উপস্থাপনা ঃ
মানুষ অর্থের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। সমাজের মধ্যে যারা অর্থান তারা অর্থহীন তারা ভিক্ষুক বলে বিবেচিত। সমাজ তাকে মূল্যায়ন করে না। তাই অর্থনীতি মানব জীবনের একটি বিরাট অধ্যায় । ইসলাম অত্যন্ত সুনিপুণভাবে বিশ্বমানবতার সামনে তুলে ধরেছে মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নিয়মাবলির সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা। কেননা, Islam is not only a Religion But it is also a scientific universas and complete system of life.
ইসলামী অর্থনীতির সংজ্ঞা ঃ
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কয়েকজন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ ইসলামী অর্থনীতির একটি সুসংবদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদানের চেষ্টা করেছেন। ড. এম. এম. হাসান উসমানের মতে- ইসলামী অর্থনীতি হচ্ছে- শরীয়ার বিধি-নিষেধ সম্বন্ধীয় জ্ঞান ও তার প্রয়োগ যা বস্তুগত সম্পদ আহরণ ও বিতরণের ক্ষেত্রে অবিচার প্রতিরোধে সমর্থ, যেন এর ফলে মানব মঙ্গীর সন্তুষ্টি বিধান করা যায়। ফলে আল্লাহ এবং সমাজের প্রতি তারা দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সক্ষম হবে।
সমকালীন সময়ের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় মুসলিম চিন্তাবিদদের জবাবই হচ্ছে ইসলামী অর্থনীতি। এ প্রচেষ্টায় কুরআন ও সুন্নাহর যুক্তি অভিজ্ঞতার দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে।
সহজ ভাষায় বলা যায়- যে সমাজবিজ্ঞান ইসলামী ভাবধারার অনুপ্রাণিত জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে, তাই ইসলামী অর্থনীতি ।
আরও পড়ুন :- ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান -বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ইসলামী অর্থনীতির মূলনীতি :
ইসলামী অর্থনীতির রয়েছে সাতটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ও কালজয়ী মূলনীতি, যার আলোকে ইসলামী অর্থনীতি পরিচালিত হয়।
১. সকল ক্ষেত্রে 'আমর বিল না'রুক ওরা নাহি আনিল মুনকার'-এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাযকিয়া ও তাকওয়া অর্জন ।
২. সকল কর্মকাণ্ডেই শরিয়ার বিধান মান্য করা।
৪. ব্যক্তির সম্পদে সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা ।
৬. মৌলিক মানবিক প্রয়োজন পূরণ ও নিশ্চিত করা।
৩. আদল ও ইহসানের প্রয়োগ।
৫. ভারসাম্যমূলক জীবন-যাপনের প্রয়াস।
৭. যুগপদ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ অর্জন ।
অর্থনৈতিক ভারসাম্যতায় ইসলামী অর্থনীতির অবদান :
ইসলামী অর্থব্যবস্থা আধুনিক ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক এ দুটি চরম ব্যবস্থার মধ্যবর্তী একটি সুষ্ঠু সুবিচারকপূর্ণ অর্থব্যবস্থা। এখানে আয়ের ক্ষেত্রে যেমন কোন অন্যায় পথ অবলম্বন করা হয় না, তেমনি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও কেবল স্বেচ্ছাচারিতা ও ভোগ বিলাসের মাধ্যমে সম্পদকে নষ্ট না করার ব্যবস্থা রয়েছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো।
ক. দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠন :
মানুষকে আপ্রাণ চেষ্টা করে মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে হলে স্বাভাবিকভাবেই তার মধ্যে কুপ্রবৃত্তি জেগে ওঠে। তাই ইসলামী অর্থব্যবস্থায় মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। আর্তমানবতাকে সেবা করার জন্যে ইসলাম ধনীদের প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ যাকাত, সদকা, দান-খয়রাত ইত্যাদির মাধ্যমে দরিদ্রের মধ্যে বিলি করতে নির্দেশ দিয়েছে। অতএব ইসলামী অর্থব্যবস্থা বাস্তবায়িত করে দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠন করা যায়।
খ. ভারসাম্যমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা :
ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় সম্পদ কতিপয় পুঁজিবাদী সম্প্রদায়ের হাতে কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। তাই তারা বিলাস ব্যসনে দিন কাটায়। অপরদিকে অপর শ্রেণী অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায়। ফলে সমাজে নৈরাশ্যজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ইসলামী অর্থব্যবস্থা চালু হলে সম্পদ কিছু লোকের হাতে পুঞ্জীভূত হতে পারে না। তাই সমাজে ধনী এবং দরিদ্রের মাঝে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় থাকে। তাই ইসলামী অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করে সমাজে ভারসাম্যমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন ।
আরও পড়ুন :- বাংলা রচনা - ইসলামে নারীর মর্যাদা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] - PDF
গ. সুষ্ঠু বন্টনের গ্যারান্টি :
ইসলাম সাম্যের ধর্ম। তাই শ্রেণী বৈষম্য ইসলামী অর্থনীতিতে স্থান পায় না। অন্য যে কোন সমাজে দেখা যায় যে, একটি শ্রেণী সমাজের সীমাহীন সম্পদের প্রাচুর্যে গা ভাসিয়ে দেয় আর অপর শ্রেণী বঞ্চিত নিঃস্ব হয়ে বেঁচে থাকে । একমাত্র ইসলামী ইনসাফ ভিত্তিক বন্টন ব্যবস্থার প্রবর্তন করেই এরূপ বৈষম্য দূর করা যায়। এজন্যে ইসলামে যাকাত, ফিতরা, বায়তুল নাল ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছে।
ঘ. কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টিতে ইসলামী অর্থনীতি :
যে কোন সমাজেই বেকারত্ব প্রকট সামাজিক সমস্যা, বেকারত্ব অভিশাপ স্বরূপ। এটি একদিকে যেমন দরিদ্রতা ডেকে আনে, অনদিকে বিভিন্ন অপকর্মের ইন্ধন যোগায়, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টির জন্যে ইসলাম বায়তুল মাল থেকে শিল্প-কারখানা স্থাপন করে বেকারদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে । সুতরাং বলা যায় ইসলামী অর্থব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে সমাজে শান্তি আনয়ন করা যায়।
উপসংহার :
উপরের আলোচনা থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, একমাত্র ইসলামী অর্থব্যবস্থা বাস্তবায়নের মধ্যমেই সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। উপরের আলোচনা মোতাবেক ইসলামী অর্থব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে সমাজে শ্রেণী যম্যের নিরসন হয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তাই বলা যায় ‘ইসলামই একমাত্র শান্তির ধর্ম ।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা