প্রবন্ধ রচনা : বাংলাদেশের গৃহপালিত পশু

সূচনা : 

সমগ্র পৃথিবীর অনেক কিছুই এখন মানুষের বশীভূত। বনের পশু পাখিও আজ মানুষের আয়ত্তাধীন। বড় বড় জীবজন্তুকে বর্তমান সভ্য জগতের মানুষ কৌশলে পোষ মানিয়েছে। ফলে তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধাও নিতে পারছে। এটা মানব সভ্যতার অগ্রগতির এক নিদর্শন। যেসব পশু স্বভাবতই গৃহে লালিত পালিত হয়, সেগুলোকে গৃহপালিত পশু বলে।

বাংলাদেশের গৃহপালিত পশু : 

আমাদের এ পৃথিবী সত্যিই বড় বৈচিত্র্যময়। ভূ-পৃষ্ঠের প্রাকৃতিক পরিবেশ; যেমন— গাছপালা, পানি, আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম। এজন্য পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ এবং পশু দেখা যায়। যে পরিবেশে যে পশু স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে সেখানেই সে পশুর পালিত হওয়ার পরিবেশ গড়ে ওঠে। এজন্য পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের গৃহপালিত পশুর তালিকাও বিভিন্ন ।

বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে অবস্থিত চির সবুজ, নদীমাতৃক। অধিক বৃষ্টিপাতের দেশ। কৃষি এখানকার অধিবাসীদের প্রধান উপজীবিকা। তাই কৃষকের ঘরে পোষা পশুই এখানকার গৃহপালিত পশু। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি।

আরও পড়ুন : ঘোড়া রচনা - ২টি (একটা ছোট একটা বড়)

গরু : 

বাংলাদেশে গৃহপালিত পশুর মধ্যে গরুই প্রধান। এ দেশের কৃষকের ঘরে ঘরে গরু বাছুর পাওয়া যায়। কেননা গরু থেকে উপকার অনেক। গরু হাল চাষে কাজে লাগে, গাড়ি টানে। গরুর মাংস উপাদেয় খাদ্য। এর দুধ অত্যন্ত পুষ্টিকর। এ ছাড়া এর চামড়া অর্থকরী পণ্য। এমনকি এর গোবর জ্বালানি ও জৈব সার হিসেবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। গরু সহজেই পোষমানে। গরুর খাদ্যখড় ও ঘাস, যা বাংলাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে যুগ যুগ ধরে গরুর উপকারিতা প্রমাণিত। তবে বর্তমানে গরুর দিন দিনই কমে আসছে।

মহিষ : 

গরুর পরেই যে গৃহপালিত পশুর নাম উল্লেখ করতে হয় তা হলো মহিষ। তবে মহিষ গরুর মতো সর্বত্র ব্যাপকভাবে পালিত হয় না। বাংলাদেশের কিছু কিছু অংশে কৃষকেরা মহিষ দিয়ে হালচাষ ও গাড়ি টানার কাজ করে। গরুর মতো মহিষের মাংস, চামড়া, দুধ ইত্যাদি সবই কাজে লাগে। তবে গরুর তুলনায় এগুলো নিম্নমানের। মহিষ গরুর চেয়ে আকারেও বড়, সকল কষ্টসহিষ্ণু, কিন্তু এগুলোর খোরাক বেশি এবং দেখতে খুব একটা সুন্দর নয় ।

ঘোড়া : 

গৃহপালিত পশুর মধ্যে গরু ও মহিষের পরেই ঘোড়ার স্থান। বর্তমানের মতো যখন টেলিফোন টেলিগ্রাফের ব্যবস্থা ছিল না। বাস, জীপ প্রভৃতি ছিল না। তখন দ্রুতগামী আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যম যানবাহন হিসেবে ঘোড়া ব্যবহার হতো। আবার সৌখিন ভ্রমণবিলাসী যুবকদের মনের সাধ মেটাত ঘোড়া। ঘোড়ায় চড়া ছিল অনেকাংশে বিলাসিতা। তখন ঘোড়া দ্বারা গাড়ি টানা হতো। ঘোড়ার ডাকের প্রচলন ছিল। বিভিন্ন খবরাখবর ঘোড়ারোহী প্রতিনিধি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিত। এখনো মাঝে মধ্যে ঘোড়ার গাড়ি দেখা যায়। ঘোড়ার দৌড় প্রতিযোগিতা অত্যন্ত আকর্ষণীয় ।

আরও পড়ুন : প্রবন্ধ রচনা : কুকুর

কুকুর : 

কুকুরকেও বাংলাদেশের গৃহপালিত প্রাণী বলা যেতে পারে। তবে বাংলাদেশের সর্বত্র যেসব কুকুর দেখা যায়, তার সিংহভাগই বেওয়ারিশ। জীর্ণ শীর্ণ ও রোগাক্রান্ত শরীরে এগুলো ঘুরে বেড়ায় এবং কখনো পথিকের অসুবিধা ঘটায়। বেওয়ারিশ ক্ষ্যাপা কুকুর অনেক সময় অযথাই পথিককে কামড়ে দেয়। ফলে অনেকেরই জলাতঙ্ক রোগ দেখা দেয়। তাই পাগলা কুকুর থেকে দূরে থাকা উচিত। তবে কুকুর খুব প্রভুভক্ত। এগুলো নিজ নিজ মালিকের বাড়ি পাহারার কাজ করে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কুকুরই মানুষের পোষমানে এবং পাশে এসে দাঁড়ায়। তাই কুকুর ও মানুষের মাঝে এতো বেশি সখ্যতা।

ছাগল : 

ছাগল বাংলাদেশের অতি পরিচিত গৃহপালিত পশু। এটি একটি পোষা প্রাণী। এ দেশের গ্রামেগঞ্জে সর্বত্র ছাগল পালা হয়। স্বল্পব্যয়ে অতি সহজে এ প্রাণী লালন পালন করা যায়। ছাগল থেকে দুধ, মাংস, চামড়া, হাড় ইত্যাদি পাওয়া যায়। ছাগলের দুধ বেশ উপাদেয়। তাই একে গরিবের গাভী বলা হয়। ছাগল প্রায় প্রতি বছর বাচ্চা দেয়। একসঙ্গে ২/৩টি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে। আমাদের দেশের চর অঞ্চলে ও পাহাড়ি এলাকায় ছাগলের পাল দেখা যায় ৷

ভেড়া : 

ভেড়াও অন্যতম গৃহপালিত পশু। ভেড়ার মাংস ও দুধ বেশ উপাদেয়। ভেড়ার লোম থেকে পশমি জিনিস তৈরি হয়। ভেড়ার চামড়াও বেশ মূল্যবান সম্পদ।

উপসংহার : 

গৃহপালিত প্রাণীগুলো আমাদের বিশেষ উপকারী। এগুলোর সংখ্যা যাতে বৃদ্ধি পায় সেদিকে আমাদের সকলেরই নজর দেয়া প্রয়োজন । সে সাথে গৃহপালিত পশুগুলো যাতে পোষমানে এবং আমাদের উপকারে আসে সে দিকেও খেয়াল করা উচিত ।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad