ভূমিকা
দুর্গাপূজা বা দুর্গোৎসব হলো শক্তির দেবী দুর্গার পূজাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত একটি উৎসব। দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দুসমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। আশ্বিন ও চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে দুর্গাপূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয় দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। শারদীয় দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি। বাসন্তী দুর্গাপূজা মূলত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
দুর্গাপূজার ইতিবৃত্ত
দুর্গাপূজার দুটি উৎসব হয় একটি বসন্তকালে এবং অপরটি শরৎকালে। তবে বসন্তকালেই এ পূজার উদ্ধ ঘটেছিল। বসন্তকালে এ পূজা করা হলে একে “বাসন্তীপূজা” বলা হয়। ত্রেতাযুগে লঙ্কার রাজা রাবণকে বধ করার জন্য রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র, শরৎকালে দেবীর পূজা করেছিলেন। এ পূজার মূলে ছিল দেবীর কৃপা লাভ। তখন থেকেই হিন্দুসমাজে শরৎকালীন দুর্গাপূজার প্রচলন করা হয়। তাই একে শারদীয় দুর্গা উৎসব বলা হয় । এর আর একটি নাম ‘অকালবোধন’। কেননা এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল অকালে ।
দুর্গাপূজার বর্ণনা
সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে “দুর্গাষষ্ঠী” “মহাসপ্তমী”, “মহাষ্টমী”, “মহানবমী” ও “বিজয়াদশমী” নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষটিকে বলা হয় “দেবীপক্ষ”। দেবীপক্ষের সূচনার অমাবস্যাটির নাম মহালয়া; এই দিন হিন্দুরা তর্পণ করে তাঁদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। দেবীপক্ষের শেষ দিনটি হলো কোজাগরি পূর্ণিমা। এই দিন ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পূজা করা হয় ।
আরও পড়ুন ;- বাংলা নববর্ষ/পহেলা বৈশাখ- রচনা [ class 6, 7, 8, 9, 10 ] PDF
কোথাও কোথাও পনেরো দিন ধরে দুর্গাপূজা পালিত হয়। সেক্ষেত্রে মহালয়ার আগের নবমী তিথিতে পূজা শুরু হয় । পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর শহরের মৃন্ময়ী মন্দির এবং অনেক পরিবারে এই রীতি প্রচলিত আছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরাতে মহাসপ্তমী থেকে বিজয়াদশমী পর্যন্ত (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মহাসপ্তমী থেকে কোজাগুরি লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত) চার দিন সরকারি ছুটি থাকে। বাংলাদেশে বিজয়াদশমীতে সর্বসাধারণের জন্য এক দিন এবং হিন্দুধর্মাবলম্বীদের জন্য তিন দিন সরকারি ছুটি থাকে।
বিভিন্ন দেশের দুর্গোৎসব
দুর্গাপূজা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপালসহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকে। তবে বাঙালি হিন্দুসমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ার দরুন বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যে দুর্গাপূজা বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়। এমনকি ভারতের আসাম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মণিপুর এবং ওড়িশা রাজ্যেও দুর্গাপূজা মহাসমারোহে পালিত হয়ে থাকে।
ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবাসী বাঙালি ও স্থানীয় জনসাধারণ নিজ নিজ প্রথামাফিক শারদীয় দুর্গাপূজা ও নবরাত্রি উৎসব পালন করে। এমনকি পাশ্চাত্য দেশগুলোতে কর্মসূত্রে বসবাসরত বাঙালিরাও দুর্গাপূজা পালন করে থাকেন। ২০০৬ সালে গ্রেট ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামের গ্রেট হলে "ভয়েসেস অফ বেঙ্গল” মরসুম নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসেবে স্থানীয় বাঙালি অভিবাসীরা ও জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এক বিরাট দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন।
আরও পড়ুন :- গ্রাম্য মেলা - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
দুর্গাপূজার তাৎপর্য
দুর্গাপূজার মূলবাণী হলো 'দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন।' এ সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং জগৎবাসীকে স্বর্গীয় সুখ-শান্তিময় বসবাস উপযোগী করার জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয়। তাছাড়া এ উৎসবটি পরস্পরের মধ্যে মনোমালিন্য দূর করে প্রীতির সম্বন্ধ স্থাপন করে। এ ধর্মীয় উৎসবটির মাধ্যমে হিন্দুধর্মের সকল মানুষ একই বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
উপসংহার
দুর্গাপূজা একটি সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব। এ পূজার মধ্য দিয়ে হিন্দুসমাজ খুঁজে পায় সব অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, পাপ ও শোক থেকে মুক্ত হওয়ার প্রেরণা। এ পূজার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে সম্প্রীতির এক বড়ো সেতুবন্ধন।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা