ভূমিকা :
স্বাস্থ্য মানুষের অমূল্য সম্পদ। সুস্বাস্থ্য সুখী জীবনের অন্যতম পূর্বশর্ত। স্বাস্থ্যহীন মানুষ পৃথিবীতে সুখী হতে পারে না। কথায় বলে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। এই স্বাস্থ্য বলতে সম্পূর্ণ কর্মক্ষম হয়ে বেঁচে থাকা বুঝায় । রোগমুক্ত থাকা, মন ভালো থাকা, সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন উপভোগ করাই সুস্থতা। যার মধ্যে এসব শারীরিক লক্ষণ দেখা যায় তাকে স্বাস্থ্যবান বলা যায়।
স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনীয়তা :
মানবজীবনে স্বাস্থ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সুস্থ মানুষই ভালো স্বাস্থ্যের পরিচায়ক। স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি চিরসুখী। ধনসম্পদ, মান, জ্ঞান সবকিছুই মূল্যহীন যদি না স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বলা হয় যে, স্বাস্থ্যই মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। স্বাস্থ্য যার ভালো সে দরিদ্র হলেও সুখী জীবনযাপন করতে পারে।
অন্যদিকে প্রচুর ধনসম্পদ ও প্রতিপত্তি থাকা সত্ত্বেও যদি স্বাস্থ্য ভালো না থাকে তাহলে সে সুখী হতে পারে না। সুস্বাস্থ্য ব্যতীত কেউই জীবনকে যথার্থভাবে উপভোগ করতে পারে না। স্বাস্থ্যহীন ব্যক্তি পৃথিবীতে কোনো কাজে সাফল্যলাভ করতে পারে না। স্বাস্থ্যহীন ব্যক্তির মনে বিরক্তি, আলস্য, অসহিষ্ণুতা ও নানা অশান্তি ভর করে। ফলে অপরূপ সুন্দর এই পৃথিবী তার কাছে সুখদায়ক মনে হয় না।
আরও পড়ুন : স্বাস্থ্যবিধি - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
স্বাস্থ্য লাভের উপায় :
স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান সুস্বাস্থ্য লাভের অন্যতম পূর্বশর্ত। সুস্বাস্থ্য লাভের জন্য কিছু নিয়ম- কানুন মেনে চলতে হয়। স্বাস্থ্য ভালো তথা সুস্থ রাখতে হলে শরীরের প্রতি যত্নবান হতে হয়। স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়ম- কানুনগুলো যথাযথভাবে জানা ও মেনে চলা প্রয়োজন।
বর্তমানে স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞানদান করার জন্য স্কুল-কলেজের শিক্ষাক্রমে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যরক্ষার প্রাথমিক জ্ঞান শিশু পরিবারে পিতা-মাতা ও অন্য সদস্যদের কাছ থেকে লাভ করতে পারে। শিশুকে শৈশব থেকে বোঝাতে হবে, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার প্রদান ও খেলাধুলায় উদ্বুদ্ধ করা পিতামাতারই দায়িত্ব।
স্বাস্থ্যরক্ষায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা :
সুস্বাস্থ্য লাভ করা ও সুস্থ থাকার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে যতই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা হোক না কেন সুস্বাস্থ্য অর্জনে তা কোনো কাজে আসে না। তাই সবসময় মনে রাখতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাই হলো সুস্থ সবল জীবনের পূর্বশর্ত।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করা, প্রতিদিন গোসল করা ও মাঝে মাঝে সাবান দিয়ে শরীর পরিষ্কার করা প্রয়োজন। দাঁত ঠিকমতো পরিষ্কার না রাখলে পেটের অসুখ হতে পারে। নিয়মিত হাত ও পায়ের নখ কাটতে হবে। পা পরিষ্কার রাখতে হবে, রাতে ঘুমাবার আগেও হাত-পা ধুয়ে নিন্দ্র যেতে হবে।
আরও পড়ুন : বাংলা প্রবন্ধ রচনা : ডেঙ্গু জ্বর । PDF
প্রতিদিন যেসব কাপড়-চোপড় আমরা পরি তা পরিষ্কার রাখতে হবে। নোংরা ও অপরিষ্কার থাকলে শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধার সুযোগ পায়। স্বাস্থ্য রক্ষার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করা। যেখানে সেখানে পায়খানা-প্রস্রাব করলে পরিবেশ দূষিত হয়ে বিছানা পত্র, বালিশ ও বিছানার চাদর নিয়মিত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা উচিত।
মশা-মাছি সুস্বাস্থ্যের বড় শত্রু। তাই বাড়ির চারপাশে ঝোপ ঝাড় ও আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে মশা-মাছি বংশবিস্তার করতে না পারে। নর্দমা দিয়ে যাতে ময়লা পানি বের হয়ে যেতে পারে তার জন্য চারপাশের নর্দমা ও পরিষ্কার রাখতে হবে। পায়খানা ও গোসলখানা সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, পরিবেশের পরিচ্ছন্নতার ওপরই আমাদের সুস্থতা নির্ভর করে।
উপসংহার :
মানুষের সব সুখ ও ভাবনার মূলে রয়েছে স্বাস্থ্যের ভূমিকা। স্বাস্থ্যহীন ব্যক্তিকে জীবস্মৃত বলা যায়। তাই স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য আমাদের সচেতন ও যত্নবান হওয়া উচিত। আর তা রক্ষার প্রধান ও অন্যতম উপায় হচ্ছে নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং চারপাশের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখা।