হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

ইমাম বুখারী (র)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী (পয়েন্ট আকারে)

উপস্থাপনা : ইসলামের ইতিহাসে যে ক’জন বিরল ব্যক্তিত্ব মহানবী (স)-এর সুন্নাহ সমুন্নত রাখা ও কেয়ামত পর্যন্ত আগত মানবজাতির নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গেছেন ইমাম বুখারী (র) তাঁদের শীর্ষস্থানীয়।

কারণ তাঁর সংকলিত হাদীসগ্রন্থটি আল কুরআনের পরেই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও বিশুদ্ধ হিসেবে স্বীকৃত। নিম্নে ইমাম বুখারী (র)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো ।

ইমাম বুখারী (র)-এর জীবনী :

১. জন্ম ও পরিচয় : ইমাম বুখারীর নাম মুহাম্মদ। উপনাম আবু আবদুল্লাহ। উপাধি আমীরুল মুমিনীন ফিল হাদীস। পিতার নাম ইসমাঈল। পিতামহের নাম ইবরাহীম। তাঁর বংশ পরম্পরা হলো, মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম ইবনে মুগীরা ইবনে বারদিযবা আল জুফী আল বুখারী। তাঁর পূর্বপুরুষরা ছিলেন পারস্যের অধিবাসী।

প্রপিতামহ মুগীরা খোরাসানের অন্তর্গত বুখারায় এসে বসবাস শুরু করেন। ইমাম বুখারী (র) ১৯৪ হিজরীর ১৩ শাওয়াল জুমার নামাযের পর ইসলামী সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র বুখারায় (বর্তমানে উজবেকিস্তানের অন্তর্গত) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা চতুর্থ স্তরের হাদীসবেত্তা ছিলেন।

আরো জানো : বুখারী শরীফের বৈশিষ্ট্য, প্রেক্ষাপট ও তার অবদান বিস্তারিত

২. বাল্যজীবন ও প্রাথমিক শিক্ষা : ইমাম বুখারী (র) শৈশবে পিতৃহারা হয়ে মায়ের কাছেই প্রতিপালিত হন। সেখানেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তি বলে তিনি ৬ বছর বয়সে কুরআন হিফয করেন এবং বহু সংখ্যক হাদীস মুখস্থ করেন।

৩. তাঁর স্মৃতিশক্তি : তাঁর স্মৃতিশক্তির একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, একবার ইমাম বুখারী (র) যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস আদ দাখেলীর দারসের সময় একটি হাদীসের সনদে- (সুফিয়ান আবু যোবায়ের হতে, আবু যোবায়ের ইবরাহীম হতে) বললে বুখারী প্রতিবাদ করে বললেন, আবু যোবায়ের ইবরাহীম থেকে বর্ণনা করেননি। আদ দাখেলী প্রথমে ধমক দিলেও পরে মূল পাণ্ডুলিপির সাথে মিলিয়ে দেখেন যে, বুখারীর বর্ণনাই সঠিক। এটা তাঁর প্রখর স্মৃতিশক্তির প্রামাণ্য ঘটনা ।

৪. উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ ভ্রমণ : ইবনে আবী হাতেম (র) বর্ণনা করেছেন, ২১০ হিজরীতে ১৬ বছর বয়সে ইমাম বুখারী (র) তাঁর মা ও বড় ভাই আহমদকে সাথে নিয়ে হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা গমন করেন। সেখানে বিশিষ্ট মুহাদ্দিসগণের নিকট হাদীস শিক্ষা করেন। যেমন- আবুল ওয়ালিদ, আবু বকর, আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের।

২১২ হিজরীতে মদিনায় গিয়ে তিনি ইবরাহীম ইবনে মুনযির, হামযা (র) প্রমুখের নিকট হাদীসের শিক্ষা গ্রহণ করেন। হাদীসশাস্ত্রে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি মিসর, খোরাসান, ইরাক, হেজায, বাগদাদ, বসরা, কুফা, সিরিয়া, বলখ, হিরাত, মার্ভ, রাই, জাযিরা প্রভৃতি স্থানের মুহাদ্দিসগণের নিকট গমন করেন।

বিশেষত বাগদাদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের নিকট হাদীস শিক্ষা করেন। এভাবে তিনি প্রায় এক হাজার উস্তাদ থেকে হাদীস শ্রবণ ও শিক্ষা সমাপ্ত করে জন্মভূমিতে ফিরলে দেশবাসী তাঁকে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে বরণ করে।

আরো জানো : ইমাম মুসলিম রহ এর জীবনী (পয়েন্ট ভিত্তিক)- pdf

৫. হাদীস শিক্ষাদান : ইমাম বুখারী (র)-এর অসাধারণ শিক্ষাদান পদ্ধতি ও হাদীসশাস্ত্রের গভীর পাণ্ডিত্যের কারণে লোকেরা দলে দলে তাঁর কাছে আসতেন। এমনকি রিজালশাস্ত্র এবং তারিখে হাদীসে বিজ্ঞ লোকেরাও তাঁর কাছে আসতেন।

তিনি কোথাও গমন করলে লোকেরা তাঁর পথরোধ করে পর্যন্ত তাঁর নিকট থেকে হাদীসের দীক্ষা নিতেন, এমনকি দেখতে দেখতে তথায় হাজার হাজার লোকের ভিড় জমে যেত। তিনি বিশেষত বসরা, বাগদাদ, বুখারা, তারতুস, বলখ এবং জীবনের শেষ ভাগে বুখারায় শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন। কর্মজীবন তাঁর এভাবেই কাটে ।

৬. গ্রন্থ রচনা : আঠারো বছর বয়স থেকেই তিনি গ্রন্থ রচনায় হাত দেন। তখন সাহাবী ও তাবেয়ীগণের বাণী সংবলিত একটি গ্রন্থ ও একটি ইতিহাসগ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলির মধ্যে রয়েছে— ১. আল জামেউস সহীহ, ২. কিতাবুল মাবসূত, ৩. আল জামেউল কবীর, ৪. কিতাবুল ইলাল, ৫. আত তারীখুল কবীর, ৬. আত তারীখুল আওসাত, ৭. আত তারীখুস সগীর, ৮. আদাবুল মুফরাদ, ৯. বিররুল ওয়ালিদাইন, ১০. কাযাউস সাহাবা ওয়াত তাবেয়ীন ইত্যাদি ।

৭. শিক্ষকমণ্ডলী : পূর্বের ক’জন ছাড়াও তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকমণ্ডলী হলেন- আহমদ ইবনে সাবেত, মুহাম্মদ ইবনে ওবায়দুল্লাহ, আবদুল আযীয ইবনে আবদুল ওয়াইসি, মক্কী ইবনে ইবরাহীম, আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক, আলী ইবনুল মাদানী, ইসহাক ইবনে রাহওয়াই, মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ, আল হুমায়দী, আবদুল্লাহ ইবনে ইউসুফ, আহমদ ইবনে হাম্বল, আবু আসেম, ইয়াহইয়া ইবনে সোলায়মান (র) প্রমুখ ৷

আরো জানো : সহীহ মুসলিম শরীফের বৈশিষ্ট্য – পয়েন্ট আকারে

৮. ছাত্রবৃন্দ : বিশিষ্ট ছাত্রদের দ্বারা শিক্ষকের জ্ঞানের গভীরতা অনুমান করা যায়। ইমাম বুখারী (র)-এর ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ নিসাপুরী, আবু আবদুর রহমান নাসায়ী, আবু ঈসা মুহাম্মদ ইবনে ঈসা আত তিরমিযী, মুহাম্মদ ইবনে নাসর যারওয়ারী, ইমাম দারেমী, ইমাম ইবনে খুযায়মা (র) প্রমুখ ।

৯. হাদীস সংকলনে ইমাম বুখারীর অবদান : হাদীসশাস্ত্রে ইমাম বুখারী (র)-এর অবদান অনস্বীকার্য। ইমাম বুখারী (র)-এর অমর সৃষ্টি আস সহীহ লিল বুখারী হাদীসগ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বাধিক আলোচিত এবং সর্বজন সমাদৃত। আল্লাহর কিতাবের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধতম গ্রন্থ এটি।

ইমাম বুখারী (র) স্বীয় উস্তাদ ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (র)-এর অনুপ্রেরণায় এবং স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়ে সুদীর্ঘ ষোলো বছরে এ গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। তিনি হাদীস সংগ্রহের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে বহুদেশ ভ্রমণ করেন। তাঁর ছয় লক্ষ হাদীস মুখস্থ ছিল। তন্মধ্যে তিন লক্ষ হাদীস সনদসহ ইমাম বুখারী (র)-এর কণ্ঠস্থ ছিল।

এ বিপুলায়তন হাদীস থেকে যাচাইবাছাই করে অত্যন্ত কঠোর নীতিমালার ভিত্তিতে তিনি আল জামেউস সহীহ সংকলন করেন। প্রতিটি হাদীস লিপিবদ্ধ করার আগে তিনি অযু ও গোসল করে দু’রাকাত নফল নামায আদায় করতঃ ইস্তেখারা করে হাদীসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তা লিখতেন।

এভাবে ফিকহশাস্ত্রের বিন্যাস পদ্ধতিতে তাঁর গ্রন্থখানিতে ৭২৭৫টি হাদীস সন্নিবেশিত করেন। পুনরুল্লিখিত হাদীস বাদ দিলে এ সংখ্যা হবে প্রায় চার হাজার। এ হিসাব আল্লামা বদরুদ্দীন আইনীর; কিন্তু আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (র)-এর মতে, একাধিকবার উদ্ধৃত হাদীসসহ সর্বমোট হাদীস ৯০৮২টি।

তন্মধ্যে মুয়াল্লাক, মুতাবিয়াত ও মাওকৃষ্ণাত বাদ দিলে মৌলিক হাদীসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৩৯৭টিতে। এছাড়াও তিনি হাদীসশাস্ত্রে বেশ কয়েকটি পুস্তক রচনা করে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন।

১০. ওফাত : ইমাম বুখারী (র) সমকালীন প্রশাসনের সংস্রব এড়িয়ে চলতেন। তাই আমীর ওমরাগণ তাঁকে শত চেষ্টা করেও প্রশাসনের সাথে জড়িত করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তাঁকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে। সমরকন্দবাসীরা তাঁকে তথায় নিতে চাইলে তিনি সাওয়ারীতে উঠে দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে যান এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

অতঃপর ২৫৬ হিজরীর পহেলা শাওয়াল ঈদুল ফিতরের ভোর রাতে ৬২ বছর বয়সে তিনি ইন্তে কাল করেন। এ মহান ইমামের মাযার থেকে সর্বদা মিশকের ঘ্রাণ নির্গত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়। বস্তুত পৃথিবীতে এসব ব্যক্তিত্বের আগমন বিরল ।

শিক্ষাগার

প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে

মাহমুদুল হাসান

শিক্ষাগত যোগ্যতা
গণিতে অনার্স ও মাস্টার্স

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ফাজিল সম্পন্ন

গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা

বিশেষ দক্ষতা

বাংলা সাহিত্য • গণিত • ইসলামিক শিক্ষা

অভিজ্ঞতা

শিক্ষকতা ও ৫+ বছর কন্টেন্ট রাইটিং

আমাদের লক্ষ্য

শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা। ২০২৩ সাল থেকে লাখো শিক্ষার্থী শিক্ষাগার থেকে উপকৃত হচ্ছে।

Leave a Comment