বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাই সর্বনাম পদ। ভাষাকে শ্রুতিমধুর ও সাবলীল করার জন্য সর্বনাম পদ ব্যবহার করা হয়। বাক্যের অনন্য বিষয়ের ন্যায় সর্বনাম পদের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নিচে সর্বনিম্ন পদের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো :
সংজ্ঞা : যে পদ বিশেষ্য পদের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে।
সর্বনাম পদ উদাহরণ :
যেমন – রফিক ভাল ছেলে। রফিক রীতিমতো পড়াশোনা করে। রফিক মাতাপিতার কথা শোনে। ওপরের বাক্যগুলোতে বার বার ‘রফিক’ শব্দটি ব্যবহার না করে যদি বলি— রফিক ভাল ছেলে। সে রীতিমতো পড়াশোনা করে। সে মাতাপিতার কথা শোনে। তাহলে রফিক শব্দের পুনরাবৃত্তি করতে হয় না। রফিকের পরিবর্তে ‘সে’ শব্দটি ব্যবহার করা যায়। সুতরাং ‘সে’ পদটি সর্বনাম পদ । এভাবে আমি, তুমি, সে, এটা, ওটা, আপনি, আপনারা, তারা, তিনি, কে ইত্যাদি সর্বনাম পদ।
সর্বনামের শ্রেণীবিভাগ :
সর্বনাম পদকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১. ব্যক্তি বা পুরুষবাচক সর্বনাম : যে সব সর্বনাম ব্যক্তি বা পুরুষ বাচক বিশেষ্য পদের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়, তাকে পুরুষবাচক সর্বনাম বলে। যেমন- আমি, তুমি, আমরা, আপনি, তিনি, এ, ওরা ইত্যাদি।
২. সাকল্য বা সমষ্টিবাচক সর্বনাম : যে সর্বনাম পদ এক জাতীয় কোন কিছুর সমষ্টিকে বুঝায়, তাকে বলা হয় সাকল্য বা সমষ্টিবাচক সর্বনাম। যেমন- উভয়, সকল, সর্ব, সমূহ ইত্যাদি।
আরও শিখুন : অব্যয় পদ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি – উদাহরণ সহ বিস্তারিত
৩. সংযোগ, সম্বন্ধ বা সঙ্গতিবাচক সর্বনাম : যে সর্বনাম পদ অন্য নামপদের স্থলে বাক্যে ব্যবহার হয়ে নামপদের সাথে সম্পর্ক প্রকাশ করে, তাকে বলা হয় সংযোগ, সম্বন্ধ বা সঙ্গতিবাচক সর্বনাম । যেমন-যে, যিনি, যাহা, যা, তাহা, তা ইত্যাদি ।
৪. প্রত্যক্ষ নির্ণয়সূচক বা উল্লেখসূচক সর্বনাম : যে সর্বনাম পদ কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু, প্রাণী, গুণ বা ক্রিয়া নির্দেশ করে, তাকে বলা হয় প্রত্যক্ষ নির্ণয়সূচক বা উল্লেখসূচক বা নির্দেশবাচক সর্বনাম। যেমন- এই, ঐ, ইনি, উনি ইত্যাদি ।
৫. পরোক্ষ নির্ণয়সূচক বা উল্লেখসূচক বা দূরস্থ সর্বনাম : যে সর্বনাম পদ কোন অনির্দিষ্ট বা দূরস্থ ব্যক্তি, বস্তু, প্রাণী, গুণ, ক্রিয়া ইত্যাদি নির্দেশ করে, তাকে বলা হয় পরোক্ষ নির্ণয়সূচক বা উল্লেখসূচক বা দূরস্থ সর্বনাম। যেমন- ও, উহা, উনি, সেটা ইত্যাদি।
৬. প্রশ্নসূচক সর্বনাম : কোন প্রশ্ন করার কাজে যে সর্বনাম পদ ব্যবহার হয়, তাকে বলা হয় প্রশ্নসূচক সর্বনাম পদ । যেমন- কে, কি, কী, কোন, কাহার, কার, কাহাকে, কাকে ইত্যাদি ।
৭. আত্মবাচক সর্বনাম : নিজস্ব বা আত্মভাব প্রকাশ করার জন্যে যে সর্বনাম পদ ব্যবহার করা হয়, তাকে বলা হয় আত্মবাচক সর্বনাম। যেমন- স্বয়ং, খোদ, নিজ, আপনি ইত্যাদি ।
৮. অনিশ্চয়সূচক সর্বনাম : যে সর্বনাম পদ নিশ্চিত করে বা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে কোন নামপদকে নির্দেশ করে না, তাকে বলা হয় অনিশ্চয়সূচক বা অনিশ্চয়তাবাচক সর্বনাম । যেমন- কেহ, কেউ, কিছু, কোন, একটি, অনেক ইত্যাদি।
৯. ব্যতিহারিক বা পারস্পরিক সর্বনাম : পরস্পর বা স্বেচ্ছায় অর্থে যে সর্বনাম পদ ব্যবহার হয়, তাকে বলা হয় ব্যতিহারিক বা পারস্পরিক সর্বনাম। যেমন- আপনা আপনি, নিজে নিজে ইত্যাদি।
আরও শিখুন : বিশেষণ পদ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ বিস্তারিত
১০. দূরত্ববাচক সর্বনাম : ঐ, ঐসব, সব ইত্যাদি।
১১. অন্যাদিবাচক সর্বনাম : অন্য, অপর, পর ইত্যাদি।
আরো কতিপয় সর্বনামের উদাহরণ :
ক. ব্যষ্টিবাচক : সমষ্টির পরিবর্তে একজাতীয় কোন ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর অন্তর্গত প্রত্যেককে আলাদা করে নির্দেশ করার জন্যে এ সর্বনাম পদ ব্যবহার হয় । যেমন- প্রত্যেকে, যে কোন একটি, স্বতন্ত্রভাবে ইত্যাদি ।
খ. সাপেক্ষ সর্বনাম : একটি সর্বনাম প্রয়োগের সাথে অপর সর্বনাম প্রয়োগের আবশ্যকতা দেখা দিলে, তা সাপেক্ষ সর্বনাম হয়। যেমন- যে চুরি করে সে সকলের ধিক্কার পায়। এখানে ‘ষে’ সর্বনামটি ব্যবহার হওয়ায় ‘সে’ সর্বনামটি আবশ্যকরূপে প্রযুক্ত হয়েছে।
গ. যৌগিক সর্বনাম : একাধিক পদ একত্রিত হয়ে সর্বনাম হিসেবে ব্যবহার হলে তাকে বলা হয় যৌগিক সর্বনাম। যেমন- আমরা সবাই তাঁর কর্মনীতি সমর্থন করি।
ঘ. নিরপেক্ষ সর্বনাম : যে সর্বনাম অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে না, তাকে বলে নিরপেক্ষ সর্বনাম । যেমন- তুমি এ কাজ করেছ।
সর্বনাম পদের প্রয়োজনীয়তা :
একই বিশেষ্য পদকে বারবার ব্যবহার করলে এতে একদিকে যেমন ভাষার সৌন্দর্যহানি ঘটে, অপরদিকে তেমনি ভাষার শ্রুতিমধুরতা বিনষ্ট হয়। প্রত্যেক বাক্যে একই বিশেষ্যের পুনরুক্তি দোষ পরিহার করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিশেষ্যের পরিবর্তে সর্বনাম পদ ব্যবহার করা হয়। যেমন- শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক। তিনি মুসলিম দরদি ছিলেন। বাংলার মুসলমানদের জন্য তিনি তাঁর প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁকে আমরা শ্রদ্ধা করি ।এখানে শেরে বাংলার পরিবর্তে তিনি, তাঁর, তাঁকে ব্যবহার করাতে ভাষা পুনরুক্তি দোষ হতে মুক্ত হয়ে শ্রুতিমধুর এবং সাবলীল হয়ে উঠেছে। এ জন্যই বাংলা ভাষায় সর্বনামের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।