হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

বিশুদ্ধ আকিদা কি ? এবং বিশুদ্ধ আকীদার গুরুত্ব

ইসলামী আকিদার মূল উৎস হলো অহী। অহীলব্ধ জ্ঞানের কষ্টিপাথরে ব্যক্তির আকিদা বা বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা যাচাই করা যায়। আর সঠিক আকিদা অনুযায়ী জীবনযাপনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জিত হয়। সুতরাং আকিদার উৎস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে বিশুদ্ধ আকিদার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

বিশুদ্ধ আকিদা কি ?

বিশুদ্ধ আকিদা বলতে আল্লাহর একত্ববাদ, ইহকাল ও পরকালের উপর দৃঢ়ভাবে ইমান আনাকে বোঝানো হয়েছে ।

ইসলাম ধর্মে এমন কিছু বিষয় আছে যার ওপর ইমান আনা প্রত্যেক মুমিনের অবশ্য কর্তব্য। যেমন আল্লাহ এক, তার কোনো শরীক নেই, মুহাম্মদ (স) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। দুনিয়ার সকল কৃতকর্মের জন্যে পরকালে বিচারের সম্মুখিন হতে হবে।

আরও পড়ুন : আকাইদ শব্দের অর্থ কি? কাকে বলে। এর উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু

নেক আমলের জন্যে পুরস্কার স্বরূপ জান্নাত রয়েছে অপরদিকে বদ আমলের জন্যে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে । এ ছাড়া কবর হাশর, মিযান এ সকল বিষয়ের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করার নাম বিশুদ্ধ আকিদা । বিশুদ্ধ আকিদা বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে-

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً

বিশুদ্ধ আকিদার গুরুত্ব :

ইসলামের সকল বিধান ও কর্মের মধ্যে যেমন ঈমানের গুরুত্ব বেশি, তেমনিভাবে সকল দীনি ইলমের মধ্যে বিশুদ্ধ আকিদা সংক্রান্ত ইলমের গুরুত্ব বেশি। বিশুদ্ধ আকিদা অর্জনে যে সকল বিষয়ে জ্ঞানার্জন অপরিহার্য তা নিম্নরূপ-

১. বিশুদ্ধ ঈমানের গুরুত্ব : সঠিক বিশ্বাসই মানুষের সকল সফলতা ও সৌভাগ্যের ভিত্তি। বিশ্বাসের মাধ্যমেই মানুষ পরিচালিত হয়। আর বিশুদ্ধতা তাকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দেয়। ভুল বিশ্বাস মানুষকে অস্থির করে তোলে ।

আমাদের যাবতীয় ইবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রথম শর্ত শিরকমুক্ত খাঁটি ঈমান । আল্লাহ তায়ালা এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন-

مَنْ عَمِلَ سَيِّئَةً فَلَا يُجْزَىٰ إِلَّا مِثْلَهَا ۖ وَمَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُو۟لَٰئِكَ يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ يُرْزَقُونَ فِيهَا بِغَيْرِ حِسَابٍ

আরও পড়ুন : আকাইদ শাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

২. ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়াদি সম্পর্কে জ্ঞান লাভের গুরুত্ব : এখানে দুটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে লক্ষণীয়-

ক. মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই মানবীয় বুদ্ধি, বিবেক ও যুক্তির মাধ্যমে মহান স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুভব ও প্রমাণ করতে পারে; কিন্তু তাঁর প্রতি বিশ্বাসের স্বরূপ ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি অনুভব করতে পারে না। এজন্য অহীর জ্ঞানের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই কুরআন ও হাদীসের আলোকে ঈমানের স্বরূপ, ভিত্তি, আরকান ইত্যাদির যথাযথ জ্ঞানার্জন ছাড়া বিশুদ্ধ ঈমান অর্জন করা সম্ভব নয় ।

খ. ঈমান অর্জনের ন্যায় সংরক্ষণও অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুগে যুগে বহু জাতি আসমানী কিতাব ও বিশুদ্ধ ঈমান লাভ করার পর তা সংরক্ষণ করতে পারেনি; বরং বিভিন্ন ঈমান বিনষ্টকারী বিশ্বাস বা কর্মের মাধ্যমে তারা ঈমান হারিয়ে ফেলেছে। এজন্য ঈমান বিনষ্টের কারণ ও অবিশ্বাসের স্বরূপ জানা মুমিনের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় বিষয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

١- وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلْخَاسِرِينَ

٢- وَمَنْ يَكْفُرْ بِٱلْإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ

٣- إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ ۚ وَمَنْ يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا

অতএব ঈমান বিনষ্টকারী বিষয়ের স্বরূপ, এগুলোর কারণ ও পূর্ববর্তী উম্মতের বিভ্রান্তির কারণ সম্পর্কে অবগত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন : আকাইদের মৌলিক বিষয় কয়টি ও কি কি? এবং আকিদার গুরুত্ব

৩. বিভ্রান্তিকর আকিদা সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব : রাসূল (স)-এর আদর্শই মুমিনের নাজাতের একমাত্র পথ। তাঁর আদর্শ থেকে বিচ্যুতি কঠিন পাপ ও ধ্বংসের কারণ। বিশ্বাসের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিভ্রান্তির ফলে উম্মত বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এজন্য বিশ্বাসের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (স) ও তাঁর সাহাবীগণ কী বিশ্বাস পোষণ করতেন, তা জানা মুমিনের অতীব প্রয়োজন ।

৪. নিরঙ্কুশভাবে আল্লাহর ইবাদত : বিশুদ্ধ আকিদা প্রতিটি মুমিনকে নিরঙ্কুশ ও শিরকমুক্তভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে শেখায়। মানব ও জিন জাতি সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

وَمَا خَلَقْتُ ٱلْجِنَّ وَٱلْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ

Leave a Comment