বাংলা বানানের রীতি : বিশুদ্ধ বানান ভাষার সৌন্দর্য রক্ষা করে ভাষার প্রয়োগকে সঠিক বলে বিবেচিত করে এবং শব্দের অর্থকে পরিস্ফুটিত করে। তাই ভাষার শব্দগত শুদ্ধ বানান অপরিহার্য । বাংলা বানানরীতিতে ১৯৩৫ সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাংলা বানান-সংস্কার বা বানানের নিয়মকেই মেনে চলা হয়। নিচে বাংলা বানানের কয়েকটি নিয়ম আলোচনা করা হলো :
বাংলা বানানের ৫টি নিয়ম :
১। ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব : বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দে রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন- অৰ্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্থ, কর্তন, কর্দম, কার্য, কর্ম, কার্তিক, বার্তা, মূর্ছা, সূর্য, গর্জন, বার্ধক্য ইত্যাদি।
২। রেফ ও দ্বিত্ব : তৎসম শব্দের অনুরূপ বানানের ক্ষেত্রে যেমন পূর্বে বলা হয়েছে, অ-তৎসম সব শব্দেও রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন- কর্জ, কোর্তা, মর্দ, সর্দার ইত্যাদি।
৩। ঊর্ধ্ব কমা : ঊর্ধ্ব কমা যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে। যেমন- করল, বলে, হয়ে, দুজন, চারশ, চাল, আল ইত্যাদি ।
৪। সমাসবদ্ধ পদ : সমাসবদ্ধ পদগুলো একসাথে লিখতে হবে, মাঝখানে ফাঁক রাখা যাবে না। যেমন- সংবাদপত্র, অনাস্বাদিতপূর্ব, পূর্বপরিচিত, রবিবার, মঙ্গলবার, বারবার, সংযতবাক, পিতাপুত্র, সমস্যাপূর্ণ, নেশাগ্রস্ত, বিষাদগ্রস্ত, স্বভাবগতভাবে, অদৃষ্টপূর্ব, দৃঢ়সংকল্প ইত্যাদি ।
৫। শ, ষ, স : মূল সংস্কৃত শব্দ অনুসারে তদ্ভব শব্দে শ, ষ, বা স হবে যেমন- আঁশ (অংশ), আঁষ (আমিষ), শাঁস (শস্য); কিন্তু কতকগুলো শব্দে ব্যতিক্রম হবে। যেমন- মিসে (মনুষ্য), সাধ (ইচ্ছা) ইত্যাদি ৷
আরও পড়ুন : তৎসম এবং অ-তৎসম শব্দের বানানের পাঁচটি নিয়ম – উদাহরণ সহ
বাংলা বানান পদ্ধতির পাঁচটি ভুল ধারণা:
বাংলা বানানের ক্ষেত্রে নানা রকম ভুল ধারণা দেখা যায় । নিচে সেই ভুল ধারণাগুলো প্রদত্ত হলো :
১। ভুল বানান রপ্তকরণজনিত ত্রুটি। যেমন- স্টোর > ষ্টোর ।
২। উচ্চারণের ত্রুটি বা লেখকের বিশেষ উচ্চারণভঙ্গির জন্য ভুল শব্দ প্রয়োগ। যেমন- সম্মান > সন্মান।
৩। লেখকের নিজস্ব বিশ্বাস ও মতামত বানানরীতি অনুসরণে প্রাধান্য লাভ করে থাকে । যেমন- বাংলা > বাঙলা ।
৪। অভিধানে একই শব্দের বিভিন্ন বানান থাকায় কখনো প্রথমটি কিংবা কখনো দ্বিতীয়টি গৃহীত হয়ে থাকে। যেমন- ব্যবসা > ব্যাবসা
৫। সকল অভিধানে একই শব্দের বানানে সমতা না থাকার ফলে লেখক বিভ্রান্ত হন। যেমন- বৈশাখী > বৈশাখি ।