উদ্ভিদের সবুজ অংশ ফুলের বৃতি ও কাঁচা সবুজ ফলের ত্বকে পত্ররন্ধ্র থাকে। পত্ররন্ধ্রের খোলা ও বন্ধ হওয়া রক্ষীকোষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পত্ররন্ধ্র সাধারণত দিনের বেলায় খোলা থাকে এবং রাতে বন্ধ থাকে।
পত্ররন্ধ্র কী এবং কাকে বলে?
পত্ররন্ধ্র কী : পত্ররন্ধ্র হলো উদ্ভিদের পাতা এবং কচি কাণ্ডে বিদ্যমান এক ধরনের রন্দ্র যা দিয়ে উদ্ভিদে প্রস্বেদন সংঘটিত হয়।
পত্ররন্ধ্র সংজ্ঞা : উদ্ভিদের কচি কাণ্ড ও পাতার ত্বকে দুটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির কোষ দ্বারা বেষ্টিত ছিদ্রকে পত্ররন্ধ্র বলে ।
পত্ররন্ধ্রের প্রকারভেদ :
রক্ষীকোষের চারদিকে অবস্থিত সাবসিডিয়ারি (সহকারী) কোষসমুহের সংখ্যা ও অবস্থান অনুযায়ী পত্ররন্ধ্র কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। নিম্নরূপ-
১। Diacytic : স্টোমা দুটি সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। কোষ দুটি রক্ষীকোষের সাথে সমকোণে অবস্থিত ।
২। Paracytic : স্টোমা দুটি সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। কোষ দুটি রক্ষীকোষের সাথে সমান্তরালভাবে অবস্থিত।
৩। Ansiocytic : স্টোমা তিনটি সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে, তার মধ্যে একটি কোষ ছোট ।
৪। Tetracytic : স্টোমা চারটি সাবসিডিয়ারি কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে।
৫। Actinocytic : স্টোমা অনেকগুলো রেডিয়েলি লম্বা কোষ দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে।
৬। Anomocytic : স্টোমা পরিবেষ্টনকারী কোষসমূহ সাধারণ ত্বকীয় কোষ থেকে পৃথকযোগ্য নয় ।
পত্ররন্ধ্রের গঠন :
পত্ররন্ধ্র দুটি অর্ধ চন্দ্রাকৃতির রক্ষীকোষ দিয়ে বেষ্টিত। পত্ররন্ধ্রের রক্ষীকোষে একটি বড় নিউক্লিয়াস, বহু ক্লোরোপ্লাস্ট এবং ঘন সাইটোপ্লাজম থাকে। রক্ষীকোষের চারিদিকে অবস্থিত সাধারণ ত্বকীয় কোষ হতে একটু ভিন্ন আকার আকৃতির ত্বকীয় কোষকে সহকারী কোষ বলে।
পত্ররন্ধ্রের নিচে একটি বড় বায়ুকুঠুরী থাকে। পত্ররন্ধ্র বন্ধ ও খোলার কাজ রক্ষীকোষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় রক্ষীকোষের কোষপ্রাচীর অসমভাবে পুরু ও রন্ধ্রের পাশে বেশি পুরু। পত্ররন্ধ্রগুলো বিক্ষিপ্তভাবে সজ্জিত থাকে।
পত্ররন্ধ্রের কাজ :
১। উদ্ভিদের ভেতরের এবং বাইরের পরিবেশের মধ্যে বিভিন্ন গ্যাসীয় আদান-প্রদান করে।
২। সালোকসংশ্লেষণের সময় পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস প্রবেশ এবং অক্সিজেন গ্যাস নির্গত হয় ।
৩। শ্বসনের সময় পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্যাস প্রবেশ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়।
৪। প্রস্বেদনের সময় অতিরিক্ত পানি বাষ্পাকারে পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে বাইরে নির্গত হয় ।
৫। রক্ষীকোষ খাদ্য প্রস্তুত এবং পত্ররন্ধ্রের খোলা ও বন্ধ হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
পত্ররন্ধ্র খোলা ও বন্ধ হওয়ার কৌশল :
পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদনের সবচেয়ে উপযোগী অংশ হলো পত্ররন্ধ্র। রক্ষীকোষদ্বয়ের পত্ররন্ধ্রসংলগ্ন প্রাচীর বেশ পুরু কিন্তু বহির্ভাগের অর্থাৎ বহিঃত্বক কোষসংলগ্ন প্রাচীর বেশ পাতলা হয় এবং এদের মধ্যে একটি করে বড় নিউক্লিয়াস এবং কিছু ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। রক্ষীকোষদ্বয়ের স্ফীত অথবা শিথিল অবস্থা পত্ররন্ধ্রের খোলা বা বন্ধ হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন শারীরবিজ্ঞানীয়কারণে রক্ষীকোষে অন্তঃঅভিস্রবণ ও বহিঃঅভিস্রবণ ঘটে থাকে। রক্ষীকোষদ্বয় পার্শ্বস্থ বহিঃত্বক কোষ হতে অন্তঃঅভিস্রবণ প্রক্রিয়ায় পানি শোষণ করে স্ফীত হয় এবং এর ফলে রন্ধ্রসংলগ্ন পার্শ্বে প্রাচীর পুরু হওয়ায় সেদিকে বেঁকে যায় এবং রন্ধ্র খুলে যায়। অপরপক্ষে বহিঃঅভিস্রবণের ফলে রক্ষীকোষদ্বয় স্ফীতি হারিয়ে শিথিল হয়ে পড়ে, ফলে রন্ধ বন্ধ হয়ে যায়।
কাজে দেখা যায়, পত্ররন্ধ খোলা ও বন্ধ হওয়া রক্ষীকোষদ্বয়ের গঠন ও স্ফীতির উপর নির্ভরশীল। আলো, তাপ, বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা প্রভৃতি কারণে রক্ষীকোষদ্বয়ের স্ফীতি ও শিথিল হওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে কিন্তু কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তার ব্যাপারে বিভিন্ন মতবাদ আছে ।