ক্রিয়া সম্পাদনের কাল এবং আধারকে অধিকরণ কারক বলে।
ক্রিয়া নিষ্পন্ন হওয়ার জন্য স্থান, কাল ও বিষয়ের প্রয়োজন হয়। যে স্থানে, যে কালে বা যে বিষয়ে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয় তাকে অধিকরণ কারক বলা হয়। যেমন :
- স্থান : এ পুকুরে মাছ আছে।
- বিষয় : বেলাল অঙ্কে ভালো ৷
- সময় : রাতে আকাশে চাঁদ ওঠে।
- ব্যাপ্তি : দুধে মাখন আছে।
অধিকরণ কারকের প্রকারভেদ :
উপরের আলোচনা হতে দেখা যায় যে, অধিকরণ কারককে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. কালাধিকরণ।
২. স্থানাধিকরণ ও
৩. ভাবাধিকরণ।
আরো জানো : কারক: শব্দের অর্থ,সংজ্ঞা,কত প্রকার,চেনার সহজ উপায়,উদাহরণ
কালাধিকরণ :
যে কালে বা সময়ে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তাকে কালাধিকরণ বলে। যেমন : পাঁচ তারিখে আমাদের পরীক্ষা শুরু হবে। সে রাতে ফিরবে। সকালে সূর্য ওঠে। বসন্তে কোকিল ডাকে।
স্থানাধিকরণ :
ক্রিয়া যে স্থানে নিষ্পন্ন হয়, তাকে স্থানাধিকরণ বলে। যেমন : সে ঢাকায় থাকে। কূলে একা বসে আছি নাহি ভরসা। পুকুরে মাছ আছে। বাবা বাড়িতে নেই । আগ্রায় তাজমহল আছে।
স্থানাধিকরণ আবার তিন প্রকার । যথা-
১. ঐকদেশিক ।
২. অভিব্যাপক ।
৩. বৈষয়িক ।
ঐকদেশিক : বিরাট বা বিশাল স্থানে কোনো অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে, তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ বলে। যেমন: বনে বাঘ আছে। পুকুরে মাছ আছে। নদীতে কুমির থাকে। সাগরে ডলফিন থাকে। আকাশে সূর্য উঠেছে।
অভিব্যাপক : উদ্দিষ্ট বস্তুটি সব স্থানজুড়ে থাকলে, তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ বলে । যেমন : নদীতে পানি আছে। মেঘে বৃষ্টি আছে। তিলে তৈল আছে।
বৈষয়িক : কোনো বিষয়ে কিংবা কোনো বিশেষ গুণে কারও দক্ষতা বা অদক্ষতা এবং ক্ষমতা বা অক্ষমতা বোঝালে বৈষয়িক অধিকরণ কারক হয়। যেমন : এদেশের মানুষ সাহসে দুর্জয়। পার্থ ইংরেজিতে ভালো কিন্তু অঙ্কে কাঁচা।
আরো জানো : বিভক্তি কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি। চেনার সহজ উপায়
ভাবাধিকরণ :
কোনো ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য যদি অন্য ক্রিয়ার কোনোরূপ ভাবের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে, তাকে ভাবাধিকরণ বলে। ভাবাধিকরণে সব সময় সপ্তমী বিভক্তির প্রয়োগ হয়। যেমন : সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়। সূর্যাস্তে পৃথিবীতে অন্ধকার নামে। কান্নায় শোক মন্দীভূত হয়।
অধিকরণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তির উদাহরণ:
১. প্রথমা বিভক্তি : বাবা বাড়ি নেই। শুক্রবার ঢাকা যাব।
২. দ্বিতীয়া বিভক্তি : হৃদয় আমার নাচিছে আজিকে।
৩. তৃতীয়া বিভক্তি : খিলিপান দিয়ে ওষুধ খাবে। বাড়ির পাশ দিয়ে রাস্তাটি গিয়েছে।
৪. পঞ্চমী বিভক্তি : বাড়ি হতে স্টেশন দেখা যায়। ছাদ থেকে মাঠ দেখা যায়। সদরঘাট থেকে বুড়িগঙ্গা দেখা যায়।
৫. সপ্তমী বিভক্তি : রাতে জ্যোৎস্না হাসে। আকবর বাড়িতে নেই । তিলে তেল আছে। পুকুরে মাছ ধরা হয়। কাননে কুসুম কলি সকলি ফুটিল। গগনে গরজে মেঘ। ছেলেটির অঙ্কে দখল আছে। আকাশে চাঁদ উঠিয়াছে। আষাঢ়ে বাদল নামে। এ বাড়িতে কেউ নেই।
গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। গ্রীষ্মকালে আম পাকে। ঘরে পানি পড়ে। ঘাটে নৌকা বাধা আছে। জলে কুমির থাকে। তিনি এবার হজে গেলেন। তিনি ব্যাকরণে পণ্ডিত। নদীতে মাছ ধরা সহজ নয়। পাতায় পাতায় পড়ে নিশির শিশির। পড়তে তার মন বসে না।
পৃথিবীতে সাতটি মহাসাগর আছে। পাঠে মনোযোগ দাও। বনে বাঘ থাকে। বসন্তে কোকিল ডাকে। বাড়িতে কেউ নেই। বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে। সরোবরে পদ্ম ফোটে। সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দিব কোথা। সূর্যোদয়ে অন্ধকার দূরীভূত হয়। হৃদয়ে বুদ বুদ যত ।
