রচনা : আমার প্রিয় শিক্ষক - For Class 6, 7, 8, 9, 10

উপস্থাপনা :

প্রতিটি দেশের অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। কারণ, শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ পড়ার কারিগর । আদর্শ শিক্ষাদানের মাধ্যমে তাঁরা গড়ে তোলেন সচেতন জনগণ । একজন ভাল শিক্ষক পাঠকে সহজ-সরল ভাষায় উপস্থাপন করে প্রত্যেক ছাত্রের মধ্যে লুক্কায়িত প্রতিভাকে খুঁজে বের করেন। 

শিক্ষকের অভিজ্ঞতায় অর্জিত জ্ঞান অকৃপণ হাতে বিলিয়ে দেন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর জীবনে একজন আদর্শ বা প্রিয় শিক্ষক থাকেন। আমার জীবনের স্মরণীয় একজন শিক্ষকের কথা নিম্নে তুলে ধরলাম ।

প্রাথমিক পরিচিতি :

প্রথম শ্রেণী থেকে শুরু করে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অনেক শিক্ষকের সাহচর্যই আমি পেয়েছি। কিন্তু আমার প্রিয় বিদ্যাপিঠ ধনিয়া আদর্শ মাদরাসার সহকারি শিক্ষক আবদুল লতিফ আমার কাছে প্রিয়ভাজন হয়ে আছেন। তাঁর আদেশ-উপদেশ, সহজ- সরল শিক্ষাদানের অভিনব পদ্ধতি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষকের নমুনা স্বরূপ। একজন আদর্শ শিক্ষকের যে সকল গুণ থাকা দরকার সবগুলোই তাঁর মধ্যে ছিল।

আরও পড়ুন :- আমার প্রিয় খেলা ফুটবল - বাংলা রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10

আমার প্রিয় শিক্ষকের বৈশিষ্ট্য :

জনাব আবদুল লতিফ ছিলেন সদালাপী ও মিষ্টভাষী। তবে লেখাপড়ার ব্যাপারে তিনি ছাত্রদের প্রতি যেমন ছিলেন কঠোর তেমনি ছিলেন দরদী। পাঠ্য বিষয়কে তিনি গভীর মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করতেন এবং শ্রেণীকক্ষে তা সুললিত ভাষায় পরিবেশন করতেন।

কেন তিনি আদর্শ শিক্ষক : 

কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ তিনি আমার জীবনে রোপণ করতে পেরেছেন বলেই তিনি আমার আদর্শ শিক্ষক। তিনি আপন আদর্শের ভেতর দিয়ে যে বীজ বুনো গেছেন তা আজ বহু ব্যক্তির জীবনে প্রতিফলিত। ছাত্রদের চিত্ত জয় করার এক যাদুকরি শক্তি ছিল তাঁর । আর এ শক্তির মূল উৎস ছিল তাঁর আদর্শনিষ্ঠ চরিত্র ।

চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মানবিক গুণাবলি : 

আমার প্রিয় শিক্ষক ছিলেন অমিত চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মানবিক গুণাবলির অধিকারী । তিনি ছিলেন সত্য ও সুন্দরের উপাসক। জীবনে তিনি কোন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি । এমন কর্তব্যনিষ্ঠ ও নিরহংকারী পুরুষ আমি আর কাউকে দেখিনি ।

অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে তাঁর তুলনা : 

আমার আদর্শ শিক্ষক জনাব আবদুল লতিফ ছিলেন অন্য সকল শিক্ষকের ঊর্ধ্বে। জ্ঞানে- গুণে ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে তাঁর মতো আমি আর কাউকে খুঁজে পাইনি । তিনিই ছিলেন একমাত্র শিক্ষক যিনি ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা অধিক খোঁজ-খবর নিতেন।

আরও পড়ুন :- রচনা : আমার প্রিয় লেখক - কাজী নজরুল ইসলাম

দায়িত্বজ্ঞান ও কর্তব্যপরায়ন : 

একজন আদর্শ শিক্ষকের গুণাগুণ বিচারে তার দায়িত্বজ্ঞান ও কর্তব্যনিষ্ঠা বিশেষ লক্ষণীয়। আমার আদর্শ শিক্ষকের মধ্যে এ দুটি গুণের অভাব আমি কখনো দেখিনি। তিনি সঠিক সময়ে স্কুলে আসতেন এবং ক্লাস নিতেন। কখনো কোন কারণ বশত স্কুলে আসতে না পারলে অবসর সময়ে তিনি পিছিয়ে যাওয়া পাঠ পূরণ করে দিতেন ।

ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি ভালবাসা : 

স্কুলের ছাত্রী-ছাত্রীদের প্রতি স্যারের ছিল অকৃত্রিম ভালবাসা । আর বিনিময়ে ছাত্রী-ছাত্রীরাও তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান করত। তাঁর ভালবাসা ছিল সন্তানতুল্য। এ ভালবাসায় কোন কৃত্রিমতা ছিল না। জীবনের এই স্বল্প সময়ে আমি তাঁর কাছ থেকে যে ভালবাসা পেয়েছি, মানুষের মধ্যে জীবনভর বিলিয়ে দিলেও তা শেষ হবে না ।

শিক্ষাদানে পারদর্শিতা ও তার শিক্ষাদান পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত চমৎকার ও আকর্ষণীয়। শিক্ষাদানে তিনি এতই পারদর্শী ছিলেন যে, পাঠা বিষার ক্লাশেই মুখস্থ হয়ে যেত। তার কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গি ছিল বড়ই চমৎকারও শ্রুতিমধুর। তাই ছাত্ররা গভীর আগ্রহ ও মনোযোগ সহকারে তাঁর কথা শুনত। এতে সহজেই পঠিত বিষর বোধগম্য হতো ।

উপসংহার : 

আমার ক্ষুদ্র শিক্ষা জীবনে যত শিক্ষকের সংস্পর্শে এসেছি আবদুল লতিফ স্যারের মতো এমন আদর্শবান শিক্ষক আর কাউকে দেখিনি। তাঁর আদর্শ ছিল অনুকরণীয়। একজন আদর্শ শিক্ষকের যে সকল গুণাগুণ থাকা দরকার তা আমি তাঁর মধ্যে দেখতে পেরেছি। তাই আব্দুল লতিফ স্যার আমার জীবনে আজও একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে চির অম্লান হয়ে আছেন ।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad