ইসলাম ও ঈমান একই বস্তু । কেননা আন্তরিক বিশ্বাসকে ঈমান এবং সে অনুপাতে জীবন গঠন করাকে ইসলাম বলা হয়। মূলত এতদুভয়ের একটি অপরটির পরিপূরক। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
ইসলাম ও ঈমান কাকে বলে ?
ইসলাম:
আভিধানিক অর্থ : ইসলাম (إِسْلَامٌ) শব্দের অর্থ – অনুগত হওয়া, আত্মসমর্পণ করা।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : শরিয়তের পরিভাষায় – মহান আল্লাহর তায়ালার প্রতি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে আত্মসমর্পণ করে তাঁর বিধানসমূহের পরিপূর্ন আনুগত্য করাকে ইসলাম বলা হয় ।
ঈমান :
আভিধানিক অর্থ : ঈমান (إِيمَانٌ) শব্দের অর্থ – বিশ্বাস করা, নিরাপত্তা দান করা।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : শরিয়তের পরিভাষায় – হযরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর তায়ালার পক্ষ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা সহ তার প্রতি পূর্ন আস্থাশীল হয় মনে প্রাণে দৃঢ় বিশ্বাস করাকে ঈমান বলা হয় ।
আরো পড়ুন : ঈমান অর্থ কি?কাকে বলে। ঈমানের মূল বিষয় কয়টি ও কি কি
ইসলাম ও ঈমানের সম্পর্ক :
ইসলাম (إِسْلَامٌ) শব্দটি বাবে أَفْعَالٌ-এর মাসদার। মূলশব্দ سَلْمٌ এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বিনয়াবনত হওয়া, আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্য করা ইত্যাদি।
পক্ষান্তরে, ঈমান (إِيمَانٌ) শব্দটিও বাবে أَفْعَالٌ -এর মাসদার। মূলশব্দ أَمْنٌ এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বিশ্বাস স্থাপন করা, নির্ভর করা, স্বীকৃতি দেয়া ইত্যাদি ।
ইসলাম ও ঈমানের সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন ওলামায়ে কেরামের অভিমত :
১. মুহাক্কিকদের অভিমত : মুহাক্কিকদের মতে, ইসলাম ও ঈমান -এর মধ্যকার সম্পর্ক হচ্ছে- বৈপরীত্যমূলক সম্পর্ক। কেননা ইসলাম হচ্ছে প্রকাশ্য আনুগত্যের নাম । আর ঈমান হচ্ছে অপ্রকাশ্য আনুগত্যের নাম ।
দলীল : কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-
قَالَتِ الْأَعْرَابُ آمَنَّا قُلْ لَمْ تُؤْمِنُوا وَلَكِنْ قُولُوا أَسْلَمْنَا
ঈমান ও ইসলাম এক বস্তু হলে জিবরাঈল (আ) ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন করতেন না। যেমন তিনি রাসূল (স)-কে প্রশ্ন করেছেন- مَا الإِيمَانُ ও مَا الإِسْلَامُ
আরো পড়ুন : ঈমানের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে কিনা?দলিল সহ আলেমদের অভিমত বর্ণনা
২. বুখারীসহ মুহাদ্দিস, দার্শনিক ও মুতাযিলাদের অভিমত : ইমাম বুখারী (র)সহ জমহুর মুহাদ্দিসীন ও মুতাকাল্লিমীনের মতে, ইসলাম ও ঈমানের মাঝে সম্পর্ক হচ্ছে- সমতামূলক সম্পর্ক। অর্থাৎ ঈমান ও ইসলাম এক ও অভিন্ন। প্রত্যেক মুমিন মুসলিম আবার প্রত্যেক মুসলিম মুমিন।
সুতরাং আমরা বলতে পারি كُلُّ مُسْلِمٍ مُؤْمِنٌ এবং كُلُّ مُؤْمِنٍ مُسْلِمٌ
দলীল : তাঁদের দলীল হচ্ছে মহান আল্লাহর বাণী-
فَأَخْرَجْنَا مَنْ كَانَ فِيهَا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فَمَا وَجَدْنَا فِيهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ
ইসলাম ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য :
ক. আভিধানিক পার্থক্য : ইসলাম ও ঈমানের মধ্যকার আভিধানিক পার্থক্যগুলো নিম্নরূপ- ইসলাম অর্থ হলো, বিনয়াবনত হওয়া। আর ঈমান অর্থ হলো, অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করা।
খ. পারিভাষিক পার্থক্য : পরিভাষাগত পার্থক্য বর্ণনায় ওলামায়ে কেরামের অভিমত হলো- ইসলাম ও ঈমান -এর মাঝে তিন রকম নিসবত রয়েছে। যথা-
১. تَرَادُف অর্থাৎ ইসলাম ও ঈমান এক ও অভিন্ন। এ দিক থেকে প্রত্যেক মুমিন মুসলিম আবার প্রত্যেক মুসলিম মুমিন। এর দলীল হচ্ছে-
فَأَخْرَجْنَا مَنْ كَانَ فِيْهَا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فَمَا وَجَدْنَا فِيهَا غَيْر بَيْدٍ مِنَ الْمُسلِمِينَ .
২. تَبَا يُّن : কতিপয় আলেমের মতে, ঈমান ও ইসলামের মাঝে বৈপরীত্যের সম্পর্ক রয়েছে।
দলীল : তাঁদের দলীল হলো-
١- قَالَتِ الْأَعْرَابُ آمَنَّا، قُلْ لَمْ تُؤْمِنُوا وَلَكِنْ قُولُوا أَسْلَمْنَا
٢- الْإِيمَانُ فِعْلُ الْقَلْبِ وَالْإِسْلَامُ عَمَلُ الْجَوَارِحِ
৩. কেউ কেউ বলেন, ইসলাম ও ঈমানের মাঝে عُمُومٌ خُصُوصٌ مُطْلَقٌ -এর সম্পর্ক রয়েছে । ইসলাম হলো خَاص আর ঈমান হলো عَام অতএব প্রত্যেক মুসলিম মুমিন নয়, তবে প্রত্যেক মুমিন মুসলিম।
৪. আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (র) বলেছেন- ইসলাম ও ঈমান শব্দ ফকির ও মিসকিন শব্দদ্বয়ের ন্যায়। অর্থাৎ ফকির ও মিসকিন শব্দদ্বয় যদি একত্রে ব্যবহার হয়, তখন দুটির ভিন্ন ভিন্ন অর্থ হয়ে থাকে। আর যদি পৃথক পৃথক স্থানে ব্যবহার হয়, তখন উভয়ের একটি অর্থ হয়ে থাকে । ঈমান ও ইসলামের সম্পর্কও তদ্রূপ ৷
৫। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে- ইসলাম ও ঈমান পিঠ ও পেটের ন্যায় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটিকে অন্যটি হতে আলাদা করা যায় না। অতএব ঈমানকে যেমন ইসলাম থেকে পৃথক করা যায় না তেমনি ইসলামকেও ইমাম থেকে পৃথক করা যায় না।