কোন বাক্যের تَرْكِيب করতে হলে বাক্যে ব্যবহৃত শব্দাবলীর পরিচয় জানার পাশাপাশি বাক্যটি কোন ধরনের বাক্য তা জানা আবশ্যক । এ কারণে বলা যায় যে, বাক্যের ধারণা ব্যতিরেকে تَرْكِيب করা সম্ভব নয়। তাই নিম্নে জুমলা (جُمْلَة) বা বাক্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করা হলো –
জুমলা অর্থ কি ও কাকে বলে ?
আভিধানিক অর্থ : জুমলা (جُمْلَة) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- বাক্য, সমষ্টি, সমুদয়, সকল ইত্যাদি।
পারিভাষিক সংজ্ঞা : দুই বা ততোধিক শব্দ মিলিত হয়ে যদি বক্তার মনের ভাব প্রকাশ পায় তাকে জুমলা (جُمْلَة) বা বাক্য বলে। যেমন – زَيْدٌ عَالِمٌ (যায়েদ জ্ঞানী) ।
অথবা- যে শব্দ সমষ্টিতে مُسْنَد إِلَيْهِ বা উদ্দেশ্য এবং مُسْنَد বা বিধেয় পাওয়া যায় তাকে জুমলা বলে ।
আরও পড়ুন : লফজ (لفظ) অর্থ কি ? কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি। উদাহরন সহ
জুমলার (جُمْلَة) প্রকারভেদ :
বিভিন্ন দিক বিচারে বাক্যকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয় । যথা- * বিষয়বস্তুর দিক থেকে, * বাহ্যিক গঠনের দিক থেকে।
প্রথমত : বিষয়বস্তুর দিক থেকে জুমলা এর প্রকারভেদ :
বিষয়বস্তুর দিক থেকে জুমলাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয় । যথা-
১. الجُمْلَةُ الخَبَرِيَّةُ তথা বর্ণনামূলক বাক্য।
২. الجُمْلَةُ الإِنْشَائِيَّةُ তথা সৃষ্টিশীল বাক্য।
১। الجُمْلَةُ الخَبَرِيَّةُ(জুমলায়ে খবরিয়া ) : যে জুমলা কোন ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে কোন সংবাদ বা তথ্য বর্ণনা দেয় তাকে الجُمْلَةُ الخَبَرِيَّةُ(জুমলায়ে খবরিয়া) বলে। যেমন – زَيْدٌ فَاضِلٌ (যায়েদ সম্মানিত)। প্রদত্ত সংবাদটি সত্য কিংবা মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা রাখে ।
الجُمْلَةُ الخَبَرِيَّةُ(জুমলায়ে খবরিয়া ) আবার ২ প্রকার। যথা –
ক। الجُمْلَةُ الاسْمِيَّةُ তথা নাম বাচক বাক্য।
খ। الجُمْلَةُ الفِعْلِيَّةُ তথা ক্রিয়া বাচক বাক্য।
আরও পড়ুন : ইসমে মুরাব(اِسْمُ ٱلْمُعْرَب)কাকে বলে? কত প্রকার ও হকুম
ক। الجُمْلَةُ الاسْمِيَّةُ তথা নাম বাচক বাক্য : যে বাক্যের প্রথম অংশ ইসম হয়, তাকে الجُمْلَةُ الاسْمِيَّةُ বলে। যেমন – مُحَمَّدٌ رَّسُولُ (মুহাম্মদ স. রাসূল) । এ বাক্যে مُحَمَّدٌ শব্দটি ইসম। যা مُسْنَد إِلَيْهِ হয়েছে। আর رَّسُولٌ শব্দটি খবর, যা مُسْنَد হয়েছে।
খ। الجُمْلَةُ الفِعْلِيَّةُ তথা ক্রিয়া বাচক বাক্য : যে বাক্যের প্রথম অংশ ফেল হয় তাকে الجُمْلَةُ الفِعْلِيَّةُ বলে। যেমন – سَمِعَ حَامِدٌ (হামেদ শ্রবণ করল) । এ বাক্যে سَمِعَ শব্দটি ফেল, যা مُسْنَد হয়েছে। আর حَامِدٌ শব্দটি ইসম, যা مُسْنَد إِلَيْهِ হয়েছে।
২। الجُمْلَةُ الإِنْشَائِيَّةُ (জুমলায়ে ইনশাইয়া): যে জুমলা দ্বারা কোন কিছুর বর্ণনা দেয়া হয় না বরং আদেশ, নিষেধ, প্রার্থনা, উপদেশ, অনুরোধ, প্রশ্ন, শপথ, আহ্বান, আশা, আকাঙ্ক্ষা, লেনদেনের উক্তি বিষয় প্রকাশ করা হয় তাকে الجُمْلَةُ الإِنْشَائِيَّةُ (জুমলায়ে ইনশাইয়া) বলে । যেমন- أَيْنَ عَبْدُ اللَّهِ (আবদুল্লাহ কোথায়?), اذْهَبْ
(তুমি যাও)।
الجُمْلَةُ الإِنْشَائِيَّةُ (জুমলায়ে ইনশাইয়া)মোট ১৩ প্রকার। যথা –
- الأَمْرُ (আদেশ): আদেশ বাক্য। যেমন – اُنْصُرْ (সাহায্য কর)।
- النَّهْيُ (নিষেধ) : নিষেধসূচক বাক্য। যেমন – لاَ تَضْرِبْ (প্রহার করো না)।
- الاِسْتِفْهَامُ (প্রশ্ন) : প্রশ্নবোধক বাক্য। যেমন – هَلْ نَصَرَ سَعِيدٌ (সাইদ কি সাহায্য করেছে?)।
- التَّمَنِّيُ (আকাঙ্খা) : আকাঙ্খাবোধক বাক্য। যেমন – لَيْتَ رَاشِدًا حَاضِرًا (যদি রাশেদ উপস্থিত হতো!)।
- التَّرْجِيُ (আশা) : আশাবোধক বাক্য। যেমন – لَعَلَّهُ رَاشِدًا غَائِبًا (সম্ভবত রাশেদ অনুপস্থিত)।
- العُقُودُ (চুক্তি) : চুক্তিবোধক বাক্য। যেমন -بِعْتُ وَاشْتَرَيْتُ (আমি ক্রয় বিক্রয় করলাম )।
- النِّدَاءُ (আহ্বান) : আহ্বানসূচক বাক্য। যেমন – يَا اللهُ (হে আল্লাহ)।
- العَرْضُ (ইচ্ছা) : অনুরোধসূচক বাক্য। যেমন -أَلَا تَنْزِلْ بِنا فَتُصِيبَ خَيْرًا (তুমি আমাদের নিকট আসছো না কেন, তবে তোমার কল্যাণ হতো)।
- القَسَمُ (প্রতিজ্ঞা) : শপথজ্ঞাপক বাক্য। যেমন – وَاللَّهِ لَأَنْصُرَنَّ رَاشِدًا (আল্লাহর কসম , আমি রাশেদকে সাহায্য করবো। )।
- التَّعَجُّبُ (আশ্চর্য) : আশ্চর্যবোধক বাক্য। যেমন – مَا أَحْسَنَهُ وَأَحْسَنَ بِهِ (কত সুন্দর! কি চমৎকার!)।
- الدُّعَاءُ (প্রার্থনা ) মঙ্গল বা অমঙ্গল কামনাসূচক বাক্য। যেমন -جَزَاكَ اللهُ ( আল্লাহ তোমাকে প্রতিদান দিন )।
- المَدْحُ(প্রশংসা): প্রশংসাসূচক বাক্য। যেমন – نِعْمَةُ الرَّجُلِ أَنْسٌ (আনাস কত ভালো লোক !)।
- الذَّمُّ (নিন্দা) : নিন্দাজ্ঞাপক বাক্য। যেমন – بِئْسَ الرَّجُلُ زَيْدٌ ( যায়েদ কত খারাপ লোপক!)।
আরও পড়ুন : মুরাক্কাব(مُرَكَّبٌ):অর্থ,সংজ্ঞা,প্রকারভেদ ও উদাহরণ সহ
দ্বিতীয়তঃ বাহ্যিক গঠনের দিক থেকে جُمْلَةٌ দুই প্রকার। যথা-
ক.اَلْجُمْلَةُ الْأَصْلِيَّةُ
খ. الجُمْلَةُ الوَصْفِيَّةُ
ক. اَلْجُمْلَةُ الْأَصْلِيَّةُ : যে বাক্য পরিপূর্ন মূল জুমলা রূপে প্রকাশ পায় তাকে اَلْجُمْلَةُ الْأَصْلِيَّةُ বলে।
اَلْجُمْلَةُ الْأَصْلِيَّةُ এটি আবার ৪ প্রকার — যথা –
- اَلْجُمْلَةُ الِاسْمِيَّةُ
- اَلْجُمْلَةُ الْفِعْلِيَّةُ
- اَلْجُمْلَةُ الظَّرْفِيَّةُ
- اَلْجُمْلَةُ الشَّرْطِيَّةُ
১। اَلْجُمْلَةُ الِاسْمِيَّةُ — যে جُمْلَةٌ বা বাক্যের শুরু اِسْمٌ দ্বারা হয়, তাকে جُمْلَةٌ اِسْمِيَّةٌ বলে। যেমন – مُحَمَّدٌ رَّسُولُ উদাহরণে – জুমলা এর প্রথম অংশ مُحَمَّدٌ পদটি اِسْمٌ . সুতরাং জুমলাটি جُمْلَةٌ اِسْمِيَّةٌ .
২। اَلْجُمْلَةُ الْفِعْلِيَّةُ — যে جُمْلَةٌ বা বাক্যের শুরু فِعْلٌ দ্বারা হয়, তাকে جُمْلَةٌ فِعْلِيَّةٌ বলে। যেমন – نَصَرَ خَالِدٌ عُمَرَ উদাহরণে – বাক্যটির প্রথম পদ نَصَرَ এটি فِعْلٌ مَاضٍي এর শব্দ। অতএব এ বাক্যটি جُمْلَةٌ فِعْلِيَّةٌ .
৩। اَلْجُمْلَةُ الظَّرْفِيَّةُ — যে جُمْلَةٌ বা বাক্যের শুরু ظَرْفٌ দ্বারা হয়, তাকে جُمْلَةٌ ظَرْفِيَّةٌ বলে। যেমন -عِنْدَهُ كِتَابٌ (তার নিকট কি বই আছে?) উদাহরণে – বাক্যের প্রথম অংশ হচ্ছে عِنْدَ পদ। যা ظَرْفٌ সুতরাং জুমলাটি جُمْلَةٌ ظَرْفِيَّةٌ.
৪। اَلْجُمْلَةُ الشَّرْطِيَّةُ — যে جُمْلَةٌ বা বাক্যের শুরু شَرْطٌ দ্বারা আরম্ভ হয় তাকে جُمْلَةٌ شَرْطِيَّةٌ বলে। যেমন -إِنْ تَدْرُسْ تَنْجَحْ ( যদি পড় তবে কৃতকার্য হবে ) উদাহরণে – বাক্যটির আরম্ভ إِنْ تَدْرُسْ – شَرْطٌ দ্বারা। অতএব জুমলাটি جُمْلَةٌ شَرْطِيَّةٌ .
খ. الجُمْلَةُ الوَصْفِيَّةُ : যে বাক্য পরিপূর্ণ জুমলা রূপে প্রকাশ পায় না বরং মূল জুমলা এর কোন অংশের গুনাগুন প্রকাশ করে তাকে الجُمْلَةُ الوَصْفِيَّةُ বলে।
الجُمْلَةُ الوَصْفِيَّةُ এটি আবার ১০ প্রকার। যথা –
- اَلْجُمْلَةُ الْمُبَيِّنَةُ (বর্ণনামূলক বাক্য)।
- اَلْجُمْلَةُ الْمُؤَكَّدَةُ (দৃঢ়তাসূচক বাক্য)।
- اَلْجُمْلَةُ الْمُعَلِّلَةُ (কারণসূচক বাক্য)।
- الجُمْلَةُ المُعْتَرَضَةُ (পূর্বাপর সম্পর্কহীন বাক্য)।
- اَلْجُمْلَةُ الْمُسْتَأْنَفَةُ (নতুন বাক্য)।
- اَلْجُمْلَةُ الْاِبْتِدَائِيَّةُ (প্রস্তাবনাসূচক বাক্য)।
- اَلْجُمْلَةُ النَّتِيجِيَّةُ (ফলাফলসূচক বাক্য)।
- الجُمْلَةُ الحَالِيَّةُ (অবস্থানসূচক বাক্য)।
- اَلْجُمْلَةُ الْمَعْطُوفَةُ (মিলিত বাক্য)।
- اَلْجُمْلَةُ الْمَقْطُوعَةُ (সম্বন্ধহীন বাক্য)।
নিচে এ বাক্যগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো—
১। اَلْجُمْلَةُ الْمُبَيِّنَةُ : যে جُمْلَةٌ পূর্বের অষ্পষ্ট কথাকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দেয়, তাকে جُمْلَةٌ مُبَيِّنَةٌ বলা হয়।
২। اَلْجُمْلَةُ الْمُؤَكَّدَةُ : যে جُمْلَةٌ তার পূর্বের কথাকে জোর প্রদানের জন্য পুনঃ ব্যক্ত করা হয়, তাকে جُمْلَةٌ مُؤَكَّدَةٌ বলা হয়।
৩। اَلْجُمْلَةُ الْمُعَلِّلَةُ : যে جُمْلَةٌ তার পূর্বের কথার কারণ বর্ণনা করে, তাকে جُمْلَةٌ مُعَلِّلَةٌ বলা হয়।
৪। الجُمْلَةُ المُعْتَرَضَةُ : যে جُمْلَةٌ দুটি কথার মাঝে অবস্থান করেও তার পূর্বাপর বাক্যের সাথে সম্পর্ক রাখে না, তাকে جُمْلَةٌ مُعْتَرِضَةٌ বলা হয়।
৫। اَلْجُمْلَةُ الْمُسْتَأْنَفَةُ : যে جُمْلَةٌ তার পূর্বের জুমলাতে সৃষ্ট প্রশ্নের উত্তর বহন করে, তাকে جُمْلَةٌ مُسْتَأْنَفَةٌ বলে।
৬। اَلْجُمْلَةُ الْاِبْتِدَائِيَّةُ: যে جُمْلَةٌ দ্বারা কথা শুরু করা হয়, তাকে جُمْلَةٌ اِبْتِدَائِيَّةٌ বলে।
৭। اَلْجُمْلَةُ النَّتِيجِيَّةُ : যে جُمْلَةٌ তার পূর্বের কথার نَتِيجَةٌ বা ফলাফল প্রকাশ করে, তাকে جُمْلَةٌ نَتِيجِيَّةٌ বলে।
৮। الجُمْلَةُ الحَالِيَّةُ : যে جُمْلَةٌ ফায়েল বা مَفْعُولٌ এর حَالٍ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, তাকে جُمْلَةٌ حَالِيَّةٌ বলে।
৯। اَلْجُمْلَةُ الْمَعْطُوفَةُ : যে جُمْلَةٌ কে তার পূর্বের কথার ওপর عَطْفٌ করা হয়, তাকে جُمْلَةٌ مَعْطُوفَةٌ বলা হয়। যেমন—
১০। اَلْجُمْلَةُ الْمَقْطُوعَةُ : যে جُمْلَةٌ উদ্দেশ্যপূর্ন বাক্য বর্ণনার শুরুতে লওয়া হয় তাকে جُمْلَةُ مَقْطُوعَةُ বলে ।