পাহাড়পুর - ঐতিহাসিক স্থান বা দর্শনীয় স্থান : রচনা

ভূমিকা : 

কালের বিচারে বাংলাদেশ একটি সুপ্রাচীন দেশ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি দারুণভাবে উন্নতিলাভ করে। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী রাজাদের শাসনামলে কৃষ্টি ও সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয় এবং সাধারণ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে তোলে। 

এসকল যুগের নানা স্থাপত্যের নিদর্শন এখনো বিদ্যমান। এবং সেগুলো দর্শনীয় জায়গায় পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে ঐশ্বর্যশালী এদেশকে এসব পুরাকীর্তি আরও বেশি সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান : 

বাংলাদেশের বহু ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ঢাকার আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, কুমিল্লার ময়নামতি, গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ি, নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি (উত্তরা গণভবন) ও রানি ভবানীর বাড়ি, পুঠিয়ার জমিদার বাড়ি, বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর, দিনাজপুরের কান্তজী মন্দির ইত্যাদি। 

প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানের মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, সিলেটের জাফলং, দিনাজপুরের রামসাগর, নাটোরের চলনবিল, নেত্রকোনার বিরিশিরি ইত্যাদি 

আরও পড়ুন :- কুটির শিল্প - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

দর্শনীয় স্থান হিসেবে পাহাড়পুর : 

রাজশাহী বিভাগের একটি জেলা শহর নওগাঁ। বৌদ্ধযুগে এখানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের জন্য আশ্রম নির্মিত হয়েছিল। এখানে ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক উভয় ধরনের দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার : 

রাজা ধর্মপালের অর্থ আনুকূল্যে নির্মিত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারটি হিমালয়ের দক্ষিণে সবচেয়ে বড় বিহার। এটাকে সোমপুর বিহারও বলা হয়। বৌদ্ধ-যুগে প্রভু-বুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আশ্রয়ের জন্য এ বিহার নির্মিত হয়েছিল ।

এই বিহারটি উত্তর-দক্ষিণে ৯২২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৯ ফুট। চারকোনা এই আশ্রমটিতে ১৭৭টি কক্ষ ছিল। এসব কক্ষে বৌদ্ধ- ভিক্ষুরা বাস করতেন এবং শাস্ত্র চর্চা করতেন। পাহাড়পুর আশ্রমটি ছিলো মোট ২২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বাইরের চারদিক ঘিরে ছিল ১৬ ফুট পুরু একটা দেওয়াল। দেওয়ালের গায়ে ১৭৭টি কক্ষ ছিলো। কক্ষগুলোর সামনে ছিল ৯ ফুট বিস্তৃত বারান্দা।

পাহাড়পুর আশ্রম : 

আশ্রমটির উচ্চতা ছিল ৭২ ফুট এবং এটি তিন স্তরে নির্মিত, যে দেওয়াল দ্বারা আশ্রমটি বেষ্টিত ছিল সে দেওয়ালের ওপরে সাজানো ছিল এক সারি ৬৩টি পাথরের মূর্তি। মূর্তিগুলোর উপরের দিকে টেরাকোটার চিত্র ছিল। এই চিত্রগুলোতে ছিল লোকশিল্পের ছাপ। এ মূর্তিগুলোতে ব্রাহ্মণ ধর্মের ছাপ সুস্পষ্ট ছিলো। মূলত এগুলোতে ছিল রামায়ণ ও মহাভারতের প্রভাব এবং শ্রীকৃষ্ণের জীবনীকেন্দ্রিক চিত্র। খনন কার্যের মাধ্যমে এখানে ২০০০ টেরাকোটা চিত্রের প্লেট পাওয়া

আরও পড়ুন :- আমার দেখা একটি মেলা - রচনা : class 6, 7, 8 

ঐতিহাসিক মূল্যমান এবং স্থাপত্যের উৎকর্ষ বিচারে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার অতুলনীয় । এখানকার বৌদ্ধবিহারে যে মন্দির-স্থাপত্যের মহিমা পরিব্যাপ্ত তা সারা বিশ্ব পরম বিস্ময়ের সাথে স্বীকার করে।

নওগাঁর অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান : 

নওগাঁয় পাহাড়পুরের মন্দির, বৌদ্ধ আশ্রম ছাড়াও বৌদ্ধ আশ্রমের কিছু দূরে সত্যপীরের ভিটা অবস্থিত । তাম্রলিপি, ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি-এসব পুরাকীর্তির নিদর্শন পাহাড়পুরকে বিশ্বের বুকে সুপরিচিত করেছে।

উপসংহার : 

শস্য, শ্যামলিমায় ভরপুর, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলা শুধু প্রাকৃতিকভাবেই নয় বরং ঐতিহাসিকভাবেও সমৃদ্ধ। যার জলন্ত দৃষ্টান্ত এসব পুরাকীর্তি। এখনকার সভ্য দেশগুলো যখন অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল তখন বাংলাতে সভ্য, সমৃদ্ধ এক সংস্কৃতির পরিস্ফুটন ঘটেছিল। 

তৎকালে নির্মিত এ সকল পুরাকীর্তির মাধ্যমে আমাদের দেশের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য সম্পর্কে আমরা ধারণা লাভ করি । তাই আমাদের সকলের উচিত এ দেশের পুরাকীর্তিগুলো দর্শন করে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা ।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad