আর্থ্রোপোডা পর্বের অন্তর্গত প্রাণীসমূহ অর্থনৈতিক গুরুত্বে বিশেষ অবদান রাখছে। যদিও এই পর্বের অনেক প্রাণীই অপকার বা ক্ষতিসাধন করে থাকে, তবুও উপকারী আর্থ্রোপোডার সংখ্যাও কম নয়। তাই উভয় দিক বিবেচনা করে দেখা যায় যে, আর্থোপোডা পর্বের প্রাণীদের গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নিম্নে আর্থ্রোপোডার উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো –
আর্থ্রোপোডার উপকারিতা (Advantages of Arthopoda) :
১। মানুষ ও প্রাণীর খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় চিংড়ি ও কাকড়া সারা বিশ্বে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয় । তাছাড়া এ পর্বের প্রাণীদের খাদ্য হিসাবে বিভিন্ন মৎস্য হ্যাচারি এবং মুরগির খামারে ব্যবহার করা হয় ।
২। পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই কতিপয় আথ্রোপোডা প্রাণীর চাষাবাদ করার জন্য প্রচুর লোক দরকার। তাই মানুষের জীবিকা নির্বাহের পথ সুগম করতে এদের ভূমিকা প্রচুর ।
৩। সহজলভ্যতার জন্য কীটপতঙ্গ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে ব্যবহারিক ক্লাসে এদের ব্যবচ্ছেদ করে তাদের বিভিন্ন অংশ পর্যবেক্ষণ করা হয় ।
আরও জানুন : আর্থ্রোপোডা পর্বের বৈশিষ্ট্য, উদাহরণ ও মনে রাখার সহজ উপায়
৪। দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় জাতের মাছের চাষ করা হয় । যেমন রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাস, গজার ইত্যাদি। এ সকল মাছ শিকার করার জন্য উপকরণ হিসেবে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও চিংড়ি ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া মৌমাছি সারা বৎসর প্রচুর মধু উৎপন্ন করে যা অর্থনৈতিকভাবে দারুণ সহায়ক।
৫। কিছু কিছু উপকারী পতঙ্গ আছে যারা ক্ষতিকারক পরজীবির আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে এবং কিছু কিছু পতঙ্গ আছে যারা ময়লা আবর্জনা খেয়ে পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে।
৬। মানুষের বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরিতে আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীদের ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া কীটনাশকের পরীক্ষাও এদের ওপর চালানো হয়।
আর্থ্রোপোডার অপকারিতা (Disadvantages of Arthopooda) :
১। আর্থ্রোপোডা পর্বভুক্ত বেশকিছু প্রাণী জলজ প্রাণীদের পরজীবি হিসেবে জীবন যাপন করে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু পরজীবি মানুষের ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর দেহের রোগ সৃষ্টিকারী পরজীবিদের মাধ্যমিক পোষক হিসেবে দেহে কাজ করে। তাছাড়া মশা, মাছি, উঁকুন, মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণীদের মধ্যে রোগ ছড়ায় ।
আরও জানুন : কর্ডাটা ও নন কর্ডাটা: সংজ্ঞা,বৈশিষ্ট্য,উদাহরণ, পার্থক্য
২। এ পর্বের কিছু প্রাণী সর্বভুক (যেমন- আরশোলা) হওয়ায় মানুষের সব ধরনের খাদ্যের বিরাট অংশ ভক্ষণ করে খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি করে । শুধু তাই নয় এদের বিশ্রী গন্ধযুক্ত বিষ্ঠা খাদ্যদ্রব্যকে ভক্ষণের অযোগ্য করে তোলে ।
৩। এ পর্বের প্রাণীদের মুখ-উপাঙ্গ এমনিভাবে সুগঠিত যে, আমাদের কাপড়-চোপড়, কাঠের আসবাবপত্র, বইপত্র প্রভৃতি দ্রব্যাদি অত্যন্ত পারদর্শিতার সাথে ধ্বংস করতে পারে।
৪। অনেক কীটপতঙ্গ ফসলের প্রচুর ক্ষতি সাধন করে। এ ধরনের পতঙ্গের সংখ্যা অগণিত। তাছাড়া এরা বনের গাছপালা, ফলের গাছ এবং মজুতকৃত খাদ্যেরও প্রচুর ক্ষতি করে থাকে। অনেক সময় Cray fish [বাগদা চিংড়ি বাধের কিনারে গর্ত তৈরি করে বাধের ক্ষতিসাধন করে থাকে ।
৫। পেস্ট হিসাবে অনেক Crustanea জলযানের গায়ে এক ধরনের আবর্জনা তৈরি করে যা অপসারনের জন্য বেশ অর্থ অপচয় হয়, ফলে যথেষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় ৷
৬। রাত্রিকালে অনেক আর্থ্রোপোডাদের [যেমন- আরশোলা, মশা] যত্রতত্র উড্ডয়ন এবং বিশ্রী গন্ধ ও শব্দ আমাদের মনে উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যা মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীদের উপকারী এবং অপকারী উভয় দিকই অর্থনীতিতে দারুণ প্রভাব ফেলছে।
আরও জানুন : নেমাটোডা পর্বের বৈশিষ্ট্য, প্রাণীর উদাহরণ ও বাসস্থান
