যে কোনো ইবাদত সম্পর্কে ইসলামী শরীয়তের ঘোষিত নীতি হচ্ছে- পবিত্রতা ব্যতীত ইবাদত কবুল হয় না । পবিত্রতা অযু গোসল ও তায়াম্মুমের মাধ্যমে অর্জিত হয়। নিম্নে গোসল অর্থ কি? গোসল কত প্রকার ও কি কি। গোসলের ফরজ কয়টি এবং গোসল ফরজ হওয়ার কারণকারণগুলো প্রশ্নালোকে আলোচনা করা হলো ।
গোসল (غُسْلٌ ) এর আভিধানিক অর্থ :
غُسْلٌ শব্দটি বাবে ضَرَبَ-এর মাসদার। এটি আভিধানিক দৃষ্টিকোণ হতে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়। যেমন-
১. إِفَاضَةُ الْمَاءِ তথা পানি প্রবাহিত করা ।
২. إِزَالَةُ النَّجَاسَةِ তথা নাপাকি দূর করা ।
৩. আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (র) বলেন- سَيَلَانُ الْمَاءِ عَلَى الْبَدَنِ অর্থাৎ, শরীরে পানি প্রবাহিত করা ।
গোসল (غُسْلٌ ) এর পারিভাষিক সংজ্ঞা :
১. শরীয়তের পরিভাষায় গোসল (غُسْلٌ ) বলা হয় –
هُوَ إِفَاضَةُ الْمَاءِ عَلَى جَمِيعِ الْبَدَنِ مِنَ الرأْسِ إِلَى الْقَدَمِ بِالنّيّةِ.
অর্থাৎ, পবিত্রতার নিয়ত করে মাথা হতে পায়ের নিচ পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গে পানি প্রবাহিত করাকে গোসল বলে ।
২. ‘ফিকহুস সুন্নাহ’ গ্রন্থকার বলেন- ٱلْغُسْلُ فِي ٱلشَّرْعِ تَعْمِيمُ ٱلْبَدَنِ بِٱلْمَاءِ
অর্থাৎ, পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে পানি দ্বারা সমস্ত শরীর ধৌত করাকে ‘গোসল’ বলে ।
আরও পড়ুন : অজুর নিয়ত,দোয়া, ফরজ,সুন্নত। অজু ভঙ্গের কারণ ও অজুর নিয়ম
গোসলের প্রকারভেদ :
শরীয়তের দৃষ্টিতে গোসল চার প্রকার । যথা-
১. ফরয গোসল : স্ত্রীসহবাস, উত্তেজনার সাথে বীর্যপাত, স্বপ্নদোষ ও হায়েয- নেফাস হতে পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করা ফরয।
দলীল : ক. আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَإِنْ كُنتُمْ جُنُبًا فَٱطَّهَّرُوا
খ. রাসূল (স) বলেন- عَنْ أَبِي سَعِيدٍ ٱلْخُدْرِيِّ قَالَ ٱلْمَاءُ بِٱلْمَاءِ
২. ওয়াজিব গোসল : যে গোসল হাদীসে ওয়াজিব করা হয়েছে, তাই ওয়াজিব গোসল। যেমন— মৃতব্যক্তিকে গোসল দেয়া। ইমাম মালেক (র)-এর মতে, জুমার দিন গোসল করা ওয়াজিব।
৩. সুন্নাত গোসল : জুমা, দুই ঈদ, আরাফার দিন ও ইহরাম বাঁধার সময় গোসল করা সুন্নাত। রাসূল (স) বলেন- مَنْ أَتَى ٱلْجُمُعَةَ فَلْيَغْسِلْ الخ
৪. মুস্তাহাব গোসল : আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে যে গোসল করা হয়, তা-ই মুস্তাহাব গোসল। যেমন- ইসলাম গ্রহণের জন্য গোসল করা।
গোসলের ফরজসমূহ :
ইসলামী শরীয়তের গোসলের ফরয তিনটি। যথা-
১. ٱلْمَضْمَضَةُ তথা কুলি করা ।
২. ٱلِٱسْتِنْشَاقُ তথা নাকে পানি দেয়া।
৩. غَسْلُ سَائِرِ ٱلْبَدَنِ তথা সমগ্র শরীর ধৌত করা।
গোসল ফরয হওয়ার কারণসমূহ :
গোসল ফরয হওয়ার কারণগুলো হচ্ছে-
১. বীর্যপাত হওয়া : বীর্যপাত চাই স্বপ্নাবস্থায় হোক অথবা জাগ্রত অবস্থায় হোক উভয় অবস্থায়ই গোসল ফরয হবে।
দলীল : যেমন হাদীসে এসেছে-
۱- ٱلْمَاءُ مِنَ ٱلْمَاءِ.
۲- قَالَتْ أُمُّ سُلَيْمٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ فَهَلْ عَلَى الْمَرْأَةِ مِنْ غُسْلٍ إِذَا اخْتَلَمَتْ قَالَ نَعَمْ –
২. উভয় লিঙ্গের মিলন : পুরুষাঙ্গ যোনিদ্বারে প্রবেশ করলে যদি বীর্যপাত নাও হয় তথাপি গোসল ফরয হবে।
দলীল : রাসূলুল্লাহ (স) বলেন- اِذَا الْتَقَى الْخَتَنَانِ وَغَابَتِ الحَشفة وجَبَ الغُسل .
৩. মাসিক ঋতুস্রাব : মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাব হতে অব্যাহতি লাভ করলে পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করা ফরয।
দলীল : রাসূলুল্লাহ (স) বলেন- إذَا أَدْبَرَتِ الْحَيْضَةُ فَاغْسِلِى عَنْكِ الدَّمَ ثُمَّ صَلِى .
অর্থাৎ, যখন তুমি হায়েয হতে অব্যাহতি লাভ করবে, সাথে সাথে তোমার রক্ত ধুয়ে ফেলবে এবং পরে নামায পড়বে।
৪. সন্তান প্রসব পরবর্তী ঋতুস্রাব : সন্তান প্রসবের পর নারীদের যে স্রাব হয়, তা বন্ধ হলে পবিত্রতার জন্য গোসল করা ফরয।
দলীল : মহানবী (স) হযরত আবু বকর (রা)-এর স্ত্রীর ব্যাপারে বলেছিলেন- مَرَّ بِهَا أَنْ تَغْتَسِلَ وَتَهِلَّ
পরিশেষে : نَجَاسَةٌ غَلِيظَةٌ তথা ব্যাপক নাপাকির শিকার হলে কেবল গোসলই পবিত্রতা অর্জনের একমাত্র মাধ্যম। তাই গোসলের শরয়ী বিধানাবলির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে তা যথাযথভাবে আদায় করা আবশ্যক।