হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

তাদলিস(تَدْلِيس): অর্থ,সংজ্ঞা,প্রকারভেদ,হুকুম ও উদাহরণ

মহাগ্রন্থ আল কুরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যাগ্রন্থ হলো আল হাদীস। তাই হাদীস বিশুদ্ধ, নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত হওয়া চাই। কিন্তু হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে অনেক সময় রাবী সনদের দোষত্রুটি গোপন করেন। এরূপ বর্ণনাকে তাদলিস(تَدْلِيس) এবং বর্ণনাকৃত হাদীসকে আর বর্ণনাকারীকে মুদাল্লাস বলা হয়।

তাদলিস অর্থ কি ও কাকে বলে ?

আভিধানিক অর্থ :

تَدْلِيسٌ শব্দটি বাবে تَفْعِيلٌ এর মাসদার, মাদ্দাহ د – ل – س জিনসে صَحِيحٌ; এর আভিধানিক অর্থ হলো-

  • বিক্রেতার পণ্যবস্তুর দোষত্রুটি ক্রেতার কাছ থেকে গোপন করা।
  • গোপন করা ।
  • অন্ধকার মিশ্রিত ও প্রগাঢ় হওয়া ।
  • গোপন ভুল ।
  • দোষ গোপন করা ।

এটাকে তাদলিস বলার কারণ হলো, এতে বর্ণনাকারী আপন শায়খের নাম গোপন রেখে হাদীস বর্ণনা করেন। যাতে হাদীসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে এক ধরনের অস্পষ্টতা বা অন্ধকারের সৃষ্টি হয় ।

আরো দেখো : মুরসাল হাদিস: অর্থ , সংজ্ঞা, হুকুম, উদাহরণ ও গ্রহণযোগ্যতা

পারিভাষিক সংজ্ঞা :

১। হাদীস বর্ণনাকারী আপন শায়খের নাম উল্লেখ না করে ঊর্ধ্বতন শায়খ থেকে এমন ভাষায় হাদীস বর্ণনা করা যা দ্বারা হাদীস শোনার ধারণা করা যায়, তবে মিথ্যার অবকাশ থাকে। বর্ণিত এরূপ হাদীসকে তাদলিস বলে।

২। ড. মাহমুদ আত তহহানের ভাষায়-

هُوَ إِخْفَاءُ عَيْبٍ فِي الإِسْنَادِ تَحْسِينًا لِظَاهِرِهِ

তাদলিস হাদীসের উদাহরণ :

একদা ইবনে উয়াইনা (র) হাদীস বর্ণনার সময় বললেন- قَالَ الزُّهْرِيُّ তখন তাকে বলা হলো- هَلْ سَمِعْتَ مِنَ الزُّهْرِيِّ؟ অর্থাৎ, আপনি কি স্বয়ং যুহরী থেকে শুনেছেন? তখন তিনি উত্তরে বললেন-سَمِعْتُ عَبْدَ الزُّرَاقِ عَنْ مُعَمَّرٍ عَنِ الزُّهْرِيِّ সুতরাং দেখা গেল, ইবনে উয়াইনা তাদলীস করে আপন শায়খ আবদুর রাজ্জাকের নাম গোপন করে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তাদলিস এর প্রকারভেদ :

উসূলে হাদীসবিদদের মতে তাদলিস এ তিন প্রকার । যথা—

১। تَدْلِيسُ الشُّيُوخِ

২। تَدْلِيسُ الإِسْنَادِ

৩। تَدْلِيسُ التَّسْوِيَةِ

১। تَدْلِيسُ الشُّيُوخِ : শায়খ যে নাম বা উপনাম দ্বারা পরিচিত ও বিখ্যাত তা বাদ দিয়ে অন্য অপ্রসিদ্ধ নামে বা উপনামে তাঁকে উল্লেখ করাকে সে تَدْلِيسُ الشُّيُوخِ বলে ।

আরো দেখো : মাশহুর,আযীয ও গারীব হাদিসের: অর্থ, সংজ্ঞা, হকুম ও উদাহরণ

২। تَدْلِيسُ الإِسْنَادِ : রাবী কর্তৃক তার সমকালীন ব্যক্তি অথবা যার সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে এমন ব্যক্তি হতে এ ধরনের হাদীস বর্ণনা করা, যা সে তার থেকে শোনেনি। এটাকে تَدْلِيسُ الإِسْنَادِ বলে।

৩। تَدْلِيسُ التَّسْوِيَةِ : মুদাল্লিস তার শায়খের নাম বাদ দেয় না; বরং তার উপরের স্তরের রাবীকে দুর্বল বা অল্পবয়স্ক বলে বাদ দেয় এ উদ্দেশ্যে, যাতে হাদীসটি সুন্দর ও দোষমুক্ত থাকে । একে تَدْلِيسُ التَّسْوِيَةِ বলে । এটা অত্যন্ত নিকৃষ্ট ।

তাদলিস এর হুকুম :

তাদলিসের হুকুম সম্পর্কে আলেমগণের মতভেদ রয়েছে। যেমন-

১. জমহুরের অভিমত : জমহুর ইমামগণের মতে, তাদলীস হারাম। যেমন ইমাম শামনী (র) এর বক্তব্য – التَّدْلِيسُ حَرَامٌ عِنْدَ الأئِمَّةِ

২. ওয়ার্কীর অভিমত : ইমাম ওয়াকী (র) বলেন, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যেখানে কাপড়ের দোষ গোপন করা তথা তাদলীস হারাম, সেখানে হাদীসের ক্ষেত্রে কিভাবে তাদলীন হালাল হতে পারে?

৩. শায়খ আবুল ফযলের অভিমত : শায়খ আবুল ফযল (র) বলেন, যে রাবী বর্ণনার ক্ষেত্রে তাদলীস করেন, তার হাদীস গ্রহণ করা যাবে না। কিন্তু তিনি ثِقَة হলে গ্রহণযোগ্য হবে। আর বর্ণনাকারী হাদীস বর্ণনাকালে তাদলীসের বিষয়টি যদি সুস্পষ্ট করে দেয়, তাহলে সে হাদীস গ্রহণ করা যেতে পারে ।

আরো দেখো : হাদিস কাকে বলে? হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা

৪. আমীমুল ইহসানের অভিমত : মীযানুল আখবার প্রণেতা মুফতি আমীমুল ইহসান (র) বলেন- রাবী যদি ثِقَة হয় এবং رِوَايَة এর সেকাহ ও তাহদীসের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হবে ৷

৫. কতিপয়ের অভিমত : কতিপয় আলেমের মতে, تَدْلِيسُ الإِسْنَادِ অতিশয় ঘৃণিত ও নিন্দনীয় । তারা বলেন – تَدْلِيسُ الإِسْنَادِ أَخُو الكِذْبِ

শিক্ষাগার

প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে

মাহমুদুল হাসান

শিক্ষাগত যোগ্যতা
গণিতে অনার্স ও মাস্টার্স

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ফাজিল সম্পন্ন

গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা

বিশেষ দক্ষতা

বাংলা সাহিত্য • গণিত • ইসলামিক শিক্ষা

অভিজ্ঞতা

শিক্ষকতা ও ৫+ বছর কন্টেন্ট রাইটিং

আমাদের লক্ষ্য

শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা। ২০২৩ সাল থেকে লাখো শিক্ষার্থী শিক্ষাগার থেকে উপকৃত হচ্ছে।

Leave a Comment