বাংলা ব্যাকরণে বিভক্তি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। যেসব বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বাক্য গঠনের জন্য পদ সৃষ্টি করে সেগুলোই বিভক্তি নামে পরিচিত। বাংলা শব্দগঠনে বিভক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিভক্তি কাকে বলে ?
যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দ বা ধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, তাকে বিভক্তি বলে। যেমন- শিক্ষককে ভক্তি কর। (শিক্ষক + কে = শিক্ষককে)। এখানে শিক্ষক-এর সাথে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত না হলে বাক্যের অর্থ বোঝা যেত না। এই ‘কে’ হলো বিভক্তি ৷
বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা কী?
বাংলা ভাষায় বিভক্তির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বিভক্তি ব্যতীত কোনো বাক্য রচনা করা যায় না। বিভক্তি কোনো পদের বচন এবং বাক্যস্থিত ক্রিয়াপদের সাথে অন্য পদের সম্বন্ধ নির্ণয়ে সহায়তা করে। বিভক্তি ছাড়া শব্দের রূপান্তর সম্ভব নয়। সুতরাং বিভক্তিই শব্দকে পদে পরিণত করে।
বিভক্তি কত প্রকার ও কী কী?
বিভক্তি প্রধানত দুই প্রকার। যথা-
১. নাম বা শব্দ বিভক্তি ও
২. ক্রিয়া বা ধাতু বিভক্তি।
আরও পড়ুন : কারক: শব্দের অর্থ,সংজ্ঞা,কত প্রকার,চেনার সহজ উপায়,উদাহরণ
১. নাম বা শব্দ বিভক্তি : যে বিভক্তি বিশেষ্য ও সর্বনামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যের অন্যান্য পদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তাকে নাম বা শব্দ বিভক্তি বলে। যেমন : পাখিরা উড়ে, মেয়েদের স্কুল, কলম দিয়ে লিখ প্রভৃতি এসব বাক্যে রা, দের, দিয়ে যুক্ত হয়ে নাম শব্দসমূহের সম্পর্কের সূচনা ঘটিয়েছে। এর একবচন ও বহুবচনের রূপ ভিন্ন ভিন্ন হয়।
শব্দ বিভক্তি সাত প্রকার। যথা-প্রথমা, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী।
নাম বা শব্দ বিভক্তির রূপ
| বিভক্তি | একবচন | বহুবচন |
|---|---|---|
| প্রথমা | ০ (শূন্য), অ | রা, এরা, গুলো, গণ |
| দ্বিতীয়া | কে, রে, এর | দিগে, দিগকে, দিগরে, দের |
| তৃতীয়া | দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক | দিগের দ্বারা / দের দ্বারা / দিগ কর্তৃক / দের দিয়ে) |
| চতুর্থী | কে, রে | দিগে, দিগকে, দিগেরে, দের |
| পঞ্চমী | হতে, থেকে, চেয়ে | দিগ হতে, দিগ থেকে, দিগের চেয়ে |
| ষষ্ঠী | র, এর | দিগের, দের |
| সপ্তমী | এ, য়, তে | দিগে, দিগেতে |
“আমি শব্দের রূপ”
| বিভক্তি | একবচন | বহুবচন |
|---|---|---|
| প্রথমা | আমি | আমরা |
| দ্বিতীয়া | আমাকে, আমা, আমারে | আমাদিগকে, আমাদেরকে, আমাদিগেরে |
| তৃতীয়া | আমার দ্বারা, আমাকে দিয়ে, আমা কর্তৃক | আমাদিগের দ্বারা, আমাদের দিয়ে, আমাদিগ কর্তৃক |
| চতুর্থী | আমাকে, আমারে | আমাদিগকে, আমাদেরকে, আমাদিগেরে |
| পঞ্চমী | আমা হতে, আমা থেকে | আমাদিগ হতে, আমাদের হতে, আমাদিগের থেকে |
| ষষ্ঠী | আমার | আমাদের, আমাদিগের |
| সপ্তমী | আমায়, আমাতে | আমাদিগেতে, আমাদিগে |
২. ক্রিয়া বিভক্তি : ধাতু বা ক্রিয়ার পরে যেসব বিভক্তি যুক্ত হয়, সেগুলোকে ক্রিয়া বা ধাতু বিভক্তি বলে। যেমন-কর + ই = করি, কর + এন = করেন, পড় + তেন = পড়তেন। এখানে ‘কর’ ও ‘পড়’ হলো ধাতু বা ক্রিয়া এবং ‘ই, এন ও তেন’ হলো বিভক্তি। যেহেতু এরা ক্রিয়ার সাথে মিলিত হয়েছে, তাই এরা ক্ৰিয়া বিভক্তি।
আরও পড়ুন : সকল কারকে শূন্য, এ, কে, ষষ্ঠী, সপ্তমী বিভক্তির প্রয়োগ
ক্রিয়া বিভক্তির রূপ দুটি। যথা-
১. সাধু ভাষার রূপ ও
২. চলিত ভাষার রূপ ।

| কাল | উত্তম পুরুষ | মধ্যম পুরুষ | নাম পুরুষ |
|---|---|---|---|
| ১. সাধারণ বর্তমান | করি | করুন, কর, করিস | করেন, করে |
| ২. ঘটনামান বর্তমান | করছি | করছেন, করছ, করছিস | করছেন, করছে |
| ৩. পূরাণঘটিত বর্তমান | করেছি | করেছেন, করেছ, করেছিস | করেছেন, করেছে |
| ৪. বর্তমান অনুজ্ঞা | ✗ | করেন, কর, করো, করিস | করুন, করুক |
| ১. সাধারণ অতীত | করলাম | করলেন, করলে, করলি | করলেন, করলে, করল |
| ২. ঘটনামান অতীত | করছিলাম | করছিলেন, করছিলে, করিছিলিস | করছিলেন, করিছিল |
| ৩. পূরাণঘটিত অতীত | করেছিলাম | করেছিলেন, করেছিলে, করিছিলি | করেছিলেন, করেছিল |
| ৪. নিত্যবৃত্ত | করতাম | করতেন, করতে, করতিস | করতেন, করত |
| ১. সাধারণ ভবিষ্যৎ | করব | করবেন, করবে, করবি | করবেন, করবে |
| ২. ঘটনামান ভবিষ্যৎ | করতে থাকব | করতে থাকবেন, করতে থাকবে, করতে থাকবি | করতে থাকবেন, করতে থাকবে |
| ৩. পূরাণঘটিত ভবিষ্যৎ | করে থাকবে | করে থাকবেন, করে থাকবি | করে থাকবেন, করে থাকবে |
| ৪. ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা | ✗ | করবেন, করো, করিস | করলেন, করবে |