সংজ্ঞা : বাক্যস্থিত যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ক্রিয়া সম্পাদন করে বা যার দ্বারা ক্রিয়া সম্পাদিত হয়, তাকে কর্তা বা কর্তৃকারক বলে।
যেমন : দীনা খেলা করে। রূহী ফুল তুলে।
সাধারণত ক্রিয়াপদকে ‘কে’ বা ‘কারা’? প্রশ্ন করলে যে উত্তরটি পাওয়া যায় তাই কর্তৃকারক। যেমন— উপরের উদাহরণ দুটোকে প্রশ্ন করা যাক।
কে খেলা করে – দীনা কর্তৃকারক। কে ফুল তুলে – রূহী কর্তৃকারক। সাধারণত কর্তৃকারকে প্রথমা (১মা) বিভক্তি হয়।
কর্তৃকারকের প্রকারভেদ :
কর্তৃকারকে বাক্যের ক্রিয়া সম্পাদনের বৈচিত্র্য বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চার প্রকারের হয়ে থাকে। যথা—
১. মুখ্যকর্তা : যে বা যিনি (কর্তা) কাজটি নিজেই করে তাকে মুখ্যকর্তা বলে।
যেমন— আফ্ফান বই পড়ে। এখানে আফ্ফান কাজটি নিজে করে বলে আফ্ফান মুখ্যকর্তা। তেমনি, ছেলেরা ফুটবল খেলছে। মাঘ মাসে শীতের বাতাস বহে।
আরো জানো : কর্ম কারক : সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, উদাহরণ ও বিভিন্ন বিভক্তি
২. প্রযোজক কর্তা : যে কর্তা অন্যকে দিয়ে কাজ সম্পন্ন করে, তাকে প্রযোজক কর্তা বলে।
যেমন- মা ছেলেকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। শিক্ষক ছাত্রদের ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন।এখানে প্রথম বাক্যে মা ছেলেকে চাঁদ দেখানোর কাজ সম্পন্ন করাচ্ছেন। তাই মা হলো প্রযোজক কর্তা এবং দেখাচ্ছেন ক্রিয়াটি প্রযোজক ক্রিয়া।
৩. প্রযোজ্য কর্তা : যাকে দিয়ে মূল কর্তার করণীয় কাজ সম্পাদিত হয় অর্থাৎ’ কর্তা যাকে দিয়ে কাজ সম্পন্ন করায় তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে। যেমন-
যেমন : মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। এ বাক্যে ‘মা’ প্রযোজক কর্তা ‘শিশু’ প্রযোজ্য কর্তা । কারণ চাঁদ শিশুই দেখছে । মা দেখাচ্ছেন। এরূপ : মা শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছেন। শিক্ষক ছাত্রকে পড়াচ্ছেন। রাখাল গরুকে ঘাস খাওয়ায় ।
৪. ব্যতিহার কর্তা : কোনো কোনো বাক্যে দুটি কর্তা একত্রে এক জাতীয় ক্রিয়া সম্পাদন করে, এদের ব্যতিহার কর্তা বলে। যেমন –
ভাইয়ে ভাইয়ে মোটেই মিল নেই । বাপে বেটায় ঝগড়া করছে
বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খায়। সাপে নেউলে লড়াই হচ্ছে।
রাজায় রাজায় লড়াই, উলুখাগড়ার প্রান্তে।
আরো জানো : করণ কারক কাকে বলে ও উদাহরণ। বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
কর্তৃকারকে বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার :
১. প্রথমা বা শূন্য বা ‘অ’ বিভক্তি : জনি ফুটবল খেলে। কর্তৃকারকে শূন্য বা প্রথমা বিভক্তি : জল পড়ে, পাতা নড়ে। জনি ভাত খায়। পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল। রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে । শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে। কোকিল ডাকে। বাঁশি বাজে ।
২. দ্বিতীয়া বা ‘কে’ বিভক্তি : পার্থকে পড়তে হবে। কর্তৃকারকে দ্বিতীয়া বিভক্তি : আমাকে বাঁচতে হবে। তাকে অবশ্যই যেতে হবে। সকলকে মরতে হবে।
৩. তৃতীয়া বা দ্বারা বিভক্তি : মীর মশার্রফ কর্তৃক ‘বিষাদ সিন্ধু” রচিত হয়েছে। কর্তৃকারকে তৃতীয়া বিভক্তি : তোমা দ্বারা সবই সম্ভব। আমা দ্বারা একাজ হবে না সাধন। পুলিশ কর্তৃক চোর ধৃত হয়েছে।
৪. কর্তৃকারকে পঞ্চমী বিভক্তি : আমা হতে এ কাজ হবে না সাধন। বাঘ হতে হরিণের মরণ। সৎ পুত্র হতে বংশ উজ্জ্বল হয়।
৫. ষষ্ঠ বা ‘র’ বিভক্তি : আমার খাওয়া হয়নি। এ কাজে আমার সম্মতি নেই। কবিতাটি পার্থের লেখা। কর্তৃকারকে ষষ্ঠী বিভক্তি : আমার যাওয়া হবে না। মূর্খ বন্ধুর চেয়ে শিক্ষিত শত্রু ভালো। আমার যাওয়া হয়নি।
৬. সপ্তমী এ, য়, তে বিভক্তি : পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়। ভাইয়ে ভাইয়ে লেগেছে ঝগড়া। কর্তৃকারকে সপ্তমী বিভক্তি : পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়। রাজায় রাজায় লড়াই করে । গরুতে গরুতে গুঁতোগুঁতি করে। বুলবুলিতে ধান খেয়েছে, খাজনা দিব কিসে। দশে মিলে করি কাজ। গোরুতে গাড়ি টানে। গায়ে মানে না আপনি মোড়ল। চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী। তোমায় যেতে হবে। পাছে লোকে কিছু বলে। রতনে রতন চিনে। ঘোড়ায় ঘাস খায়। বুলবুলিতে ধান খেয়েছে।
আরো জানো : কারক: শব্দের অর্থ,সংজ্ঞা,কত প্রকার,চেনার সহজ উপায়,উদাহরণ