সংজ্ঞা : যাকে আশ্রয় করে বা যার দ্বারা কর্তার ক্রিয়া সম্পাদিত হয়, তাকে কর্ম কারক বলে। অর্থাৎ যাকে উদ্দেশ্যে করে ক্রিয়া সম্পাদিত হয়, তাকে কর্ম কারক বলে। যেমন – সাজিদ আমাকে একখানা বই দিয়েছে।
এখানে বই বস্তুবাচক কর্ম (মুখ্য) এবং আমাকে ব্যক্তিবাচক (গৌণ) কর্ম। কর্মকারকে গৌণ কর্ম বিভক্তি যুক্ত হয়, মুখ্য কর্মে বিভক্তি যুক্ত হয় না। কর্মকারকে সাধারণত দ্বিতীয়া (২য়া) বিভক্তি হয়। বাক্যে ক্রিয়াপদকে ‘কী’ বা ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে কর্মকারক পাওয়া যায় ।
কর্ম কারকের প্রকারভেদ :
কর্ম কারক প্রধানত পাঁচ প্রকার। যথা-
ক. মুখ্যকর্ম ও গৌণকর্ম : অনেক সময় একটি ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে। এদের একটি হলো অপ্রাণিবাচক বা বস্তুবাচক এবং অপরটি হলো প্রাণিবাচক । অপ্রাণিবাচক কর্মের সাথে ক্রিয়ার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে। তাই অপ্রাণিবাচক কর্মটিকে মুখ্যকর্ম বলে।
আবার প্রাণিবাচক কর্মের সাথে ক্রিয়ার পরোক্ষ সম্পর্ক থাকে। তাই প্রাণিবাচক কর্মটিকে গৌণকর্ম বলে। অতএব, দ্বিকর্মক ক্রিয়ার অপ্রাণিবাচক কর্মকে মুখ্য কর্ম এবং প্রাণিবাচক কর্মকে গৌণকর্ম বলে। যেমন- বাবা আমাকে কলমটি দিলেন।
উপরের বাক্যের ক্রিয়া হলো ‘দিলেন’। ‘আমাকে’ এবং ‘কলমটি’ দুটি কর্ম। এদের মধ্যে ‘আমাকে’ প্রাণিবাচক এবং ‘কলমটি’ অপ্রাণিবাচক কর্ম। সুতরাং ‘কলমটি’ মুখ্য কর্ম এবং ‘আমাকে’ গৌণ কর্ম।
আরো জানো : কর্তৃকারক:সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, উদাহরণ ও বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার
খ. উদ্দেশ্য ও বিসের কর্ম : অনেক সময় একটি কর্ম দ্বারা বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় না, তখন আরও একটি কর্মপদের দরকার হয়। এদের মধ্যে প্রধান কর্মটিকে উদ্দেশ্য কর্ম এবং পরিপূরক কর্মটিকে বিধেয় কর্ম বলে। যেমন- তিনি বাড়িটিকে অফিস বানালেন।
উপরের বাক্যে ‘বাড়িটিকে উদ্দেশ্য কর্ম এবং ‘অফিস’ বিধেয় কর্ম। উদ্দেশ্য কর্মে কে, রে, এ, র ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয় এবং বিধেয় কর্মে বিভক্তি লোপ পায় বা শূন্য বিভক্তি হয় ।
গ. সমধাতুজ কর্ম : বাক্যে ক্রিয়াপদ ও কর্মপদ একই ধাতু থেকে উৎপন্ন হলে কর্ম পদটিকে সমধাতুজ কর্ম বলে। যেমন- খুব এক ঘুম ঘুমিয়েছি।
উপরের বাক্যে ‘ঘুম’ এবং ‘ঘুমিয়েছি’ উভয়ই ঘুম ধাতু থেকে উৎপন্ন হয়েছে। কিন্তু বাক্যে ‘ঘুম’ হলো কর্মপদ এবং ‘ঘুমিয়েছি’ ক্রিয়াপদ। সুতরাং ‘ঘুম’ সমধাতুজ কর্ম ।
আরো জানো : অধিকরণ কারক কাকে বলে?কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ বিস্তারিত
কর্ম কারকে বিভিন্ন বিভক্তি :
কর্মকারকে সাধারণত নিম্নলিখিত বিভক্তিসমূহ হয়ে থাকে। যেমন—
১. য়- বিভক্তি – আমায় দশটি টাকা দাও, বাবা ।
২. কে বিভক্তি— মুকুলকে বই কিনে দিও।
৩. রে— বিভক্তি – আমারে তুমি করিবে ত্রাণ – এ নহে মোর প্রার্থনা।
৪. এ ছাড়াও কর্মকারকে অন্যান্য বিভক্তি হয়ে থাকে।
৫. কর্মকারকে ১মা (অ)— শিকারি কর্তৃক হরিণ নিহত হয়েছে। রিপন বল খেলে। খুব ঠকা ঠকেছি। চোর ধৃত হয়েছে। খুব ঘুম ঘুমিয়েছি।
৬. কর্মকারকে ২য়া – রেখো মা দাসেরে মনে। গুরুজনে কর নতি। দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে। তোমাকে বেশ মানিয়েছে ৷
৭. কর্মকারকে ৬ষ্ঠী – দেশের সেবা কর। তোমার দেখা পেলাম না
৮. কর্মকারকে ৭মী – হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান। গুরুজনে কর নতি। আমায় একটু আশ্রয় দিন। তোমায় দেখলেও পাপ হয়। জিজ্ঞাসিব জনে জনে।
আরো জানো : করণ কারক কাকে বলে ও উদাহরণ। বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার