কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক ভাবসম্প্রসারণ - ৩টি

কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক ভাবসম্প্রসারণ - ১

মূলভাব : অপার্থিব জগতে স্বর্গ ও নরকের অস্তিত্ব কল্পনা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে স্বর্গ ও নরকের অবস্থান মানুষের মধ্যেই বিরাজমান । মানুষের আচার-আচরণের বহিঃপ্রকাশের মধ্যে স্বর্গ ও নরক উজ্জ্বল হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করে ।

সম্প্রসারিত ভাব : আমরা স্বর্গ-নরক, দেব-দানবের মধ্যে পার্থক্য করে থাকি। স্বর্গ বলতে সুখের স্থান, অর্থাৎ মৃত্যুর পরও যেখানে গিয়ে ভালো থাকা যায় এমন জায়গা বোঝায় । আর নরক বলতে কষ্টের স্থান অর্থাৎ যেখানে পাপীরা মৃত্যুর পর অসহনীয় দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হয় এমন স্থান বোঝায়। 

যারা স্বর্গে বাস করে তাদেরকে আমরা বলি মহাত্মা। আর যারা নরকে বাস করে তাদেরকে বলি পাপাত্মা । কিন্তু জগত সংসারের দিকে তাকালে দেখা যায়, মানুষ ভালো কাজের মধ্য দিয়ে এ পৃথিবীতেই স্বর্গলোক গড়ে তুলতে পারে। আর মন্দ কাজের মধ্য দিয়ে নরক গড়ে তুলতে পারে। সুতরাং স্বর্গ-নরকের জন্যে 

কল্পনালোকের আশ্রয় নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ইচ্ছা থাকলেই মানুষ তার মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলতে পারে। তাই মানুষের উচিত নরকরূপী পরিবেশ থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং মহৎ গুণাবলিকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া। কেননা মানুষের মধ্যেই স্বর্গ-নরক লুকিয়ে আছে।

মন্তব্য : পৃথিবীর মানুষ তার কর্মফলের মাধ্যমেই স্বর্গের ও নরকের যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে। মানুষ তার মন্দ কর্মের জন্যে নরক যন্ত্রণা এবং ভালো কাজের জন্যে স্বর্গীয় আনন্দ অনুভব করে।

আরও পড়ুন :- যে সহে সে রহে ভাবসম্প্রসারণ - ২টি  

কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক ভাবসম্প্রসারণ - ২

মূলভাব : মানুষকে ভালোবাসলে পৃথিবীতেই স্বর্গসুখ অনুভব করা যায়। মানুষের আচার আচরণ আর হৃদয় বৃত্তির বহিঃপ্রকাশের মাঝেই স্বর্গ ও নরকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় ।

সম্প্রসারিত ভাব : স্বর্গ ও নরক বলে দুটি বিপরীতধর্মী স্থান আমাদের ঊর্ধ্বলোকে রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করে থাকি। মহাপ্রশান্তি র স্থান হচ্ছে স্বর্গ। পক্ষান্তরে ভীষণ পঙ্কিল ও গ্লানিকর চির অশান্তিময় স্থান নরক। উভয়ই আমাদের এ মানবজগৎ হতে বহুদূরে আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। কবির মতে, এগুলো দূরে কোথাও নয় । মানুষের রাজ্যে উভয়ই বিদ্যমান এবং তা এ মর্ত্যেই প্রকাশ পেয়ে থাকে। 

যারা আস্তিক তারা স্বর্গকে শুভ-সুন্দর ও কল্যাণের আধার এবং নরককে অশুভ, অকল্যাণ ও অভিশাপের আধার বলে মনে করে। তাদের বিশ্বাস, স্বর্গ অনন্ত শান্তির পুণ্যময় নিকেতন এবং নরক কঠিন শাস্তি ভোগের এক ভয়ঙ্কর স্থান। পুণ্যবানরা স্বর্গে এবং পাপীরা নরকে যাবে- এ বিশ্বাসে উজ্জীবিত আমরা। মানুষের ইহজগতের পরিসমাপ্তির পর তার পাপ-পুণ্যের বিচার করে মানুষকে এ দুই স্থানে পাঠানো হবে। 

প্রতিটি মানুষই চায় স্বর্গে গিয়ে স্বর্গীয় আনন্দ ও অনাবিল শান্তি উপভোগ করতে। কেউ চায় না নরকের অবর্ণনীয় শাস্তি ভোগ করতে। কিন্তু তারপরও মানুষের জীবনে পাপ-পুণ্য বা ন্যায়-অন্যায়ের লীলাখেলা চলে। এ স্বর্গ-নরক আর কিছুই নয়; বরং মানুষের কর্মফল। এটা মানুষের মধ্যেই বিরাজমান। মানবীয় সমাজ, মনুষ্য-প্রকৃতি ও মানবীয় আচার-আচরণের মধ্যে এ স্বর্গ-নরক অবস্থান করছে। 

মানুষ তার আচার-আচরণ দিয়েই সমাজে স্বর্গ বা নরকের পরিবেশ সৃষ্টি করে। মানুষ যদি হিংসা- বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, ধ্বংস-বিভীষিকা, কলহ-বিবাদ পরিহার করে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও কল্যাণের পথ অবলম্বন করে তবে অদৃশ্য জগতের দূরের স্বর্গ মানুষের মাঝে চলে আসে। 

এ বস্তুজগতে থেকেই মানুষ স্বর্গীয় শান্তি ও পরিতৃপ্তি লাভ করে। এ পরিবেশের মাঝেই মানুষ অমর হয়। আর যদি মানুষ তার নিকৃষ্ট ও কুৎসিত আচরণ দিয়ে এ পৃথিবীকে পঙ্কিলময় করে তোলে তবে তার জন্য অভিশপ্ত নরক এ পৃথিবীতেই নেমে আসে। নরকের বিভীষিকাময় অনলে দগ্ধ হয় সে।

মন্তব্য : পৃথিবীর মানুষ তার কর্মফলের মাধ্যমেই স্বর্গের সুখ ও নরকের যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে। মানুষের অপকর্মের ফল নরকযন্ত্রণা আর মহৎকর্মের ফল স্বর্গীয় আনন্দ ।

আরও পড়ুন :-  পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না ভাব সম্প্রসারণ - ৩টি 

কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক ভাবসম্প্রসারণ - ৩

মূলভাব : স্বর্গ ও নরক দূরে নয়, তা মানুষের মাঝেই অবস্থিত, মানুষের মাঝে সকল প্রকার সুখ-দুঃখ বিরাজমান ।

সম্প্রসারিত ভাব : স্বাভাবিকভাবে মানুষ বিশ্বাস করে, স্বর্গ এবং নরক পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে অবস্থিত এক অজানা দুর্গম ও আনন্দময় স্থান । মানুষের আরো দৃঢ় বিশ্বাস যারা এ জগতে পুণ্য কাজ করে তারা স্বর্গ নামক স্থানে যায় ও স্বর্গসুখ ভোগ করে এবং যারা অধর্মীয়, ঘৃণার কাজ করে, তারাই নরকে যায় ও কঠিন শাস্তি ভোগ করে। স্বর্গ ও নরক দৃষ্টির অগোচরে বিশ্বাস ও অনুভবের বস্তু ।

মানুষ যখন সৎচিন্তায়, সদালাপে ধর্মীয় কাজ ও পরহিত ব্রতে আত্মত্যাগ স্বীকার করে ও নিজেকে নিয়ে নিজে নিজে ব্যস্ত থাকে না, তখনই সমাজে সুখ-শান্তি বিরাজমান থাকে । এতে যে বিমল আনন্দ ও তৃপ্তি পাওয়া যায় তাই স্বর্গ সুখ। পক্ষান্তরে মানুষে ধর্ম পথ ভুলে গিয়ে অন্যায় আচরণ ও অনাচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে; অসৎ কাজে ও চিন্তায় মগ্ন হয়ে মানুষ সমাজে ঘৃণিত, লাঞ্ছিত ও অবহেলিত হয়ে আত্মদংশনে জর্জরিত হয়। 

এর মত দুঃখ আর কি আছে? সুতরাং, আচরণই নরক-যন্ত্রণা। পার্থিব জীবনে মানুষ তার কৃতকর্মের ফল এ জগতেও খানিকটা ভোগ করে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, কেউ রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে অচল অসহায় হয়ে মলমূত্র ইত্যাদিতে পড়ে মরছে, পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত অখাদ্য, কুখাদ্য খাচ্ছে, নানাবিধ জ্বালা যন্ত্রণায় ধুকে ধুকে দিন কাটাচ্ছে,

জগৎবাসী তাকে ধিক্কার দিচ্ছে, এগুলোকেও বলা যায় জাহান্নামের বা নরকের যন্ত্রণা। অপর পক্ষে যারা সকলের হিতকামী, সুখ্যাতিসম্পন্ন, লোক সমাজে আদরনীয়, তারা তাদের ধার্মিকতা ও ন্যায়পরায়ণতার জন্যেই যেন স্বর্গসুখের খানিকটা বিমলানন্দ ভোগ করছে ।

মন্তব্য : মানুষ এ পৃথিবীতে তাদের আচার-আচরণে ও ক্রিয়া-কর্মে স্বর্গ কিংবা নরকে পরিণত করতে পারে ।

Post a Comment

0 Comments