ভাবসম্প্রসারণ : চকচক করলেই সোনা হয় না - ৩টি

চকচক করলেই সোনা হয় না ভাবসম্প্রসারণ - ১

মূলভাব: সোনার ধর্ম চকচক করা কিন্তু যেকোনো চকচক করা বস্তুই সোনা নয় । তেমনই মানুষের বাইরের রূপ দেখে ভেতরের রূপ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় না। বাইরে সৌন্দর্যমণ্ডিত ও মিষ্টভাষী মানুষ সবসময় সুন্দর স্বভাব, চরিত্র ও সদগুণের অধিকারী হয় না।

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে বস্তুর গুরুত্ব ও মূল্য নির্ধারণের দুটো উপায় রয়েছে। প্রথমত, বস্তুর আকার-আকৃতি দেখে। দ্বিতীয়ত, বস্তুর গুণাগুণ যাচাই করে । এক্ষেত্রে প্রথমোক্ত উপায়ে বস্তুর গুরুত্ব ও মূল্য যাচাই করা যায় বটে তবে প্রতারিত হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। কারণ ভিন্ন ভিন্ন মূল্য বা গুরুত্বসম্পন্ন একাধিক বস্তুর আকার-আকৃতি একই রকম হতে পারে। 

যেমন: সোনার ধর্ম চকচক করা কিন্তু পৃথিবীতে অনেক স্বল্পমূল্যের জিনিসও সোনার মতো চকচক করে সেসব স্বল্পমূল্যের জিনিসকে সোনার মতো মূল্যবান মনে করা হলে তা ভুল বলে গণ্য হবে। তাই বস্তুর মূল্য নিরূপণ ও গুরুত্ব নির্ধারণের জন্যে বস্তুর বাহ্য রূপের পাশাপাশি গুণাগুণও বিচার করা উচিত। 

আমাদের সমাজেও এমন অনেকের সৌন্দর্য ও সুমিষ্ট কথা শুনে তাদের ভালো মানুষ বলে  আখ্যা দেই। বাইরের চেহারা এবং পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে অনেক সময় মানুষ চিনতে ভুল করি। কেবল সুন্দর চেহারা এবং পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করলেই মানুষ সচ্চরিত্রের অধিকারী হয় না। যারা আচার- আচরণে এবং চিন্তা ও কর্মে মহৎ তারাই প্রকৃত মানুষ ।

মন্তব্য: মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত না হয়ে, স্বভাব-চরিত্র বিচার-বিশ্লেষণ করেই তার গুরুত্ব ও মর্যাদা নির্ণয় করা উচিত।

আরও পড়ুন :- ভাব সম্প্রসারণ - অর্থ অনর্থের মূল 

চকচক করলেই সোনা হয় না ভাবসম্প্রসারণ - ২

মূলভাব : বাহ্যিক চাকচিক্য ও সাজসজ্জা দেখে কোনো কিছু গুণসম্পন্ন ও মূল্যবান মনে করা ঠিক নয় ।

সম্প্রসারিত ভাব : এ সংসারের সর্বত্রই আসল ও নকল বিরাজমান। আসল জিনিসের গুণ থাকে। সেটাই বড় কথা। অধিকন্তু তাতে অনেক সময় চাকচিক্যও থাকে। পক্ষান্তরে, নকল জিনিসের গুণ থাকে না। ঘষে মেজে অনেক সময় বাহ্যিক চাকচিক্য ও জৌলুস আনা যায় । তা হলেও গুণের অভাবের জন্য সেটা আসলের সমান হতে পারে না। পোশাকের আড়ম্বর ও কথার চাতুর্য মানুষের বাহ্যিক দিক। এ দিকটাই মানুষের চোখে প্রথম ধরা পড়ে। 

তাই অশিক্ষিত, অসাধু, অসৎ ও নৈতিকতা বিবর্জিত লোকেরা তাদের দুর্বলতা ঢাকার জন্য পোশাকের আড়ম্বর ও কথার তুবড়ি বাজানোর সুযোগ নেয়। এ সব দেখে গুণাগুণ বিচার না করে কাউকে শিক্ষিত বা সাধু সজ্জন মনে করা ভুল হবে । সোনার গুণ আছে তাই এটা মূল্যবান বস্তু । তামা, পিতল প্রভৃতি ধাতু সোনার মতো মূল্যবান নয় অথচ ঘষে মেজে নিলে এগুলোও সোনার মতো চক চক করবে। তা হলেও এগুলো কখনো সোনা নয়। 

মন্তব্য : বাহ্যিক সাজসজ্জা ও চাকচিক্য দেখে কারো কিছুকে সে দ্রব্যই হোক আর মানুষই হোক- গুণসম্পন্ন মূল্যবান মনে করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত ।

আরও পড়ুন :- ভাবসম্পসারণ - চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ  

চকচক করলেই সোনা হয় না ভাবসম্প্রসারণ - ৩

মূলভাব : কোনো কিছু কেবল বাইরে থেকে দেখে ভালো বোঝা যায় না ৷

সম্প্রসারিত ভাব : সোনা একটি মূল্যবান ধাতু। তা দেখতে উজ্জ্বল হলুদ রঙের ও চকচকে। পৃথিবীতে আরো বহু পদার্থ রয়েছে যেগুলো দেখতে সোনার মতো উজ্জ্বল ও চকচকে। তাই বলে ওগুলো সোনার মতো এত মূল্যবান ও জনপ্রিয় নয়। সোনার পরিবর্তে কেউই এসব উজ্জ্বল সুদৃশ্য পদার্থ গ্রহণ করতে সম্মত হবে না। কেননা সবাই জানে সোনার একটা কদর আছে যা অতীতেও ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। 

কিন্তু এসব পদার্থ যতই উজ্জ্বল চকচকে হোক না কেন, এদের কোনো কদর নেই; কোনোদিন হবেও না। এরূপ মানুষের বাইরের সৌন্দর্য ও ভালো পোশাক দেখে তার প্রকৃত স্বরূপ ধরা যায় না। পৃথিবীতে বহু কপট ও অসাধু লোক রয়েছে যারা সততার ভান করে। কিন্তু সে যখন তার কার্যসিদ্ধির জন্য অসৎ কাজ করে তখন তার প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত হয়। 

সুতরাং পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর ভালোমন্দ যাচাই করতে হলে তার বাহ্যিক চাকচিক্য দেখে ভুললে চলবে না। বিশেষ সতর্কতার সাথে তার আসল গুণ নির্ণয় করতে হবে। গুণেই আসল পরিচয়, চেহারা আর জৌলুসতা নয়।

Post a Comment

0 Comments