সরল,জটিল ও যৌগিক বাক্যের সংজ্ঞা, উদাহরণ, রূপান্তর, পার্থক্য,বৈশিষ্ট্য

সংজ্ঞা : যে বাক্যে একটি মাত্র কর্তা (উদ্দেশ্য) ও একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া (বিধেয়) থাকে, তাকে সরল বাক্য বলে। 

(toc) Table Of Contens

সরল বাক্য উদাহরণ : 

  1. মাহিন স্কুলে যায়। 
  2. শিশুটি খেলা করে। 
  3. আকাশে সূর্য ওঠেছে । 
  4. খোকন নিয়মিত পড়ালেখা করে।  
  5. ছেলেটি ব্যাকরণ জানেনা। 
  6. রহিম মাদ্রাসা থেকে আসছে। 
  7. সে বই পড়ে।
  8. গুরুজনকে সবারই ভক্তি করা উচিত। 
  9. আমরা প্রতিদিন স্কুলে যাই। 
  10. মিনা ভাত খেয়েছে । 

সরল বাক্য ও যৌগিক বাক্যের মধ্যে পার্থক্য :

সরল বাক্য যৌগিক বাক্য
ক. সরল বাক্যে একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। যেমন- রাশেদ বাড়ি গেল । ক. যৌগিক বাক্যে একাধিক সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। যেমন— তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয়নি ।
খ. সরল বাক্যে একটি মাত্র কর্তা থাকে। যেমন- আমি ভাত খাই ৷ খ. যৌগিক বাক্যে একাধিক কর্তা থাকতে পারে। যেমন- তুমি এসেছিলে এবং আমি গিয়েছিলাম ।
গ. সরল বাক্যে একটি ভিন্ন একাধিক বাক্য থাকতে পারে না। যেমন- মানুষের মন জটিল । গ. যৌগিক বাক্য একাধিক স্বাধীন বাক্যের সংযোজনে গঠিত হয়। যেমন— মানুষের মন জটিল, তাই তার অনুভূতিও বিচিত্র ।
ঘ. সরল বাক্যে সচরাচর অব্যয় পদ ব্যবহৃত হয় না। হলেও তা বিশেষ ক্ষেত্রে পদকে যুক্ত করে, বাক্যাংশকে নয়। যেমন- দিলু ও মিলু এদিকেই আসছে । ঘ. অব্যয় পদ ছাড়া যৌগিক বাক্য গঠিত হয় না। যেমন- বাজারে পণ্যের অভাব নেই, কিন্তু দাম যথারীতি চড়া।
ঙ. সরল বাক্য তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত। যেমন- সে খেলে । ঙ. যৌগিক বাক্য তুলনামূলকভাবে দীর্ঘতর। যেমন- প্রতিদিন ঝড় উঠছে, তবু মাঝিরা গভীর সাগরে মাছ ধরতে যায় ।
চ. সরল বাক্যের অর্থ সহজেই বোঝা যায়। যেমন- আমি বই পড়ি। চ. যৌগিক বাক্যের অর্থ সহজবোধ্য নয়। যেমন- নদী সাগরে পতিত হয় কিন্তু তার ছবি আমরা প্রত্যহ দেখতে পাই না ।

আরও পড়ুন : বাক্য কাকে বলে?গঠন ও অর্থ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী উদাহরণ 

সরল বাক্য থেকে জটিল বাক্য রূপান্তর উদাহরণ :

সরল বাক্য জটিল বাক্য
ভিক্ষুককে দান কর । যে ভিক্ষা করতে এসেছে, তাকে দান কর ।
আমি বহু কষ্টে পাস করেছি। আমি কষ্ট করেছি, তবে পাস করেছি।
সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি। সত্য কথা বলি নি, তাই বিপদে পড়েছি।
আমার হারানো বইটি ফিরে পেয়েছি। আমার যে বইটি হারিয়েছিল, সেটি ফিরে পেয়েছি।
মিথ্যা বলার জন্যে তোমার পাপ হবে । যেহেতু তুমি মিথ্যা বলেছো, সেহেতু তোমার পাপ হবে।
ভালো ছেলেরা শিক্ষকের আদেশ পালন করে। যারা ভাল ছেলে, তারা শিক্ষকের আদেশ পালন করে।
কোথাও পথ না পেয়ে তোমার কাছে এসেছি। কোথাও পথ পেলাম না বলে তোমার কাছে এসেছি।
দুর্জন লোক পরিত্যাজ্য। যে লোক দুর্জন, সে পরিত্যাজ্য।
চুল পাকলেও তার বুদ্ধি পাকে নি । যদিও তার চুল পেকেছে, তবুও তার বুদ্ধি পাকে নি ।
ধার্মিকেরা সুখি । যারা ধার্মিক, তারা সুখী।
দরিদ্র হলেও তিনি সুখী । যদিও তিনি দরিদ্র, তবুও তিনি সুখী ।
পরিশ্রমী লোকই সাফল্য লাভ করে । যে লোক পরিশ্রমী, সে সাফল্য লাভ করে।
নির্বোধেরাই শুধু এ কাজ করে ৷ যারা নির্বোধ তারাই শুধু এ কাজ করে।
সূর্যোদয়ে পদ্মফুল ফোটে । আজ যখন সূর্য উদিত হয়, তখন পদ্মফুল ফোটে ।
বৃষ্টি হলে বের হব না । যদি বৃষ্টি হয়, তবে বের হব না।

আরও পড়ুন : বাক্য গঠনের নিয়ম।একটি সার্থক বাক্যের কয়টি গুন বা অংশ থাকে উদাহরণ সহ

মিশ্র বা জটিল বাক্য :

সংজ্ঞা : যে বাক্যে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় এই দুই অংশ ছাড়াও এক বা একাধিক অপ্রধান খন্ড বাক্য প্রধান বাক্যের অঙ্গ হিসেবে থেকে সম্পূর্ণ বৃহত্তর বাক্য গঠন করে, তাকে মিশ্র বা জটিল বাক্য বলে। 

জটিল বাক্য উদাহরণ :

  • তুমি আসবে বলে আমি অপেক্ষা করছি। 
  • যে এখানে এসেছিল তাকে আমি চিনি না। 
  • আমি স্কুলে গিয়ে দেখলাম স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। 
  • সে বলল যে সে গতকাল ফুটবল খেলিনি। 
  • যারা পরিশ্রম করে তারাই সুখ ভোগ করে
  • যদিও তিনি বিদ্বান তবুও তার কোন অহংকার নেই। 
  • আমার একটি ছাতা আছে যা পুরনো। 
  • জগতে এমন কিছু নেই যা অসম্ভব। 
  • যদি তুমি না খাও তবে আমিও খাব না। 
  • যখন সকাল হবে তখন আমরা স্কুলে যাব। 

জটিল বাক্যের বৈশিষ্ট্য :

ক. যদি-তবে, যারা-তারা, যা-তা, যিনি-তিনি, অতএব, যদিও, তবু প্রভৃতি অব্যয় বা সর্বনামের সাহায্যে জটিল বাক্য তৈরি হয় । 

খ. একের বেশি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে ।

গ. একের বেশি অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে ।

জটিল বাক্য থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর :


জটিল বাক্য সরল বাক্য
যিনি বিদ্বান, তিনি সর্বত্র আদরণীয়। বিদ্বান লোক সর্বত্র আদরণীয়।
আমার বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন আমি স্কুলে ভর্তি হই। পাঁচ বছর বয়সে আমি স্কুলে ভর্তি হই।
তোমার নাম কী বলো? তোমার নাম বলো ।
যে বালক মিথ্যা বলে, তাকে কেউ ভালোবাসে না । মিথ্যাবাদী বালককে কেউ ভালোবাসে না।
যখন তুমি ফিরবে, তখন তোমাকে টাকা দিব। তুমি ফেরার পর তোমাকে টাকা দেব ।
যারা মূর্খ, তারা পশুর সমান। মূর্খ লোক পশুর সমান ।
যেমন কর্ম করবে, তেমন ফল পাবে। কর্মের অনুরূপ ফল পাবে।
যে রক্ষক, সেই ভক্ষক। রক্ষকই ভক্ষক।
যারা পরিশ্রম ব, তারাই জীবনে সাফল্য লাভ করে। পরিশ্রমী ব্যক্তিরাই জীবনে সাফল্য লাভ করে।

আরও পড়ুন : বাগধারা অর্থ কি?কাকে বলে।বাগধারার গঠন, ব্যবহার, প্রয়োজনীয়তা

যৌগিক বাক্য :

সংজ্ঞা : দুই বা দুয়ের অধিক সরল বাক্য সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে যে বাক্য গঠিত হয়, তাকে যৌগিক বাক্য বলে। 

যৌগিক বাক্য উদাহরণ :

  • স্মৃতি লেখাপড়া করে এবং শশী খেলা করে। 
  • তুমি কাল আসবে নতুবা আমি যাব না। 
  • লোকটি গরিব কিন্তু মনটা উদার। 
  • লোকটির সবই আছে তবু সে সুখী নয় ।
  • সত্য কথা বলেনি তাই বিপদে পড়েছ। 
  • সে পরিশ্রমী বটে কিন্তু নির্বোধ। 
  • বিপদ ও দুঃখ একসময় আসে। 
  • তুমি যাও এবং আমিও যাব। 
  • সাঁতার কাট এবং স্বাস্থ্য ভালো হবে। 
  • সে ধনী বটে কিন্তু গরিবকে ভালোবাসে। 

যৌগিক বাক্যের বৈশিষ্ট্য :

সাধারণত এবং, ও, কিন্তু, বা প্রভৃতি অব্যয় যুক্ত হয়ে যৌগিক বাক্য গঠিত হয়। যেমন- সে গরিব, কিন্তু সৎ। যদি না পড়, তবে পরীক্ষায় ভাল করতে পারবে না ।

যৌগিক বাক্য থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর :

যৌগিক বাক্য সরল বাক্য
হয় কাজ কর, না হয় বসে পড়। কাজ না করলে বসে পড়।
অনেক দেখা হল বটে, তবুও শেষ দেখা হল না । অনেক দেখেও দেখা শেষ হল না ।
সে কথাটি বলল এবং চলে গেল । কথাটি বলেই সে চলে গেল।
তিনি মোটা ছিলেন, কিন্তু তার গায়ে শক্তি নেই। মোটা হলেও তার গায়ে শক্তি নেই।
যত্ন করবে, নইলে রত্ন পাবে না। যত্ন না করলে রত্ন পাবে না।
এত সাধনা করলাম, কিন্তু তোমার মন পেলাম না । এত সাধনা করেও তোমার মন পেলাম না।

Post a Comment

0 Comments