গ্রীষ্মকাল - বাংলা প্রবন্ধ রচনা : ক্লাস 6, 7, 8, 9, 10

সূচনা : 

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ছয় ঋতু পর্যায়ক্রমে আবির্ভূত হয় তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আর সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে। গ্রীষ্ম তার মধ্যে অন্যতম একটি। গ্রীষ্ম আসে খর তাপ নিয়ে। তার আগমন সবাই টের পায় প্রকৃতির উষ্ণতায় ৷

মৌনি তাপস গ্রীষ্ম : 

বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস গ্রীষ্মকাল । বাংলাদেশের প্রকৃতির রঙ্গশালার প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম। ধু ধু রুক্ষ দু'চাখে প্রখর তাপশিখা নিয়ে রুদ্র আবির্ভাব ঘটে এ মৌনি তাপসের। নিষ্করুণ নিদাঘ সূর্য দাব দহনের অসহ্য জ্বালাময় তীর ছুঁড়ে মারে। ধরিত্রীর বক্ষ বিদীর্ণ হয়ে যায় সূর্যের প্রখর তাপে। 

ফেটে চৌচির হয়ে যায় দিগন্ত বিস্তৃত প্রান্তর। গ্রীষ্মের মরু-রসনায় মৃত্তিকার প্রাণ রস শোষিত হয়। কোথাও প্রাণের চিহ্ন শ্যামলতার আভাস মাত্র নেই। সর্বত্রই ধু ধু মরুভূমির বিস্তার। সমগ্র জীবজগৎ ও উদ্ভিদ জগতে নেমে আসে প্রাণহীন, রসহীন পান্ডুর বিবর্ণতা।

গ্রীষ্মকালের সূর্যাস্ত : 

গ্রীষ্মকালের বেলা অত্যন্ত দীর্ঘ। এ সময় দিন বড় হয়। আর তাই সূর্য অস্ত যায় অনেক বিলম্বে। সূর্যের অগ্নিবাণে আহত পীড়িত পৃথিবী সত্বর সূর্যাস্ত কামনা করে। সূর্য অস্ত গেলে তার অঙ্গ জুড়াবে, সেও তাপ মোচন করে শীতল হবে। দীর্ঘ আকাশ পরিক্রমার পর সূর্য ধীরে ধীরে পশ্চিম দিগন্ত রেখায় নেমে আসে। পশ্চিম দিগ্‌বধূর মুখে লাগে গোলাপি রঙের মধুর আভা। দেখতে দেখতে সে আভা আকাশের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। 

আরও পড়ুন :- বর্ষাকাল অথবা, বাংলার বর্ষা রচনা [  ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ]

যে বিস্তীর্ণ আকাশ সারাদিন তপ্ত কটাহের মতো দাউ দাউ করে জ্বলছিল, তা ধীরে ধীরে শীতল হয়ে আসে। তাতেও লাগে দিনান্তের রঙিন ছোঁয়া। রূপ বদলায় আকাশের, রূপ বদলায় ধরিত্রীর। ধরিত্রীর দেহের উত্তাপ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যেতে থাকে। সাঁঝ বেলায় রোদের তেজ ক্রমশ কমে আসে। পাখিরা নীড়ে ফেরে। মানুষের মাঝে আসে ক্লান্তি। প্রকৃতিতে একটা স্বস্তির আভাস ফুটে ওঠে।

সূর্যাস্তকালে গ্রামের দৃশ্য : 

অবশেষে বিষণ্ণ সান্ধ্য প্রকৃতিতে বিদায়ি সূর্যের শেষ পদচিহ্ন পড়ে। গ্রামের শীর্ণ দীর্ঘ ছায়া ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে সঞ্চারিত হয়। অবশেষে মাঠ ছাড়িয়ে পূর্ব দিগন্তে প্রসারিত হতে থাকে। বনে বনে উঠতে থাকে পক্ষীকুলের সুমধুর কিচির মিচির। আকাশের বিস্তৃত স্নিগ্ধ সামিয়ানার নীচে গ্রীষ্মকালের সান্ধ্য প্রকৃতির পরম রমণীয় পরিবেশে পাখিদের কণ্ঠে বেজে ওঠে অপূর্ব কলগীতি। 

এ দিকে গ্রামের রাস্তায় ধূলি উড়িয়ে মাঠ হতে প্রত্যাবর্তন করে গ্রামের গরুগুলো। কর্মক্লান্ত গ্রামের পথে পথে রাখালিয়া সুরে বাঁশি বাজতে থাকে। তার সুরে শিহরণ জাগে ছায়াচ্ছন্ন গ্রামের বুকে। দিনান্তের সুরের রঙে সমগ্র গ্রাম অপরূপ হয়ে ওঠে। উদ্বেলিত হয় বাঁশির সুরের মূর্ছনায়।

বাঁশি বাজতে থাকে। তার সুরে শিহরণ জাগে ছায়াচ্ছন্ন গ্রামের বুকে। দিনান্তের সুরের রঙে সমগ্র গ্রাম অপরূপ হয়ে ওঠে। উদ্বেলিত হয় বাশির সুরের মূর্ছনায়।

আরও পড়ুন :- বাংলা রচনা - বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য  [ Class 6, 7, 8. 9, 10 ] 

গ্রাম বাংলার সর্বত্র দাঁড়িয়ে আছে আমগাছ। এ সময় আম পাকে। মিষ্টি আম খাওয়ার জন্য শহরের লোকেরা ছুটে যায় গ্রামে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে গ্রীষ্মের ছুটি। ছাত্রছাত্রীরা আম পাড়া আর কাঁচা পাকা আম খাওয়ায় মেতে ওঠে।

কালবৈশাখী : 

অনেক সময় দিবা সায়াহ্নে ঈশান কোণে কালবৈশাখীর ঝড় ওঠে। মুহূর্তের মধ্যে সমগ্র আকাশ পুঞ্জীভূত কালো মেঘরাশিতে আবৃত হয়ে যায়। হু হু শব্দে ছুটে আসে বেপরোয়া, দুর্নিবার, দুরন্ত ঝড়। যেন কোনো অজ্ঞাত কারান্তরাল হতে শত সহস্ৰ দৈত্য সহসা মুক্তি লাভ করে পৃথিবীটাকে ধ্বংস করার জন্য সহুঙ্কারে ছুটে আসছে। বড় বড় গাছপালা ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, কত ঘরের চালা উড়ে যায়।

কত গ্রাম জনপদ বিধ্বস্ত হয়। এক মহাপ্রলয় মুখে ভয়ার্ত পৃথিবীর স্নান—সিক্ত দেহের সৌরভ ভেসে আসে। এবার রুদ্র ধূসর প্রকৃতি ধারণ করে কোমল মধুর শান্ত মূর্তি। কালবৈশাখীর ধারায় স্নান করে ধরা প্রকৃতির সর্বত্র ফুটে ওঠে স্নিগ্ধ শীতল রমণীয় রূপশ্রী। ক্রমশ প্রকৃতি তার রূপ বদলাতে থাকে ।

উপসংহার :

গ্রীষ্ম তাপের মাস। চারদিকে রোদ আর গরম হাওয়া। প্রকৃতি যেন রূক্ষতার, ব্যস্ততার আর রাগের বহিঃরূপ ধারণ করে। তবু সে বয়ে আনে নতুন প্রকৃতি। তার এ প্রকৃতি স্বকীয় ।

আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা

Post a Comment

0 Comments