সম্প্রদান কারক : স্বত্বত্যাগ করে কাকেও কিছু দান, অৰ্চনা, সাহায্য করলে তাকে সম্প্রদান কারক বলে । যেমন : গরিবকে অর্থ দাও। ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও। বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দাও ।
উপরের উদাহরণে যথাক্রমে গরিবকে, ভিক্ষুককে ও বস্ত্রহীনকে ‘অর্থ’ ‘ভিক্ষা’ ‘বস্ত্ৰ’ স্বত্ব ত্যাগপূর্বক দান করা হয়েছে। এ দান আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তাই এরা সম্প্রদান কারক। কিন্তু যদি দিয়ে পাওয়া যেত তা হবে কর্মকারক। যেমন : ধোপাকে কাপড় দাও। এখানে ধোপাকে কাপড় দিলে ধোপা আবার কাপড় ফেরত দিবে । তাই এটা কর্মকারক।
সম্প্রদান কারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
সম্প্রদান কারকে প্রথমা বিভক্তি : কাঙালি ভোজ পুণ্যের কাজ। দিব তোমা শ্রদ্ধা ভক্তি
সম্প্রদান কারকে চতুর্থী বিভক্তি : বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান কর। ভিক্ষুককে পয়সা দাও। ক্ষুধার্তকে অন্ন দান কর। দুঃখীকে দয়া কর। দরিদ্রকে ধন দান কর। ভিখারিকে সাহায্য কর। ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দাও। দেশের জন্য জীবন দাও।
সম্প্রদান কারকে ষষ্ঠী বিভক্তি : ভিক্ষুকদের ভিক্ষা দাও। দেশের জন্য জীবন দাও।
আরো জানো : অধিকরণ কারক কাকে বলে?কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ বিস্তারিত
সম্প্রদানে সপ্তমী বিভক্তি : সৎপাত্রে কন্যাদান কর। অন্ধজনে দাও আলো। অর্থহীনে অর্থ দাও। গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে। দীনে দয়া কর। সর্বশিষ্যে জ্ঞান দেন গুরু মহাশয়। গৃহহীনে গৃহ দাও। অন্ধজনে দাও আলো । সৎপাত্রে কন্যা দান কর।
অপাদান কারক : যা থেকে ক্রিয়া প্রকাশিত হয়, তাকে অপাদান কারক বলে। অর্থাৎ যা হতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তু ভীত, চলিত, রক্ষিত, গৃহীত, মুক্ত, বিচ্যুত, উৎপন্ন, বঞ্চিত ইত্যাদি প্রকাশিত হয় তাকে অপাদান কারক বলে। ক্রিয়াকে কি হতে, কী থেকে, কার চেয়ে ইত্যাদি যোগে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই অপাদান কারক। যেমন : তিল হতে তৈল হয়। আমি নোয়াখালী থেকে এলাম ।
উপরের উদাহরণে ক্রিয়াকে প্রশ্ন করলে যথাক্রমে – কী হতে তৈল হয়?- তিল হতে। কোথা থেকে এলাম? – নোয়াখালী থেকে। সুতরাং তিল ও নোয়াখালী অপাদান কারক।
- এরূপ : গৃহীত : ঝিনুক থেকে মুক্তা মেলে। মেঘ হতে বৃষ্টি হয়।
- জাত : খেজুর রসে গুড় হয়। জমি থেকে ফসল পাই।
- বিচ্যুত : মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে। গাছ থেকে পাতা পড়ে।
- বিরত : পাপে বিরত হও।
- রক্ষিত : বিপদ হতে রক্ষা কর।
- দূরীভূত : এদেশ থেকে সব অন্যায় দূর কর।
- ভীত : যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে রাত হয়।
অপাদান কারকে সাধরণত পঞ্চমী বিভক্তি হয়। যেমন : বিপদ হতে রক্ষা কর। সাপ হতে ভয় পাই। গাছ হতে পাতা পড়ে।
আরো জানো : কারক: শব্দের অর্থ,সংজ্ঞা,কত প্রকার,চেনার সহজ উপায়,উদাহরণ
অপাদানকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
অপাদান কারকে শূন্য বা প্রথমা বিভক্তি : ঈশা খাঁ সকাল নয়টায় ঢাকা ছাড়ে। স্কুল পালালেই নজরুল হয় না। গাড়ি ঢাকা ছাড়ল। তাহার চোখ দিয়া পানি পড়ে। বাড়ি ঘুরে এস। স্কুল পালাইও না।
অপাদান কারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি : সাপকে সবাই ভয় করে। তোমাকে আমার ভয় হয়। বাবাকে বড্ড ভয় পাই। ভূতকে আবার কিসের ভয়?
অপাদান কারকে তৃতীয়া বিভক্তি : তার চোখ দিয়ে জল পড়ে। কান দিয়ে পুঁজ পড়ে। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে।
অপাদান কারকে পঞ্চমী বিভক্তি : তিল থেকে তৈল হয়। ধর্ম হতে বিচ্যুত হইও না। ধন হতে সুখ হয় না।
অপাদান কারকে ষষ্ঠী বিভক্তি : যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। এখানে সাপের ভয়। টাকার লোভ ভালো নয়। চোরের ভয়ে ঘুম আসে না ।
অপাদান কারকে সপ্তমী বিভক্তি : বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রর্থনা। লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। সব মেঘে বৃষ্টি হয় না। টাকায় টাকা হয়। মৃত্যুতে ভয় কিসের । মাটিতে সোনা ফলে। অর্থে অনর্থ ঘটে। আমি কি ডরাই সখী ভিখারী রাঘবে? কত ধানে কত চাল তা আমি জানি। কুকর্মে বিরত হও। ছাদে পানি পড়ে। জলে বাষ্প হয়। তিলে তৈল হয়। পরাজয়ে ডরে না বীর। পাপে বিরত হও। পরীক্ষা আসিলে চোখে জল পড়ে। মেঘে বৃষ্টি হয়। লোক মুখে একথা শোনা যায়। সব ঝিনুকে মুক্তা পাওয়া যায় না। সাদা মেঘে বৃষ্টি হয় না।