রচনা : কীর্তিময় মিসর / মিসরীয় সভ্যতা

ভূমিকা :

মানব সভ্যতার ইতিহাসে মিসর এক কীর্তির নাম, দেশের নাম। এটি আফ্রিকা মহাদেশে অবস্থিত। এখানে জন্মগ্রহণ করেন শাসক ফেরাউন, ইসলামের নবী ও রাসূল হযরত মুসা (আ)। মিসরে রয়েছে নীল নদ। যাকে এককালে ‘মিসরের দুঃখ’ বলা হতো। মিসরকে বলা হয় মানব সভ্যতার আদি লীলাভূমি ।

মিসরীয় সভ্যতার বিকাশ : 

সিন্ধু সভ্যতা ও ইউফ্রেতিস সভ্যতা ছাড়া মিসরীয় সভ্যতার মতো প্রাচীন সভ্যতা আর একটিও ইতিহাসে কুত্রাপি পরিদৃষ্ট হয় না, খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০ সাল হতে মিসরীয় সভ্যতার ইতিহাস পাওয়া যায়। প্রাচীন মিসরীয়রা যে লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করে, তার নাম হায়ারোগ্লিফিকস। ছবি এঁকে এঁকে তারা লেখত। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর মিসরীয়রা রোমক হরফ গ্রহণ করে। আরবরা মিসর জয় করার পর মিসরীয়রা আরবি হরফে লেখা শুরু করে। 

আধুনিক যুগের সূচনা হবার পরেও বহুকাল পর্যন্ত হায়ারোগ্লিফিকস কেউ পড়তে পারত না। তাই জটিল, অবোধ্য, হেঁয়ালি গোছের কোনো কিছু হলেই লোকে বলত ওটা হায়ারোগ্লিফিকস । অবশেষে কিন্তু এ রহস্যের দুয়ার উন্মেচিত হয়েছে। চ্যাম পোলিওন নামক এক ফরাসি পণ্ডিত এ লিখন পদ্ধতি পড়ার পথ অবিষ্কার করেন৷ এ সময় হতে হায়ারোগ্লিফিকসের সাহায্যে মিসরের প্রাচীন যুগের অনেক তথ্য উদঘটিত ও অজানা সমস্যার সমাধান হয়েছে।

আরও পড়ুন : রচনা : মানব সভ্যতার বিকাশ ও বিজ্ঞান

ফেরাউন বংশের পরিচয় : 

আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছর আগে মিসরে ফেরাউন বংশের বাদশাহরা শাসনদণ্ড পরিচালনা করতেন। মিসরের পিরামিডগুলো তাদেরই সমাধি মন্দির। ছোট-বড় প্রায় আশিটি পিরামিড এখনো বর্তমান। পিরামিড যুগের মিসরীয়রা ছিল অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ। তারা পরকালে বিশ্বাস করতো; ভাবত মৃত্যুর পর আত্মা মানুষ কিংবা যে কোনো প্রাণীর বেশ ধারণ করে বেঁচে থাকবে। কিন্তু আত্মকে বেঁচে থাকতে হলে দুটি শর্ত পালন করতে হবে। প্রথমত শরীরকে একদম ধ্বংস হতে দেয়া যাবে না। 

দ্বিতীয়ত মৃত ব্যক্তিকে তার নাম ভুলে যেতে দেয়া যাবে না। এজন্য মিসরীয়রা মৃত্যু দেহকে মমিতে পরিণত করে খুব নিরাপদ স্থানে রেখে দিত, আর সে সমাধি গোত্রের বহু স্থানে মৃতের নাম লিখে রাখত। পাহাড়ের মতো এ পিরামিডগুলো সেকালের রাজা বাদশাহদের সমাধিস্থল। মৃত্যুর পর বাদশাহ বেগমের যাতে কোনো প্রকার কষ্ট না হয়, সেজন্য তাঁদের মমির সঙ্গে কবরে দেয়া হতো বহুমূল্য হীরা-জারত। কেউ কেউ মনে করেন, বাদশাহ বেগমের খেদমতের জন্য তাঁদের গোলাম বাদীদেরকেও হত্যা করে মনিবের সঙ্গে কবরে দেয়া হতো। যাতে তারা বাদশাহ বেগমদের সেবাযত্ন করতে পারে।

প্রাচীন মিসর : 

প্রাচীন মিসরীয়রা বিশেষ কোনো বৈজ্ঞানিক উপায়ে আত্মীয়দের দেহ রক্ষা করতো, পচতে দিত না। মানুষের এ শুকনো দেহকে ‘মমি’ বলা হয়। ঠিক কি পদ্ধতিতে মমি তৈরি করা হতো তা আজো কারো জানা নেই। পিরামিডগুলো আগাগোড়া বড় বড় পাথরের তৈরি। কি কৌশলে এ বিরাট পাথরখণ্ড একটি দুটি নয়, হাজারে হাজারে হয়ত বা লাখে লাখে মিসরীয় কারিগরেরা এত উপরে তুলেছিল, তা আজও জগতের বিস্ময়।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন - প্রবন্ধ রচনা 

কেবল বিপুল আয়তনের দিক দিয়ে নয়, আর্টের দিক দিয়েও পিরামিড জগতের অন্যতম বিস্ময় হয়ে আছে। সে আমলে এত অদ্ভুত সুন্দর স্থাপত্য-কৌশলের নিদর্শন দুনিয়ার আর কোথাও নেই।

স্ফিংকস মরু ও মৃতের দেবতা। এর বয়স পিরামিডের চেয়েও বেশি। এ দেবতার কল্যাণে কবরস্থান রক্ষা পাবে এ বিশ্বাসে এর কাছে এক বিরাট পিরামিড তৈরি হয়। স্ফিংকস মানুষের মাথাওয়ালা এক বিপুল আকারের সিংহমূর্তি। আস্ত পাথর কেটে এ বিরাট মূর্তির দেহ ও মাথা তৈরি করা হয়েছে। পাঞ্জা দুটিও বিরাট, তা আলাদা পাথরে নির্মিত

মিসরে মুসলিম স্থাপত্য : 

কায়রোর মতো মুসলিম শিল্পকলার এত বড় কেন্দ্র দুনিয়ার আর কোথাও নেই। যে মুসলিম বংশ যখন মিসরের শাসনদণ্ড অধিকার করেছেন, তাঁরাই তখন তাঁদের রাজধানী সুরম্য প্রাসাদ ও সুদৃশ্য মসজিদ দিয়ে ভরে তুলেছেন। মিসরের ইসলামের কীর্তিচিহ্ন আজও যা আছে, তা বিশ্বের বিস্ময় । আমাদের মুসলিম বিশ্বে যে সকল স্থাপত্য-নিদর্শন রয়েছে, তার মূল মিসরের মুসলিম স্থাপত্য।

উপসংহার : 

একথা নিঃসন্দেহ সত্য, মিসর বিশ্বকে দিয়েছে সত্যতা । মসজিদের যে সকল আধুনিক স্থাপত্য আমরা বিশ্বজুড়ে দেখতে পাই, তার সকল কিছুর মূলে রয়েছে মিসরীয় সভ্যতা।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad