উপস্থাপনা :
আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিত্য নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে সভ্যতার চরম উন্নয়ন সাধন করেছে। সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ যেদিন মাটিতে বীজ বুনে ফল ও ফসল ফলাতে শুরু করল, সেদিন থেকেই ফসল উৎপাদনের কাজে নতুন পন্থার উদ্ভাবন হলো। শুরু হলো কৃষি কাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগ। ফলে বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসল উৎপাদনের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষি ও সভ্যতা :
কৃষির তাৎপর্য :
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা :
সে প্রকৃতির রহস্য ভেদ করার জন্য নব নব তত্ত্ব আবিষ্কার করল। প্রকৃতিকে আবিষ্কার করার নেশায় অস্থির হয়ে উঠল। কিছুতেই তার তৃপ্তি নেই। তাই প্রকৃতির দেয়া শস্য সম্পদে সে সন্তুষ্ট থাকতে পারে নি। আধুনিক কৃষিবিদ্যা রপ্ত করে নিজের রুচির পরিতৃপ্তি পরিপুষ্টি সাধন করছে।
আরও পড়ুন :- কৃষি কাজে বিজ্ঞান – রচনা [ Class – 6, 7, 8, 9 ,10 ]
কৃষি ও কৃষিকাজ :
মাটি কর্ষণ করে ফসলের সম্ভার ফলানোর প্রক্রিয়াটিই কৃষিকাজ নামে পরিচিত। আদিকালে মানুষ অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে কৃষিকাজের উদ্ভাবন করে। প্রকৃতির দানকে নিজের শক্তি ও সৃষ্টিক্ষমতায় রূপান্তর ঘটিয়ে সে গড়ে তুলেছে কৃষি ব্যবস্থা। কৃষির প্রথম উদ্দেশ্য মুখের আহার জুটানো হলেও পরবর্তীতে মানুষ শিল্প কাঁচামাল থেকে শুরু করে জীবনের সকল প্রকার উপকরণ কৃষি থেকে সংগ্রহ করতে শিখেছে।
শিল্পযুগে এসে কৃষিক্ষেত্রেও মানুষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও উপকরণের ব্যবহার করেছে। ফলে আজ ভোঁতা কর্ষণ সামগ্রী ও পশুশক্তির পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি । ফলে আদিম এই পেশাটিতে আজ এসেছে বৈচিত্র্য ও গতির ছোঁয়া ।
কৃষিকাজের গুরুত্ব :
কৃষিকাজ দিয়েই মানুষ পৃথিবীতে স্বপোষিত অর্থনৈতিক জীবনের সূত্রপাত করেছিল এই পৃথিবীতে এবং এখনো কৃষির ওপর নির্ভর করে মানবজীবনের ধারা বয়ে চলেছে। সারা বিশ্বের মানুষের খাদ্য, শিক্ষা উপকরণ, গৃহ ও অবকাঠামোগত উপকরণের মুখ্য যোগানদাতা কৃষি। বিশ্বের মোট আয়ের ২৭ ভাগ আসে কৃষি থেকে।
মানুষের প্রয়োজন বিবেচনা করে কৃষিক্ষেত্রে অনবরত গবেষণা চলছে এবং এর পরিণামে উন্নত দেশগুলো তাদের কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। বেশি করে ফলন বাড়িয়ে উন্নত দেশ একদিকে যেমন নিজেদের অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য আনছে, তেমনি ঘাটতি দেশের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ করে মানবজাতিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করছে।
কৃষিখাতে বিজ্ঞানের প্রভাব :
একবিংশ শতাব্দীর এই ঊষালগ্নে বিশ্ববাসীর জীবনে বিজ্ঞান এতটাই প্রভাব ফেলেছে যে, বিজ্ঞান ছাড়া আজ সভ্য মানবজীবনই কল্পনা করা যায় না। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগে ফসল উৎপাদনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি প্রয়োগে আজ মরুভূমিও হয়ে উঠছে শস্যশ্যামল।
মানুষ আজ উদ্দাম উচ্ছৃঙ্খল নদীস্রোতকে বশীভূত করে উষ্ণ মরুপ্রান্তরকে করছে পানিসিক্ত। অনুর্বর কঠিন ভূমিকে উর্বর করে তাকে করা হচ্ছে শস্যবর্তী। এতে শস্য উৎপাদনে সূচিত হয়েছে যুগান্তকারী বিপ্লব ।
কৃষি কাজে বিজ্ঞানের প্রয়োজন :
পৃথিবীতে জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ কৃষি জমি বাড়ছে না; বরং অধিক হারে বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে বলে কৃষি জমি ক্রমশ কমছে। অপরদিকে উৎপাদনও বাড়ছে না। বিশেষত আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রাচীন পদ্ধতির চাষাবাদের ফলে উৎপাদিত ফসল বাড়তি জনসংখ্যার চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
অথচ উন্নত দেশগুলোতে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে উৎপাদন বাড়ছে। আমাদের দেশেও মানুষের খাদ্যাভাব পূরণের জন্য কৃষিকাজে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন :- দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা ১৫ পয়েন্ট-Class 6,7,8,9,10| পিডিএফ
বাংলাদেশের কৃষি :
সর্বক্ষেত্রে আমাদের পশ্চাৎপদতার পটভূমিতে কৃষিক্ষেত্রেও আমাদের প্রত্যাশিত অগ্রগতি আসেনি। কৃষি ও কৃষক বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে জীর্ণ-দীর্ণ কৃষকের মুখ, কংকালসার বলদ আর প্রকৃতিনির্ভর উৎপাদন প্রক্রিয়া । কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কৃষকের ছবি অঙ্কন করেছেন এভাবেই—
“বহুদিন উপবাসী নিঃস্ব জনপদে, মাঠে মাঠে আমাদের ছড়ানো সম্পদ; কাস্তে দাও আমার এ হাতে।”
কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহার :
কৃষি গবেষণায় বিজ্ঞান :
ক. কৃষিজাত দ্রব্য বা পণ্যের ব্যবহার, সংরক্ষণ ও নতুন ধরনের বীজ উদ্ভাবন ৷
খ. অপ্রচলিত কৃষিজাত দ্রব্য বা পণ্যের ব্যবহার এবং চাষাবাদ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য সংগ্রহ।
বাংলাদেশে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকাজের গুরুত্ব :
আমাদের মাটির তুলনায় জাপানের মাটির স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা একচতুর্থাংশ। অথচ তারা কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে আমাদের চেয়ে কম জমিতে সর্বাধিক ফসল ফলিয়ে খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে। তাই আমাদের দেশে উন্নত বীজ ও কৃষিক্ষেত্রের মান অনুযায়ী রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে।
আরও পড়ুন :- মানব কল্যাণে বিজ্ঞান – বাংলা রচনা ২০ পয়েন্ট – PDF
কৃষক ও কৃষি :
বিজ্ঞানের দান :
বিভিন্ন দেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞান :
উন্নত দেশের লোকেরা কৃষিকাজকে যান্ত্রিক করে ফেলেছে। শীতপ্রধান দেশে ‘শীত নিয়ন্ত্রণ’ ঘর বানিয়ে শাকসবজি এবং ফলমূল সংরক্ষণ করছে। বিজ্ঞানের সাহায্যে বর্তমানে শুষ্ক মরুভূমির মতো জায়গাতে সেচ, সার ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় চাষাবাদ করে সোনার ফসল ফলাচ্ছে। যার ফলে, বিজ্ঞান কৃষিকাজে এক যুগান্তকারী বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন :- কম্পিউটার – প্রবন্ধ রচনা : ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণী | PDF
বাংলাদেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞান :
কৃষিতে বিজ্ঞানের অবদান :
কৃষিকার্যে বিজ্ঞানের সফল প্রয়োগের উপায় :
দৃষ্টান্ত :
উপসংহার :
বিজ্ঞান জীবনের সকল দিকেই উন্নতির স্বাক্ষর রেখেছে। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের অবদান অনন্য। আমাদের জাতীয় উন্নয়ন সম্পূর্ণরূপে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তাই একমাত্র আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই কৃষিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে আমরা আমাদের খাদ্য সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি পরনির্ভরশীলতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে পারি।