ফিকহ শাস্ত্রের উৎস কয়টি? ফিকহ এর আলোচ্য বিষয় ও উদ্দেশ্য কি

ফিকহ ইসলামী শরীয়তের মূল উৎস কুরআন ও সুন্নাহর সারনির্যাস। ইসলামী জীবনব্যবস্থায় প্রতিটি মুসলিম জীবনের বাঁকে বাঁকে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে ইলমুল ফিকহের মুখাপেক্ষী ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে ইলমুল ফিকহের গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআন ও সুন্নাহ হলো ইলমুল ফিকহের মূল উৎস। এ দুটি ছাড়াও আরো কিছু উৎস রয়েছে। নিম্নে প্রশ্নালোকে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

ফিকহ শাস্ত্রের উৎস কয়টি ?

ইলমুল ফিকহের উৎসসমূহ : ইলমুল ফিকহের বুনিয়াদ থেকে আরম্ভ করে এর সমস্ত যুগ পর্যালোচনা করলে ইলমুল ফিকহের মোট বারোটি উৎস চিহ্নিত হয়। যেমন-

  1. ٱلْقُرْآنُ ٱلْكَرِيمُ তথা সম্মানিত কুরআন।
  2. ٱلْحَدِيثُ ٱلنَّبَوِيُّ তথা মহানবী (স)-এর হাদীস।
  3. ٱلْإِجْمَاعُ তথা ঐকমত্য।
  4. ٱلْقِيَاسُ তথা সাদৃশ্যের ভিত্তিতে যুক্তি প্রয়োগের বিধান।
  5. ٱلِٱسْتِحْسَانُ তথা জনকল্যাণ বিবেচনা।
  6. ٱلِٱسْتِدْلَالُ তথা দলীলের আশ্রয় গ্রহণ।
  7. ٱلِٱسْتِصْلَاحُ তথা সংশোধন কামনা।
  8. ٱلرَّأْيُ তথা সর্বজন স্বীকৃত ব্যক্তিদের মত ।
  9. اَلتَّعَامُل তথা ব্যবহারিক প্রচলন ।
  10. পূর্ববর্তী শরীয়ত।
  11. দেশীয় আইন।
  12. ওরফ, রসম ও রেওয়াজ।

আরো পড়ুন : ফিকহ শব্দের অর্থ কি?কাকে বলে। গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

ফিকহ এর আলোচ্য বিষয় :

ফিকহ এর আলোচ্য বিষয় হলো, কুরআন সুন্নাহে বিদ্যমান দলিলের ভিত্তিতে বান্দার কার্যাবলি আলোচনা করা। অথবা জ্ঞানবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের কার্যক্রমই ফিকহ -এর আলোচ্য বিষয় । জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত মানবজীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আধ্যাত্মিক ইত্যাদি সর্বস্তরের সকল কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ইসলামি বিধানসমূহ আলোচনা এবং এসব বিধানের দলিল প্রমাণ ও যুক্তিনিচয় উপস্থাপন করাই ফিকহশাস্ত্রের আলোচ্য বিষয়। এক কথায়, মানবজীবনের সকল কর্মকাণ্ডই ফিকহ এর আলোচ্য বিষয় ।

কারো কারো মতে এর আলোচ্য বিষয় হচ্ছে শরীয়া প্রদত্ত বিধিবিধান মতে বান্দাদের কার্যাবলি। বান্দার এ কার্যাবলি হচ্ছে-

ক. ٱلْعِبَادَةُ (ইবাদত) : যা আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখে এবং জীবনের বিস্তৃত অঙ্গনে বিশেষ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতি অবলম্বনের নির্দেশ দেয় ।

খ. ٱلْمُعَامَلَةُ (পারস্পরিক লেনদেন) : এটা হলো সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিধিবিধান। যাতে রয়েছে পারস্পরিক সহযোগিতা ও যৌথভাবে কাজ করার রীতিনীতি। যেমন- ক্রয়বিক্রয়, ঋণ, ভাড়া, আমানত ইত্যাদি।

গ. ٱلْمَنَاكِحَاتُ (বিবাহ সম্পর্কিত) : মানবের বংশ রক্ষা সংক্রান্ত বিধিবিধান। যার মধ্যে রয়েছে বিবাহ, ইদ্দত, অভিভাবকত্ব, অসিয়ত, উত্তরাধিকার ইত্যাদি ।

ঘ. ٱلْعُقُوبَاتُ (দণ্ডবিধি) : অপরাধ যথা হত্যা, চুরি, ব্যভিচার, অপবাদ ইত্যাদি এবং তার শাস্তি যথা মৃত্যুদণ্ড, শোণিতপণ ইত্যাদি ।

আরো পড়ুন : ফিকহ শাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

ঙ. ٱلْمُخَاصَمَةُ (মুখাসামাত) : এর মধ্যে রয়েছে আদালতি বিষয়সমূহ। যেমন অভিযোগবিধি, বিচারবিধি, প্রমাণ প্রয়োগবিধি ইত্যাদি ।

চ. ٱلْحُكُومَةُ وَٱلْخِلَافَةُ (হুকুমত ও খেলাফত) : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, যুদ্ধ, শান্তি ও সন্ধি, মন্ত্রিত্ব, কর আরোপ ও আদায় ইত্যাদির যেসব বিধান ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রচলিত ছিল ।

উল্লেখ্য, ইলমুল ফিকহের এ আলোচ্য বিষয়সমষ্টি হঠাৎ একসময় অস্তিত্ব লাভ করেনি; বরং অবস্থা ও চাহিদার প্রেক্ষিতে এবং বিবর্তনের বহু পর্যায় অতিক্রম করে বর্তমান অবস্থানে উপনীত হয়েছে।

ইলমুল ফিকহ এর উদ্দেশ্য :

ইলমুল ফিকহ এর উদ্দেশ্য নিম্নরূপ–

১. বিশিষ্ট ফকীহগণের মতে- শরীয়তের বিধান বাস্তবায়নের মাধ্যমে দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তি লাভ ।

২. কারো কারো মতে শরীয়তের সমস্ত বিধান মেনে ইহ ও পরকালীন জীবনের অফুরন্ত কল্যাণ লাভ করা।\

আরো পড়ুন : উসুলুল ফিকহ কাকে বলে? উসূলে ফিকহের আলোচ্য বিষয় ও উদ্দেশ্য

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment