ভূমিকা :
ছাত্রজীবন কেবল অধ্যয়নের জন্যই নয়। পাশাপাশি আরো কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, যা ছাত্রত্ব ও জীবনকে আরো পূর্ণতা এনে দেয়। দেশের নাগরিক হিসেবে একজন ছাত্রের কর্ম দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনে।
ছাত্রজীবনের মূল্য :
ছাত্রজীবন মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট সময়। এ সময় ভাবী জীবন-সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হতে হয়। ইমারতের ভিত্তি সুগঠিত না হলে যেমন তা শক্ত হয় না, সেরূপ বাল্যকালে উপযুক্ত শিক্ষালাভ না করতে পারলে মানুষের ভবিষ্যৎ জীবন সুগঠিত হয় না। ক্ষেতে যেরূপ বীজ বপন করা হয়, শস্যও সেরূপই জন্মে। তদ্রূপ ছাত্রজীবনে যে শিক্ষা এবং অভ্যাস আয়ত্ত করা হয়, তা-ই ভবিষ্যৎ জীবনে ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। ছাত্রজীবনকে ভবিষ্যৎ জীবনের সোপান মনে করে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে শিক্ষা ও সদভ্যাস আয়ত্ত করা উচিত।
ছাত্র সমাজ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ :
ছাত্রসমাজই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। ভবিষ্যতে তারা দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির দায়িত্ব বহন করবে, সেনানায়ক হয়ে রাষ্ট্র রক্ষা করবে। জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের ছাত্রদের স্বেচ্ছায় সৈনিক জীবন গ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন অটুট স্বাস্থ্য ও দুর্জয় সাহস। অতএব তাদের নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, আহার-বিহারে সময়ানুবর্তিতা অবলম্বন করতে হবে এবং দেহমন সুস্থ সবল থাকতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে ব্যুৎপত্তি লাভ করার জন্য পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও অন্যান্য ভালো বই পাঠ করতে হবে।
আরও পড়ুন : ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য - রচনা । pdf
নানাবিধ জ্ঞানার্জন :
ছাত্ররা যাবতীয় ভোগবিলাস, আড্ডা, মাদকদ্রব্যজাতীয় যে কোনো নেশা থেকে দূরে থাকবে। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন থেকে বিরত থাকবে। ছাত্ররা নিজেদেরকে শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নে আবদ্ধ রাখলেই চলবে না; তাদেরকে বহির্জগতের বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার থেকেও জ্ঞান আহরণ করতে হবে। জগতের কোথায় কী ঘটছে, কোন বৈজ্ঞানিক কী আবিষ্কার করেছেন, কোন জাতি কিভাবে উন্নতির পথে অগ্রসর হচ্ছে ইত্যাদি বিষয় জানতে হবে। বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিদ্যা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি ও ধর্মনীতি প্রভৃতি শাস্ত্রে ছাত্রদের প্রভূত কল্যাণকর জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে।
দেশাত্মবোধ :
ছাত্র জীবনেই ছাত্রদের স্বদেশপ্রেম, মানবপ্রীতি, সেবাপরায়ণতা, স্বাবলম্বন, ধর্মনিষ্ঠা, ধৈর্যশীলতা প্রভৃতি গুণ অর্জন করতে হবে। ছাত্রজীবনে মনোজগতে মানব প্রেম ও মানব সেবার বীজ উপ্ত হলে উত্তরকালে তা মহীরূপে পরিণত হয়ে ফলপ্রসূ হবে।
রাষ্ট্রের কল্যাণ :
আমাদের দেশে বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরাজমান দূরবস্থা নিরসনে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব কম নয়। ছাত্র- ছাত্রীদের শিক্ষা কেবল ক্লাস ও পাঠ্য বইয়ের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে খেলাধুলা করে কাটালেই চলবে না। বন্যা, মহামারী ও দুর্ভিক্ষের সময় জাতীয় দুর্দিনে দুঃস্থ-নিপীড়িত মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে।
আরও পড়ুন : ছাত্র জীবন - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]
জনসেবা :
ছাত্রদেরকে পল্লী উন্নয়ন কাজেও যোগদান করতে হবে। বিভিন্ন সেবামূলক সংগঠন গড়ে সরকার থেকে ওষুধপত্র সংগ্রহ করে রুগ্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণপূর্বক সেবা-শুশ্রষা করে তাদেরকে নিরাময় করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ছাত্ররা চেষ্টা করলে গ্রামবাসীদের সহায়তায় পল্লীর অবাঞ্ছিত বন-জঙ্গল কেটে হাজামজা পুকুর, দিঘী ও খানাখন্দকের কচুরিপানা ও আবর্জনা দূর করে, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করে এবং পল্লীর হিতকর নানারকম কার্য সাধন করে স্বাস্থ্য ও শ্রীসম্পদ ফিরিয়ে আনতে পারে ।
ঐক্য ও প্রীতি স্থাপন :
সর্বোপরি যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো ছাত্রসমাজের মধ্যে কোনোরূপ জাতিগত বা সম্প্রদায়গত অনৈক্য বা আঞ্চলিকতার মনোভাব থাকা উচিত নয়। তাদেরকে সব ধরনের সংকীর্ণতা পরিহার করে পরস্পর ঐক্য ও প্রীতি বজায় রাখতে হবে।
স্বাস্থ্যবিধি পালন :
স্বাস্থ্যই সম্পদ। যার স্বাস্থ্য নেই তার সুখ নেই, স্বস্তি নেই। স্বাস্থ্যহীন ধনকুবের অপেক্ষা স্বাস্থ্যবান ভিখারিও সুখী। তাই এ কথাগুলো স্মরণ রেখে ছাত্রদেরকে স্বাস্থ্যবিধি পালন করে চলতে হবে এবং শরীরের প্রতি যত্ন নিতে হবে। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়ে। শারীরিক সুস্থতার ওপর মানসিক সুস্থতা নির্ভর করে। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে ঠিকমতো লেখাপড়া করা যায় না।
আরও পড়ুন : রচনা : যুব সমাজের অবক্ষয় ও তার প্রতিকার
ছাত্রজীবন ও খেলাধুলা :
কেউ যেন মনে করে না যে, ছাত্রজীবনে লেখাপড়া ছাড়া অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলা করলে মনের মধ্যে অত্যধিক আমোদ-প্রমোদ পাওয়া যায়। খেলাধুলা শরীরকে সতেজ ও সঠিক রাখে এবং মনকে পরিষ্কার রাখে। কাজেই খেলাধুলায় যে নির্দোষ আমোদ-প্রমোদ পাওয়া যায় তা প্রত্যেক ছেলে-মেয়ের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য অবশ্যই করণীয়। বইয়ের স্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকলে ছেলে-মেয়েদের স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তি ফুটতে পারে না। All work and no play makes jack a dull boy –কথাটা নিতান্তই সত্য। যারা গ্রন্থকীট হওয়ার ফলে স্বাস্থ্য নষ্ট করে ফেলে তাদের শুধু ছাত্রজীবন নয় ভবিষ্যৎ জীবনও নষ্ট হয়ে যায়।
উপসংহার :
ছাত্রজীবন হচ্ছে নিজেকে গড়ে তোলা ও প্রস্তুত করার সময়। জীবন সংগ্রামের জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। আজকাল ছাত্রসমাজকে কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা তাদের নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাই ছাত্রসমাজকে এ বিষয়ে হুঁশিয়ার থাকতে হবে। রাজনীতি একটা দর্শন। কিন্তু সে দর্শনের নামে যেন ছাত্রসমাজ উচ্ছিন্ন হয়ে না যায় এদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলতে পারলে জীবন সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে।
আরও পড়ুন : রচনা : গ্রামোন্নয়নের ছাত্রদের কর্তব্য