উপস্থাপনা :
শিক্ষা মানুষের অমূল্য সম্পদ। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মনুষ্যত্ববোধের বিকাশ ঘটে। মেরুদণ্ড যেমন কোন প্রাণীর রক্ষাকবচ, তেমনি কোন জাতির রক্ষাকবচ হলো শিক্ষা। মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেলে যেমন প্রাণী দুর্বল হয়ে যায়, অস্তিত্ব হয় বিপন্ন, তেমনি মেরুদণ্ড অর্থাৎ, শিক্ষা না থাকলে জাতি তার অস্তিত্ব হারিয়ে পঙ্গুত্বে পরিণত হয়।
তাই বলা হয় শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড- Education is the back bone of a nation. মানুষকে বলা হয় সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষকে এ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হয় শিক্ষার মাধ্যমে । শিক্ষাই মানুষকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত করে এবং মর্যাদার আসনে উপনীত করে।
শিক্ষার কাজ :
শিক্ষা ব্যক্তিকে সৎ করে, কর্মঠ করে অজানাকে জানতে এবং জ্ঞানার্জনের উৎস সন্ধানে সাহায্য করে। মানুষের সুপ্ত প্রতিভাকে প্রস্ফুটিত করতে সহায়তা করে শিক্ষা। মানুষ চলার পথে হাজারো সমস্যার মুখোমুখি হয়, সহস্র বাধা তাকে আঁকড়িয়ে ধরে । সকল ক্ষেত্রে মুক্ত হবার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষাই ব্যক্তিকে নিত্য নতুন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
মানুষের মধ্যে আছে অফুরন্ত সম্ভাবনার উজ্জ্বল দিকদর্শন । একে আরো বহু আলোকে আলোকিত করে সত্যের সন্ধানে নিয়ে যায় শিক্ষা। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলে এবং মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে। শিক্ষা মানব জীবনে যে শক্তি সঞ্চয় করে তা জীবন সাফল্যের জন্যে অপরিহার্য
আরও পড়ুন :- ছাত্র জীবন - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]
জাতীয় জীবনে শিক্ষা :
জাতীয় জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। কোন জাতি তখনই নিজেকে উন্নত ও সভ্য জাতি বলে দাবি করতে পারবে যদি সে জাতি পুরোপুরি প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। শিক্ষার মাধ্যমেই জাতি এগিয়ে যায় । জাতির উন্নতির জন্যে শিক্ষা পূর্বশর্ত । শিক্ষার মাধ্যমে জাতি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিচরণ করতে পারলে প্রতিটি ব্যক্তিই তখন জাতীয় উন্নয়নে অংশ নিতে পারবে।
শিক্ষিত শক্তি শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারবে। অর্থনৈতিকভাবে শিক্ষিত ব্যক্তি জাতীয় ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি বয়ে আনতে পারবে। অর্থনৈতিকভাবে যে জাতি সমৃদ্ধ সে জাতি উন্নত এবং স্বাবলম্বী । সে জাতির ওপর বিদেশী শক্তি আক্রমণ করতে সাহস পায় না ৷
শিক্ষার মাধ্যমে গড়ে ওঠে দক্ষ জনশক্তি। কারিগরি শিক্ষা, প্রকৌশল শিক্ষা, প্রযুক্তিগত শিক্ষা, বাণিজ্যিক শিক্ষা, মানবিক শিক্ষা ইত্যাদি সবকিছু নানাভাবে মানব সম্পদ সৃষ্টি করে । জাতীয় জীবনে মানব সম্পদের সমৃদ্ধি ঘটলে সে জাতি গৌরবান্বিত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। বিশ্বে যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত ।
শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে থাকা জাতি অনগ্রসর ও মর্যাদাহীন । বর্তমানে যারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে, শোষণ করছে, শাসন করছে, বাহাদুরি দেখাচ্ছে, যাদের আঙ্গুলের ইশারায় বিশ্ববাসী ওঠছে বসছে তারা শিক্ষিত ও সমৃদ্ধ । শিক্ষা তাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর তৃতীয় বিশ্বের ঝুড়িতে তলাহীন দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে সন্ত্রাস,মাস্তান চক্র।
আরও পড়ুন :- কর্মমুখী শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা -রচনা [Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]
শিক্ষার ফসল :
শিক্ষা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং যোগ্য করে। শিক্ষা ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়। ব্যক্তি শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে প্রভূত উন্নতির সুযোগ পায়। শিক্ষার কোন সময় নেই, বয়স নেই, সীমা নেই- দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষার সময়, জ্ঞান অর্জন ও বাস্তবায়নের সময়। শিক্ষিত ব্যক্তি নিজের জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবন পর্যন্ত অবদান রাখতে পারে। অশিক্ষিত ব্যক্তির মাধ্যমে তা সম্ভব নয় ।
শিক্ষাহীন ব্যক্তি জাতির জন্যে শুধু বোঝা নয়, অভিশাপও বটে । বিশ্বে অনগ্রসর ও অনুন্নত জাতির দুঃখ-দুর্দশা কেবল অশিক্ষার জন্যেই । অশিক্ষা সকল সমস্যার উৎস। অশিক্ষা জাতিকে মর্যাদাহীন করে ফেলে। শিক্ষা জাতিকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেয়। উন্নত বিশ্ব শিক্ষার কারণেই আজ অজানাকে জয় করেছে, রহস্যের সন্ধানে গিয়ে মূল্যবান রত্নরাজি আহরণ করছে । উন্নত বিশ্বের সাথে আমাদের দেশ তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না।
কারণ, উন্নত বিশ্ব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি সাধন করেছে যার সাথে বাংলাদেশের কোন সংযোগ নেই। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যা জাতীয় জীবনে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এসবের একমাত্র কারণ অশিক্ষা। এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় প্রকৃত শিক্ষা। শিক্ষাই জাতিকে সমৃদ্ধিশালী জাতি হিসেবে গড়ে তোলে বিশ্বের দরবারে।
উপসংহার :
জাতিকে স্বাবলম্বী করে তুলতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন প্রত্যেক ব্যক্তিকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা । জাতীয় জীবন থেকে অনগ্রসরতা, দারিদ্র্য, কুসংস্কার ইত্যাদি দূর করতে হলে প্রয়োজন ব্যাপক শিক্ষা। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরো সম্প্রসারিত করে জীবনমুখী ও বাস্তবমুখী শিক্ষা ধারায় প্রবর্তন করতে হবে।
বিশ্বের বুকে উন্নত ও সমৃদ্ধ এবং মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে দাঁড়ানোর জন্যে যে দৃঢ় মেরুদণ্ড আবশ্যক তা তৈরি করবে শিক্ষা। তাই কাল বিলম্ব না করে দ্রুতগতিতে মান সম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।