হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

জীবন রক্ষায় রক্তদান – প্রবন্ধ রচনা

উপস্থাপনা :

“একের রক্ত অন্যের জীবন, রক্তই হোক আত্মার বাঁধন।” এ স্লোগানকে সামনে রেখেই স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে এসেছে একটি সংগঠন। মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার মানবধর্মের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। “মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য”- এ ভাবধারায় বিশ্বাসী হয়ে অকাতরে ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে মানুষ।

বলা হয়, মানবসেবার মধ্য দিয়েই স্রষ্টাকে সেবা করা যায়। মানুষকে ভালোবাসলে আল্লাহকে ভালোবাসা হয়। মানুষকে বাঁচাতে রক্তদান করা একটি মহৎ কাজ। তাই নিজে রক্তদান করতে হবে এবং অন্যকে রক্তদানে উৎসাহিত করতে হবে।

রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব :

মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে যেমন বাতাসের প্রয়োজন তেমনি রক্তেরও প্রয়োজন। কারণ এটি মানবদেহের অপরিহার্য উপাদান। রক্তের অভাব ঘটলে মানবজীবন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। তাকে বাঁচতে হলে অন্যের দেহের একই গ্রুপের রক্ত দেহে সঞ্চালন করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে।

আরও জানুন : রচনা : জাতীয় জীবনে দেশপ্রেমের গুরুত্ব

আবার কখনো কখনো অপারেশনের সময় রক্তের অভাব পূরণের প্রয়োজন দেখা দেয়। এসব ক্ষেত্রে অপরের রক্তদানের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া ক্যান্সার, কিডনী স্থাপন এবং ডেঙ্গু জ্বরের মতো ঘাতক ব্যাধি থেকে একজন মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতেও রক্তদান অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি হলেও কৃত্রিমভাবে রক্তের প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তাই মানুষের জীবন বাঁচাতে সুস্থ মানুষকেই রক্ত দিতে হয়। রক্তদানের ফলে একজন মুমূর্ষু রোগী জীবন ফিরে পায়। কিন্তু এতে রক্তদাতার কোনো ক্ষতি হয় না; বরং তিনি এক মহৎ কাজে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেন।

রক্তদান মহৎকাজ :

রক্তদান মানবসমাজের মহৎ কর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম। ব্যক্তির স্বেচ্ছায় দেয়া রক্তের বিনিময়ে একজন সাধারণ মুমূর্ষু রোগীর জীবন যেমন রক্ষা পায়, তেমনি বিশেষ কোনো ব্যক্তির জীবনও রক্ষা পেতে পারে। এভাবে রক্তদান দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।

আরও জানুন : রচনা: আমার জীবনের লক্ষ্য (Class 6 – 10) pdf ৩টি

এছাড়া শিক্ষা ও সেবার মান উন্নয়ন এবং গণসচেতনতার কারণে রক্তদান এ যুগে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও রক্তদান কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে দেশবাসীকে রক্তদানের মতো মহৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করছে। সুতরাং রক্তদানের সকল পদক্ষেপই মহৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত।

স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি :

রক্তদান একটি সেবামূলক কাজ। নিজের রক্তের বিনিময়ে অপরকে বাঁচানোর উদ্যোগ মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করে। বর্তমানে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এমনকি অনেক মহৎ নারী-পুরুষ স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রমে এগিয়ে আসছেন।

এদের মধ্যে অগ্রণী ও জনপ্রিয় সংগঠন হচ্ছে সন্ধানী, বাঁধন, কোয়ান্টামসহ বিভিন্ন সংগঠন। এসব সংগঠন আলোচনা সভা, সেমিনার, চলচ্চিত্র প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে স্বেচ্ছায় রক্তদানের ব্যাপারে মানুষকে অবহিত, সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করে থাকে।

রক্তদানের উপকারিতা :

রক্তদান একটি মহৎকর্ম। রক্তদানে শরীরের কোনো ক্ষতি হয়-ই না; বরং এর নানাবিদ উপকারিতা রয়েছে। নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো-

১. প্রতি চার মাস অন্তর রক্ত দিলে দেহে নতুন Blood cell সৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পায় ।

২. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যায়।

৩. রক্তদানে হৃদরোগ, রক্তশূন্যতা প্রভৃতি রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায় ।

৪. রক্তদানে মানুষের শরীর ভালো ও সুস্থ থাকে ৷

৫. রক্তদানের মাধ্যমে একটি জীবন বাঁচানো পৃথিবীর সর্বোচ্চ সেবার অন্তর্ভুক্ত ।

৬. রক্তদানে ধর্মীয় কোনো বিধিনিষেধ নেই ।

৭. রক্তদানের পর পানি ব্যতীত অতিরিক্ত কোনো দামি খাবারের প্রয়োজন নেই।

আরও জানুন : ইসলাম ধর্ম – বাংলা রচনা

রক্তদানের যোগ্যতা :

একজন সুস্থ ব্যক্তি রক্ত দিতে পারে, তবে তাকে কিছু যোগ্যতার অধিকারী হতে হয়। যেমন-

১. বয়স : ১৮ থেকে ৫৫ বছরের যে কোনো সুস্থ নর-নারী।

2. ওজন : কমপক্ষে পুরুষ ৪৭ কেজি এবং মহিলা ৪৫ কেজি।

৩. রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৭৫% বা তার ঊর্ধ্বে থাকলে ।

৪. রক্তবাহিত জটিল রোগ যেমন- ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, গণোরিয়া, হেপাটাইটিস, এইডস, চর্ম রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, টাইফয়েড ও বাতজ্বর না থাকলে ।

৫. ছয় মাসের মধ্যে কোনো বড় ধরনের অপারেশন না হলে ।

৬. চার মাসের মধ্যে কোথাও রক্ত দিয়ে না থাকলে ।

৭. মহিলাদের মধ্যে যারা গর্ভবতী নন এবং যাদের ঋতুস্রাব চলছে না ।

৮. কোনো বিশেষ ধরনের ঔষধ ব্যবহার না করলে ।

রক্ত সংরক্ষণ ও ব্যবহার :

মানুষের শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে তা ব্লাড ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজনের মাত্রা বিবেচনা করে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্লাড ব্যাংক গড়ে উঠেছে।

বর্তমানে দেশে ত্রিশটি সরকারি ব্লাড ব্যাংক আছে। বেসরকারি আছে অর্ধ শতাধিক। রেড ক্রিসেন্ট সমিতি পরিচালিত ব্লাড ব্যাংকটি রক্তদানের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

রক্তদান সম্পর্কে ভুল ধারণা :

আমাদের দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান জনপ্রিয় নয়। কিছু পেশাদার রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে নিয়মিত রক্তদান করে থাকে। কিন্তু এসব পেশাদার ব্যক্তির রক্তগ্রহণ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এদের মধ্যে প্রায় সবাই নেশাখোর, বিভিন্ন সংক্রামক ও মরণব্যাধিতে আক্রান্ত।

তাই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের অধিকারী ব্যক্তিদেরকে রক্তদানে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে রক্তদান সম্পর্কে অনেকের মধ্যেই ভুল ধারণা বিদ্যমান। রক্তদানের কথা শুনলে অনেকেই ভয়ে চমকে ওঠে। অনেকে মনে করে, রক্তদান স্বাস্থ্যহানি ঘটায়। এসব ধারণা নিতান্তই অমূলক।

আমাদের দেহে প্রতিদিন রক্ত সৃষ্টি হচ্ছে এবং পুরোনো রক্ত অকেজো হয়ে পড়ছে। রক্ত না দিলেও স্বাভাবিক নিয়মে রক্তের অকেজো হয়ে যাওয়াকে কেউই ঠেকাতে পারে না। রক্তদান করলে স্বাস্থ্যহানির কোনো আশঙ্কাই নেই, এ বিষয়ে সকলকে সচেতন করে তুলতে হবে।

রক্তদান ও গ্রহণের ব্যাপারে সতর্কতা :

রক্তদান এবং গ্রহণ উভয়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই রক্তদান কিংবা গ্রহণের ব্যাপারে দাতা ও গ্রহীতাকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দাতা ও গ্রহীতাকে হতে হবে একই গ্রুপের রক্তের অধিকারী। রক্তের গ্রুপ সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে গ্রহীতার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।

তাছাড়া রক্তদাতার শরীরে কোনো সংক্রামক রোগের জীবাণু থাকলে গ্রহীতা সেসব সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মাদকসেবী, অসুস্থ ও পেশাদার রক্তদাতাদের রক্ত প্রায় ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক হয়ে থাকে। তাই এদের রক্ত গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

উপসংহার :

স্বেচ্ছায় রক্তদান এক মহান সেবাকর্ম। যে কোনো মুহূর্তে আমরা বিপদের সম্মুখীন হতে পারি- হোক তা নিজের কিংবা অপরের। এজন্য আমাদের প্রত্যেকের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। একজন সুস্থ সবল মানুষের দেয়া এক ব্যাগ রক্ত বাঁচাতে পারে একজন মুমূর্ষু মানুষের প্রাণ।

সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের উচিত রক্তদানের যোগ্যতা সম্পর্কে জেনে রক্তদান কর্মসূচিতে এগিয়ে আসা, নিজে রক্তদান করা এবং অন্যকে রক্তদানে উৎসাহিত করা।

শিক্ষাগার

প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে

মাহমুদুল হাসান

শিক্ষাগত যোগ্যতা
গণিতে অনার্স ও মাস্টার্স

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ফাজিল সম্পন্ন

গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা

বিশেষ দক্ষতা

বাংলা সাহিত্য • গণিত • ইসলামিক শিক্ষা

অভিজ্ঞতা

শিক্ষকতা ও ৫+ বছর কন্টেন্ট রাইটিং

আমাদের লক্ষ্য

শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা। ২০২৩ সাল থেকে লাখো শিক্ষার্থী শিক্ষাগার থেকে উপকৃত হচ্ছে।

Leave a Comment