হাদীসে এসেছে- আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতাকে ভালোবাসেন। তাই আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের জন্য সকল প্রকার নাজাসাত তথা অপবিত্রতা থেকে আমাদের পবিত্র থাকা অত্যাবশ্যক। সকল অপবিত্রতাকেই নাজাসাত বলা হয়। নিম্নে প্রশ্নালোকে এ সম্পর্কে আলোচনা পেশ করা হলো ।
নাজাসাতের পরিচয়:
ক. শাব্দিক অর্থ: নাজাসাত (نَجَاسَه) শব্দটি আরবি। এর অর্থ অপবিত্রতা, মলিনতা, নোংরা, ময়লা, আবর্জনা ইত্যাদি।
খ. পারিভাষিক সংজ্ঞা: শরিয়তের পরিভাষায়- যে সকল বস্তু দ্বারা শরীর, কাপড়-চোপড় অথবা অন্য কোনো পবিত্র জিনিস অপবিত্র হয়ে যায়, তাকে নাজাসাত বলে।
নাজাসাতের প্রকারভেদ:
নাজাসাত প্রধানত দু’প্রকার। যথা:
১। نجاسَةُ حَقِيقِيَّةُ তথা প্রকৃত নাজাসাত।
২। نَجَاسَةٌ حُكْمِيَّةٌ তথা বিধানগত নাজাসাত।
১. نجاسَةُ حَقِيقِيَّةُ এর সংজ্ঞা : যে নাপাকি সাধারণত প্রকাশ্যভাবে দেখা যায়, তাকে نجاسَةُ حَقِيقِيَّةُ বা প্রকৃত নাজাসাত বলে। যেমন: প্রস্রাব-পায়খানা, রক্ত ইত্যাদি।
নাজাসাতে হাকিমার হুকুম : এর হুকুম হলো- تَطْهِيرُ ٱلنَّجَاسَةِ وَاجِبٌ مِنْ بَدَنِ ٱلْمُصَلِّي অর্থাৎ নামায আদায় করার জন্য মুসল্লীর দেহ থেকে এ ধরনের নাজাসাত ধৌত করা ওয়াজিব । তবে এক দিরহামের কম হলে অসুবিধা নেই ।
আরও পড়ুন : গোসল অর্থ কি?কত প্রকার।গোসলের ফরজ কয়টি।গোসল ফরজ হওয়ার কারণ
نجاسَةُ حَقِيقِيَّةُ আবার দু’প্রকার। যথা-
ক. نَجَاسَةُ غَلِيظَةٍ তথা গাঢ় নাপাকি।
খ. نَجَاسَةُ خَفِيفَةٍ তথা হালকা নাপাকি।
ক. نَجَاسَةُ غَلِيظَةٍ এর সংজ্ঞা : যেসব নাপাকির অপবিত্র হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই এবং মানুষ স্বভাবতই এগুলোকে অপবিত্র বা নাপাক হিসেবে জানে, তাকে نَجَاسَةُ غَلِيظَةٍ বা কঠিন নাপাকি বলে। যেমন: মল-মূত্র, রক্ত, পুঁজ পায়খানা, গোবর, মদ, মৃত জন্তুর গোশত, হারাম প্রাণীর প্রস্রাব ও বীর্য ইত্যাদিকে বোঝানো হয় ।
নাজাসাতে গলীযার হুকুম : নাজাসাতে গলীযা যদি এক দিরহাম বা তার কম পরিমাণ কাপড়ে লাগে, তবে তা সহ নামায আদায় করা জায়েয হবে; কিন্তু পরিমাণে এর চেয়ে বেশি হলে জায়েয হবে না; বরং তা ধৌত করতে হবে।
খ. نَجَاسَةُ خَفِيفَةٍ এর সংজ্ঞা : অপেক্ষাকৃত হাল্কা ও সহজতর অপবিত্রতাকে نَجَاسَةُ خَفِيفَةٍ বলে। যেমন: হালাল পশুর প্রস্রাব, হারাম পাখির বিষ্ঠা ইত্যাদি।
নাজাসাতে খফীফার হুকুম : নাজাসাতে খফীফা শরীর বা কাপড়ের একচতুর্থাংশ পরিমাণ অংশে লাগলে তা সমেত নামায পড়া জায়েয। পরিমাণে এর বেশি হলে জায়েয হবে না।
২. نَجَاسَةٌ حُكْمِيَّةٌ -এর সংজ্ঞা : যেসব নাজাসাত সামান্য পরিমাণ হলেও সালাত আদায় করা অবৈধ হয়ে যায়, তাকে نَجَاسَةٌ حُكْمِيَّةٌ বলা হয়। যেমন- হায়েয ও নেফাস ।
نَجَاسَةٌ حُكْمِيَّةٌ আবার দু’প্রকার। যথা-
ক. نَجَاسَة مَرْئِيَّة খ. نَجَاسَة غَيْر مَرئِيَّة
ক. نَجَاسَة مَرْئِيَّة এর সংজ্ঞা : যা দৃশ্যমান অর্থাৎ চোখে সহজেই দেখা যায় তাকে نَجَاسَة مَرْئِيَّة বলে । যেমন- হায়েযের রক্ত।
খ. نَجَاسَة غَيْر مَرئِيَّة -এর সংজ্ঞা : যা অদৃশ্যমান অর্থাৎ সাধারণত চোখে দেখা যায় না তাকে نَجَاسَة غَيْر مَرئِيَّة বলে। যেমন- বায়ু।
আরও পড়ুন : অজুর নিয়ত,দোয়া, ফরজ,সুন্নত। অজু ভঙ্গের কারণ ও অজুর নিয়ম
কূপে পতিত হলে তার হুকুম :
কূপ দু’ধরনের হয়ে থাকে। যথা- ক. বদ্ধ কূপ, খ. প্রবহমান কূপ। সুতরাং শ্রেণিভেদ অনুযায়ী এর হুকুম নিম্নরূপ-
ক. বদ্ধ কৃপের হুকুম :
১. যদি বদ্ধ কৃপে কোনো ছোট প্রাণী পড়ে মারা যায়; যেমন- ইঁদুর, চড়ুই, টুনটুনি, টিকটিকি ইত্যাদি, তাহলে তা উঠিয়ে ফেলতে হবে এবং বড় বালতি হলে ২০ বালতি আর ছোট বালতি হলে ৩০ বালতি পানি কূপ থেকে ফেলে দিতে হবে।
২. আর যদি মধ্যম ধরনের কোনো প্রাণী মারা যায়; যেমন- কবুতর, মুরগী, বিড়াল ইত্যাদি, তাহলে ৪০ থেকে ৫০ বালতি পানি ফেলে দিতে হবে।
৩. যদি কোনো বড় প্রাণী মারা যায়; যেমন- মানুষ, গরু, ছাগল, কুকুর ইত্যাদি, তাহলে কূপের পুরো পানি নিষ্কাশন করতে হবে।
খ. প্রবহমান কৃপের হুকুম : এ ধরনের কূপের তলদেশ থেকে পানি উত্থিত হয়। এ কৃপের হুকুম নিম্নরূপ-
১. যদি প্রবহমান কৃপে নাজাসাত পতিত হয়, তাহলে তাতে যে পরিমাণ পানি আছে অনুমান করে তার সবই বের করে দিতে হবে।
২. মুহাম্মদ বিন হাসান (র) বলেন, প্রবহমান কূপে নাজাসাত পতিত হলে, ২০০ থেকে ৩০০ বালতি পানি ফেলে দিলেই কূপ পবিত্র হয়ে যাবে।
পরিশেষে : নাজাসাত থেকে শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় পবিত্রতা অর্জনপূর্বক ইবাদত বন্দেগি করলে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা সম্ভব হবে।