পানি কত প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞাসহ হকুম বর্ণনা

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- وَإِنْ كُنتُمْ جُنُبًا فَٱطَّهَّرُوا অর্থাৎ, “যদি তোমরা অপবিত্র থাক তবে পবিত্রতা অর্জন কর।” আর পবিত্রতা অর্জনের সর্বপ্রধান মাধ্যম হলো পানি। নিম্নে প্রশ্নালোকে পানি কত প্রকার ও কী কী? প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞাসহ হকুম বর্ণনা করা হলো।

পানির প্রকারভেদ :

পানি মোট ছয় প্রকার । যথা-

  1. ٱلْمَاءُ ٱلْمُطْلَقُ তথা সাধারণ পানি।
  2. ٱلْمَاءُ ٱلْمُقَيَّدُ তথা শর্তযুক্ত পানি ।
  3. ٱلْمَاءُ ٱلْجَارِي প্রবাহিত পানি।
  4. ٱلْمَاءُ ٱلدَّائِمُ তথা স্থির পানি।
  5. ٱلْمَاءُ ٱلْمُسْتَعْمَلُ তথা ব্যবহৃত পানি।
  6. ٱلْمَاءُ ٱلْمَشْكُوكُ তথা সন্দেহযুক্ত পানি।

নিচে প্রত্যেক প্রকার পানির সংজ্ঞাসহ হুকুম বর্ণনা করা হলো-

ٱلْمَاءُ ٱلْمُطْلَقُ তথা সাধারণ পানি এর পরিচয় :

ক. আভিধানিক অর্থ : مَاء শব্দের আভিধানিক অর্থ- পানি, আর مُطْلَقُ শব্দের অর্থ- সাধারণ বা শর্তহীন। সুতরাং ٱلْمَاءُ ٱلْمُطْلَقُ অর্থ- সাধারণ পানি ।

খ. পারিভাষিক সংজ্ঞা : যে পানি নিজে পবিত্র এবং অন্যকে কোনোরূপ সন্দেহ ব্যতীত পবিত্র করতে পারে, তাকে ٱلْمَاءُ ٱلْمُطْلَقُ বা সাধারণ পানি বলা হয়। যেমন- সমুদ্র, নদী, ঝরনা ও বৃষ্টির পানি ।

ٱلْمَاءُ ٱلْمُطْلَقُ-এর হুকুম : ٱلْمَاءُ ٱلْمُطْلَقُ-এর হুকুম হলো-
ক. এ ধরনের পানি সাধারণত পবিত্র।
খ. এর দ্বারা যে কোনো ধরনের পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ।

আরও পড়ুন : অজুর নিয়ত,দোয়া, ফরজ,সুন্নত। অজু ভঙ্গের কারণ ও অজুর নিয়ম

ٱلْمَاءُ ٱلْمُقَيَّدُ -এর পরিচয় :

ক. আভিধানিক অর্থ : مُقَيَّدُ শব্দটি اِسْمُ مَفْعُولٍ -এর সীগাহ। অর্থ-আবদ্ধ । ٱلْمَاءُ ٱلْمُقَيَّدُ শব্দের অর্থ – আবদ্ধ পানি ।

খ. পারিভাষিক সংজ্ঞা : যে পানি নিজে পবিত্র; কিন্তু অপরকে পবিত্র করতে পারে না; তাকে ٱلْمَاءُ ٱلْمُقَيَّدُ বলে। যেমন- কোনো ফলের রস ।

ٱلْمَاءُ ٱلْمُقَيَّدُ -এর হুকুম : এ ধরনের পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যাবে না; কিন্তু এ পানি শরীরে লাগলে শরীর নাপাক হবে না ।

ٱلْمَاءُ ٱلْجَارِي-এর পরিচয় :

ক. আভিধানিক অর্থ : جَارِي শব্দটি اِسْمُ فَاعِلٍ-এর সীগাহ। অর্থ- প্রবাহিত। অতএব ٱلْمَاءُ ٱلْجَارِي অর্থ- প্রবাহিত পানি।

খ. পারিভাষিক সংজ্ঞা : ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ٱلْمَاءُ ٱلْجَارِي-এর পরিচয় নিম্নরূপ-

-هُوَ ٱلْمَاءُ ٱلَّذِي لَا يَسْتَقِرُّ فِي مَوْضِعٍ بَلْ يَجْرِي إِلَى ٱلْمَهْبِطِ

অর্থাৎ, যে পানি এক জায়গায় স্থির থাকে না; বরং নিচু ভূমির দিকে প্রবাহিত হয়, তাকে ٱلْمَاءُ ٱلْجَارِي বলে ।

ٱلْمَاءُ ٱلْجَارِي-এর হুকুম : ইসলামী শরীয়তে ٱلْمَاءُ ٱلْجَارِي তথা প্রবাহিত পানির হুকুম নিম্নরূপ-

ক. কুদূরী গ্রন্থকারের মতে- إِذَا وَقَعَتْ فِيهِ ٱلنَّجَاسَةُ جَازَ ٱلْوُضُوءُ إِذَا لَمْ يُرَ لَهَا أَثَرٌ অর্থাৎ, প্রবাহিত পানিতে নাপাক পতিত হলেও তা দ্বারা অযু জায়েয হবে, যদি নাপাকির চিহ্ন না দেখা যায় ।

খ. যদি নাপাক বস্তু দেখা যায়; কিন্তু স্রোত বেশি হয়, তাহলেও পবিত্রতা অর্জন জায়েয হবে। যেমন- কুকুর বা বিড়ালের মৃতদেহ পড়লে ।

গ. যদি পানির স্রোত কম থাকে এবং নাজাসাত অধিকাংশ পানির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তবে তা দিয়ে পবিত্রতা অর্জন জায়েয হবে না।

আরও পড়ুন : গোসল অর্থ কি?কত প্রকার।গোসলের ফরজ কয়টি।গোসল ফরজ হওয়ার কারণ

ٱلْمَاءُ ٱلدَّائِمُ-এর পরিচয় :

ক. আভিধানিক অর্থ : ٱلدَّائِمُ শব্দের অর্থ- দৃঢ় স্থির, স্থায়ী, অবিচল, আবদ্ধ ইত্যাদি। সুতরাং ٱلْمَاءُ ٱلدَّائِمُ এর আভিধানিক অর্থ- স্থির পানি, বদ্ধ পানি, আবদ্ধ পানি ইত্যাদি ।

খ. পারিভাষিক সংজ্ঞা : শরীয়তের পরিভাষায় ٱلْمَاءُ ٱلدَّائِمُ(বদ্ধ বা স্থির পানি) ঐ পানিকে বলা হয়, যা এক স্থানে আটকে থাকে, কোনো দিকে যেতে পারে না। ইসলামী আইনশাস্ত্রবিদদের মতে, এমন আবদ্ধ ও অপ্রবাহিত পানিকে ٱلْمَاءُ ٱلدَّائِمُ বলা হয়, যার আধার বা স্থানটির আয়তন ১০ × ১০ গজ বা ১০০ বর্গগজের কম।

ٱلْمَاءُ ٱلدَّائِمُ-এর হুকুম: ٱلْمَاءُ ٱلدَّائِمُ তথা বদ্ধ পানির হুকুম হচ্ছে, এতে কম বেশি নাপাকি পড়লেই তা নাপাক হয়ে যায়। এ কারণে রাসূলুল্লাহ (স) বদ্ধ পানিতে প্রস্রার ও জানাবাতের গোসল করতে নিষেধ করে বলেন- لَا يَبُولُنَّ أَحَدُكُمْ فِى الْمَاءِ الدَّائِمِ وَلَا يَغْتَسِلُنَ فِيهِ مِنَ الْجَنَابَةِ.

ٱلْمَاءُ ٱلْمُسْتَعْمَلُ এর পরিচয় :

ক. আভিধানিক অর্থ : مُسْتَعْمَلُ শব্দটি বাবে اِسْتِفْعَال থেকে اِسْمُ مَفْعُولٍ -এর সীগাহ। এর অর্থ- ব্যবহৃত । অতএব ٱلْمَاءُ ٱلْمُسْتَعْمَلُ অর্থ- ব্যবহৃত পানি।

খ. পারিভাষিক সংজ্ঞা : শরীয়তের পরিভাষায় ٱلْمَاءُ ٱلْمُسْتَعْمَلُ বলা হয়-
هُوَ مَاءٌ اسْتُعْمِلَ فِي إِزَالَةِ ٱلْحَدَثِ أَوِ اسْتُعْمِلَ فِي ٱلْبَدَنِ عَلَى وَجْهِ ٱلْقُرْبَةِ. অর্থাৎ, যে পানি নাপাকি দূর করার কাজে অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য শরীরে ব্যবহার করা হয়েছে, তাকে ٱلْمَاءُ ٱلْمُسْتَعْمَلُ বলে।

ٱلْمَاءُ ٱلْمُسْتَعْمَلُ -এর হুকুম : ইসলামী শরীয়তেٱلْمَاءُ ٱلْمُسْتَعْمَلُ তথা ব্যবহৃত পানির হুকুম নিম্নরূপ-

ক. ইমাম মুহাম্মদ (র) বলেন, এর দ্বারা অযু ও গোসল তথা তাহারাত অর্জন জায়েয নেই। কারণ এটা নিজে পবিত্র; কিন্তু অন্যকে পবিত্র করার ক্ষমতা রাখে না।

খ. ইমাম আবু ইউসুফ (র) বলেন, এটা নাজাসাতে খফীফা (হালকা অপবিত্র)।

গ. ইমাম আবু হানীফা (র) বলেন, এটা নাজাসাতে গলীযার অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. ইমাম মালেক ও শাফেয়ী (র)-এর মতে, এ পানি নিজে পবিত্র এবং অন্যকেও পবিত্রকারী।

উল্লেখ্য, এ মাসয়ালায় ইমাম মুহাম্মদ (র)-এর মতের ওপরই ফতোয়া ।

আরও পড়ুন : তাহারাত অর্থ কি? কাকে বলে। যে পানি তাহারাত অর্জন বৈধ, অবৈধ

ٱلْمَاءُ ٱلْمَشْكُوكُ-এর পরিচয় :

ক. আভিধানিক অর্থ : مَشْكُوكُ শব্দটি اِسْمُ مَفْعُولٍ -এর সীগাহ। এর অর্থ হচ্ছে, যে বিষয়ে মনে সন্দেহ বা দ্বিধা থাকে ।

খ. পারিভাষিক সংজ্ঞা : ٱلْمَاءُ ٱلْمَشْكُوكُ বলা হয় সেই পানিকে, যে পানির পবিত্রতা অপবিত্রতা সম্পর্কে মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। যেমন- গাধা ও খচ্চরের উচ্ছিষ্ট পানি ।

ٱلْمَاءُ ٱلْمَشْكُوكُ-এর হুকুম : এর হুকুম হলো-

ক. সন্দেহযুক্ত হওয়ার কারণে এ পানি দ্বারা তাহারাত অর্জন জায়েয নেই ।

খ. তবে অন্য কোনো পবিত্র পানি না পাওয়া গেলে এর দ্বারা অযু করে তারপর তায়াম্মুম করতে হবে।

গ. প্রথমে তায়াম্মুম ও পরে অযু করবে।

পরিশেষে : অযু গোসল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হেতু পানির প্রকারভেদ ও পানি সম্পর্কে শরীয়তের বিস্তারিত বিধান জানা আমাদের অবশ্য কর্তব্য।

আরও পড়ুন : নাজাসাত অর্থ কি?নাজাসাত কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী বিস্তারিত

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment