উপস্থাপনা:
ইসলাম’ মানে আত্মসমর্পণ করা, মেনে চলা, আনুগত্য করা, শান্তি ও নিরাপত্তা ইত্যাদি। অন্যভাবে বলা যায়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) যে শাশ্বত জীবনবিধান নিয়ে এসেছেন তাই ইসলাম। ইসলামের আগমন হয়েছে মানবকল্যাণে এবং মানবতার মুক্তি দিতে। তাই শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবকল্যাণে ইসলামের গুরুত্ব অপরিসীম।
পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা:
ইসলাম একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। মানবজীবনের এমন কোনো দিক ও বিভাগ নেই, যেখানে ইসলামের বিজ্ঞানসম্মত উপস্থিতি নেই। তাই কুরআনে বলা হয়েছে- “আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা ইসলাম।” এক কথায়- মানুষের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় তথা সকল দিকে ইসলাম এক অনুপম আদর্শ উপস্থাপন করেছে।
আরও পড়ুন : ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান -বাংলা প্রবন্ধ রচনা
শান্তির ধর্ম ইসলাম :
পৃথিবীতে যত ধর্ম রয়েছে সমস্ত ধর্মের থেকে শ্রেষ্ট হলো ইসলাম। আর এই ধর্মই একমাত্র শান্তির ধর্ম। ইসলাম অনুযায়ী পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র যাই কিছু পরিচালনা করলে সেখানে শান্তির পরশ নেমে আসবে। কারণ এই ইসলামের ছায়াতলে রয়েছে একমাত্র আল্লাহর রহমত। আল্লাহ কুরআনে বলেন “নিশ্চই ইসলাম আল্লাহ তাআলার কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম। আর এখানেই রয়েছে পরিপূর্ণ শান্তি।
মানবকল্যাণে ইসলাম:
পৃথিবীতে মানবকল্যাণে ইসলাম যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে এসে মযলুম মানবতা পেয়েছে মুক্তির দিশা। অত্যাচারিত, অবহেলিত, বিপর্যস্ত মানুষ পেয়েছে শান্তির ঠিকানা। মানবকল্যাণে ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য।
অধিকারহারা মানুষের কল্যাণে ইসলাম :
ইসলামই মানুষকে উত্তমরূপে বাঁচার অধিকার দিয়েছে। মহানবী (স) যখন এ পৃথিবীতে আগমন করেন, তখন সাধারণ মানুষ ছিল নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, অধিকারহারা। এমনি এক সংকটময় মুহূর্তে মহানবী (স) মানুষের মাঝে নিয়ে আসলেন সাম্যের বাণী। মানুষের দুঃখ লাঘবে এবং বঞ্চিতের অধিকার সংরক্ষণে তিনি উপস্থাপন করলেন এক ন্যায়নীতির আদর্শ ইসলাম।
আরও পড়ুন : রচনা : ইসলামে মানবাধিকার / ইসলাম ও মানবাধিকার
বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইসলাম:
ইসলামই পৃথিবীতে সমানাধিকারের ভিত্তিতে বিশ্বভ্রাতৃত্বের জন্ম দেয়। এ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, মুসলমান পরস্পর ভাই ভাই। ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, উঁচু-নীচুর ভেদাভেদ ধূলিসাৎ করে ইসলামই সর্বপ্রথম মানুষের মাঝে মানবতাবোধের ধারণা জন্ম দেয়।
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম:
ইসলাম নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা দান করে তার প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রাক ইসলাম যুগে যেখানে নারী পণ্যের মতো বিক্রি হতো, যেখানে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত প্রোথিত করা হতো, সে সমাজে রাসূল (স)-ই সর্বপ্রথম নারীকে উপযুক্ত সামাজিক মর্যাদা প্রদান করে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন।
ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ইসলাম:
ইসলাম ন্যায়ের ধর্ম। পরিপূর্ণ ইনসাফের ভিত্তিতে ইসলাম সমাজে কল্যাণকর শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তাই কুরআনের ঘোষণা, “তোমরা যখন নিজেদের মধ্যে বিচার অথবা আপসরফা কর তখন ন্যায়ের সাথেই কর।”
শোষণমুক্ত অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় :
মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক দিক হলো ইসলামী অর্থনীতি। এ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ইসলামই ইনসাফভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের মাঝে সহাবস্থানের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন : রচনা : ইসলাম ও মানব কল্যাণ/মানবতার মুক্তিতে ইসলাম/ইসলাম মানবতার ধর্ম
সর্বজনীন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম :
ইসলাম বর্ণ, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে সকলের মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি দিয়েছে। রাসূলে আকরাম (স)-এর বিদায় হজ্জের ভাষণই তার সুস্পষ্ট দলীল। অথচ আজ বিশ্বের দিকে দিকে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। যেমন- বসনিয়ায় নির্বিচারে গণহত্যা, কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামীদের ওপর নির্যাতন, আলজেরিয়ায় ইসলামের পক্ষে জনতার বিপুল রায় সত্ত্বেও ইসলামী শাসনব্যবস্থার স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। মূলত ইসলামী আইন না থাকার কারণেই বর্তমান বিশ্বে এভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
প্রতিবেশীর অধিকার :
ইসলামে এক প্রতিবেশী অন্য প্রতিবেশীর আমানতস্বরূপ। প্রতিবেশীর ইজ্জত-আবরু, ধনসম্পদ রক্ষা করা, তার বিপদাপদে এগিয়ে আসা, অসুস্থ হলে সেবা শুশ্রূষা করা, তার উপস্থিত অনুপস্থিতিতে কল্যাণ কামনা করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এর মাধ্যমেই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপিত হতে পারে।
ছোটদের প্রতি স্নেহ ও বড়দের প্রতি সম্মান:
ছোটদের প্রতি স্নেহশীল হওয়া ও বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে ইসলাম অবশ্য কর্তব্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। মহানবী (স) এ সম্পর্কে বলেন, যে ব্যক্তি বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ করে না সে আমার উম্মত নয়।
ইসলাম মানেই শান্তি:
‘ইসলাম’ শব্দের আভিধানিক অর্থ শাস্তি। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) যখন পৃথিবীর বুকে ইসলাম প্রচার শুরু করলেন, তখন মানবজাতি যেন এক মহাসংকটের কালো থাবা থেকে রক্ষা পেল। বিশ্বমাঝে নেমে এল এক অনুপম শান্তির ধারা। সমাজ থেকে সকল অশান্তি, অবজ্ঞা, ঘৃণা, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, অন্যায় ও অসুন্দরের হলো অবসান। বিশ্ব উপহার পেলো এক শান্তিময় সমাজ।
আরও পড়ুন : প্রবন্ধ রচনা : ইসলামী সাহিত্য
মানবমুক্তির একমাত্র পথ:
দুনিয়ার বুকে মিথ্যা ও সত্যের, পাপ ও পুণ্যের পথকে সুচারুরূপে তুলে ধরার প্রেক্ষিতে আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে বারবার দুর্যোগ নেমে এসেছে। বিবদমান দুনিয়া অসহনীয় যন্ত্রণায় বারবার উঠেছে কুঁকিয়ে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাই তিনি যুগের এক ক্রান্তিলগ্নে পৃথিবীর বুকে একজন অসামান্য ব্যক্তিকে প্রেরণ করলেন। বিশ্বের সামগ্রিক সমস্যাকে বিদূরিত করে কায়েম করলেন ন্যায়ের ধর্ম ইসলাম। অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন তথা জাহেলিয়াতের শৃঙ্খল হতে মানবতা পায় চির মুক্তি। মহান আল্লাহ এরই সাথে ঘোষণা করে দিলেন, “আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য জীবনব্যবস্থা হলো ইসলাম।” প্রকৃতপক্ষে ইসলামই মানবমুক্তির একমাত্র পথ।
উপসংহার:
ইসলাম পৃথিবীর বুকে উপহার দিয়েছে কল্যাণ ও শান্তি। যে সম্প্রদায় ইসলামের পরিপূর্ণ বিধান মেনে চলবে তাদের জীবনে নেমে আসবে শান্তির অমিয়ধারা, প্রতিষ্ঠিত হবে মানবকল্যাণ।