উপস্থাপনা :
আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো কম্পিউটার। কম্পিউটার এমন অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার যে, এর নামানুসারে যুগের নামকরণ করা হয়- কম্পিউটার যুগ। এর ব্যবহার বহুমুখী। শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটারেরও রয়েছে বিরাট ভূমিকা।
জ্ঞান বিজ্ঞানের নানা তথ্য, মুদ্রণ কর্ম, চিকিৎসাবিদ্যা থেকে শুরু করে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা পর্যন্ত আধুনিক শিক্ষার সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে কম্পিউটারের অবাধ বিচরণ। এ কম্পিউটার আবিষ্কারের ফলে আমাদের শিক্ষা ও সভ্যতা আরো একধাপ এগিয়ে গেছে।
কম্পিউটার পরিচিতি :
কম্পিউটার শব্দটির বাংলা অর্থ- গণনযন্ত্র। এর উৎস হলো ইলেকট্রন। কম্পিউটার ইলেকট্রনিক্স নির্ভর একটি যন্ত্র, যে যন্ত্রটি নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রকাশ করে।
আরও জানুন : কম্পিউটার – রচনা ( ২০ পয়েন্ট )
কম্পিউটার মানুষের জন্য অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ অতি জটিল সমস্যাগুলো দ্রুত সম্পন্ন করে। ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ ১৮৩৩ সালে কম্পিউটার তত্ত্বের ধারণা প্রদান করেন। তাঁকে কম্পিউটারের জনক বলা হয় ।
শিক্ষা ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার
শিক্ষা উপকরণ সংরক্ষণ : বর্তমানে জ্ঞানরাজ্যে বিচরণের অবাধ ক্ষেত্র হলো কম্পিউটার। এতে শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণ যেমন : বই, পত্রিকা, সাময়িকী ইত্যাদির ইন্টারনেট সংস্করণ জমা রেখে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মানুষ সহজেই পড়ে নিতে পারে। এমনকি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ লাইব্রেরিটিও মাত্র একটি কম্পিউটারের মধ্যে অনায়াসে ঢুকিয়ে রাখা যায় ।
চিকিৎসা বিদ্যা শিক্ষা : চিকিৎসা ক্ষেত্রে কম্পিউটার এক অভাবনীয় বিপ্লব সাধন করেছে। আগে মেডিক্যালের ছাত্রদেরকে রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি ও কৌশল জানতে অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় হতো। অথচ বর্তমানে কম্পিউটারের কল্যাণে অতি অল্প সময়ে জটিল কঠিন রোগ নির্ণয় করতে পারে।
আরও জানুন : কম্পিউটার: প্রবন্ধ রচনা – Class 8, 9 এবং SSC | PDF
বৈজ্ঞানিক তথ্য : বিজ্ঞান আধুনিক শিক্ষার একটি প্রধান অনুষঙ্গ। আর কম্পিউটারের মাধ্যমে বিজ্ঞানের নানা তথ্য সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায় অনেক সহজে। কম্পিউটার বিজ্ঞানের অনেক কঠিন সমীকরণ এবং পরিসংখ্যান, গণিত ও বিভিন্ন ধরনের বিশ্লেষণের কাজে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে ।
ভূগোল বিষয়ক শিক্ষা : কম্পিউটারের সাহায্যে ঘরে বসেই ভৌগোলিক জ্ঞান অর্জন করা যায়। পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে হলে কম্পিউটার স্ক্রিনে পৃথিবীর মানচিত্রের ওপর সেই স্থানে ক্লিক করলেই কম্পিউটারে সে স্থানের ভৌগোলিক অবস্থান, সময়, আয়তনসহ বিভিন্ন তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেসে ওঠে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাব রক্ষণ : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক প্রতিষ্ঠানের খরচের হিসাবসহ শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ ডাটা কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে পারেন।
মুদ্রণ শিল্পে কম্পিউটার : আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমরা সম্পূর্ণভাবে লেটার প্রেসের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। কিন্তু আশির দশকের পরবর্তীতে কম্পিউটারের সাহায্যে কম্পোজের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে আমাদের দেশের দৈনিক পত্রিকাসহ সব ধরনের বিনোদন পত্রিকা, ম্যাগাজিন এবং বিভিন্ন ধরনের বই কম্পিউটারে কম্পোজ করা হয়।
আরও জানুন : রচনা : প্রতিবেশীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য
কম্পিউটারে কম্পোজ লেটার প্রেসের তুলনায় অনেক উন্নত ধরনের ও দ্রুততর। লেটার প্রেসে কাজ করা কষ্টসাধ্য ও অনেক সময়ের ব্যাপার ছিল। কিন্তু কম্পিউটার আবিষ্কারের ফলে এ বিষয়গুলো এখন অনেক সহজলভ্য।
পাঠদান : আধুনিক শিক্ষায় কম্পিউটার পাঠদানেও সহায়তা করে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চতর শিক্ষায় কম্পিউটারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নোট সংগ্রহ করতে পারে। এছাড়া কম্পিউটারে শব্দ ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে-কলমে ব্যবহারিক শিক্ষা দেয়া সম্ভব।
পরিকল্পনা প্রণয়ন : শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে নিজ নিজ কম্পিউটারে মাসিক ও বার্ষিক পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করতে পারে এবং তা সংরক্ষণ করে সে মাফিক লেখাপড়া করতে পারে ।
অভিধান ব্যবহার : কম্পিউটারে ইংরেজি dictionary-র পাশাপাশি বর্তমানে বাংলা অভিধানও সন্নিবেশিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে জটিল শব্দের বানান অতি সহজেই জানতে পারে ।
পরীক্ষার খাতা দেখা : কম্পিউটারের সাথে অপটিক্যাল মার্ক রিডার (OMR) সংযুক্ত করে আজকাল স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা হয় । এর মাধ্যমে মূল্যায়নটা যেমন নির্ভুল হয় সময়ও লাগে অল্প । বিশেষ করে কয়েক হাজার অবজেকটিভ খাতাও মাত্র কয়েক মিনিটেই কম্পিউটারের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা যায়।
পরীক্ষার ফল প্রকাশ : আধুনিক শিক্ষায় কম্পিউটার যেসব যুগান্তকারী অবদান রেখেছে তার মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশ অন্যতম। ইতোমধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফলাফলও এ কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় এবং এ ফলাফল এতে সংরক্ষণও করা হয় ।
উপসংহার :
উপরিউক্ত আলোচনার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, কম্পিউটার আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম বাহক। আজকের উন্নত বিশ্বে কম্পিউটার ব্যবহার ছাড়া শিক্ষাব্যবস্থা সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব। এক কথায়, কম্পিউটার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশ্বের দরবারে চালকের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।