দিনলিপি অর্থ, দিনলিপি লেখার নিয়ম HSC ও ৩৪টি দিনলিপি(PDF)

দিনলিপি হচ্ছে নিয়মিত বা কিছুদিন পর পর দৈনন্দিন ঘটনা, যোগাযোগ, পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির তারিখ অনুযায়ী লিপিবদ্ধ রূপ । এতে প্রধানত ব্যক্তিগত ক্রিয়াকলাপ এবং নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতি, প্রতিক্রিয়া, ভাবাবেগ ইত্যাদি লিখে রাখা হয়। দিনলিপিতে এ ছাড়াও থাকতে পারে ধারাবাহিক ঘটনা, বিশেষ কোনো ভাবনা বা ধারণা, কোনোকিছু নিয়ে স্বপ্ন, কোনো আশা কিংবা হতাশার ব্যাপার, কোনো বিশেষ পরিকল্পনা ইত্যাদি।

(toc) দিনলিপির তালিকা সমূহ 

দিনলিপি অর্থ  ও দিনলিপি কাকে বলে?

ইংরেজি Diary এসেছে ল্যাটিন Diarium থেকে। শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ হলো 'ব্যক্তিগত দৈনিক জীবনযাত্রার কাহিনী' বা ' দিনলিপি'। এর ফারসি পরিভাষা 'রোজনামচা'। 

সংজ্ঞা : যখন কোনো লেখক তার খাতায় দিন-তারিখ সময় উল্লেখ করে একটি বা একাধিক ঘটনার বর্ণনা ধারাবাহিকভাবে লিখে রাখেন তখন তাকে ‘দিনলিপি' নামে অভিহিত করা যায় ।

দিনলিপি লেখার নিয়ম HSC :

১। নির্দিষ্ট দিনের তারিখ উল্লেখ করতে হবে।

২।  সময় ও স্থানের নাম লিখতে হবে।

৩। দিনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ নয়; বরং উল্লেখযোগ্য বিশেষ বিশেষ ঘটনা সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করতে হবে।

৪।  ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত চরিত্রগুলোর পরিচয় সংক্ষেপে লিখতে হবে।

৫।  কখনো কখনো লেখকের বিশ্লেষণ বা মন্তব্য থাকবে ।

৬। সবসময় সত্য কথা লিখতে হবে।

৭।  দিনলিপির ভাষা হতে হবে সহজ, সুন্দর ও আকর্ষণীয়। 

৮। অহেতুক কোনো কিছু না লিখে বাস্তবিক পক্ষে যা ঘটেছে সে গল্পই রসের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। 

৯। দিনলিপি যে কোন পৃষ্ঠা থেকে শুরু করা যাবে। 

১০। দিনলিপি ২ - ৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লেখা যেতে পারে। 

১১। সবশেষে সম্পূর্ণ দিনটি কেমন লেগেছে সে সম্পর্কে মতামত দিয়ে দিনলিপিটি শেষ করতে হবে। 

আরও পড়ুন : বাক্য গঠনের নিয়ম।একটি সার্থক বাক্যের কয়টি গুন বা অংশ থাকে উদাহরণ সহ

দিনলিপি লেখার সময় মনোযোগ দিতে হবে কোন কোন বিষয়গুলিতে

দিনলিপি লেখার সময় মনোযোগ দিতে হবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে:

  1. সময়
  2. স্থান
  3. আবহাওয়া
  4. ভাব-মনোভাব
  5. অনুভূতি
  6. কৃতকর্ম

এই বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দিলে দিনলিপির মধ্যে বিস্তৃত এবং সমৃদ্ধ বর্ণনা সৃষ্টি হবে।

তিন দিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করে দিনলিপি 

৭ই এপ্রিল, ২০২... মঙ্গলবার 

আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মো: রফিক দু'দিন ধরে আমার সাথে কথা বলছে না। আমার প্র্যাকটিক্যাল খাতাটা দেইনি বলে ও রাগ করেছে। কিন্তু আমি তো জানি ও কামালের খাতাটা নিয়ে আগেই কাজ করে রেখেছে। ঘুম থেকে ওঠার পরই মাথার মধ্যে ঢুকে গেল এই কথাটা । তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে কলেজে গেলাম। ছুটির পর রফিক আমার সাথে ঝগড়া করল, আমার গায়ে হাত তুলল। কিন্তু কেন? বাসায় ফিরে এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। সন্ধ্যায় স্যারের কাছে ইংরেজি পরীক্ষা দিলাম। কিছু সময় আরবি পড়ে ভাত খেলাম। তারপর টানা ঘুম ।

৮ই এপ্রিল, ২০২... বুধবার

আজানের সুমধুর ধ্বনিতে ঘুম ভাঙল। উঠে দেখলাম কামাল এসেছে। ওকে বসতে বলে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। গতকালের ঘটনার জন্য সে দুঃখ প্রকাশ করল, কেননা ও-ই রফিককে মিথ্যা বলে উত্তেজিত করেছিল। একসাথে নাশতা করে ওকে বিদায় দিলাম। তারপর কলেজে গিয়ে যথারীতি ক্লাস করে 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে' গেলাম। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার নিজে আমার হাতে পুরস্কারের প্যাকেট তুলে দিলেন। আমাকে উৎসাহিত করলেন আরও অনেক বই পড়তে। বাসায় এসে খেয়ে ইন্টারনেটে নিউজিল্যান্ড সম্পর্কে জানতে পারলাম। আমাদের দেশের মতোই সবুজ  ঘাসের দেশ, গাছপালার দেশ। পশুপালন এবং দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনই ওদের প্রধান উপজীবিকা। তারপর টিভিতে খবর দেখে পড়তে বসলাম । দশটার পর ঘুমিয়ে পড়লাম ।

৯ই এপ্রিল, ২০২... বৃহস্পতিবার

মায়ের বকা খেয়ে ঘুম ভেঙে গেল। ফ্রেশ হয়ে নামায পড়লাম। ইংরেজি পড়তে বসলাম। প্যারাগ্রাফ শেষ করলাম। কিন্তু কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না। বন্ধ করলাম পড়া। মজার ব্যাপার হলো, পরীক্ষার সময় ঠিকই মনে পড়ে গেল সবকিছু। বন্ধুর সাথে ওর বাসায় গেলাম । ন্যারেশন বিষয়টা আলোচনা করে বুঝে নিলাম। ওর সাথেই খেয়ে নিলাম। কিছুক্ষণ গল্প করে চলে এলাম বাসায়। দু'দিন পর মাকে পেলাম। তার কাছে বসে শুনলাম নানার নানা স্মৃতির কথা। পড়তে ইচ্ছে করছিল না। টিভিতে নাটক দেখে দেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম ।

শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে দিনলিপি

১৯শে জুন, ২০২... শুক্রবার

রাত ১১টা ৩০মিনিট

আজ আমরা কলেজের দুই শিক্ষক মহোদয়ের নেতৃত্বে বৃহত্তর সিলেট জেলায় দুই দিনের শিক্ষাসফর শেষ করে এলাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীপুর, হরিপুর, মাধবকুণ্ড, জাফলং প্রভৃতি স্থানের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেছি এই দুদিনে। কলেজের ক্যাম্পাস থেকে গত পরশু সকালে আমরা নির্ধারিত বাসে সকাল ৮টায় যাত্রা শুরু করি সিলেটের উদ্দেশে। সিলেটে প্রবেশের আগে চোখে পড়ে পাহাড়ি পথে কখনো উঁচু, কখনো নিচু, দুপাশে পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে চা বাগান, যা আমার মনে অপার বিস্ময় সৃষ্টি করে। সন্ধ্যা ৬টায় আমরা পৌঁছলাম সিলেট শহরে। 

একটি এনজিওর রেস্ট হাউসে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সকালে আমরা গেলাম শিলং পাহাড়ের পাদদেশে জাফলং শহরে। দেখে মনে হয়, এ যেন কোনো চিত্র শিল্পীর খেয়ালি তুলির আঁচড়ে আঁকা জলরঙের ছবি। পাহাড়ের ঢাল দিয়ে চা বাগানে হাঁটতে হাঁটতে চা গাছের পাতা স্পর্শ করে এক আশ্চর্য ও অভাবনীয় পুলক অনুভব করছিলাম। এরপর হরিপুর ও শ্রীপুরের গ্যাসক্ষেত্রে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা আমাদের সবকিছু ঘুরিয়ে দেখালেন। কীভাবে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে, শোধিত হচ্ছে তা আমাদের বোঝালেন। এখানে এসে জীবনের একটা অন্যরকম জগৎ প্রত্যক্ষ করলাম ।

আমরা দুপুরে ফিরে এসে খাওয়ার পর বিকেলে গেলাম মাধবকুণ্ডে ক্লান্তিহীন, অপরূপ জলপ্রপাত দেখে বিস্মিত হলাম। তার বিরামহীন শব্দ, পাখির কলরব সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। সেখানেই থেকে যেতে মন চাইছিল কিন্তু বাস্তবতার কারণে মানুষকে নাগরিক কোলাহলে ফিরে আসতেই হয়। আজ সন্ধ্যা ৭টায় ফিরেছি। কিন্তু মনে জেগে আছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের স্মৃতি। এভাবে দেখা ও শেখা হলো অনেক কিছুই। এ এক অন্যরকমের অভিজ্ঞতা।

জীবনের কোনো স্মরণীয় ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দিনলিপি

১৫ই এপ্রিল, ২০২...

রাত ১১টা ২০ মিনিট

যেন হঠাৎ বড় হয়ে যাওয়া- এমনই এক অনুভূতি নিয়ে আমার আজকের দিনটি কেটেছে। আজ আমার কলেজের জীবনের প্রথম দিন ছিল। এ যেন অপরিণত মানুষ থেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার পালা, আত্মশিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম পাঠ। দিনটি ছিল সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল। মনের প্রশান্তি যেন আরও সুস্পষ্টভাবে ফুটে . উঠেছিল। কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে আমি রীতিমতো রোমাঞ্চিত। আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে আমাদের স্বাগত জানানো হলো । মাদরাসার বড় ভাই-বোনেরা নতুনদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিলেন। আমাদের প্রথমে একটি বড় রুমে নেওয়া হলো- এটি ছিল মাদরাসার অডিটোরিয়াম। সেখানেই আমাদের সামনে আসলেন মাদরাসার অধ্যক্ষ। আমি তাঁর মনোমুগ্ধকর ভাষণ শুনলাম। তিনি আমাদের উপদেশ দিলেন, জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে । পরামর্শ দিলেন, যুক্তিবাদী উদার মন নিয়ে জ্ঞান আহরণ করতে।

আহ্বান জানালেন, সত্যিকারের দেশব্রতী মানুষ হয়ে বিশ্বসভায় দাঁড়াতে। বক্তৃতাশেষে আমাদের শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো। একে একে আমাদের অনেক শিক্ষক এলেন। তাঁদের কথা ও পরামর্শ ..আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে আজ। বিশেষ করে তাঁদের আন্তরিকতা আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে। ক্লাসে আমার মতো সবাই নতুন। এর মধ্য থেকে একজন এসে আমার সাথে বেশ ভাব জমিয়ে ফেলল। তার সরলতা, বন্ধুভাবাপন্নতা আমার খুব ভালো লেগেছে। আমরা দুজন অনেকক্ষণ গল্প করলাম। ক্লাসে আমাদের মতো অনেকেই এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলল। অবশেষে বাসার ফিরলাম। তাই আজকের দিনটি আমার জীবনে একটি স্মরণীয় ঘটনা । এই দিনটি আমার স্মৃতির রেখায় চিরকাল অমলিন থাকবে ।

আরও পড়ুন : সরল,জটিল ও যৌগিক বাক্যের সংজ্ঞা, উদাহরণ, রূপান্তর, পার্থক্য,বৈশিষ্ট্য

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী /বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান নিয়ে দিনলিপি

১৬ই মে, ২০২... শনিবার 

সকাল ৭টা ৩০ মিনিট

ঘুম থেকে উঠে ধীরেসুস্থে তৈরি হয়ে মাদরাসায় গেলাম। কারণ আজকে কোনো ক্লাস হবে না। মাদরাসার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, একই সাথে লাইব্রেরি ভবনের উদ্বোধন। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিল্পপতি গোলাম • জাকারিয়াসহ বেশ কজন শুভাকাঙ্ক্ষী উপস্থিত হলেন। আমি কাউকেই দেখিনি আগে, আজ নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হলো ।

বিশিষ্টজনের আলোচনায় উঠে এলো কাদের কী অবদানে আজকের এ মাদরাসা, এর লক্ষ্য এবং ভবিষ্যতে কামিল মাদরাসা করার পরিকল্পনার কথা। জেনে খুব আশান্বিত হলাম। তারপর বিশিষ্ট শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যারা এই মাদরাসার ই ছাত্রছাত্রী ছিলেন। গর্বে বুকটা ফুলে উঠল। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলাম। মাকে বললাম সব কথা। কয়েকটা টিভি চ্যানেলের নিউজে আমাদের অনুষ্ঠানের কিছু কিছু অংশ দেখলাম। পড়তে ইচ্ছে করছিল না। রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ।

উপন্যাস পড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি দিনলিপি

২০শে এপ্রিল, ২০২....

ছোটবেলা থেকেই আমার উপন্যাস পড়ার শখ ছিল। কেননা উপন্যাসের বিষয়গুলো মানুষের জীবন এবং প্রকৃতি ও মানবপ্রেমকে কেন্দ্র করে লেখা হয়। যা থেকে মানুষ জীবন, প্রেম ও প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারে। এই তো কদিন আগে বড় ভাই আমাকে একটি উপন্যাস দিয়েছিল। সেটি ‘পথের পাঁচালী' এবং লিখেছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। উপন্যাসটি আমি অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়লাম । উপন্যাসটি পড়ার পর উপন্যাসের ওপর আমার আগ্রহটা অনেক বেড়ে গেল। এটি পড়ে আমি প্রকৃতি ও মানবপ্রেম সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম এবং বন্ধুদেরকে উপন্যাসের কথাগুলো শুনালাম।

তারাও এখন থেকে উপন্যাস পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করল। এরপর তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে বড় ভাইয়ের সাথে ওসমানী মিলনায়তনে নামী লেখকবৃন্দের বিকালের আলোচনা সভায় যোগ দিলাম। সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোকচিত্র প্রদর্শনী দেখতে গেলাম। খুবই তথ্যপূর্ণ। ভালো লাগল। বাসায় ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে 'বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি' বইটি পড়লাম। তারপর রাতে খেয়ে ১০টায় ঘুমাতে গেলাম ।

চিড়িয়াখানা পরিদর্শনের একটি দিনলিপি 

৫ই মে, ২০২... মঙ্গলবার

বিকাল ৪টা ১০মিনিট

আজ সারাদিনে যত হেঁটেছি, গত এক সপ্তাহে সব মিলিয়েও সম্ভবত এত বেশি হাঁটিনি। তবে খুব মজার একটি দিন কাটিয়েছি আজ। কলেজের নতুন বন্ধুদের সাথে অনেক ভালো সময় পার করলাম । প্রতি বছর কলেজ থেকে বার্ষিক বনভোজনের আয়োজন করা হয়। সেই নিয়মে আমরাও বনভোজনে গিয়েছিলাম ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানায়। মা-বাবার সাথে এর আগে অনেক জায়গাতে গেলেও বন্ধুদের সাথে এটাই প্রথম। তাই অন্যবারের চেয়ে এবারের আনন্দটা ছিল অনেক বেশি। 

আমাদের শ্রেণিশিক্ষক আরিফ স্যার আমাদের সাথে গিয়েছিলেন। যথারীতি টিকিট কেটে আমরা প্রবেশ করেছিলাম ভিতরে। ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল বিরাট জিরাফ, এটি দীর্ঘ গলাবিশিষ্ট প্রাণী। এরপর সামনে এগুতেই দেখলাম একটি পাখির খাঁচা। নানা রকমের পাখি; উট পাখি, বিচিত্র রঙের পেখম মেলা ময়ূর দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আরও মুগ্ধ হয়েছি হরিণকে দেখে- হরিণ আমার খুব প্রিয়। শান্তশিষ্ট প্রাণী। হরিণগুলো ঘাস খেতে খুবই ব্যস্ত। বড় একটা হাতি আর ছোট একটা হাতি, দেখেই বোঝা যাচ্ছে মা হাতির পাশে বাচ্চা হাতি। হাতির বিশাল কান আর ছোট্ট চোখের গল্প শুনলেও আগে দেখার সুযোগ হয়নি। আর একটু সামনে এগুতেই বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ দেখতে পেলাম। 

ডোরাকাটা দাগবিশিষ্ট এ বাঘ আমাদের দিকে রাগের দৃষ্টিতে চেয়েছিল। এরপর বনের রাজা সিংহ, খুব হিংস্র প্রাণী হলেও তাকে দেখে তা বোঝা যাচ্ছিল না। কেমন অসহায় লাগছিল। ফেরার পথে দেখলাম বানর। আমরা তাদের চিনাবাদাম দিচ্ছিলাম। বানরগুলো মারামারি করে বাদাম নিয়ে খেতে শুরু করল। এছাড়াও সেখানে ঘোড়া, অজগর সাপ, ভল্লুক, সজারু, কচ্ছপ প্রভৃতি অনেক প্রাণী দেখলাম। সব মিলিয়ে চিড়িয়াখানায় আনন্দমুখর একটা দিন কাটালাম ।

নিজের শারীরিক অসুস্থতার বর্ণনা দিয়ে দিনলিপি 

২৮শে এপ্রিল, ২০২...

সকালে উঠতে পারছিলাম না। মাথা ভারী হয়ে আছে, ব্যথা করছে। মাকে ডাকলাম। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, জ্বর আসবে। উঠে নাশতা করে একটা ট্যাবলেট খেয়ে নে। দুপুরের পর জ্বর এলো ঝাঁকিয়ে। ছোট বোনটা মাথায় পানি দিল বেশ কিছুক্ষণ। মা এসে জ্বর মাপলেন, তাকে চিন্তিত দেখা গেল। ডাক্তার এলেন রাতে। মা ভাত খাওয়ালেন, ওষুধ খাওয়ালেন, তারপর ঘুমাতে বললেন। বাবা এসে দেখে গেলেন । ঘুমাতে চেষ্টা করলাম ।

সুন্দরবন ভ্রমণের বর্ণনা দিয়ে একটি দিনলিপি 

৩০শে এপ্রিল, ২০২...

সকাল ৮টা ৩০ মিনিট

সুন্দরবন ভ্রমণের উদ্দেশে আমরা তিন বন্ধু বাসে করে মংলা পৌঁছলাম। থাকার জন্য উঠলাম আমার এক মামার বাড়িতে। রাতটুকু অতীতের স্মৃতিচারণ করে কাটালাম। সকালে নাস্তা সেরে মংলা বন্দরের সব জায়গা ঘুরে দেখলাম। আগের চেয়ে অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়েছে। পরদিন ছোট লঞ্চে করে সুন্দরবন। দূর থেকেই মনে হচ্ছিল বিস্তীর্ণ সবুজ পাথার। প্রথমে ভেতরে ঢুকতেই ছোট এক ঝাঁক আয়তলোচনা চঞ্চল হরিণ চোখ জুড়িয়ে দিল। আর একটু এগিয়েই বাঁদরের নাচানাচি, লাফালাফি দৃষ্টিতে এলো। 

নানা নামের ছোট-বড় গাছ, নিচে ঘন ঝোপ, সবুজে সবুজ, পাখির কলকাকলিতে মুখর। একটি শুকর দৌড়াচ্ছে, কিন্তু পেছনে কিছু নেই। মামা আগেই সতর্ক করে দিলেন ডাল না ধরতে। কারণ বিষাক্ত পোকা-মাকড়, পিঁপড়া, ছোট সবুজ সাপও ডালে জড়িয়ে থাকে। একটা সাপ জাম্প করে আর একটা ডালে পেঁচিয়ে গেল, আমি বিস্মিত চোখে দেখলাম, দেখালাম অন্যদেরও। আর ভেতরে যাওয়া যাবে না। বাঘ দেখার সৌভাগ্য হলো না আমাদের। আমি অবাক হলাম একটা ডলফিনও না দেখে। তবু যা দেখলাম চোখ জুড়ে, মন জুড়ে তা অম্লান থাকবে দীর্ঘকাল।

একটি ছুটির দিনের দিনলিপি 

১৫.০৫. ২০২... শুক্রবার
সকাল ১০টা

জীবনের কোন বাঁকে যে কী বৈচিত্র্য লুকিয়ে রয়েছে তা কেউ জানে না। আজ সকালে কি আমি ভেবেছিলাম আমাদের এই দিনে কী বিস্ময় আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। শুক্রবার বিধায় আজ একটু দেরি করেই ঘুম থেকে উঠেছিলাম। দিনের পরিকল্পনায় তেমন কোনো লক্ষ্য ছিল না। কারণ সপ্তাহে এই একটা দিন আমি কোনো রুটিন বা পরিকল্পনা রাখি না। যা ভলো লাগে তাই করি। ৭টায় ঘুম থেকে উঠে ভাবছি কী করা যায়— এমন সময় হঠাৎ জালালের ফোন।

৩০ মিনিটের মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে বলে ফোন রেখে দিল। যথাসময়ে গিয়ে দেখি, ওরা ৪ জন বাইসাইকেল নিয়ে উপস্থিত। বলল, আজ দুই ঘণ্টা বাইসাইকেল চালিয়ে যতদূর পৌঁছাবো সেখানে আমরা বনভোজন করবো। জেলা সদরে আমাদের কলেজ। কথা অনুযায়ী দুই ঘণ্টা সাইকেল চালিয়ে আমরা একটি অজানা গ্রামে পৌঁছলাম। সেখানে পৌছে স্থানীয় দোকান থেকে চাল, ডাল, তেল, নুন, ডিম নিয়ে একটা মাঠের মধ্যে চুলা বানালাম ভাঙা ইট দিয়ে। সাথে আনা ছোট হাড়ি- কড়াই, গ্রাম থেকে সংগ্রহ করা জ্বালানি কাঠ দিয়ে রান্না শুরু করলাম।

ধোঁয়ার ধূলিতে-কালিতে মিশিয়ে সেই অতি সাধারণ উপকরণ দিয়ে তৈরি হলো খাবার। সে কি অসাধারণ স্বাদ। মনে হলো পৃথিবীর .সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার খাচ্ছি। একটা উৎসবমুখর পরিবেশে খাওয়া শেষ করলাম। যখন খাওয়া শেষ করলাম ততক্ষণে প্রায় ৫টা বেজে গিয়েছে। আমাদের হোস্টেলে ফিরতে রাত ৮টা। আর কোথাও দেরি না করে সরাসরি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ । মনে একটা অনির্বচনীয় প্রশান্তি। মনে হলো, বিশেষ কোনো অভিযান সফলতার সাথে পরিসমাপ্তি করে ফিরেছি বিজয়ীর বেশে। রাত এখন এগারোটা। এই অভিজ্ঞতা জানিয়ে মা-বাবাকে একটা চিঠি লিখব ভাবছি। শুভ রাত্রি ।

কলেজে প্রথম দিন দিনলিপি :

০৩.০৫.২০২...

আমি স্থানীয় একটি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। ভর্তির দিন আব্বা সাথে থেকে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। আজ প্রথম ক্লাস করতে যাচ্ছি। বুকটা দুরু দুরু করছে। এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করছি, সাথে আছে এক ধরনের ভয়। সহপাঠীরা কী রকম আচরণ করবে? শিক্ষকরা কেমন হবেন? সবার সাথে ঠিকমতো মানিয়ে নিতে পারব তো? এরকম বিষয়গুলো আমাকে ভাবিয়ে তুলছিল। মাদরাসা গেট দিয়ে ঢুকলাম। পরিচিত একজন আমাকে ডেকে নিল। ওর সাথেই তৃতীয় তলায় ৩০৫ নম্বর কক্ষে ঢুকলাম। পরিচিত হলাম ওদের সাথে। বসলাম। পরে যারা এল তাদের অনেকের সাথেই পরিচয় বিনিময় করলাম। সবাই বেশ ভালো।

প্রথমেই এলেন বাংলা শিক্ষক। দশ মিনিট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে নিয়ে গেলেন হলরুমে। আজ আমাদের ওরিয়েন্টেশন- পরিচিতি সভা। প্রিন্সিপাল স্যার শিক্ষকদের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর শুরু হলো নির্দেশনা বা উপদেশমূলক বক্তৃতা। প্রিন্সিপাল স্যারের বক্তব্য খুব ভালো লাগল। কলেজ বার্ষিকী, ক্লাসরুটিনসহ আরও কিছু কাগজপত্র নিয়ে চলে এলাম বাসায় ।

HSC পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিনলিপি

22.06.202... সোমবার
সকাল ১০টা ১০ মিনিট

আজ HSC পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে। ফল কী হবে না হবে এ নিয়ে দোটানায় ও অস্থিরতায় আমার সময় কাটছে। প্রত্যেক বিষয়ে পরীক্ষা ভালো দিয়েছি, কিন্তু ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর কেমন দিয়েছে সেটা নিয়ে চিন্তা। কেননা, ব্যবহারিক নম্বরের ওপর রেজাল্টের ধরন নির্ভর করছে। আব্বা-আম্মা আমার রেজাল্ট নিয়ে ভীষণ টেনশনে আছেন। ভালো রেজাল্ট না হলে ভর্তি নিয়ে সমস্যা হবে। কলেজে গেলাম বারোটার দিকে। বন্ধুরা দিব্যি আড্ডা দিচ্ছে, গল্প করছে, রেজাল্টের তোয়াক্কা নেই। 

আমি ওদের স্রোতে ভেসে গেলাম। কে যেন চিৎকার করে বলল, রেজান্ট এসে গেছে। নোটিশ বোর্ডের দিকে ছুটল সবাই। বাংলার স্যার রোল নম্বর ধরে ধরে রেজাল্ট বলছিলেন। শুনলাম আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি। প্রায় সবারই এরকম। দুতিন জন কেঁদে উঠল। আমাদের বন্ধু ওরা, ওদের রোল নং নেই অর্থাৎ ফেল করেছে। খুব কষ্ট লাগল। কী সান্ত্বনা দেব ওদের? বাসায় এসে আব্বা-আম্মাকে সালাম করলাম। তাঁরা বুকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করলেন, মিষ্টি খাওয়ালেন। পড়শিদের সবার বাড়িতে মিষ্টি পাঠানো হলো ।

নির্বাচনি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছ, এখন সেদিনের একটি দিনলিপি

২০.০৫.২০২... বুধবার 

বিকাল ৪টা ১৫মিনিট

আমার মাদরাসার নাম ইশআতুল ইসলাম আলিম মাদরাসা। আজ আমার মাদরাসার নির্বাচনি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলে ভালো করব এ বিশ্বাস আমার ছিল, কিন্তু এতো ভালো করব এটা আশা করিনি। যখন পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় তখন আমার দৃষ্টি ছিল রেজাল্ট শিটে। সিরিয়ালে প্রথম নামটি আমার দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না, এটা কি সত্যি। ভালো ফলাফলের জন্য বন্ধুরা সবাই আমাকে শুভেচ্ছা জানাল। 

আমার পক্ষে সেই মুহূর্তের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। হৃদয়ে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। নিজেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একজন সুখী মানুষ ভাবলাম। মানুষের জীবনে এমন সুখের দিন হয়তো খুব বেশি আসে না। হৃদয়পটে সকালের স্বর্ণালি পাতায় দিনটি গেঁথে রাখলাম। আমার বিশ্বাস, এ দিনটি কোনোদিনই হৃদয়ের পাতা থেকে হারিয়ে যাবে না। হৃদয়পটে যেন সকালের সূর্যের স্নিগ্ধ আলো ঝিলিক দিয়ে গেল।  ভালো ফলাফলের জন্য সবাই সাধুবাদ জানাল।

পরিচিতজনেরা আমাকে এত উৎসাহ দিল যে, আমি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করলাম। ছাত্রজীবনে পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই যে-কোনো পরীক্ষায় প্রথম হওয়া গৌরবের বিষয়। কলেজের নির্বাচনি পরীক্ষায় আমি প্রথম হতে পেরে পুলকিত অনুভব করলাম। ডানা ছাড়াই আকাশে উড়তে ইচ্ছে হলো। আমার যদি ডানা থাকতো তাহলে আমি পাখিদের মতো মুক্ত-স্বাধীনভাবে আকাশে উড়ে বেড়াতাম। 

অসুস্থ বন্ধুকে দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করে দিনলিপি

০৮.০৪.২০২...

সকাল ১১টা ৩০ মিনিট

আমার সহপাঠী জামাল। খুবই ভালো ছেলে। তার আন্তরিকতা শুধু আমাকে না, সবাইকেই মুগ্ধ করে। দুদিন আগেই তার অসুস্থতার খবর পেলাম। দেখতে যাওয়া আবশ্যক, কারণ ওর যে কজন কাছের বন্ধু আছে আমি তাদের মধ্যে একজন। কিছু ফল কিনে নিয়ে তাকে দেখতে গেলাম হাসপাতালে। আমাকে দেখে যে ও অনেক খুশি হয়েছে তা বুঝতে পারলাম। অসুস্থ শরীর নিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করল কিন্তু আমি তাকে শুতে বাধ্য করলাম। কারণ এ অবস্থায় উঠে বসা উচিত হবে না। ওর বাড়ির দু-একজন আছে আর নার্সরা তো আছেই।

সময়মতো ঔষুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে সব তারাই করে। যদিও সরকারি হাসপাতাল তারপরও নার্সরা খুব আন্তরিক, ডাক্তাররাও ভালো। জামাল আজ প্রায় দশদিন হাসপাতালে ভর্তি। তার যে কি চেহারা হয়েছে না দেখলে বোঝা যাবে না। জামাল শুধু আমার দিকে তাকিয়েছিল। তার তাকিয়ে থাকা সে মুখের বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এতোটা অসহায় সে এর আগে কখনো হয়নি। বললাম, খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবি, আবার আগের মতো বিকেলে খেলাধুলা করতে পারবি, এইতো আর কয়েকটা দিন। তারপর আবার একসাথে ভলিবল খেলব। এবার বাজিতে তোকে জিতিয়ে দেব কেমন। ও শুধু আমার কথাগুলো শুনলো, কোনো উত্তর দিল না।

চোখে তখন টলমলে জল ৷ অসুস্থ কোনো মানুষকে এমন গভীরভাবে দেখা এ আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। মনে হচ্ছে, ওখানে জামাল নয় শুয়ে আছি আমি, আর জামাল আমাকে কথাগুলো বলে যাচ্ছে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা অনেক বেদনার। কারণ এই বয়সে একদিন খেলার মাঠে যেতে না পারলে মনটাই খারাপ হয়ে যায়। প্রায় দু-ঘণ্টা জামালের পাশে বসেছিলাম, আর ওর সঙ্গে ঘটে যাওয়া কিছু স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করছিলাম। বাইরের রাস্তা দিয়ে ঠিকই যানবাহন চলছে। সবকিছু ঠিক আছে শুধু আমি আর জামাল এখন মাঠে না থেকে হাসপাতালের বিছানায়। 

আরও পড়ুন : অতি লোভে তাঁতি নষ্ট -  ভাবসম্প্রসারণ

ঈদে নতুন পোশাক পাওয়ার অনুভূতি নিয়ে দিনলিপি 

২২ শে এপ্রিল, ২০২... বুধবার 

বিকাল ৩টা ৫২ মিনিট

ঈদের আর মাত্র দুই দিন বাকি। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। বরাবরের মতো এবার ঈদেও আমাদের সবার জন্য নতুন পোশাক কেনা হলো। তবে এবারকার অবস্থাটা ছিল ভিন্ন রকমের। কারণ বাবা ব্যবসাতে একটু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাই মনে করেছিলাম হয়তো এবার শুধু বাড়ির মেয়েদের জন্যেই নতুন কাপড় কেনা হবে। কিন্তু বাবা টাকার ব্যবস্থা করেছেন। সকাল বেলা আমরা সবাই মিলে কেনাকাটা করতে বাজারে গেলাম। পছন্দানুযায়ী মা আর বড় বোন মিলে কাপড় কিনল। ভাইয়াও একইভাবে কিনল । 

তবে আমি নিজে কিছু পছন্দ করতে পারি না বলে বাবার ওপর সবসময় নির্ভরশীল থাকি। আর বাড়ির সবচেয়ে ছোট সদস্য হওয়ায় বাবা বরাবরই আমার জন্য সর্বোচ্চ বাজেট রাখেন। তাই সবকিছু মিলিয়ে আমার কাপড়টাই হয় সবচেয়ে ভালো। এজন্য অবশ্য বড় আপু ও ভাইয়া আমার ওপর একটু রাগ করে কিন্তু ওরা দুজনে আমাকে এত ভালোবাসে যে, এসব কথা খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যায় ৷

ভুলে গেছে আজও। কারণ আমি যে ছোট। বাড়ি ফিরে এসে আমি তো খুশিতে আত্মহারা। ঈদে নতুন কাপড় পেয়েছি বলে আজ‍ই তা পরে সবাইকে একটু দেখিয়ে বেড়ালাম। আমার আনন্দ দেখে সবাই খুশি হলো। দাদু ফোন করেছিলেন, আমি কথা বলে দাদুর কাছে আমার আনন্দ প্রকাশ করলাম। বন্ধুদের জানালাম আমার কথাটা, একটু বেশিই হয়তো বা হয়ে গেছে কিন্তু তাতে কী। আমি তো এখনো ছোটই আছি।

একজন শিক্ষার্থীর দিনলিপি

06.06.202...

আজ একটু আগে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। গতরাতে প্রায় একঘণ্টা আগে ঘুমিয়েছিলাম। তাই সময়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে ভোর পাঁচটায় উঠে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসেছিলাম। পরীক্ষার চিন্তায় সবকিছু ভুলতে বসেছি। ঘণ্টাখানেক পড়ে একটু হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য মনটাকে চিন্তামুক্ত করা। কিন্তু হিতে বিপরীত হলো। রাস্তা তখন প্রায় জনশূন্য, বেশ জোরে জোরেই হাঁটছি। পনেরো মিনিট হাঁটার পর দেখি একটা লোক ফুটপাতে শুয়ে রয়েছে। গায়ে কাপড় নেই বললেই চলে। ডিসেম্বর মাস। শীতও বেশ পড়েছে। লোকটিকে দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। কী কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে। ভাবছিলাম, যদি এসব মানুষের কষ্ট দূর করতে পারতাম।

সারাটা সকাল গেল বিষণ্নতার মাঝে। সাড়ে নয়টার দিকে মাদরাসায় গেলাম । ক্লাস তেমন হলো না। এক বন্ধুর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় দুটি নোট নিয়ে বাসায় ফিরলাম। কিন্তু সকালের দৃশ্যটা চোখ থেকে কিছুতেই সরাতে পারছিলাম না। কোচিংয়ে গিয়ে এক বন্ধুর সাথে বিষয়টি শেয়ার করলাম। সেও দুঃখ প্রকাশ করল। সিদ্ধান্ত নিলাম, রাস্তার ঐসব ছিন্নমূল মানুষের জন্য সব বন্ধুদের বলে পুরনো কাপড় সংগ্রহ করে তাদের দিব। বেশ একটা প্রশান্তি নিয়ে বাসায় আসলাম এবং আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু আমার বাবাকে আমাদের ইচ্ছের কথা জানালাম। বাবাও এ বিষয়টিকে সাধুবাদ জানালেন। আগামীকাল মাদরাসায় গিয়ে আমাদের কার্যক্রম শুরু করব। অনুভব করছি সিদ্ধান্তটা নেওয়ার পর আমার পড়ার গতি ও মনোযোগ বেড়ে গেছে। যাই হোক, আজকের এই দিনটি আমার জন্য স্মরণীয়।

ঝড়ের তাণ্ডবে গ্রামের দুরবস্থা দেখার অনুভূতি নিয়ে দিনলিপি

১৭ই মে, ২০২... রবিবার

রাত ১১টা

প্রতিদিনের দিনলিপি লেখার শুরুতেই প্রথমেই আমার জীবন- ভাবনাগুলো দু-চার কথায় লিখে রাখি। কিন্তু আজ আর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, কী লিখবো। ঘূর্ণিঝড়ে পড় হয়ে গেছে পাশের কয়েকটি গ্রাম। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদীসংলগ্ন গ্রামটি। স্বচক্ষে দেখার জন্য যখন গ্রামের দিকে যাচ্ছিলাম তখন বিপন্ন জনজীবন আমাকে বিব্রত করছিল। খবর নিয়ে জানলাম সন্ধ্যার দিকে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়, এর সাথে ঝড়ো বৃষ্টিও ছিল। অনেকের বাড়িঘর ভেঙে গেছে, মানুষের সঙ্গে পশুপাখিরা আশপাশে মরে পড়ে আছে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে আছে, রাস্তার বড় বড় গাছগুলো ভেঙে পড়ে থাকায় সুবিধামতো চলাচল করা সম্ভব হচ্ছিল না। 

নলকূপগুলো অকেজো হওয়ার ফলে খাওয়ার পানির অভাব দেখা দিয়েছে। গৃহহারা মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। আশপাশের ফসলি জমিগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। ঘরবাড়ির নিচে, গাছের নিচে মানুষ এবং পশুপাখির মৃতদেহ এলাকাটিকে এতটাই দুর্গন্ধময় করেছে যে, একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে সেখানে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। ক্ষতিগ্রস্তরা তো এমনিতেই ক্ষুধার্ত, তার ওপর আবার এত ক্ষয়ক্ষতি দেখে ঘাবড়ে গেছে। গায়ে শক্তি নেই, নেই মনেও মানসিকভাবে এতটাই দুর্বল যে, বেঁচে থাকতে হলে আবার নতুন করে কীভাবে শুরু করতে হবে, তাও তারা ভুলে গেছে। একদিকে প্রিয়জন হারানোর শোক, সহায়-সম্বল হারানোর বেদনা, নিজের শারীরিক ক্ষতি, ক্ষুধার জ্বালা অন্যদিকে জীবনের তাগিদ। 

ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন করে জেগে ওঠার তাড়া। সন্তানসম্ভবাদের নিজেদের সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি প্রাণ বাঁচানোর আকুতি, নতুন জীবনের স্বপ্ন- সবকিছু মিলিয়ে নিরন্তর এক সংগ্রামে লিপ্ত দিশেহারা মানুষগুলো। অনেকে ঝড় ও জলস্রোতে পরনের কাপড়টুকু ছাড়া আর সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, দুর্গত অঞ্চলের মানুষজন এখন কর্মহীন, খাদ্যহীন ও গৃহহীন। তাদের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের মানসিক ধকলে তারা এখন বাকরুদ্ধ ও ম্রিয়মাণ- বিশেষত শিশুরা। এরই মধ্যে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হলেও তা ছিল অপর্যাপ্ত। সেখান থেকে ফিরে এসেছি, কিন্তু তাদের সেই দুরবস্থা আমার চোখে এখনও ভেসে উঠছে। কোনোভাবেই ভুলতে পারছি না অসহায় মানুষের দুর্বিষহ চিত্র।

লঞ্চডুবির ঘটনা নিয়ে দিনলিপি 

১৫ই জুলাই, ২০২... ঝালকাঠি

সোমবার, রাত ১০টা

দুর্ঘটনা আমাদের দেশের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। প্রতিদিন বহু মানুষ নানা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এসব দুর্ঘটনার মধ্যে লঞ্চডুবি অত্যন্ত ভয়াবহ একটি ঘটনা। ঢাকা বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র হওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অগণিত মানুষ লঞ্চযোগে ঢাকায় আসে। আবার ঢাকা থেকে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যায়। কিন্তু লঞ্চডুবির ঘটনা সেসব মানুষের জীবনকে এক মুহূর্তে লণ্ডভণ্ড করে দেয়। আজ আমিও আমার চোখের সামনে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ডুবে যেতে দেখলাম । 

সকাল ১১টার দিকে ঝালকাঠি থেকে আসা একটি লঞ্চ মাওয়া ঘাটে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু ঘাটে পৌছাবার পূর্বেই বৈরী আবহাওয়া এবং নদীর প্রবল স্রোত ও উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে ডুবে গেল লঞ্চটি। আমিও ওই সময় পাশের অন্য একটি লঞ্চে ছিলাম। চোখের সামনেই লঞ্চটিকে একটু একটু করে পানির নিচে তলিয়ে যেতে দেখলাম। বেঁচে থাকার আকুতিতে যাত্রীদের চিৎকার ও আহাজারিতে বিষাদ ছড়িয়ে পড়ল সমগ্র এলাকায়। চোখের সামনে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে আগে কখনো দেখেনি। শত শত মানুষের কান্না এখনো আমার কানে বাজে। ভয়াবহ এই লঞ্চডুবি দেখার পর এক বিশাল বিষাদময়তা আমার হৃদয়কে ছেয়ে গেল।

বন্যাকবলিত যে-কোনো এলাকা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা নিয়ে দিনলিপি 

২৯শে মে, 202...

রাত ১০টা

প্রতিদিনের দিনলিপি লেখার শুরুতেই প্রথমেই আমার জীবন- ভাবনাগুলো দু-চার কথায় লিখে রাখি। কিন্তু কিছু ভাবনা যেন শুধু ভাবনা জগতে ডুবিয়ে রাখে। তার শুরু ও শেষ খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকটা বাংলাদেশের নদনদীর জালের মতোই বিস্তৃত। ছোট ছোট পাহাড়ি ছড়া, আঁকাবাঁকা মৌসুমী খাড়ি, কর্দমপূর্ণ খালবিল, দৃষ্টিনন্দন নদ-নদী ও এদের উপনদী এবং শাখানদী সমন্বয়ে বাংলাদেশে বিশাল নদীব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। নানা প্রতিবন্ধকতায় আজ আমাদের নদীগুলোর গভীরতা কমে গেছে এবং দেশের অনেক অঞ্চল নিচু হওয়ায় বন্যা যেন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে।

বন্যায় দুর্ভোগে পড়া মানুষের জন্য 'ত্রাণ বিতরণ' কমিটির সদস্য তালিকায় আমার নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। ফলে জরুরি হাজির হতে হলো কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার অন্তর্গত লক্ষ্মীপুর গ্রামে। এটি আমার নিজ গ্রাম। গ্রামটিতে প্রতিবছরই বন্যার ছোবল পড়ে। কিন্তু এবারের বন্যা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।খরস্রোতা গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এবং অবিরাম জলবর্ষণে সম্পূর্ণ গ্রাম এখন পানির নিচে। জনজীবন সম্পূর্ণ বিপন্ন। 

গ্রামের বাড়িগুলো সাধারণত কাঁচা, দরিদ্র মানুষগুলো অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে স্কুল ঘরের দোতলা ভবনে। কেউ আবার উঁচু কোনো জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে প্রাণ বাঁচাতে। এখানে-সেখানে যাতায়াত তাদের জন্য মুশকিল। নৌকারও ঘাটতি ছিল। আমরা যেসব সাহায্য নিয়ে গিয়েছিলাম, তা যে কীভাবে গ্রামে পৌঁছাবো, তারও কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে অদূরে দুটো নৌকা দেখে মাঝিকে ডাক দিলে তারা উৎফুল্ল হয়ে আমাদের সেখানে নিয়ে গেল। তাদের মুখে গ্রামটির দরিদ্র জনগণের দুর্ভোগের কথা শুনলাম। পানিবন্দি হয়ে হাজার হাজার মানুষ গ্রামটিতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

বিশুদ্ধ পানীয়জলের অভাবে কলেরা, টাইফয়েড, অমাশয় রোগ দেখা দিয়েছে। যখন নৌকা নিয়ে পৌঁছলাম, এক-একটা ক্ষুধার্ত মুখ আমাদের যেন অনুদাতা মনে করে বসল। তাদের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় কতটা কষ্টে কাটছে তাদের জীবন। এ এক কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা। আমরা যে ত্রাণসামগ্রী সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলাম তা মুহূর্তেই নিঃশেষ হয়ে গেল। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষগুলোর মতোই অসহায় হয়ে পড়লাম। ক্ষুধার্ত ও অসহায় মানুষের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠছিল। 

এক মর্মন্তুদ দৃশ্যের অবতারণা হলো। আমার বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো। দ্রুত সামলে নিলাম নিজেকে। পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা তড়িৎ সমবেত হয়ে অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। প্রথমেই উপজেলা পর্যায়ে এবং পরে জেলা পর্যায়ে ত্রাণসামগ্রির জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানালাম । আর্থিকভাবে স্বচ্ছল মানুষদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানালাম । বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে খাবার স্যালাইন এবং প্রাথমিক সেবার যেসব ওষুধ পাওয়া গেলো তা সংগ্রহ করতে দশজন করে কয়েকটি দল গঠন করে নিলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা জয়ী হয়েছিলাম ।

বিজয় দিবস উদযাপনের ওপর দিনলিপি

১৬ই ডিসেম্বর, ২০২... বুধবার

রাত ১১টা ৩০ মিনিট

আজ মহান বিজয় দিবস। দিনটি আমাদের জাতীয় দিবসগুলোর মধ্যে

অন্যতম। প্রতি বছরই শ্রদ্ধা ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আমরা দিনটি পালন করি। এবারের বিজয় দিবসটা আমি কাটালাম নতুন এক পরিবেশে যা থেকে ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। বন্ধুদের সাথে সারাদিন কাটালাম মাদরাসার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মাদরাসায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর, বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা, রচনা প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

আমার সব থেকে ভালো লেগেছে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়ার অংশটুকু। প্রথমবারের মতো এতজন গর্বিত মুক্তিসেনাকে একসাথে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তখন যে আমার কত ভালো লাগছিল তা বলে বোঝাতে পারব না। আমি তখন এক ধরনের অজানা রোমাঞ্চ অনুভব করছিলাম। খেলাধুলা প্রতিযোগিতায় পুরস্কার গ্রহণের সময়টা ছিল আরেকটা শিহরণ জাগানো অংশ। 

তিনটি খেলায় অংশ নিয়ে দুটি খেলায়ই প্রথম স্থান আর অন্যটিতে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলাম আমি। আর সেজন্য তিন-তিনবার পুরস্কার নিতে যাওয়ার সময় বন্ধুরা আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়েছিল, এজন্য নিজেকে খুব গর্বিত মনে হচ্ছিল তখন। এমনকি আমার কৃতিত্বের কথাটা এখন যখন লিখছি, তখনও সেই শিহরণটা কাজ করছে। অসাধারণ সেই অনুভূতি । বিজয় দিবসে বিজয়ীর বেশে মাদরাসা থেকে বাড়ি ফিরেছি আজ।

একটি নৌকা ভ্রমণের বর্ণনা দিয়ে দিনলিপি

১লা মে, ২০২... শুক্রবার

রাত ৯টা ৩০ মিনিট

প্রাত্যহিক ছকবাঁধা জীবন একঘেয়ে লাগছিল। মনে মনে হাঁফিয়ে উঠছিলাম। তাই একটানা দুদিন কলেজ বন্ধ পেয়ে কয়েক বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম- নৌকা ভ্রমণ করার। ছোটবেলায় খাল-বিলে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নৌকা বেয়ে শাপলা-শালুক তুলেছি। নৌকা নিয়ে এদিক-সেদিক গিয়েছি। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে নৌকা ভ্রমণ করিনি কখনোই।

আজ জীবনের প্রথম পরিকল্পিত নৌকা ভ্রমণ। আমরা সঙ্গে হালকা কিছু নাস্তা আর বুট-বাদাম নিয়েছিলাম। সুমন গিটার বাজাতে জানে, সে তার গিটারটি সঙ্গে করে নিল। পরিকল্পনা ছিল চাঁদের আলোতে মাঝ নদীতে বসে বন্ধুরা সবাই মিলে আড্ডা দেব আর গান করব। পদ্মা নদী আমার বাড়ির কাছেই। বন্ধুরা মিলে গেলাম পদ্মার ঘাটে। একটা ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে সবাই তাতে উঠলাম । নৌকা মাঝ-নদীতে যেতেই আকাশে চাঁদ দেখা দিল। 

চারদিকটা জ্যোৎস্নালোকে ভেসে গেল। বন্ধুরা সবাই মিলে আনন্দে মেতে উঠল। নদীতে খুব বেশি ঢেউ ছিল না তখন। আমার কিছুটা ভয় ভয় লাগছিল, তাই মাঝিকে সাবধানে নৌকা চালাতে বললাম। একসময় আমরা পদ্মার তীর, ছেড়ে অনেক দূরে চলে এলাম। সেখান থেকে আমি পাড়ের দিকে ফিরে দেখলাম পাড়ের ঘরবাড়িগুলোকে দেখাচ্ছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খেলনা বাড়ির মতো। আর এসব বাড়িতে আলো জ্বলছে মিটমিট করে। 

এবার আমরা সবাই গোল হয়ে বসে নাস্তা করলাম । কিছু খাবার নৌকার মাঝিকে দিয়ে এলাম। আমাদের আন্তরিকতায় দুজন মাঝিই খুব খুশি হলেন। খাওয়া-দাওয়া শেষে আমরা আবার গল্পগুজবে মেতে উঠলাম। সুমন নিজেই গান গাওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান করল। আমরা যে যা পারি তারই দু-চার ছত্র করে গাইলাম । সুমন সম্পূর্ণ একটা গান গাইলো । সুমন রীতিমতো ক্লাসিক গানের চর্চা করে। আমরা তাঁর গান মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম। আমি আকাশের দিকে তাকালাম। 

পরিষ্কার আকাশে চাঁদের বিপরীত দিকে কয়েকটা তারা দেখলাম। এদিকে রাত ৮টা বেজে যাচ্ছে। মাঝেমাঝে মেঘের আড়ালে চাঁদ ঢাকা পড়েছে। তখন চারদিকে ঘন অন্ধকার নেমে আসে। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে মাঝিকে নৌকা পাড়ে ভেড়াতে অনুরোধ করলাম। ঝাপসা হয়ে থাকা বাড়ির আলোগুলো এখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠতে লাগল। আমাদের সঙ্গে আকাশের চাঁদটিও যেন ধীরে ধীরে এগুচ্ছে। এক অদ্ভূত অনুভূতিতে মন ভরে উঠল।

ফেরার পথে তেমন হৈচৈ হলো না। কিছুটা ক্লান্তি, কিছুটা এমন আনন্দঘন সময় ফেলে আসার কষ্ট— তাই সবাই একটু চুপচাপ। খুব অল্প সময়েই পথটুকু ফুরিয়ে গেল। নৌকা ভ্রমণের স্মৃতি রইল তাজা । চন্দ্রালোকিত সাগরজলের সেই অপূর্ব সুন্দর দৃশ্যাবলি পড়ে রইল পেছনে, স্মৃতিরা সঙ্গী হলো কেবল। দিগন্ত-প্লাবিত জ্যোৎস্না ভুবনের সব দুঃখ-কষ্ট ধুয়ে-মুছে নিয়ে যাচ্ছে, সবার অপেক্ষা। অপার্থিব অনুভূতিতে হৃদয়-মন-ভরে উঠল। খণ্ড-সময়ের ঘটনা হয়েও জীবন- খাতার পাতায় ঘটনাটি চিরকালীন হয়ে রইল।

একটি বিদ্যুৎহীন রাতের দিনলিপি

৩০শে মে, ২০২...
রাত ১২টা

আজকের দিনটি ছিলো মেঘে আচ্ছন্ন। সকাল থেকেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। বিকেল থেকে হালকা বাতাস আর সন্ধ্যায় শুরু হলো প্রচণ্ড ঝড়। মুহূর্তে বিকট শব্দে এলাকার ট্রান্সফরমারটা বিকল হতেই সমগ্র এলাকা বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো। রাতে বাসায় মোমবাতি জ্বালানো হলো। সেটিও শেষ হলো কিন্তু বিদ্যুৎ আসার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। 

বাবা বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে জানতে পারলেন সহসা বিদ্যুৎ আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এলাকার ট্রান্সফরমারটি পুড়ে গিয়ে সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গিয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ অফিসে রেডি কোনো ট্রান্সফরমার নেই। খবর শুনেই মা আমাকে মোমবাতি কিনতে পাঠিয়েছিলেন। মোমবাতির আলোতেই মা আর আপু কষ্ট করে রান্না করলো, আমরা খেলাম। খেয়েদেয়ে সবাই ঘুমিয়েছে, শুধু আমিই একা জেগে আছি । 

আমি জেগে আছি এজন্য যে, একে তো আমার তাড়াতাড়ি ঘুম আসে না, তার ওপর আবার আগামীকাল একটা পরীক্ষা আছে। সেটার প্রস্তুতি আগে থেকে নেওয়া হয়নি। মোমবাতির আলোতে কষ্ট করে আজ পড়তে হবে। গত দুদিনে লেখাপড়ায় যথেষ্ট অবহেলা হয়েছে। একদিন তো গেলো বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করে, পরের দিন বাসায় এসেছিল মেহমান। গুরুজনেরা ঠিকই বলেন, সময়ের কাজ সময়েই করা উচিত, তা না হলে ভুগতে হয়। আমিও তাই ভুগছি। বিদ্যুৎহীন এই রাতে যখন অন্যরা আরাম করে ঠাণ্ডা বাতাসের ছোঁয়ায় ঘুমুচ্ছে। তখন আমি মোমবাতির আলোয় বসে পড়ালেখা করছি। 

যদিও আমার তেমন খারাপ লাগছে না। গভীর মনোযোগ দিলাম আগামীদিনের পরীক্ষার বিষয়ে। চারদিক নিস্তব্ধ, বলেই বেশি সময় লাগলো না আমার নির্ধারিত বিষয় শেষ করতে। ঘণ্টাখানেক পরে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখি চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। পুনরায় পড়তে বসতে আর মন চাচ্ছিল না। ভাবলাম আজকের অভিজ্ঞতাটি দিনলিপিতে লিখে রাখি। 

মোমবাতির আলোয় বসে দিনলিপি লেখা শুরু করলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম লোডশেডিং সম্পর্কে কিছু লিখি। বিদ্যুতের অভাবে কীভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। পরক্ষণেই সেখান থেকে সরে এসে বাস্তব ঘটনাটিই লিখতে শুরু করলাম। এদিকে মোমবাতি যে শেষ হয়ে যাচ্ছে তার দিকে আমার লক্ষ ছিল না। কিছু সময়ের মধ্যেই মোমবাতি শেষ হয়ে যাবে, সংক্ষিপ্তভাবে কী লেখা যায় তা-ই ভাবছি। ইংরেজি একটা প্রবাদ মনে পড়ে গেল- 'Make hay while the sun shine.' বাংলায় আরও একটি সরল প্রবাদ লিখলাম নিজের জন্য : “আজ যা পারবে তা আগামীদিনের জন্য ফেলে রেখো না । ” মোমবাতির খানিকটা এখনও জ্বলছে, আমি দ্রুত বিছানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম ।

আপুর বিয়ের দিনের দিনলিপি 

১৯শে জুন, ২০২... শুক্রবার

রাত ১০টা

আমরা দুই ভাই, দুই বোন। সবার বড় হলো বোন। আপা আমাদের সঙ্গে সবসময় বন্ধুর মতো আচরণ করতেন। আদর-স্নেহ বলতে যা বোঝায় তা কোনো অংশেই মায়ের চেয়ে কম ছিল না। ছোটবেলা থেকেই আমাদের সবাইকে কোলেপিঠে করে তিনি বড় করেছেন। মা- বাবার কাছে বায়না ধরে যা পাইনি তা আমরা পেতাম আপার কাছ থেকে। তাই পরিবারের সবার প্রিয় ছিলেন আপা । 

আজ আপুর বিয়ে হয়ে গেল। সে শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে, এই ভেবে- ভেবে মনটা খুব খারাপ লাগছে। এতক্ষণ আত্মীয়দের ভিড়ে ছিলাম বলে বুঝতে পারিনি । নিজের রুমে এসে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। বাবা-মা বুঝতে পেরে সান্ত্বনা দিতে এসেছিলেন। তাদেরও তো কষ্ট হচ্ছে মেয়ে বিদায় দিয়ে। অথচ আপুর বিয়ে বলে আমি দিন-দুয়েক খুব আনন্দে ছিলাম। আজ যখন আপুকে বিদায় দিতে হলো, তখন বুঝতে পারলাম তাকে আমি কতটা ভালোবাসতাম। বিয়ের প্রতিটি স্মৃতি আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। আপুকে যখন সাজানো হচ্ছিল আমি পাশে ছিলাম। আপুকে একদম লাল টুকটুকে বউ দেখাচ্ছিল। তারপর বরযাত্রী আসার কথা শুনে আমরা সবাই গেট ধরতে গেলাম। 

অনেক মজা হয়েছে তখন। কিছুতেই বরের ছোটভাই আর বর আমাদের পুরো টাকা দেবে না, আমরাও নাছোড়বান্দা। বললাম, টাকা না দিলে এখানেই সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। বরযাত্রী হয়ে তারা দাঁড়িয়েই রইল কিছুক্ষণ। অগত্যা আমাদের খুশিমতোই গেট-সেলামি দিয়ে তারা ঢুকল। এরপর বিয়ে, খাওয়া- দাওয়া, তারপর এলো বিদায়ের সময়। আপু খুব কাঁদছিল। আমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু মা আমাকে যেতে দিলেন না, বললেন, 'ও কাল যাবে ।

রীতি অনুযায়ী আপুকে আমরা কাল আনতে যাব। এই ভেবে আমি আমার মনে আবার সান্ত্বনা ফিরে পেলাম। আগামী দিনটির অপেক্ষায় রইলাম আমি ।

আরও পড়ুন : ভাবসম্প্রসারণ: দুঃখের মতো এমন পরশ পাথর আর নেই(২টি)

বাংলা নববর্ষ উদযাপন বিষয়ে দিনলিপি 

১লা বৈশাখ, ১৪২... মঙ্গলবার

রাত ১০টা ৩০ মিনিট

আজকের স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করব বলে আনন্দমুখর একটা দিনশেষে লিখতে বসলাম যাতে পরবর্তী কোনো সময়ে আজকের এ স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়ালে খুব সহজেই পেয়ে যাই। আজ ছিল বাঙালির প্রাণের উৎসব, বাঙালির অস্তিত্বের উৎসব 'বাংলা নববর্ষ'। আজকের দিনটি ভালোভাবে পালনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করতে করতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল গতকাল। কিন্তু মাথার মধ্যে আজকের কথা ঘুরঘুর করায় সময়ের অনেক আগেই তা টের পেয়েছিলাম। 

আমাদের কলেজের মাঠে সারাদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে সকাল সকাল পৌছে গেলাম। গিয়ে দেখি আমার অন্য বন্ধুরা আগেই এসে গেছে। নববর্ষ উপলক্ষে সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলাম। তবে একসাথে এত মানুষের পান্তা-ইলিশ খাওয়া ছিল একটা অভূতপূর্ব ব্যাপার। এই পর্ব শেষ করার পর কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে আলোচনা সভা, স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর ও খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল। 

অনুষ্ঠান শেষ করে দুপুরে বাড়িতে এসে খেয়ে আবার দৌড়। কারণ বিকেলে বৈশাখি মেলায় ঘুরতে হবে তো! বন্ধুরা সবাই মিলে মেলা ঘুরে বেড়ালাম সারাটা বিকেল। ছোট ভাইয়ের জন্য খেলনা গাড়ি আর বোনটার জন্য মিষ্টি কিনে আনলাম। রাতে যখন বাসায় ফিরলাম তখন তারা আমার কাছে এসব জিনিস পেয়ে খুবই খুশি হলো ।

একটি বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যা/বাদলা দিনের দিনলিপি 

৫ই মে, ২০২... মঙ্গলবার

রাত ৮টা

প্রতিটি দিনই আমার কাছে নতুন, সম্ভাবনাময় এবং জীবন গঠনের নতুন প্রত্যয়ে জেগে ওঠার আহ্বান। তবে আজকের দিনটি ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে ভিন্ন। ঘুম থেকে উঠেই দেখি বাদলা দিনের মতো মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। সকাল থেকেই গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। মাঝে-মধ্যে দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার শোঁ-শোঁ শব্দ। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো, তবু বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই। আমি বারান্দায় বসে আছি। বৃষ্টি দেখছি। আমাদের টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শোনা যাচ্ছে। কী যে অপূর্ব শুনতে সামনে ঝাপসা প্রকৃতি। গাছগুলো ভিজে গেছে। একটা কাক ভিজছে পেয়ারা গাছের ডালে বসে। চুপসে গেছে কাকটা। বাসার সামনের 

আঙিনায় হাঁটু সমান পানি জমেছে। বাসায় কেউ নেই। দুপুরের দাওয়াত খেতে সবাই গেছে মামার বাসায়, বৃষ্টির কারণে ফিরতে পারেনি এখনও। হাঁস-মুরগিগুলো বারান্দায় এসে উঠেছে। আশ্রয়ের তাগিদে তারা খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আমার মতোই বৃষ্টি দেখছে। অথচ আজ তারা আমাকে একটুও ভয় পাচ্ছে না। দূরে আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে মাঝে মাঝেই সন্ধ্যার আবছা আঁধারকে দূরে ঠেলে সামনের প্রকৃতিটা পরিষ্কারভাবে নজরে এনে দিচ্ছে। ভাবছি, আজ রাতে বাঙালির চিরাচরিত বৃষ্টির দিনের খিঁচুড়ি, সঙ্গে ইলিশ ও বেগুন ভাজা করব। বৃষ্টি যে কখন থামবে বোঝা যাচ্ছে না। সিডি প্লেয়ারে গান বাজছে রবীন্দ্রসংগীত- "আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে।'

খুব রোমান্টিক একটা সন্ধ্যা। মন কেমন আকুতি-মিনতি করছে। মনের সব কথা উজাড় করে কবিগুরুর ভাষায় বলতে ইচ্ছে করছে, “এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘন ঘোর বরিষায়।

একটি শীতের সকালের দিনলিপি 

১৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২...

রাত ১১টা

শীতের সকাল আমাদের কাছে একটা রৌদ্রমাখা সকাল। বিশেষত শীতকাল এলে যে এ সকাল অনেকের কাছেই প্রতীক্ষিত হয়ে ওঠে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সবাই সেই কাকডাকা ভোর থেকে প্রতীক্ষা করতে থাকে কাঙ্ক্ষিত সূর্যদেবতার একটু ছোঁয়া পাওয়ার জন্য। শহরের শীতের সকালগুলোর রূপ ভিন্ন রকমের। শহরের ইটের পর ইট প্রকৃতিকে উপভোগ করতে দেয় না। এখানে উত্তরের শীতল বাতাস বয়ে আসে; কিন্তু তার সঙ্গে খেজুরের রস কিংবা খেজুরের গুড়ের মন-মাতানো গন্ধ আমোদিত করে না। 

শহরের শীতের সকাল কেবল কাকের ডাক, কলের শব্দ, ডিজেল-পেট্রোলের গন্ধ এবং বাস- ট্রাকের শব্দে মিশে যায় শত কোলাহলে। সকালে অফিসমুখী মানুষের ছোটাছুটি। কিন্তু সত্যিকারের অর্থে শীতের সকালের তাৎপর্য গ্রামেই। গ্রামীণ প্রকৃতিতেই শীতের সকাল একটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে । সকালে দাদুর ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে গেল। দাদুর সাথে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ির আঙিনায়। গাঁয়ের মানুষের শীতের সকাল কাটে আগুনের কুণ্ড কেন্দ্র করে । পাশের বাড়িতে খড়কুটো দিয়ে আগুনের কুণ্ড তৈরি করে গাঁয়ের মানুষ তার চারদিকে বসে আগুনের উত্তাপ উপভোগ করছিল। 

আমরাও যোগ দিলাম তাদের সঙ্গে। শীতের প্রকোপ নিয়ে নানা রকমের কথা হচ্ছিল। এবারের শীত, গেলো বছরের শীতের চেয়ে বেশি ইত্যাদি। চাচা-চাচীসহ বয়ঃবৃদ্ধরা আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। কেউ কেউ সঙ্গে মুড়ি-চিড়া, কেউবা গরম পিঠা নিয়ে এসেছে সঙ্গে করে। আমরা বেশ আনন্দের সঙ্গেই নানা গল্পগুজবে মেতে উঠেছিলাম। আমার পাশেই হাত-পা গুটিয়ে একটি ছোট শিশু এসে বসল। নাম তন্ময়। তন্ময়ের বাবা খুবই গরিব একজন বর্গাচাষি। 

শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা করার জন্য বাবা তার গায়ের একমাত্র চাদরটি তন্ময়ের উলঙ্গ শরীরে প্যাচিয়ে বেঁধে দিয়েছেন। বাবা সন্তান-স্নেহের উত্তাপ নিয়ে শীতকে উপেক্ষা করে ভোর বেলাতেই কৃষিকাজে মাঠে গিয়েছেন। এদিকে তন্ময় আমাদের সঙ্গে এসে যোগ দিয়েছিল। আমি প্রথম থেকেই তাকে লক্ষ করছিলাম যে, চাদর ছাড়া তার পরনে কোনো প্যান্ট-গেঞ্জি বলতে কিছুই নেই। বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করেছিল বলে গল্পের আসরে আর মন বসাতে পারছিলাম না। 

এর মধ্যে খেজুরের রস নিয়ে হাজির হলো একজন বয়স্ক মানুষ। শীতে কাঁপছে, তার গায়ে পাতলা একটা জামা। নিচের গেঞ্জিটা স্থানে স্থানে যে ছিঁড়ে গেছে তা জামার উপর দিয়েই দেখা যাচ্ছে। মুখে হাসি নিয়ে গ্লাস ভরে আমার দিকে খেজুরের রস এগিয়ে দিল। খাও বাবা, যত খুশি খাও। শিশু ছেলেটি তাকে বাবা বলে সম্বোধন করতেই বুঝতে পারলাম লোকটি তন্ময়ের বাবা। দাদু আমার দিকে এগিয়ে দিলেন ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা। কোথা থেকে সংগ্রহ হলো, কে বানালো আমি তার কিছুই বুঝতে পারলাম না। 

আমি শুধু তাদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হচ্ছিলাম। গ্রামের মানুষ এখনও কতো সহজ-সরল রয়ে গেছে ভাবতেই মন ভরে গেল। দারিদ্র্য তাদের ভালোবাসা আর আন্তরিকতাকে কেড়ে নিতে পারেনি। সবাই পিঠাপুলির প্রশংসা করতে লাগল, কার হাতের পিঠা কতটা ভালো হয়, কে ভালো পিঠা তৈরি করতে পারে ইত্যাদি। আমি নীরবে সবই শুনে গেলাম, কিন্তু আমার মন থেকে তন্ময়ের অর্থ-উলঙ্গ ছবিটা কোনোভাবেই মুছতে পারলাম। না। আমি পরদিন বিকেলেই শহরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম । 

ফেরার পথে তন্ময়ের বাবার হাতে আমার হোস্টেলের খরচা থেকে কিছু টাকা এবং মায়ের কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে আসা গায়ের চাদরটি তুলে দিয়েছিলাম গোপনে। তন্ময়ের বাবা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়েছিল, কারও মুখে কোনো কথা নেই, দুজনের চোখভরা জল। কথা বলতে গেলেই চোখের জল আর বাঁধা মানবে না। কিছু না বলেই দ্রুত বিদায় নিলাম। কিন্তু চোখের জল বেশি সময় আটক রাখা গেল না- আমার দুচোখ গড়িয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনের একটি দিনলিপি 

১৬ই এপ্রিল, ২০২...

রাত ১০টা

আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তবু মুক্তিযুদ্ধ আমাকে আলোড়িত করে, রক্তে জাগায় শিহরণ। যতবারই মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা শুনেছি কিংবা পড়েছি ততোবারই মনে হয়েছে আমি নিজেই যেনো একজন মুক্তিযোদ্ধা। তাই মুক্তযুদ্ধ জাদুঘরে যাওয়ার সংকল্প আমার দীর্ঘদিনের। আজই আমার দীর্ঘদিনের সে ইচ্ছেটুকু পূরণ হলো ।

ঘুম থেকে উঠেছিলাম খুব ভোরে। একেবারে গোসল সেড়ে নাস্তা করলাম। ইস্ত্রি করা পাঞ্জাবি গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে পড়লাম- মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্দেশে। আগেই জানা ছিল, জাদুঘরটির অবস্থান জাতীয় প্রেসক্লাবের ঠিক বিপরীত দিকের পথে। কাছে যেতে পড়ল- হলুদ সাইনবোর্ডে, লাল হরফে লেখা 'মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।' যথানিয়মে টিকিট কিনে জাদুঘরে প্রবেশ করলাম। দেখলাম পেছনে পাথরের বুকে খোদাই করা এমন বাণী- ভুলি নাই শহিদের কোনো স্মৃতি ভুলব না কিছুই আমরা পক্তিগুলো বারবার আবৃত্তি করতে করতে প্রবেশ করলাম মূল কক্ষে। 

মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর বলতেই মনে হয়, এখানে সংরক্ষিত থাকবে মুক্তিযুদ্ধের নানা তথ্য ও নিদর্শন। কিন্তু এখানে যা দেখছি তা আমার ভাবনা ও কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি। নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বের হলো- “কত অজানারে জানাইলে তুমি।' আমি বুঝতে পারলাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম কেবল মার্চ মাসে শুরু হয়নি, এর সূচনা আরও আগে। সেই ১৮৫৭ সালের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকেই শুরু হয়েছিল এ দেশের মানুষের মুক্তির লড়াই। তাই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেও ১৮৫৭ সাল থেকে শুরু হওয়া মুক্তি সংগ্রামের নিদর্শনগুলো ধারাবাহিকভাবে সাজানো হয়েছে। 

পাশাপাশি রয়েছে বাংলার প্রাচীন ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান ও বিভিন্ন নিদর্শন। কারণ, যে বাঙালি জাতি লড়াই করেছিল একাত্তরে, সে জাতি হাজার বছরের পুরোনো সভ্যতায় গরীয়ান। শিখা চির-অম্লানের বাঁ দিকের প্রথম গ্যালারিতে ঢুকে দেখলাম, এখানে দুই ভাগে নিদর্শনগুলো বিন্যস্ত। প্রথম পর্বে রয়েছে, বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এবং দ্বিতীয় পর্বে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের বিভিন্ন নিদর্শন। হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলাম- এই তিন ধর্মের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা বাঙালি সংস্কৃতির একটা পরিচয় পেলাম এখানে ।

দ্বিতীয় পর্বে গিয়ে আমি কৌতূহলী হয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলা যেখানে পরাজিত হয়েছিল সেই পলাশীর আম্রকাননের নকশাটা খুঁটিয়ে দেখলাম। এর সঙ্গেই সাজানো টিপু সুলতান, তিতুমীর, রাজা রামমোহন রায়-এর প্রতিকৃতি, ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকীসহ অনেকের স্থির চিত্র। ফটোগ্রাফ বারবার আমাকে সেই সুদূর অতীতে টেনে নিয়ে গেল। এরপর আমি গ্যালারি দুইয়ে প্রবেশ করলাম। গ্যালারি দুই থেকেই শুরু হয়েছে পাকিস্তান আমলের ইতিহাস। একে একে ১৯৫২- এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর সাধারণ নির্বাচন, ১৯৫৮-এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬-এর ৬-দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০-এর নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন দলিল, ছবি ও স্মারক দেখতে পেলাম ।

গ্যালারি তিন-এ সাজানো রয়েছে পাকবাহিনীর নিষ্ঠুর বর্বরতার ছবি, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা, প্রাথমিক প্রতিরোধ, প্রবাসী সরকার ও সেক্টর কমান্ডারদের তৎপরতার তথ্য। গ্যালারি চার ও পাঁচ-এ দেখলাম প্রতিরোধের লড়াই, গেরিলাযুদ্ধ, নৌ-কমান্ডো, বিমানবাহিনী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন, পাকবাহিনীর দালাল রাজাকারদের ভূমিকা, বীরশ্রেষ্ঠ, শহিদ বুদ্ধিজীবী, চূড়ান্ত লড়াই এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিজয়-স্মারক, বিবরণ ও ছবি। সবশেষে চমৎকার ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে দোতলা থেকে চত্বরে নেমে এলাম। এখানে রয়েছে চমৎকার রুচিসম্পন্ন একটি জলখাবারের দোকান। বইপত্র ও স্মারক সামগ্রীর একটি বিপণী বিতানও আছে। জাদুঘরের সামনে রয়েছে ১০০ আসনবিশিষ্ট একটি চমৎকার অডিটোরিয়াম ।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর দেখে এক অদ্ভুত অনুভূতিতে মন ভরে উঠল। সত্যিই, কী বিপুল আত্মদানের বিনিময়ে, কী অনন্য সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতা। সেই আত্মদান, সেই গৌরবের ইতিহাসকে ধরে রেখেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। স্বচক্ষে তা দেখতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে হলো। বার বার এ গৌরবগাঁথা দেখার ইচ্ছে পোষণ করে বাসার উদ্দেশে পা ফেললাম । সঙ্গে রইল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আর বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাঁথার বিরল স্মৃতিগুলো।

পুরোনো বন্ধুর সাথে সাক্ষাতের একটি দিনলিপি 

১৭ই এপ্রিল, ২০২... শুক্রবার

রাত ১০টা

বহুদিন পর আজ দেখা মিঠুর সঙ্গে। এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট শেষে কোথায় যে সে হারিয়ে গেল। আর কোনো খবর পেলাম না তার। কোথায় কোন কলেজে ভর্তি হয়েছে, দিনকাল কেমন কাটছে এসবের কিছুই আমি জানি না। যদিও খুব বেশিদিন হয়নি, তবুও আমাদের বন্ধুত্ব এতোটাই গভীর ছিল যে, একটা দিনকেই অনেকদিনের গল্প বলে মনে হয়।

মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম ময়মনসিংহে। মামাতো ভাই তপুর সাথে বিকেলে রাস্তায় হাঁটছিলাম, এমন সময় হঠাৎ মিঠুর দেখা মিলল। প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, আমার সামনে মিঠু দাঁড়িয়ে আছে। তার অবস্থাও আমার মতোই। কিছুক্ষণ আমরা দুজনই কথা বলতে পারলাম না। ফিরে পেয়ে দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরলাম। সেই যে পরীক্ষার ফলাফলের দিন সাক্ষাৎ হয়েছিল, তারপর আজই প্রথম। কিছু না বলে চলে এলেও মিঠুর ওপর আমি রাগ করে থাকতে পারলাম না। শুনলাম সে এখানকার কলেজে ভর্তি হয়েছে। ওর বাবার চাকরিতে বদলি হওয়ার সুবাদে এখানে চলে আসতে হয়েছে।

আমি এখন কী করছি তা জানতে চাইল মিঠু। বললাম যে, আমি সেখানকার একটা কলেজে ভর্তি হয়েছি। ছুটি পেয়ে মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। মিঠুর সাথে তপুর পরিচয় করিয়ে দিলাম। তারপর তিনজনে মিলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়ে সারা বিকেল আড্ডা দিলাম। নদীর জলস্রোত বয়ে যাওয়ার মতোই অনেকগুলো দিন বয়ে গেছে আমাদের দুজনার জীবন থেকে। আজও বয়ে যাচ্ছে। নদীর মতো বয়ে যাওয়াই যেন জীবনের ধর্ম। নিমিষেই যেন কেটে গেল বিকেলটা। আরও কিছুটা সময় একসঙ্গে কাটাতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু নদীর জলের মতো সহজ নয় জীবনের পথ। বাস্তবতার গতিপথ নদীর গতিপথ থেকেও জটিল ও বাঁকা ।

হাত ধরাধরি করে হাঁটছিলাম একসঙ্গে, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই বিদায় নিলাম দুজনে দুজনার কাছ থেকে। জোড় হাত দুটি নীরবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল পরস্পরের বন্ধন থেকে। আমি টের পেলাম কিন্তু হাসিমুখে বিদায় নিলাম। খণ্ড-সময়ের ঘটনা হয়েও জীবন-খাতায় ঘটনাটি চিরকালীন হয়ে রইল।

কলেজ জীবনের বিদায় অনুষ্ঠানের দিনলিপি 

১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২... মঙ্গলবার

রাত ১১টা

দিন আসে দিন যায়, মাস পেরিয়ে একসময় বছরও কেটে যায়— স্মৃতি- বিস্মৃতির দোলায় জীবনও থেমে থাকে না। সুখ-দুঃখকে বয়ে নিয়ে সেও ধেয়ে চলে। দেখতে দেখতে কলেজ জীবনও শেষ হয়ে গেল। কখন যে দুটো বছর পেরিয়ে গেল টেরই পাইনি। আজ ছিল আমার কলেজ জীবনের বিদায় দিন ।

দিনটি ছিল মঙ্গলবার। চঞ্চল মন আজ অনেকটাই বিষাদ-বেদনায়, ভারাক্রান্ত ছিল। তবুও একটা আনন্দ-উত্তেজনা আমাকে বারে বারে তাড়া করে ফিরেছে। এর সঙ্গে ফাইনাল পরীক্ষার ভয় ছিল। কিছুটা অস্থির চিত্তেই হাজির হয়েছিলাম কলেজের শেষ দিনটিতে- বিদায় অনুষ্ঠানে ।

গতদিন আমাদের ফরম পূরণের শেষদিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ আমাদের বিদায়ের দিন। কলেজের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায়-সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আমরা যারা পরীক্ষার্থী ছিলাম সবাই অন্যদিনের চেয়ে দু-ঘণ্টা আগেই কলেজে এসে হাজির হয়েছিল। কিন্তু এ কী বা। আজ আর কারো মনে কোনো আনন্দ নেই, নেই কোনো চঞ্চলতা, সবার চোখেমুখে একটা বিষণ্নতর ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। চারদিক যেন বিদায়ের সকরুণ ঘণ্টাধ্বনি বেজে চলেছে, গির্জার ঘণ্টাধ্বনির মতো সে ধ্বনি আকাশে-বাতাসে প্রতিফলিত হয়ে আমার হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করেছিল। মনে হলো, সবচেয়ে বেশি কষ্ট বোধ হয় আমিই পেয়েছিলাম। আসলে এ-কষ্ট এবং দুঃখ কাউকে বোঝানো কিংবা বলা যায় না বলেই এর তীব্রতা ও দহন এত বেশি ।

সে যাক, যথাসময়ে অনুষ্ঠান শুরু হলো। অনুষ্ঠানের শুরুতেই কলেজের প্রথম বর্ষের কৃতী ছাত্রী ফাহমিদা আমাদের সবাইকে ফুলের-মালা পরিয়ে দিল। শুরু হলো বিদায়পর্ব। ছাত্রসংসদের সম্পাদক মামুন সূচনা- ভাষণ দিলেন। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে অনেকেই বক্তব্য রেখে আমাদের প্রতি তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করল। কলেজের শ্রেষ্ঠ ছাত্র হিসেবে আমাকে যখন বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য বলা হলো, তখন আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না কীভাবে কথা বলব। 

স্বভাবতই আমি একটু বেশি আবেগপ্রবণ, তার ওপর বিদায়ের এই দিনে কিছু বলা আমার জন্য যে একেবারেই অসম্ব ছিল। কিন্তু অধ্যক্ষের আদেশবলে তা প্রত্যাখান করা আদৌ সম্ভব নয়, শেষ পর্যন্ত বক্তব্যের জন্য দাঁড়ালাম- 'এত আশা, এত নিরাশা, এত দুঃখ কেন?'—যেতে নাহি মন চায়.......-এতটুকু বলার পর আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম । আমি জানি আমার মুখ দিয়ে আর' একটি অক্ষর বের হলে তা গগনবিদারী চিৎকার হয়ে বের হতো। দু-চোখের জল বাঁধ মানল না। 

দীর্ঘ পনেরো সেকেন্ড পর অতি কষ্টে উচ্চারণ করলাম আমাদের জন্য দোয়া করবেন। এই বলে আমার বক্তব্য শেষ করতে হলো। উপস্থিত সবাই আমার সঙ্গে আবেগপ্রবণ হলো। কিছুটা সময় নিশ্চুপ কাটল, কোনো পিনপতনের শব্দ হলো না। সভাপতির ভাষণে বক্তব্য রাখলেন আমাদের পরম শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক মাননীয় অধ্যক্ষ। তিনি আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে চলার পথের পাথেয় সম্পর্কে নানা উপদেশ দিলেন।

সবশেষে আমাদের সবাইকে উপহার হিসেবে একটি করে বই ও কলম দেওয়া হলো। এরপর বিদায়ের গানে বেদনার সুর বেজে উঠতেই আমাদের মাদরাসা জীবনের শেষ দিনের মুহূর্তগুলো হৃদয়পটে ছবির মতো আটকে গেল। চিরকাল স্মরণীয় করে রাখতে লিপিবদ্ধ করলাম আজকের দিনলিপিতে।

পরীক্ষার পূর্বরাতের একটি দিনলিপি 

১৬ই এপ্রিল, ২০২...

রাত ১০টা

আমার পরীক্ষার পূর্বরাতের দিনলিপিটি খুব সাধারণ। আমি সাধারণত দু'তিন ঘণ্টার বেশি পড়ি না। নতুন করে কোনো বিষয় পড়ার অভ্যাস আমার নেই বললেই চলে। কেবল চোখ বুলিয়ে যাওয়া আর কি। এ কাজটি আমি রাত আটটার মধ্যে শেষ করি I প্রতিদিনের কথাগুলো প্রতিদিন লিখে রাখাটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে বলে আজকের কথাগুলো না লিখে স্বস্তি পাচ্ছি না। একটু পরে ঘুমাতে যাব। কিছুটা আগে থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম বলে আজ তেমন একটা চাপ নেই। 

কিছুক্ষণ আগে মা দেখে গেলেন আমি কী করছি। ডায়েরি নিয়ে বসে আছি দেখে মা মৃদু হেসে চলে গেলেন। কারণ, মা জানেন যে, আমার প্রয়োজনীয় পড়া শেষ করেছি বলেই আমি ডায়েরি নিয়ে বসেছি। আমাকে পড়ার ব্যাপারে খুব একটা চাপ দিতে হয় না, আর বাবা-মা তা কখনো করেন না। তবে পরীক্ষার পূর্বরাতে সবার যেমন অনুভূতি হয়, আমার তেমন হচ্ছে না। যা যা পড়েছি তা থেকে কমন আসবে কি না, তা নিয়ে একটু চিন্তা হচ্ছে বৈকি। মনে হচ্ছিল, আরেকটু বেশি করে পড়লে বেশ ভালো লিখতে পারব। 

জানি না দ্রুত ঘুম আসবে কি না। তবে আমি খুব চেষ্টা করব ঘুমানোর। চিন্তা বাদ দিয়ে নিশ্চিত মনে ঘুম হওয়াটা পরীক্ষার জন্য বেশ জরুরি। এ কথাটা মাথায় রেখে আমি ভালো একটা ঘুমের চেষ্টা করব । মাথার পাশে বই নিয়ে ঘুমানো আমার অভ্যাস। যা যা পড়েছি তা স্মরণ করতে করতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদি স্মরণে না আনতে পারি বই খুলে আবার দেখে নিই। আজ এমনটি হবে বলে মনে হচ্ছে না। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়ে দিনলিপি লেখা বন্ধ করে ঘুমাতে গেলাম ।

আকস্মিক উপহার পাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে দিনলিপি

১২ই জুন, ২০২... শুক্রবার

রাত ৯টা ১৫মিনিট

উপহার পেতে সবারই কম-বেশি ভালো লাগে। আজ হঠাৎ করেই একটা দামি মোবাইল সেট উপহার পেলাম। উপহারটি পাঠিয়েছেন মামা। মামা প্রায় ছয় বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া থাকেন। এ-বছর দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু গ্রিনকার্ড পেতে আরও দুবছর লাগবে বলে মামা আমাদের সবার জন্য অনেকগুলো উপহার পাঠিয়েছেন। মামা জানালেন, দেশে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েই উপহারগুলো আগে থেকেই কিনে রেখেছিলেন। কিন্তু দেশে ফিরতে বিলম্ব হতে পারে ভেবে সবার উপহার দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। 

আমি তো মোবাইল সেট পেয়ে খুশিতে আত্মহারা । মামা আমার জন্য এতো দামি একটা উপহার পাঠাবেন, এটা কখনো ভাবিনি। কারণ, আমি যে মাত্র উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছি। মামার উপহার আজ সন্ধ্যায় হাতে পেয়ে তখন মামাকে ধন্যবাদ জানাতে স্কাইপিতে গেলাম। মামা আমাকে এখন ফোনটা খুব বেশি ব্যবহার করতে বারণ করলেন। কারণ সামনে আমার আলিম পরীক্ষা। মামা ফোনের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বললেন। পরীক্ষা শেষ করে ফোন হাতে নিলে তিনি

খুশি হবেন বলে আমাকে জানালেন। আমিও নির্দ্বিধায় মামাকে কথা দিলাম। তবে আজকে ব্যবহার করব বলে জানালাম। মামার সাথে কথা শেষে আমি মোবাইলটা একটু হাতে নিয়ে দেখলাম। একটা সিম লাগিয়ে নানার সাথে কথা বললাম। মামা ফোন দিয়েছে শুনে নানা খুব খুশি হলেন। কিছুক্ষণ মোবাইলটা নিয়ে গবেষণা করলাম। আমার নিজের কোনো মোবাইল ফোন না থাকলেও, বাবার এরকম একটা ফোন আছে বলেই খুব একটা সমস্যা হলো না। তারপর আমি মোবাইলটা মায়ের হাতে দিয়ে দিলাম। মা আমাকে ভরসা দিলেন, প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে ব্যবহার করতে পারব।

আরও পড়ুন : বিদ্যালয়ের শেষ দিনের মানসিক অবস্থা জানিয়ে বন্ধুকে চিঠি -২টি 

একটি বনভোজনের স্মৃতি নিয়ে দিনলিপি 

২৭শে এপ্রিল, ২০২... সোমবার

রাত ১০টা ২০ মিনিট

গতকাল ছিল আমার জীবনের প্রথম বনভোজনের সুযোগ । বনভোজনের জন্য দিনটি আমাদের মাদরাসা থেকে নির্ধারিত হয়েছিল। গতকাল আমরা সকাল সাড়ে ৮টায় মাদরাসায় উপস্থিত হয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, আমাদের জন্য ভাড়া করা বাস দুটি আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে। আমরা সবাই একসাথে হওয়ার পর ৯টায় আমাদের গন্তব্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদের দিকে যাত্রা আরম্ভ করলাম। যাত্রাপথে আমরা গান ও মজাদার কৌতুক পরিবেশন করে আনন্দ করলাম। 

১১টার দিকে আমরা ছোট সোনা মসজিদে পৌঁছলাম। গাড়ি থেকে নেমে আমরা প্রথমে আমাদের সকালের নাস্তা খেলাম, তারপর সবাই একসাথে সোনা মসজিদ দেখতে লাগলাম। ছোট সোনা মসজিদ অনেক প্রাচীন একটি মসজিদ। এটি ইট-পাথর দিয়ে নির্মিত। মূল মসজিদের সামনে রয়েছে একটি বড় ফটক। ফটকের পর বেশ খানিকটা খোলা জায়গা এরপর মূল মসজিদ। মসজিদের ভেতরে বেশ কয়েকটি মেহরাব রয়েছে যার কারুকার্য অপূর্ব সুন্দর। মসজিদের ভেতরের ডানদিকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি রয়েছে।

মসজিদের বাইরেও বামদিকে সিঁড়ি রয়েছে, যা দিয়ে মসজিদের ভেতর দেখা যায়। মসজিদের বাইরের মেহরার ও পিলারের কারুকার্য অত্যন্ত সুন্দর। ছোট সোনা মসজিদের পাশে রয়েছে, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কবর। মসজিদের বাইরের দিকে তাকালে লক্ষ করা যায় কবরস্থান। এর বামদিকে বিশাল পুকুর এবং তার আশপাশে রয়েছে অনেক আমবাগান ।

ছোট সোনা মসজিদ দেখা শেষ হওয়ার পর প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সেই সময়ের রাজার নির্মিত ভুলভুলাইয়া এবং এর সংলগ্ন মাজার ও মসজিদ পরিদর্শন করলাম। তিনটি স্থাপনার সামনে ছিল সুদৃশ্য একটি দিঘি। এরপর আমরা সেখান থেকে কিছু দূরে গেলাম প্রাচীন স্থাপনার ভগ্নাবশেষ দেখতে। এই ভগ্নাবশেষ সম্পর্কে ধারণা করা হয়, এটি ছিল প্রাচীন পাঠশালা। ভগ্নাবশেষ দেখা শেষ হলে আমরা দুপুরের খাবারের জন্য আবার ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে ফিরে এলাম। 

খাওয়ার পর আমরা বিনোদনের জন্য উপস্থিত বক্তৃতার আয়োজন করেছিলাম এবং বিজয়ীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা ছিল। বিকেল হয়ে আসায় আমরা মাহাদীপুর স্থলবন্দরে গেলাম বাংলাদেশ- ভারত সীমানা দেখার জন্য। আমরা সবাই সেখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম, এক পা বাংলাদেশে এবং আর এক পা ভারতে রেখে। সত্যিই তা ছিল অতুলনীয় অভিজ্ঞতা। অবশ্য এজন্য আমাদের আগেই বিজিবি'র কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়েছিল। 

ছবি তোলার পর্ব শেষ করে ৬টার সময় আমরা ফেরার জন্য রওনা হলাম। পথে আমরা প্রত্যেকের অনুভূতি একে অন্যের সাথে বিনিময় করলাম । বনভোজনের এই দিনটি আমার জীবনের একটি শ্রেষ্ঠ দিন। গতকাল সারাদিন ঘোরাঘুরি করার ফলে খুব ক্লান্ত ছিলাম, তাই এসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বলে কথাগুলো দিনপঞ্জির পাতায় লিখতে পারিনি, আজ লিখে রাখলাম ।

একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনের ঘটনা নিয়ে দিনলিপি

২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২... শুক্রবার

রাত ১১টা ৫০ মিনিট

মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনের একটি স্মরণীয় দিন। কারণ বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আমাদের দেশের দামাল ছেলেরা বুকের রক্ত দিয়েছিল রাজপথে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে দমিয়ে রাখতে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্রের সেই ষড়যন্ত্র শুরুতেই নস্যাৎ করে দিতে সালাম, বরকত, রফিকেরা সেদিন রাজপথে আন্দোলনে নেমে শহিদ হয়েছিলেন। সেই ভাষা শহিদদের স্মরণে দিনটা শুরু হয়েছিল প্রভাতফেরির মাধ্যমে। এখন এটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। 

এ দিনটি উদ্‌যাপনের জন্য খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে মাদরাসার প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরা সমবেত হয়েছিলাম। শিক্ষকগণসহ আমরা শহিদ মিনারে উপস্থিত হয়ে ভাষাশহিদদের জন্য দোয়া করলাম। তারপর মাদরাসায় আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে যোগদান করলাম বন্ধুদের সাথে। মিলাদ মাহফিলের পর মাদরাসার অধ্যক্ষ ও অন্য শিক্ষকগণ আজকের দিনটির মহিমান্বিত দিকসমূহ আমাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলেন। এই আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে রচনা ও কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অধ্যক্ষ মহোদয়। 

আমি নিজেও রচনা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারের জন্য পুরস্কার পেয়েছি। অনুষ্ঠান শেষে বাড়িতে এসে বাবা-মাকে পুরস্কার দেখালাম । তারা খুব খুশি হলেন। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি তথা শহিদ দিবস উপলক্ষে ছুটির দিন ছিল বলে বাড়িতেই ছিলাম সারাদিন। দুপুরে নামাজ পড়ার সময় ভাষাশহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করলাম। আমি ভাষাশহিদদের কথা স্মরণ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার আহ্বান জানালাম অন্যদেরকেও। তাদের কীর্তিগাথা কোনোদিনই ভুলবার নয় ।

ঈদুল ফিতরের বর্ণনা দিয়ে দিনলিপি 

১০ই জুন, ২০২...

বুধবার, রাত ১১টা

ঈদুল ফিতর মানেই অন্যরকম আনন্দ। দীর্ঘ একমাস রোজা শেষে আসে ঈদুল ফিতর। তবে এবারের ঈদুল ফিতর অন্য সময়ের চেয়ে ব্যতিক্রম। কারণ, এবারই প্রথম বাবা-মাকে ছেড়ে ঈদ পালন করছি। কারণ, মা-বাবা উমরার সফরে সৌদি আরব অবস্থা করছেন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কিছুক্ষণ কেঁদে নিলাম। এ বাড়িতে ভাইবোনদের মাঝে সবার বড় আমি। আমার ওপর কিছু দায়িত্ব রয়েছে। তখনও কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। আমি এর মধ্যেই সেমাই, পায়েস, নুডলস, পুডিং তৈরি করলাম। 

একে একে সবাই উঠতে শুরু করেছে। একটু মুখে দিয়েই হইচই করে বাড়ির ছেলেরা ঈদের নামাজ পড়তে গেল। আমি নতুন পোশাক পরলাম। বড়রা নামাজ শেষ করে নাস্তা করল। এরপর দুপুরের আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। সবার জন্য ভালোভাবে রান্না করলাম মায়ের শিখিয়ে দেওয়া রেসিপিতে। ছোটবোন ফাহিমা আমাকে রান্নার কাজে সাহায্য করেছে। বাড়িতে এত কাজ আমি সারা জীবনেও করিনি। বিকেলে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু বিশ্রাম নেওয়ার মতো অবসর পেলাম না। বিকেলে মেহমান এলো। রাতে আমাদের সবার দাওয়াত ছিল মামার বাসায়। ওখান থেকে ফিরে এলাম রাত এগারোটায়। কিন্তু প্রতিদিনের অভ্যাসের কারণে এখন কিছু লিখলাম। আমার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এসেছে।

আরও পড়ুন : বৈশাখী মেলার বর্ণনা দিয়ে বন্ধুকে - পত্র 




Post a Comment

0 Comments