বাংলা প্রবন্ধ রচনা : হযরত মুহাম্মদ সাঃ

সূচনা : 

মানব জাতির ইহলোকের শান্তি-সমৃদ্ধি ও পরলোকের মুক্তির জন্য যে সকল মহামানব যুগে যুগে ধর্ম প্রচার করে গেছেন হযরত মুহম্মদ (স) তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি নবীগণের মধ্যে সর্বশেষ নবী।

জন্ম ও বংশ পরিচয় : 

৫৭০ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক হিজরী সনের রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ সোমবার সূর্যোদয়ের পূর্বে হযরত মুহম্মদ (স) মক্কা নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম বিবি আমেনা। তাঁর বংশের নাম কুরাইশ বংশ।

বাল্যজীবন : 

আরবের তৎকালীন প্রথা অনুযায়ী শিশু মুহম্মদ (স)-কে তায়েফবাসিনী এক ধাত্রী হালিমার হাতে দেয়া হয়। সেখানে তার জীবনের পাঁচ বছর অতিবাহিত হয়। পাঁচ বছর পর তিনি তার মায়ের কোলে ফিরে আসেন। কিন্তু অল্পকাল পরেই মাতা ইহধাম ত্যাগ করেন। তখন তাঁর লালন পালনের ভার অর্পিত হয় তার বৃদ্ধ পিতামহের ওপর। কিছুকাল পরে ৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে তিনিও পরলোক গমন করেন। অতপর চাচা আবু তালেব এবার তার লালন পালনের ভার গ্রহণ করেন।

বাল্যকাল হতেই তিনি অত্যন্ত সত্যবাদী ছিলেন। এজন্য মক্কার লোকেরা তাঁকে আল আমিন বা বিশ্বাসী বলে ডাকত।

আরও পড়ুন : মহানবী সাঃ এর জীবনী - রচনা ১০০, ২০০ ও ৩০০ শব্দ - PDF

বিবাহ : 

পঁচিশ বছর বয়সের সময় মক্কায় বিবি খাদিজা (রা) নাম্মী এক ধনাঢ্য ও স্বাধ্বী মহিলা তাঁকে ব্যবসায় প্রতিনিধি নিযুক্ত করেন। ব্যবসায় তার প্রচুর লাভ হয়। খাদিজা তার ব্যবসায়ীক বুদ্ধি ও সততা দেখে এবং চরিত্র মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকে পতিত্বে বরণ করেন।

নবুওয়্যাত প্রাপ্তি : 

বিবাহের পর হযরত মুহম্মদ (স) প্রায়ই মক্কার নিকটবর্তী হিরা পর্বতের গুহায় গিয়ে গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। তিনি সেখানে গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকাকালীন সময় ফিরিস্তা জিব্রাইল (আঃ) ওহী (আল্লাহর বাণী) নিয়ে আসতেন। এরূপে তিনি নবুওয়্যাত প্রাপ্ত হন। তখন তার বয়স ৪০ বছর। তাঁর প্রচারিত ধর্মের নাম ইসলাম ধর্ম।

মক্কায় ধর্ম প্রচার : 

নবুওয়্যাত পাওয়ার পর তিনি প্রচার করেন “আল্লাহ এক, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই এবং মুহম্মদ (স) তাঁর প্রেরিত মহাপুরুষ।” তিনি মক্কাবাসীদেরকে মুর্তিপূজা ত্যাগ করে আল্লাহর উপাসনা করতে ও তাঁকে আল্লাহর রাসূল বলে মানতে বলেন। এতে মক্কাবাসীগণ তাঁর ওপর ক্ষেপে তাঁকে অকথ্য গালিগালাজ ও নানারূপ অত্যাচার করতে থাকে।

আরও  পড়ুন : রচনা : হযরত ওমর রাঃ জীবনী 

হিজরত : 

অল্প সংখ্যক লোক তার ধর্মমত গ্রহণ করলেও প্রায় সমস্ত মক্কাবাসী তাঁর ঘোর শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তিনি মক্কা হতে হিজরত করে মদিনা চলে যান। মদীনার লোকেরা তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং অল্প দিনের মধ্যেই মদীনাবাসী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

যুদ্ধ : 

তাঁর ধর্ম মত প্রচার করতে গিয়ে তিনি যুদ্ধবিগ্রহের সম্মুখীন হন। এর মধ্যে বদর, ওহুদ, খায়বার ও পরিখার যুদ্ধ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর ধর্মমত আরবের বাহিরে বহুস্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

শেষ জীবন : 

মক্কা বিজয়ের পর শেষ বারের মতো তিনি দশম হিজরীতে মক্কায় হজ্জ করতে যান। এ শেষ হজ্জকে তাঁর ‘বিদায় হজ্জ' বলা হয়। একাদশ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার তেষট্টি বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃতদেহ মদিনা নগরীতে সমাহিত করা হয়। আজও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান হতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ প্রতি বছর হজ্জ করতে গিয়ে মদীনায় তাঁর মাজার জেয়ারত করে ধন্য হন।

Post a Comment

0 Comments