ঘর্ষণ একটি প্রয়োজনীয় উপদ্রব ব্যাখ্যা :
ঘর্ষণের অনেক অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও ঘর্ষণকে একটি প্রয়োজনীয় উপদ্রব হিসেবে গণ্য করা হয়। এর কারণ ঘর্ষণ ছাড়া আমরা কোনো কিছুই করতে পারি না। যদি ঘর্ষণ না থাকতো তবে বস্তুর কোনো গতিই আর শেষ হতো না, বিরামহীনভাবে চলতে থাকতো। ঘর্ষণ আছে বলেই দেয়ালে একটি পেরেক স্থিরভাবে আটকে থাকে। ঘর্ষণের কারণেই পাকা দালান ও বাড়ীঘর নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। ঘর্ষণের ফলে কাগজে পেনসিল বা কলম দিয়ে লিখতে পারছি। আমাদের জুতা এবং মাটির মধ্যে সৃষ্ট ঘর্ষণের কারণে আমরা হাঁটা-চলা করতে পারি। ঘর্ষণের জন্য আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী গাড়ীর গতির দিক পরিবর্তন করতে পারি। বাতাসের ঘর্ষণ আছে বলেই প্যারাসুট ব্যবহার করে বিমান থেকে নিরাপদে মাটিতে নামা সম্ভব হয়েছে। এতসব উপকারী দিক থাকা সত্ত্বেও ঘর্ষণের জন্য আমাদের কম ঝামেলা পোহাতে হয় না। অতিরিক্ত ঘর্ষণের কারণে যানবাহন খুব সহজে চলাচল করতে পারে না। যন্ত্রপাতির গতিশীল অংশগুলোর মধ্যে ঘর্ষণের ফলে এরা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ছিঁড়ে যায়। যে কোনো ধরণের যানবাহন তা উড়োজাহাজ, নৌকা বা গাড়ি হোক না কেন, অতিরিক্ত ঘর্ষণকে অতিক্রম করতে অতিরিক্ত জ্বালানী খরচ করতে হয়। যার দরুণ ঘর্ষণের ফলে জ্বালানীর তথা শক্তির অপচয় হয়।
ঘর্ষণের ফলে শক্তির যে অপচয় হয় তা প্রধানত তাপশক্তিরূপে আবির্ভূত হয়। ঘর্ষণের ফলে শুধু যে শক্তি তাপে পরিণত হয় তাই নয়, এর ফলে ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ অত্যধিক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যার দরুণ ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ঘর্ষণের ফলে জুতার সোল ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং ছিঁড়ে যায়। তাই আমাদের কাজকর্ম ও জীবন যাপন সহজ করার জন্য ঘর্ষণ যেমন প্রয়োজন, তেমনি অতিরিক্ত ঘর্ষণ অনেক ক্ষয়ক্ষতিরও কারণ। তাই প্রয়োজনীয় ঘর্ষণ সৃষ্টির জন্য ঘর্ষণকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কখনো আমরা ঘর্ষণকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কমাতে চাই, আবার কখনো একে বাড়াতে চাই। অর্থাৎ ঘর্ষণকে যেমন পুরোপুরি বাদ দেয়া যায় না, তেমনিভাবে অনেক ক্ষেত্রে ঘর্ষণ আমাদের উপকারে আসে। এজন্য ঘর্ষণকে প্রয়োজনীয় উপদ্রব বলা হয়।