্যাদা রয়েছে এবং তারাই সাফল্য লাভ করেছে।” পবিত্র কালামে আরো বলা হয়েছে, “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত।” বিশ্বনবী (স) বলেছেন, 'তলোয়ারের ছায়ার নীচেই বেহেশত'।
আরও পড়ুন : রচনা : কুরবানি/কুরবানির শিক্ষা /জাতি গঠনে কুরবানির ভূমিকা
জেহাদ এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠা :
ইসলাম ধর্ম সংরক্ষণ, প্রচার এবং প্রতিষ্ঠার জন্য যুগে যুগে মুসলমানেরা জীবন দিয়েছেন। শহীদ হয়েছেন লাখো লাখো মুসলমান। ইসলাম সংরক্ষণ ও প্রতিষ্ঠার এক বিশেষ মাধ্যম হলো জেহাদ ৷
জেহাদ ও মুমিনের জীবন :
জেহাদের সাথে মুমিনের জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মুমিনের জীবন ইসলামের জন্য সদা নিবেদিত।
উপসংহার :
ইসলাম শান্তিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। তবে ইসলামী বিধান পালন ও প্রতিষ্ঠায় যদি কেউ বাধার সৃষ্টি করে, তখন জেহাদ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় জেহাদের গুরুত্ব অপরিসীম ।