ভাবসম্প্রসারণ: বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবন অন্ধ(২টি)

বিদ্যার সাথে সম্পর্কহীন জীবন অন্ধ এবং জীবনের সাথে সম্পর্কহীন বিদ্যা পঙ্গু

মূলভাব : বিদ্যার মতো পরম ধন আর নেই । আমাদের সমগ্র অগ্রগতির মূলে রয়েছে বিদ্যা । কিন্তু এ বিদ্যা যদি মানব জীবনের সাথে সম্পৃক্ত না হয়, তবে তা হবে অর্থহীন

সম্প্রসারিত ভাব : বিদ্যা হচ্ছে জ্ঞানার্জন শলাকা। বিদ্যা তিমির বিদারী, বিদ্যা জ্ঞান-চক্ষুর উন্মোচক। বিদ্যা এনে দেয় যশ, কল্যাণ । বিদ্যা হলো গুরুর গুরু। মানবের অনির্দিষ্ট অগ্রগতির মূল বিদ্যা। হাদিসে আছে, “বিদ্যার মতো চক্ষু আর নেই, সত্যের চেয়ে বড় তপস্যা আর নেই।” বিদ্বানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র। মোহের বশে যে বিদ্যা নামক পরম ধনের তপস্যা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে। তার মতো অভাগা পৃথিবীতে আর নেই। জলে-স্থলে আজ মানবের যে সাফল্য। এর মূলে রয়েছে জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিদ্যা। বিদ্যার দ্যুতি এমনই উজ্জ্বল যে, তার আলোকে সমস্ত অন্ধকার বিদূরিত হয়। প্রবাদে আছে, “স্বদেশে পূজ্যতে রাজা, বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে।” বিদ্বান ব্যক্তি সমস্ত বিশ্বের সম্পদ। মনে রাখতে হবে যে, বিদ্যা নামক মহার্ঘতম বস্তুও যদি জীবনের সাথে সম্পৃক্ত না হয় তবে সে বিদ্যা অর্থহীন। বিদ্যার উদ্দেশ্য জীবনকে সফলতায়, প্রাণকে প্রাণময়তায় উদ্বেল করে তোলে । উদ্দেশ্যহীন বিদ্যা ব্যর্থ ও পঙ্গু। .

মন্তব্য : বিদ্যা ও জীবন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তাই জীবন ও বিদ্যার সাথে সম্পর্ক খুবই নিবিড় ।

আরও পড়ুন :  আত্মশক্তি অর্জনই শিক্ষার উদ্দেশ্য ভাবসম্প্রসারণ - ৩টি 

এই ভাব সম্প্রসারণটি অন্য আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেওয়া হলো

মূলভাব : জীবনের জন্য বিদ্যা অপরিহার্য। বিদ্যা না থাকলে জীবন অন্ধের শামিল। তবে জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে সে বিদ্যার কোনো মূল্য নেই।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের জীবন গঠনের জন্য বিদ্যা অর্জন অপরিহার্য। জ্ঞানের আলো মানুষকে অজ্ঞতা ও মূর্খতার হাত থেকে মুক্তি দেয়। বিদ্যার্জন বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটায়। বিদ্যার আলোতে জগৎ উদ্ভাসিত হয়। বিদ্যার আলো মানুষের জীবনের অন্ধকার দূর করে। বিদ্বানের ভূমিকায় সমাজ ও দেশ হয় সমৃদ্ধির আলোয় আলোকিত। শিক্ষা মানুষের মনের সংকীর্ণতাকে দূর করে জীবনকে করে কুসংস্কারমুক্ত ও প্রগতিশীল। বিদ্যা সমাজকেও করে প্রগতির আলোয় আলোকিত। তাই জ্ঞানের আলো যদি জীবনকে আলোকিত ও প্রভাবিত না করতে পারে তবে সে জীবন ব্যর্থ। বিদ্যার সঙ্গে সম্পর্কহীন জীবন হয়ে পড়ে বিচার-বুদ্ধিহীন। বিদ্যার সত্যিকার সার্থকতাই বিশ্বমানবের কল্যাণ। কিন্তু সেই বিদ্যা যদি বিশ্বমানবের কল্যাণে না আসে, জীবনকে যদি কুসংস্কার আর আত্মকেন্দ্রিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ রাখে তবে তা বিদ্যা বলে বিবেচিত হয় না। বিদ্যাকে জীবনের নানা প্রতিকূলতায় ব্যবহার করাই বিদ্যার সার্থকতা। 

মানব সন্তান কেবল জন্ম নিয়েই যথার্থ মানুষ হয় না, বিদ্যা অর্জনের সাধনা করেই প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে হয়। অন্যদিকে বিদ্যার সঙ্গে থাকা চাই জীবনের নিবিড় সম্পর্ক। যে বিদ্যা কেবল সার্টিফিকেটসর্বস্ব, তার কোনো মূল্য নেই। মানুষ অনেক বড় বড় ডিগ্রি লাভ করে খ্যাতি অর্জন করে কিন্তু তা মানবকল্যাণে কাজে আসে না। এমন বিদ্যা অর্থহীন ও পঙ্গু। বস্তুত জীবনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যে শিক্ষায়, সে শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। যথার্থ বিদ্বান ব্যক্তি জীবনকে সুন্দর ও গতিশীল করার পাশাপাশি সমাজকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। জীবনের কাজে বিদ্যাকে ব্যবহার করতে না পারলে সে জীবন মূল্যহীন ও বিদ্যা অর্থহীন হয়ে পড়ে।

মন্তব্য : জীবনকে গতিময়, বাস্তব ও কর্মমুখী করতে হলে যেমন বিদ্যার্জন অত্যাবশ্যক তেমনি অর্জিত বিদ্যাও হতে হবে জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই ব্যক্তিজীবন ও সমাজজীবনের আলোময় বিকাশের জন্য চাই জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষা।

Post a Comment

0 Comments