হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মাধ্যমে আমাদেরকে যেসব জিনিসের প্রতি ঈমান পোষণের শিক্ষা দেয়া হয়েছে, আসমানী কিতাব সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত। মানুষের হেদায়াতের জন্যই মহান আল্লাহ নবী রাসূলগণের প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন।
আসমানী কিতাব কি ?
আসমানী কিতাব হলো এমন সব কিতাব যেগুলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী রাসূলগণের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে।
আসমানী কিতাব কাকে বলে ?
মানবজাতিকে সৎপথ প্রদর্শনের জন্য আল্লাহ তায়ালা রাসুলগণের উপর যে সকল কিতাব নাজিল করেছেন, সেগুলোকে আসমানি কিতাব বলা হয়।
আরও জানতে দেখুন : আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত
আসমানী কিতাব কয়টি ও কি কি ?
সর্বমোট আসমানী কিতাব হলো ১০৪ খানা। এর মধ্যে প্রধান আসমানী কিতাব হলো ৪ খানা। যথা-
প্রধান আসমানী কিতাব :
১। তাওরাত : এটি অবতীর্ণ হয়েছিল মুসা (আ)-এর প্রতি ।
২। যাবুর : এটি অবতীর্ণ হয়েছিল হযরত দাউদ (আ)-এর প্রতি ।
৩। ইঞ্জিল : এটি অবতীর্ণ হয়েছিল হযরত ঈসা (আ)-এর প্রতি ।
৪। কুরআন : এটি শেষ নবী মুহাম্মদ (স)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে।
এছাড়া অন্যান্য যে ১০০ খানা আসমানী কিতাব রয়েছে সে গুলোকে সহীফা (ছোট ছোট আসমানী কিতাব)বলা হয়। যা বিভিন্ন নবীর ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল, যেগুলোর নাম আমাদের জানা নেই । কারণ এগুলোর নাম কুরআন হাদিসে কোথায় উল্লেখ করা নেই।
“কুরআন বিকৃতি থেকে মুক্ত” -কথাটির ব্যাখ্যা :
হযরত আদম, নূহ ও ইবরাহীম (আ)-সহ বিভিন্ন নবীর ওপর নাযিলকৃত আসমানী কিতাবসমূহ আজকের পৃথিবীতে না থাকলেও তাওরাত, ইঞ্জিল ও যাবুরের অস্তিত্ব বিদ্যমান; কিন্তু এসব কিতাবের মাঝে এযাবৎ ইহুদি খ্রিস্টানদের হাতে বহু বিকৃতি ঘটেছে; কিন্তু কুরআন আল্লাহর এমন কিতাব যার পর আর কোনো কিতাব নাযিল হবে না।
যা আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ওপর নাযিল করা হয়েছে। যার পরে আর কোনো নবী নেই। তিনিই শেষ নবী। কুরআন সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ। যতদিন পর্যন্ত পৃথিবী থাকবে, ততদিন পর্যন্ত পবিত্র কুরআন অবিকৃত অবস্থায় টিকে থাকবে।
আরও জানতে দেখুন : আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাসের অর্থ,উপকারিতা ও বিভিন্ন দিক
তার একটি হরকত কিংবা সাকিনও পরিবর্তন হবে না যা আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেছেন। আর আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনের হেফাযতের দায়িত্ব নিজেই নিয়েছেন। যেমন মহান আল্লাহর বাণী-
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
অর্থাৎ, আমিই পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছি আর আমি নিজেই তা সংরক্ষণ করবো (সূরা হিজর : আয়াত- ৯)। আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন- لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللهِ অর্থাৎ, আল্লাহর বাণীতে কোনো রকম পরিবর্তন, পরিবর্ধন আসে না। (সূরা ইউনুস : আয়াত- ৬৪)
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন-
لَا يَأْتِيهِ ٱلْبَاطِلُ مِنۢ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلَا مِنْ خَلْفِهِۦ تَنزِيلٌ مِّنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ
অর্থাৎ, আর এটা সম্মানিত কিতাব যার সামনের দিক থেকে কিংবা পিছনের দিক থেকে বাতিল প্রবেশ করতে পারে না। প্রশংসিত প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ (সূরা ফুসসিলাত : আয়াত – ৪২)। কুরআন সম্পর্কে আল্লাহ প্রদত্ত গুরুত্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাই কুরআন তার প্রতিপক্ষ কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার পরও তারা প্রতিবার পরাভূত হয়েছে কুরআনের কাছে।
পরিশেষে : পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের আসল লিপি পৃথিবী হতে লুপ্ত হয়ে গেছে। রয়েছে কেবল সেগুলোর বিকৃত রূপ। আর কুরআন এমন কিতাব যা শতভাগ অক্ষুণ্ণ রয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় থাকবে ।