সাধিত শব্দ : যে সকল শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় এবং বিশ্লেষণ করলে আলাদা অর্থবোধক শব্দ পাওয়া যায়, সেগুলোকে সাধিত শব্দ বলে। সাধারণত একাধিক শব্দের সমাস হয়ে অথবা, প্রত্যয় কিংবা উপসর্গ যোগ হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়ে থাকে। যেমন- গোলাপ + ঈ = গোলাপী, নীল যে আকাশ = নীলাকাশ, প্র + শাসন = প্রশাসন, বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয় ইত্যাদি।
সাধিত শব্দ কত প্রকার ও কী কী ?
সাধিত শব্দকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. মৌলিক শব্দ যোগে গঠিত সাধিত শব্দ ।
২. শব্দাংশ যোগে গঠিত সাধিত শব্দ ।
১. মৌলিক শব্দযোগে গঠিত সাধিত শব্দ : দুই বা ততোধিক মৌলিক শব্দ যোগে যে শব্দ গঠিত হয়, তাকে মৌলিক শব্দ যোগে সাধিত শব্দ বলে। যেমন- বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়, পিতা ও মাতা = পিতামাতা, সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন ইত্যাদি।
২. শব্দাংশ যোগে গঠিত সাধিত শব্দ : মৌলিক শব্দের সাথে প্রত্যয় বা শব্দাংশ যোগে যে শব্দ গঠিত হয়, তাকে শব্দাংশ যোগে গঠিত সাধিত শব্দ বলে। যেমন- ঢাকা + আই = ঢাকাই, উপ + জেলা = উপজেলা, ছেলে + টি = ছেলেটি ইত্যাদি ।
আরো পড়ুন : উৎপত্তি বা উৎস অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণ সহ
সাধিত শব্দ গঠন :
বিভিন্ন উপায়ে সাধিত শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন-
১. প্রত্যয় যোগে : মৌলিক শব্দ বা ধাতুর পরে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে শব্দ গঠিত হয়, তাকে প্রত্যয় যোগে গঠিত সাধিত শব্দ বলে। যেমন- চল + অন্ত = চলন্ত, ঢাকা + আই = ঢাকাই, ঝর + না = ঝরনা ইত্যাদি ।
২. সন্ধি যোগে : পরস্পর অন্বয় যুক্ত দুটি ধ্বনি বা বর্ণের মিলনে যে নতুন শব্দ গঠিত হয়, তাকে সন্ধি যোগে গঠিত সাধিত শব্দ বলে । যেমন- বিদ্যা + আলয়, মহা + আশয় = মহাশয়, ইতি + আদি = ইত্যাদি, প্রতি + ঈক্ষা = প্রতীক্ষা ইত্যাদি।
৩. বিভক্তি যোগে : মৌলিক শব্দের পরে বিভক্তির চিহ্ন যুক্ত হয়ে যে শব্দ গঠিত হয়, তাকে বিভক্তি যোগে গঠিত সাধিত শব্দ বলে। যেমন – আমা + কে = আমাকে, হাট + এ = হাটে, রাজা + র = রাজার ইত্যাদি।
৪. সমাস যোগে : পরস্পর অন্বয় যুক্ত দুই বা ততোধিক পদ মিলিত হয়ে যে শব্দ গঠিত হয়, তাকে সমাস নিষ্পন্ন সাধিত শব্দ বলে। যেমন- শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী, হাট ও বাজার = হাটবাজার, পল মিশ্রিত অন্ন = পলান্ন ইত্যাদি।
৫. উপসর্গ যোগে : মৌলিক শব্দের পূর্বে উপসর্গ যুক্ত হয়ে যে শব্দ গঠিত হয়, তাকে উপসর্গ যুগে গঠিত সাধিত শব্দ বলে। যেমন- রাম + শালিক = রামশালিক, পাতি + কাক = পাতিকাক, উপ + গ্রহ = উপগ্রহ ইত্যাদি ।
৬. শব্দদ্বৈতের সাহায্যে : একই মৌলিক শব্দ পাশাপাশি দুবার বসে নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- নরম নরম, হন হন, সাদা সাদা ইত্যাদি।
৭. পদ পরিবর্তন দ্বারা : পদ পরিবর্তন করে নতুন শব্দ গঠন করা যায় । যেমন- শরীর শারীরিক, ফুল→ ফুলের, অংশ→ আংশিক ইত্যাদি।
৮. সংখ্যাবাচক শব্দ যোগে : মৌলিক শব্দের পূর্বে সংখ্যাবাচক শব্দ যুক্ত করে সাধিত শব্দ গঠন করা যায়। যেমন- এক + অধিক = একাধিক, পঞ্চ + বটি = পঞ্চবটি, অহো + রাত্রি = অহোরাত্রি ইত্যাদি।
৯. প্রবাদ প্রবচন : প্রবাদ প্রবচন যোগে বিশেষ অর্থ প্রকাশক নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- মুখ রাখা (সম্মান রাখা), অক্কা পাওয়া (মারা যাওয়া), কান কাটা (বেহায়া) ইত্যাদি।
১০. পদাশ্রিত নির্দেশক যোগে : পদাশ্রিত নির্দেশক যোগেও নতুন শব্দ গঠিত হয়। যেমন- কলমটি, বৃক্ষরাজী, জনগণ, শিক্ষকমণ্ডলী ইত্যাদি।