হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

বাংলা প্রবন্ধ রচনা : ডেঙ্গু জ্বর । PDF

উপস্থাপনা : 

ডেঙ্গুজ্বর একটি মশাবাহিত রোগ। এডিস নামক এক ধরনের মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। বর্তমানে এই রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছর এ রোগের সংক্রমণে অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

ডেঙ্গুজ্বরের পরিচয় : 

ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত একটি জ্বর। ডেঙ্গুজ্বরের বাহক হলো এডিস নামক মশা। ডেঙ্গুজ্বর  এমনিতে সেরে যায়। তবে হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বর মারাত্মক হতে পারে। প্রথম এবং শেষোক্ত দু’প্রকার ডেঙ্গুজ্বরকে ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরও বলে। 

ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত তিন প্রকার। যথা— সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর,  ডেঙ্গুজ্বর হেমোরেজিক ফিভার এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রম। ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপ রয়েছে। এগুলো হলো DEN-1, DEN 2, DEN-3, DEN-4, এ ৪টি সেরোটাইপ থেকে ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে। তবে এগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রকারটি মারাত্মক। এ দুটো সেরোটাইপই ডেঙ্গুজ্বরের কারণ।

এডিস মশা : 

এডিস মশা দেখতে গাঢ় নীলাভ রঙের। এ মশার সারা শরীরে সাদা সাদা ডোরাকাটা দাগ আছে। এডিস ইজিপটাই এবং এলবোপিকটাস নামক এই দু’প্রজাতির স্ত্রী মশা মূলত ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাস বহন করে থাকে। তবে এডিস এলবোপিকটাসকে শহর অঞ্চলে কমই দেখা যায়। এডিস এলবোপিটাসকে বলা হয় টাইগার মশা। এটি সাধারণত গ্রামাঞ্চলে থাকে। তবে শহরেও থাকতে পারে। এডিস ইজিপটাই শহরাঞ্চলেই বেশি থাকে। আর এর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি ৷

আরও পড়ুন : রচনা : ভূমিকম্প [ Class 6, 7, 8, 9, 10 ]

এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়। বিশেষ করে সকাল বেলার প্রথম দিকে এবং বিকেল বেলার শেষ দিকে এই মশা বেশি কামড়ায়। এডিস মশা দ্বারা ডেঙ্গুভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর মশাটির কোনো ক্ষতি হয় না। ডেঙ্গুভাইরাস আক্রান্ত এডিস মশা তার পুরো জীবদ্দশায় ১৫ থেকে ৬৫ দিন মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা রাখে।

এমনকি এই সংক্রামক মশার ভবিষ্যৎ প্রজন্মও একই মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা নিয়ে জন্মাতে পারে। এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গুজ্বর হবে না। মানুষের ডেঙ্গুজ্বর হওয়ার জন্য কামড়ানো মশাটিকে অবশ্যই ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হতে হবে। সাধারণ এডিস মশা অর্থাৎ ডেঙ্গুভাইরাসের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত নয় এমন এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গুজ্বর হবে না।

ডেঙ্গুভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৮-১১ দিনের মধ্যেই এডিস মশা কামড়ের মাধ্যমে মানুষকে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত করার যোগ্য হয়। কিন্তু ডেঙ্গু ভাইরাস যদি মশাটির মুখে অর্থাৎ কামড় দেয়ার অংশে লেগে থাকে এবং তখনই যদি মশাটি কাউকে কামড় দেয় তাহলে সে ব্যক্তি সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের জীবাণুবাহী হয়ে পড়বে।

এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ও অবস্থান : 

ঘরেই এডিস মশার বাস। কৃত্রিম পাত্রই হচ্ছে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী মশার পছন্দের আবাসন। তবে প্রাকৃতিক পাত্রেও এই মশা ডিম পাড়ে। প্রাকৃতিক পাত্রের মধ্যে রয়েছে গাছের কোটর, বাঁশের গোঁড়ায়, গর্ত, পাতার বোটা ইত্যাদি। এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। চলমান পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে না। আর তাই ড্রেন, নদী কিংবা পুকুরে এডিস মশা পাওয়া যায় না। 

যেসব কৃত্রিম স্থানে এডিস মশা বংশ বৃদ্ধি করতে পারে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলদানি, টব, ফ্রিজের ট্রে, ভাঙ্গা পরিত্যক্ত কাঁচের কিংবা প্লাস্টিকের বোতল, বাটি পরিত্যক্ত সেলোফেন/পলিথিন ব্যাগ, ভাঙ্গা মাটির কলস, চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, চার-পাঁচ দিন ধরে চৌবাচ্চা, ড্রাম, বালতি ইত্যাদিতে জমে থাকা অব্যবহৃত পানি, পরিত্যক্ত টায়ার, ঘরের মধ্যে জমে থাকা পানির বিভিন্ন পাত্র, যেমন- বাসন, এ্যাকুরিয়াম ইত্যাদিতে ডেঙ্গুজ্বরের ভাইরাসবাহী এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে ।

আরও পড়ুন : বন্যা : বাংলা প্রবন্ধ রচনা

জ্বরের উপসর্গ : 

ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে সাধারণত তীব্র জ্বর হয়। এক্ষেত্রে জ্বর সাধারণত ১০৪/১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও বমি, পেটব্যথা ও মাথাব্যথা, কোমরব্যথা, অস্থিসন্ধি বা জয়েন্ট ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, ত্বকে ছোট ছোট লাল ফুসকুঁড়ি দেখা দেওয়া এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে নড়াচড়ার ক্ষমতা পর্যন্ত হ্রাস পায়। এক্ষেত্রে হাড়ব্যথা এতটাই প্রচণ্ড হয় যে, মনে হয় যেন হাড় ভেঙে গেছে।

ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসা পদ্ধতি : 

ডেঙ্গুজ্বর সন্দেহ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সাধারণত জ্বর হওয়ার তিন দিনের মধ্যে সিবিসি এবং রক্তের প্লাটিলেট টেস্ট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্লাটিলেট এক লাখের কম হলে ডেঙ্গু ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। এসময় বেশি করে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। যাদের রক্তের প্লাটিলেট কমে যাবে তাদের অনেক সময় রক্ত দিতে হতে পারে। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে ।

প্রতিরোধ : 

এডিস মশা অনেক দিনের জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। তাই বাড়ির আশপাশের জমে থাকা পানির উৎস ধ্বংস করতে হবে। এছাড়া বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যাতে মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা যায়। দিনে বা রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। এডিস মশা থেকে রক্ষার জন্য সম্ভব হলে ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে মশা রোধী লোশন, ক্রিম, প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

উপসংহার: 

বর্তমানে ডেঙ্গুজ্বর শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, যা আশংকার বিষয়। আর তাই ডেঙ্গুজ্বরের কারণে আর কোনো অমূল্য জীবন যেন হারিয়ে না যায় সেজন্যে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে সকলের সদিচ্ছা এবং চেষ্টাই পারে ডেঙ্গুর মতো সমস্যার মোকাবিলা করতে।

বাংলা প্রবন্ধ রচনা : ডেঙ্গু জ্বর । PDF

ফাইল সাইজ: 286 KB | ফরম্যাট: PDF

আপনার ফাইল প্রস্তুত হচ্ছে… অপেক্ষা করুন
30 সেকেন্ড


যদি মূল লিংক কাজ না করে তবে বিকল্প লিংক ব্যবহার করুন
Need help with Study Abroad,
IELTS Preparation, অথবা
Online Degree Programs?
Explore trusted resources for students worldwide.
✔ 100% নিরাপদ ও ভাইরাস মুক্ত

Leave a Comment