সংজ্ঞা : স্বরবর্ণের সাথে ব্যঞ্জন বর্ণের, ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে ব্যঞ্জন বর্ণের এবং ব্যঞ্জন বর্ণের সাথে স্বরবর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। যেমন-
পরি + ছদ = পরিচ্ছদ, উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ, দিক + অন্ত = দিগন্ত ইত্যাদি।
ব্যঞ্জন সন্ধি কত ভাবে হতে পারে?
ব্যঞ্জনসন্ধি মূলত তিনভাবে হয়ে থাকে। যথা :
(ক) স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির মিলনে।
(খ) ব্যঞ্জনধ্বনি ও স্বরধ্বনির মিলনে।
(গ) ব্যঞ্জনধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনির মিলনে।
স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি :
১. স্বরবর্ণের পর ছ থাকলে ছ স্থলে চ্ছ হয়। যেমন-
অ + ছ = চ্ছ | প্র + ছদ = প্রচ্ছদ |
আ + ছ = চ্ছ | আ + ছাদন = আচ্ছাদন |
ই + ছ = চ্ছ | পরি + ছেদ = পরিচ্ছেদ |
উ + ছ = চ্ছ | তরু + ছায়া = তরুচ্ছায়া |
ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি :
১. বর্গীয় প্রথম বর্ণের (ক, চ, ট, ত, প) পর স্বরবর্ণ থাকলে উক্ত বর্গের প্রথম বর্ণ নিজ নিজ বর্গের তৃতীয় বর্ণে (গ, জ, ড, দ, ব) পরিণত হয় এবং পরবর্তী স্বরবর্ণ পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হয়। যেমন-
ক + অ = গ | দিক্ + অন্ত=দিগন্ত |
ক + আ = গ | বাক + ধারা=বাগধারা |
চ + অ = জ | নিচ + অন্ত=নিজন্ত |
ট + ঋ = ড় | ষট + ঋতু = ষড়ঋতু |
ত + ই = দ | সৎ + ইচ্ছা = সদিচ্ছা |
প + অ = ব | সুপ + অন্ত = সুবন্ত |
আরও জানুন : স্বরসন্ধি কাকে বলে?স্বরসন্ধি গঠনের দশটি নিয়ম।উদাহরণ সহ ব্যাখ্যা
ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি :
১। ত্ কিংবা দ্ এর পর চ্ কিংবা ছ্ থাকলে ত্ ও দৃ স্থলে চ্ হয়। যেমন-
ত + চ = চ্চ | সৎ + চরিত্র = সচ্চরিত্র |
ত + ছ = চ্ছ | উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ |
দ + চ = চ্চ | বিপদ + চিন্তা = বিপচ্চিন্তা |
দ + ছ = চ্ছ | বিপদ + ছায়া = বিপচ্ছায়া |
২। ত্ কিংবা দ্ এর পর জ্ কিংবা ঝ থাকলে ত্ ও দৃ স্থলে জ হয়। যেমন-
ত + জ = জ্জ | উৎ + জ্বল = উজ্জ্বল |
ত + জ = জ্জ | সৎ + জন = সজ্জন |
দ + জ = জ্ | বিপদ + জনক = বিপজ্জনক |
ত + ঝ = জ্ঝ | কুৎ + ঝটিকা = কুজ্ঝটিকা |
৩। ত্, ও দ্ এর পর ট কিংবা ঠ থাকলে ত্ ও দৃ স্থলে ট্ হয়। যেমন-
ত + ট = ট্ট | বৃহৎ + টীকা = বৃহট্টীকা |
ত + ঠ = টঠ | বৃহৎ + ঠাকুর = বৃহঠাকুর |
দ + ট = ট্টী | তদ + টীকা = তট্টীকা |
৪। ত্ কিংবা দ্ এর পর ড্ কিংবা ঢ থাকলে ত্ ও দৃ স্থলে ড্ হয়। যেমন-
ত্ + ড্ = ড্ড | উৎ + ডীন = উড্ডীন |
ত + ঢ = ড্ঢ | মহৎ + ঢাল = মহড্ঢাল |
৫। ত্ কিংবা দ্ এর পর ল্ থাকলে ত্ ও দৃ স্থলে ল্ হয়। যেমন-
ত্ + ল্ = ল্ল | উৎ + লাস = উল্লাস |
ত্ + ল্ = ল্ল | উৎ + লেখ = উল্লেখ |
ত্ + দ = ল্ল | তদ্ + লিখিত = তল্লিখিত |
আরও জানুন : নিপাতনে সিদ্ধ সরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধি:সহজে মনে রাখার উপায় ও উদাহরণ
৬। ত্ কিংবা দ্ এর পর শ্ থাকলে ত্ ও দৃ স্থলে চ্ হয় এবং শ স্থলে ছ হয়। যেমন-
ত্ + শ = চ্ছ | উৎ + শৃঙ্খল = উচ্ছৃঙ্খল |
ত্ + শ= চ্ছ | উৎ + শ্বাস = উচ্ছ্বাস |
দৃ + শ = চ্ছ | তদ্ + শ্রবণ = তচ্ছ্রবণ |
৭। ত্ অথবা দৃ এর পর হ্ থাকলে ত্ ও দৃ স্থলে দৃ এবং হ্ স্থলে ধ হয়। যেমন-
ত + হ = দ + ধ = | উৎ + হত = উদ্ধত |
ত + হ = দ + ধ = | উৎ + হার = উদ্ধার |
দ + হ = দ + ধ = | পদ + হতি = পদ্ধতি |
৮। চ্ কিংবা জ-এর পর ন থাকলে ন স্থলে ঞ হয়। যেমন-
চ + ন = ঞ | যাচ্ + না = যাচঞা |
জ + ন = ঞ | রাজ + নী = রাজ্ঞী |
৯। ষ এর পরে ত্ কিংবা থ থাকলে ত্ স্থলে ট্ এবং থ স্থলে ঠ হয়। যেমন-
ষ + ত = ষ্ট | কষ + ত = কষ্ট |
ষ + ত = ষ্ট | দূষ + তি = দৃষ্টি |
ষ + থ = ষ্ঠ | ষষ্ + থ = ষষ্ঠ |
ষ + থ = ষ্ঠ | নিষ + থা = নিষ্ঠা |
১০। ত, দ ও ক-এর পর নৃ কিংবা ম থাকলে ত ও দ স্থলে নৃ এবং ক স্থলে ঙ হয়। যেমন-
ত + ন = ন্ন | উৎ + নতি = উন্নতি |
ত + ম = ন্ম | উৎ + মনা = উন্মনা |
দ + ম = ন্ম | তদ + মধ্যে = তন্মধ্যে |
ক + ম = ঙ | বাক + ময় = বাঙময় |
ক + ন = ঙ | দিক্ + নির্ণয় = দিঙনিৰ্ণয় |
১১। স্পর্শ বর্ণ পরে থাকলে পূর্ব বর্ণের ম স্থলে ং বা বর্গের পঞ্চম বর্ণ হয়। যেমন-
সম + গীত = সংগীত / সঙ্গীত | সম্ + কল্প = সংকল্প / সঙ্কল্প |
সম + ঘাত = সংঘাত / সঙ্ঘাত | ম + কট = সংকট / সঙ্কট |
আরও জানুন : বিসর্গ সন্ধি কাকে বলে?কত প্রকার ও বিসর্গ সন্ধির নিয়ম উদাহরণ সহ
১২. ম-এর পরে যদি স্পর্শ বর্ণ থাকে তাহলে ম-এর স্থলে সেই বর্ণের পঞ্চম বর্ণ হয়। যেমন-
সম + চয় = সঞ্চয় | সম + ধান = সন্ধান |
গম + তব্য = গন্তব্য | সম্ + পূর্ণ = সম্পূর্ণ |
সম + ভার = সম্ভার | সম + ন্যাস = সন্ন্যাস |
১৩. ম-এর পরে য, র, ল, ব, শ, বা হ থাকলে পূর্ববর্তী ম স্থলে অনুস্বার (ং) হয়। যেমন-
সম্ + শয় = সংশয় | সম্ + রক্ষণ = সংরক্ষণ |
সম + সার = সংসার | সম্ + লগ্ন = সংলগ্ন |
সম + বাদ = সংবাদ | সম + শপ্তক সংশপ্তক |
১৪। সম ও পরি উপসর্গের পর কৃ ধাতু (নিষ্পন্ন কাল) স্থলে ঐ উপসর্গ দুটির পর যথাক্রমে ম ও ষ হয় এবং এর ম স্থলে ং (অনুস্বার) হয়। যেমন-
সম্ + কৃত = সংস্কৃত | সম্ + কার = সংস্কার |
পরি + কার = পরিষ্কার | সম + করণ = সংস্করণ |
১৫। দ্ কিংবা ধ-এর পর বর্গের প্রথম, দ্বিতীয় বা স্ থাকলে দ্ বা ধ স্থলে ত্ হয়। যেমন-
তদ্ + কাল = তৎকাল | তদ্ + সম = তৎসম |
হৃদ + কমল = হৃৎকমল | হৃদ + কম্প = হৃৎকম্প |
বিপদ + সঙ্কুল = বিপৎসঙ্কুল | ক্ষুদ + পিপাসা = ক্ষুৎপিপাসা |
১৬। .বর্গের তৃতীয় বর্ণ, চতুর্থ বর্ণ কিংবা য, র, ল, ব, হ পরে থাকলে পদের অন্তস্থিত বর্গের প্রথম বর্ণ স্থলে সেই বর্গের তৃতীয় বর্ণ হয়। যেমন-
বাক্ + দান = বাগ্-দান | বাক + জাল = বাগজাল |
দিক + অন্ত = দিগন্ত | বাক + আড়ম্বর = বাগাড়ম্বর |
উৎ + যোগ = উদ্যোগ | বাক + যন্ত্র = বাগযন্ত্র |
১৭। প্রত্যয় যোগে শব্দ মধ্যে সন্ধি হয়। যেমন-
মুচ্ + ত = মুক্ত | মুহ + ত = মুগ্ধ |
সিচ্ + ত = সিক্ত | ভজ + ক্ত = ভক্ত |
নষ + ত = নষ্ট | বৃষ + তি = বৃষ্টি |
আরও জানুন : সন্ধি কাকে বলে?কত প্রকার।সন্ধির উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা-উদাহরণ সহ