হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

ইলমে সরফ: অর্থ, সংজ্ঞা, আলোচ্য বিষয়, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ইলমে সরফ (عِلْمُ الصَّرْفِ) আরবি ব্যাকরণের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই ইলমে সরফ এর মাধ্যমে দুটি বিষয় জানা যায় – একটি হলো শব্দের গঠন এবং অপরটি হলো শব্দের রূপান্তর। কোন শব্দ পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন এই ইলমে সরফের মাধ্যমেই জানা যায়। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –

ইলমে সরফ অর্থ কি ও কাকে বলে ?

আভিধানিক অর্থ : عِلْمٌ শব্দের অর্থ হলো – জানা, জ্ঞান। আর الصَّرْفُ এর অর্থ – রূপান্তর করা , ফেরানো, পরিবর্তন করা ইত্যাদি। সুতরাং যুক্তভাবে এর আভিধানিক অর্থ হলো – রূপান্তর করার জ্ঞান।

পারিভাষিক সংজ্ঞা : আরবি ব্যাকরণের যে বিদ্যা শিক্ষা করলে আরবি ভাষার শব্দ গঠন, শ্রেণীবিন্যাস, রূপান্তর, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায় তাকে ইলমে সরফ বলে।

ইলমুস সরফ কাকে বলে আরবিতে ?

هُوَ عِلْمٌ يَبْحَثُ فِيهِ عَنِ الْأَغْراضِ الذَّاتِيَّةِ لِمُفْرَدَاتِ كَلامِ الْعَرَبِ مِنْ حَيْثُ صُوَرِهَا وَهَيْئَاتِهَا كَالْإِعْلَالِ وَالِادْغَامِ

অর্থাৎ সরফ ঐ শাস্ত্রকে বলে যা দ্বারা শব্দগঠন পরিবর্তনের নিয়ম কানুন জানা যায়।

আরো জানো : ইলমে নাহুর: পরিচয়,সংজ্ঞা,ইতিহাস,নামকরণ ও উদ্দেশো

ইলমে সরফের আলোচ্য বিষয় :

রূপান্তরযোগ্য শব্দ ও পথ সমূহই হলো ইলমে সরফ এর আলোচ্য বিষয়। সুতরাং একথা বুঝা গেল যে, যে সকল শব্দ রূপান্তরযোগ্য নয় সেগুলো ইলমে সরফ এর আলোচ্য বিষয় নয়। যেমন مِنْ শব্দটি। ইহা রূপান্তর যোগ্য নয়। কেননা ইহা
مُؤنَّث- مُذَكَّر- جَمْع – تَثْنِيَة – وَاحِد সর্বদাই একই রূপে থাকে, কখনো পরিবর্তন হয় না।

উল্লেখ্য যে, রূপান্তরযোগ্য শব্দসমূহকে আরবিতে مُتَصَرِّف আর রূপান্তর যোগ্য নয় এমন শব্দাবলীকে আরবিতে غَيْرُ مُتَصَرِّف বলে।

ইলমে সরফের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

লক্ষ্য : ইলমুস সরাফের লক্ষ্য সম্পর্কে কাশফুয যুনূন গ্রন্থাগার বলেন-الاحْتِرَازُ عَنِ الْخَطَأِ مِنْ تِلْكَ الْجِهَاتِ অর্থাৎ ,যোগ্যতা অর্জনের পথে সকল ভুল ত্রুটি থেকে নিজেকে রক্ষা করাই ইলমুস সরফের লক্ষ্য।

উদ্দেশ্য :

১। সরফ শাস্ত্রবিদদের মতে, রূপান্তরযোগ্য আরবি শব্দ সমূহ বিশুদ্ধভাবে গঠন করা নির্ভুলভাবে পড়া ও শুদ্ধভাবে লেখার যোগ্যতা অর্জন করাই হলো ইলমুস সরফের উদ্দেশ্যে।

২। গ্রন্থাগারের ভাষায়, শব্দকে অন্য শব্দ থেকে গঠন করা এবং শব্দ থেকে অন্য শব্দ গঠন করা।

৩। কেউ কেউ বলেন, ইলমে সরফের উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন এক যোগ্যতা অর্জন করা, যা দ্বারা অবস্থানসমূহ তথা শব্দসমূহের সঠিক উচ্চারণ গঠন পরিবর্তন ও রূপান্তরের নিয়ম পদ্ধতি জানা যায়।

আরো জানো : ফেল(فِعْلٌ) এর সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, আলামত ও নামকরণ

ইলমুস সরফ নামকরণ :

الصَّرْفُ (সরফ) শব্দের অর্থ ঘুরা- ফিরা ও বিভিন্নরূপে পরিবর্তন ও রূপান্তরিত হওয়া। আর যেহেতু عِلْمٌ এর মধ্যে আরবি গঠন পদ্ধতি ও বিভিন্নরূপে রূপান্তরের নিয়মাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এজন্য একে ইলমুস সরফ নামে নামকরণ করা হয়।

ইলমুস সরফ-এর প্রয়োজনীয়তা :

কোনো ভাষা ও সাহিত্যে দক্ষতা অর্জন করতে হলে উক্ত ভাষার শব্দভাণ্ডার, শব্দের উৎস ও রূপান্তর পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। আর عِلْمُ الصَّرْفِ হলো- আরবি ভাষার শব্দসমূহের উৎস । সুতরাং, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে عِلْمُ الصَّرْفِ-এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

আরবি ভাষার শব্দ কাঠামো ও তার বিশুদ্ধতা জানার জন্যে عِلْمُ الصَّرْفِ শাস্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। তাই শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই عِلْمُ الصَّرْفِ অধ্যয়ন করতে হবে এবং সরফ শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে হবে। মাসদার থেকে বিভিন্ন শব্দ তৈরি করে শব্দ রূপান্তরের নিয়ম-কানুন জানতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই এ عِلْمُ الصَّرْفِ-এর সাহায্য নিতে হবে ।

আরো জানো : সহীহ, মাহমুজ ও মুতাল কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ

ইলমুস সরফ-এর সংকলন :

كَشَفُ الظُّنُّونِ ও مِفْتَاحُ السَّعَادَةِ গ্রন্থদ্বয়ের প্রণেতা তাঁদের স্ব স্ব গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইলমে সরফ -এর প্রথম সংকলক হলেন আবু ওসমান মাযেনী । এর পূর্বে এ শাস্ত্রটি ইলমে নাহু -এর অন্তর্ভূক্ত ছিল । তিনিই সর্বপ্রথম একে স্বতন্ত্র, স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ শাস্ত্র হিসেবে রূপদান করেন ।

বহু গ্রন্থপ্রণেতা ও ব্যাখ্যাকার আল্লামা হানীফ গাঙ্গুহী তাঁর রচিত قَرَّةُ الْعُيُونِ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, আবুল আসওয়াদ দুয়ালী (র)- এর ছাত্র মুয়ায ইবনে মুসলিম আল ফাররা সর্বপ্রথম ইলমে সরফ -এর সংকলনের সূচনা করেছিলেন । অতঃপর তাঁর শিষ্য ইমাম আবুল হাসানব আলী কাসায়ী এ অপূর্ণ শাস্ত্রেও উন্নতি ঘটিয়েছেন ।

এরপর ইমাম কাসায়ী (র)- এর ছাত্র আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনে যিয়াদ আল ফাররা দায়লামী যথারীতি এ শাস্ত্রটিকে সংকলন করেছেন । এর পূর্বে এটা ইলমে নাহু-এরই একটি শাখা হিসেবে পরিচিত ছিল ।

عِلْمُ الصِّيغَةِ-এর ভাষ্যকার আল্লামা রফী ওসমানী (র) লিখেন, আবু ওসমান মাযেনীর শতাব্দীকাল পূর্বে ইমাম আবু হানীফা নোমান ইবনে সাবিত (র) সরফশাস্ত্র সংকলন করেছিলেন । তিনি উক্ত শাস্ত্রে المَقْصُودُ নামক একটি কিতাবও রচনা করেছিলেন । অতঃপর যুগের পরিক্রমায় ওলামায়ে কেরাম নিজেদের যোগ্যতানুসারে এ শাস্ত্রের উন্নতি সাধনকল্পে বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন ।

শিক্ষাগার

প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে

মাহমুদুল হাসান

শিক্ষাগত যোগ্যতা
গণিতে অনার্স ও মাস্টার্স

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ফাজিল সম্পন্ন

গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা

বিশেষ দক্ষতা

বাংলা সাহিত্য • গণিত • ইসলামিক শিক্ষা

অভিজ্ঞতা

শিক্ষকতা ও ৫+ বছর কন্টেন্ট রাইটিং

আমাদের লক্ষ্য

শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা। ২০২৩ সাল থেকে লাখো শিক্ষার্থী শিক্ষাগার থেকে উপকৃত হচ্ছে।

Leave a Comment