বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে ভাব সম্প্রসারণ -১
মূলভাব : প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিটি প্রাণীকেই তাদের নিজেস্ব পরিবেশে সুন্দর ও আকর্ষণীয় লাগে। পরিবেশচ্যুত হলেই তার সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায় । যেমন- শিশুরা মায়ের কোলে যতটুকু শোভনীয়, বনের পশুপাখি তেমনি বনেই অধিক শোভনীয় ।
সম্প্রসারিত ভাব : স্থান-কাল-পাত্রভেদে প্রত্যেকেই নিজেস্ব আবাস ভূমি এবং স্বতন্ত্র পরিচিতি আছে। মাছ পানিতে বাস করে বলে তারা জলজ প্রাণী, পশু বনে-জঙ্গলে-গুহায় বাস করে বলে এরা বন্য প্রাণী, আর মানুষ লোকালয়ে সভ্য সুন্দর পরিবেশে বাস করে বলে এরা মানুষ । এভাবে প্রত্যেকে তাদের স্ব স্ব পরিবেশে সুন্দর। মহান আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি বৈচিত্র্যে প্রত্যেক প্রাণীর পৃথক পৃথক বাসস্থান, পরিবেশ ও রীতিনীতি দিয়েছেন।
মায়ের কোলে শিশুটা যতটুকু সুন্দর দেখাবে, অপরের কাছে মায়ের স্নেহ পেলেও তাকে সুন্দর মানাবে না। তদ্রুপ বন্য পাখিকে লোকালয়ে এনে খাঁচায় ভরে রাখলে তাকে সুন্দর মানাবে না। বনেই বন্য প্রাণীদের সুন্দর মানায় । উপযুক্ত পরিবেশের ওপর কোনো প্রাণী বা পদার্থের সৌন্দর্য বৈচিত্র্য নির্ভর করে এবং নিজস্ব পরিবেশের অভাবে সৌন্দর্য লোপ পায় । সুতরাং যার যার পরিবেশে যথাযথ ভাবে তাকে রাখা উচিত ।
মন্তব্য : পরিবেশের অনুকূলতা প্রত্যেক প্রাণী বা বস্তুকে যথার্থ সৌন্দর্য দান করে এবং প্রতিকূলতা তার প্রকৃত সৌন্দর্যকে স্নান করে দেয় ।
আরও পড়ুন :- ভাবসম্পসারক - অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে ভাব সম্প্রসারণ -২
মূলভাব: সৌন্দর্য প্রকৃতি প্রদত্ত একটি উপাদান। সৌন্দর্যের বিকাশও বৈচিত্র্য প্রকৃতিই নির্ধারণ করে দেয়।
সম্প্রসারিত ভাব: প্রতিটি মানুষই নিজ পরিবেশের পটভূমির ওপর নিজের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। বিশ্বের প্রত্যেক বস্তু নিজেকে ফুটিয়ে তোলে পরিবেশের স্বাতন্ত্র্যের ওপর এবং যথাস্থানেই তাকে সুন্দর ও সাবলীল দেখায়। বন্য মানুষের স্বভাব, চরিত্র, আচার-ব্যবহার স্বাভাবিক চরিত্র হিসেবে বনের মধ্যেই সুন্দরভাবে বিকশিত হয়।
কিন্তু তারা যদি আধুনিক সভ্যতা বিকশিত শহরে আসে তবে তাদের জীবন অসুন্দর ও কুৎসিত বলেই প্রতীয়মান হয়। মাতৃকোলে শিশুকে যত সুন্দর দেখায়, অন্য কারো কোলে শিশুকে তত সুন্দর দেখায় না । শিশুর জন্যে তার মায়ের কোলই হচ্ছে উপযুক্ত জায়গা। আবার বনে যেসব প্রাণীর বসবাস তাদের নিজ পরিবেশে যেমন সুন্দর দেখায় শহুরে পরিবেশে তেমন দেখায় না।
লোকালয়ে যদি তাদেরকে রাখা যায় তবে তাদের সৌন্দর্য তত বিকশিত হবে না। কাজেই প্রাকৃতিক নিয়মে যে যেখানে সুন্দর তাকে সেখানেই থাকতে দেওয়া উচিত। সেখানেই তার মুক্তি, সেখানেই তার সহজ, সাবলীল ও স্বাধীন সুন্দর জীবন ।
মন্তব্য: সৌন্দর্য মাত্রই তার একটা নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। সেই নির্দিষ্ট স্থান এবং পরিবেশেই সে যথার্থ বিকাশ লাভ করে; অন্যত্র নয় ।
আরও পড়ুন :- দশের লাঠি একের বোঝা ভাব সম্প্রসারণ - ৩টি
বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে ভাব সম্প্রসারণ -৩
মুলভাব : উপযুক্ত বস্তু উপযুক্ত স্থানেই বিবেচ্য।
সম্প্রসারিত ভাব : প্রত্যেক প্রাণীরই প্রাকৃতিক নিয়মে যার উপযুক্ত স্থান যেখানে সেখানেই সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। এ পৃথিবীতে কোনো বিশেষ প্রাণী যে স্থানে জন্মে তার জন্য সে স্থানই উত্তম। সে স্থান ব্যতিরেকে অন্যস্থানে তাকে আরো অধিক যত্নের সাথে রাখলেও সুন্দর দেখায় না। কেননা, পরিবেশের উপর কোনো কিছুর সৌন্দর্য নির্ভর করে এবং উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে সুন্দরকেও অসুন্দর দেখায়।
যারা বন্য এলাকায় জন্মে তারা সভ্যতার আলো পায় না এবং আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে তারা পরিচিত হতে পারে না। তাই মার্জিত রুচিবোধের অভাবে তারা পিছিয়ে থাকে। সভ্য মানুষের জীবনযাত্রার সাথে তাদের জীবনযাত্রার কোনো সাদৃশ্য নেই। কিন্তু বন্য পরিবেশে তাদেরকে বেশ মানায় এবং তাদেরকে যদি বন হতে ছাড়িয়ে সভ্য মানুষের সমাজে আনা হয়, তাহলে তাদেরকে বেমানান লাগবে। মায়ের কোলই কোনো শিশুর উপযুক্ত স্থান।
মায়ের কোলে থাকলে মা ও শিশুর মুখে অনাবিল হাসি ফুটতে থাকে। তাই শিশুকে অপূর্ব সুন্দর দেখায়। অন্য কারো কোলে শিশুর মুখে এমন স্বর্গীয় হাসি কিছুতেই ফুটে উঠবে না এবং শিশুকে এতখানি সুন্দরও দেখাবে না। শিশুকে মায়ের কোল থেকে নিয়ে রাজপ্রাসাদের স্বর্ণখচিত চেয়ারে বসালেও তা বেমানান দেখাবে। কেননা তার স্থান মায়ের কোলে। তাই উপযুক্ত পরিবেশই সৌন্দর্যের নিয়ামক। যার যে পরিবেশ তাকে সে পরিবেশেই ভালো মানায়।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা