শব্দ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি? উদাহরণ বিস্তারিত

বর্ণের সাথে বর্ণ মিলে শব্দ গঠিত হয়। কিন্তু বর্ণের সাথে বর্ণ মিলে অর্থ প্রকাশ না করলে শব্দ হয় না। আবার একটি মাত্র বর্ণেও যদি একটি অর্থ প্রকাশ করে তবে তা শব্দ হবে। যেমন- মা, চা ইত্যাদি। মোট কথা, অর্থপূর্ণ মিলনের দ্বারা শব্দ গঠিত হয়। শব্দ ভাষার মৌলিক উপাদান ।

শব্দ কাকে বলে ?

এক বা একাধিক বর্ণ মিলে একটি অর্থ প্রকাশ করলে, তাকে শব্দ বলে। যেমন-বক, বই, কলম, খাতা ইত্যাদি।

শব্দ কত প্রকার ও কি কি ?

বাংলা ভাষায় শব্দসমূহ কে তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রেণীবিভাগ করা যায়। যথা-

১। গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ।
২। অর্থ অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ।
৩। উৎস অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ।

১। গঠন অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ : গঠন অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহ দুই প্রকার। যথা-

১. মৌলিক শব্দ ও
২. সাধিত শব্দ।

১. মৌলিক শব্দ : বাংলা ভাষায় এমন কতকগুলো শব্দ আছে যেগুলোকে আর কোনো মতেই ভাঙ্গা বা বিশ্লেষণ করা যায় না, সেগুলোকে মৌলিক শব্দ বলে। যথা-হাত, পা, নাক, মা, ভাত, ফুল, গাছ, নদী, পথ, লাল, গোলাপ, তিন, বই, কলম ইত্যাদি।

২. সাধিত শব্দ : মৌলিক শব্দের সাথে কিংবা শব্দের মূল অংশের সাথে উপসর্গ বা প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যেসব শব্দ গঠিত হয়, সেগুলোকে সাধিত শব্দ বলে। যথা-চল + অন্ত = চলন্ত, পড় + আ = প্র + হার = প্রহার, ডুব + উরি প্রহার, ডুব + উরি = ডুবুরি, চাঁদের মতো মুখ = চাঁদমুখ ইত্যাদি।

আরো পড়ুন : সাধিত শব্দ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী এবং সাধিত শব্দ গঠন

সাধিত শব্দ তিন প্রকার। যথা-

১. উপসর্গ সাধিত শব্দ : উপ + কার = উপকার, পরা + জয় = পরাজয় ইত্যাদি।

২. প্রত্যয় সাধিত শব্দ : দেখ + আ = দেখা, ঢাকা + আই = ঢাকাই ইত্যাদি।

৩. সমাস সাধিত শব্দ : সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন ইত্যাদি ।

২। অর্থ অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ : বাংলা ভাষায় যে সব শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোকে অর্থ অনুসারে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা—

১. যোগিক শব্দ।
২. রূঢ় বা রূঢ়ী শব্দ ও
৩. যোগরূঢ় শব্দ ।

১. যৌগিক শব্দ : যেসব শব্দ প্রকৃতি ও প্রত্যয় যোগে গঠিত হয় এবং সেসব শব্দের মধ্যে যদি প্রকৃতি ও প্রত্যয়ের অর্থ প্রকাশ পায় তবে তাকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন— গৈ + অক = গায়ক (গান করে যে), গো + শালা = গোশালা (গরুর বাসস্থান), বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় (পড়ার স্থান) ।

২. রূঢ় বা রূঢ়ী শব্দ : যে সব প্রত্যয় নিষ্পন্ন শব্দ সেসব প্রকৃতি ও প্রত্যয় অর্থ প্রকাশ করে না, জনসমাজে প্রচলিত পৃথক অর্থ বুঝায় অর্থাৎ অন্য কোন বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে তাকে রূঢ় বা রূঢ়ী শব্দ বলে। যেমন— হস্ত + ইন = হস্তী, হাত আছে যার বুঝানো উচিত ছিল। কিন্তু এখানে বুঝানো হয়েছে একটি পশুকে। সেরূপ বাঁশি- বাদ্যযন্ত্রকে বুঝায়। পাঞ্জাবী— জামাকে বুঝায়; পাঞ্জাবের অধিবাসী বুঝায় না।

৩. যোগরূঢ় শব্দ : যে সব সমাস নিষ্পন্ন তার ব্যাস বাক্যের অর্থ প্রকাশ না করে অন্য কোন নির্দিষ্ট অর্থপ্রকাশ করে, তাদেরকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন- পঙ্কে (কাদায়) জন্মে যাহা = পঙ্কজ (পদ্মফুল); শৈবাল, শালুক, কেঁচো প্রভৃতিও পঙ্কে বা কাদায় জন্মে কিন্তু তাদেরকে বুঝানো হয়নি।

আরো পড়ুন : শব্দ গঠন কাকে বলে ? বাংলা ভাষায় শব্দ গঠনের প্রয়োজনীয়তা

৩। উৎস অনুসারে শব্দের শ্রেণীবিভাগ : উৎস বা উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহ পাঁচ প্রকার। যথা—
১. তৎসম শব্দ।
২. অর্ধ-তৎসম শব্দ।
৩. তদ্ভব শব্দ।
৪. দেশি শব্দ ।
৫. বিদেশি শব্দ।

১. তৎসম শব্দ : যেসব সংস্কৃত শব্দ সরাসরি বাংলা ভাষায় এসেছে, সেগুলোকে তৎসম শব্দ বলে। যেমন- চন্দ্র, সূর্য, হস্ত, মস্তক, বৃক্ষ, ভ্রাতা ইত্যাদি ।

২. অর্ধ-তৎসম শব্দ : যেসব সংস্কৃত শব্দ সামান্য বিকৃত হয়ে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে, সেগুলোকে অর্ধ – তৎসম শব্দ বলে। যেমন-গৃহিণী > গিন্নী, নিমন্ত্রণ > নেমন্তন্ন, শ্রাদ্ধ > ছেরাদ্দ, গ্রাম > গেরাম ইত্যাদি।

৩. তদ্ভব শব্দ : যেসব তৎসম শব্দ প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে, সেগুলোকে তদ্ভব শব্দ বলে। যেমন—অদ্য > অজ্জ > আজ, চন্দ্ৰ > চন্দ > চাঁদ, হস্ত, হথ > হাত ইত্যাদি।

৪. দেশি শব্দ : বাংলাদেশের আদি ভাষার শব্দকে দেশি শব্দ বলে। যেমন-ঢেঁকি, কুলা, ঢোল, খোকা, ম‍ই, কাকা, কয়লা ইত্যাদি।

৫. বিদেশি শব্দ : যেসব বিদেশি শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করে বাংলা শব্দের মতোই ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলোকে বিদেশি শব্দ বলে। যেমন-

ইংরেজি শব্দ- অফিস, মাস্টার, চেয়ার, টেবিল, পেন্সিল, স্কুল, কলেজ, ইত্যাদি।

আরবি শব্দ- আল্লাহ, ঈমান, কোরআন, ইবাদত, আজান, কবর ইত্যাদি।

ফারসি শব্দ- উকিল, দরবার, দালান, নামাজ, আসবাব,আসমান ইত্যাদি ।

পর্তুগিজ শব্দ- পেঁপে, আনারস, পাউরুটি, সাবান, চাবি, বালতি ইত্যাদি।

হিন্দি শব্দ- ঠাণ্ডা, পানি, বাচ্চা, কুত্তা, চানাচুর, সাথী, আচ্ছা ইত্যাদি ।

জাপানি শব্দ- রিক্সা, সাম্পান, হারিকিরি, প্যাগোডা ইত্যাদি।

চিনা শব্দ- চা, চিনি, লুচি, এলাচি ইত্যাদি।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment