হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

ইসলামী অর্থনীতির সংজ্ঞা,বৈশিষ্ট্য,মূলনীতি,লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

মানবজীবনের এমন কোনো দিক নেই, যার আলোচনা ইসলামে নেই। সাম্য ও মুক্তির ধর্ম ইসলাম। মানব জাতির সার্বিক কল্যাণ সাধনই ইসলামের লক্ষ্য। আর তাই ইসলাম উপস্থাপন করেছে বিশ্ব মানবের স্থায়ী শান্তি ও কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামী অর্থনীতি বিশ্বমানবকে প্রকৃত মনুষ্যতের উন্নত মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে পারে।

ইসলামী অর্থনীতির সংজ্ঞা :

মানবজাতির কল্যাণের জন্য সম্পদের সর্বাধিক উৎপাদন, সুষ্ঠু বণ্টন ও ন্যায়সঙ্গত ভোগ ব্যবহারকে ইসলামী অর্থনীতি বলা হয় ।

ইসলামী অর্থনীতির বিষয়বস্তু :

সাধারণ অর্থনীতির ন্যায় ইসলামী অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়ও অর্থোপার্জন ও অর্থব্যয়। তবে হালাল উপার্জনের ওপর ইসলাম সর্বাধিক জোর প্রদান করে ঘোষণা করেছে, “হে মানুষ! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র আছে তা থেকে খাও।” সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, আয়-ব্যয় প্রক্রিয়ায় ইসলাম এক ব্যতিক্রমধর্মী নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।দানের বিষয়টি সাধারণ অর্থনীতিতে উপেক্ষিত। কিন্তু এ বিষয়টি ইসলামী অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

আরও পড়ুন : ইসলাম অর্থ কি ?কাকে বলে। ইসলামের মৌলিক বিষয় কয়টি ও কি কি

এ মর্মে আল কুরআনে বলা হয়েছে, “আমি যা প্রদান করেছি তা থেকে ব্যয় কর প্রকাশ্যে বা গোপনে এবং ব্যর্থ হবে না এমন ব্যবসায়ের আশা রাখ।” ইসলামী অর্থনীতির বিষয়বস্তু হচ্ছে, সীমিত সম্পদের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ ইসলামের ধর্মীয় ও নৈতিক অনুশাসনের অবকাঠামোর অধীনে । শুধুমাত্র মানবকল্যাণের বস্তুগত কারণসমূহই আলোচনা করা হয়না ইসলামী অর্থনীতিতে ; বরং ইসলামের বিধিনিষেধসমূহও আলোচনা করে ভোগ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে ।

ইসলামী অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য :

ইসলামী অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে উপস্থাপন করা হলো-

১. ইসলামী অর্থনীতি ইসলামী আকিদার ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (স)-এর সন্তুষ্টি অর্জনই এ অর্থনীতির একমাত্র লক্ষ্য ।

২. নৈতিক মানসম্মত এক সাবলীল কার্যপ্রণালী ।

৩. দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের কল্যাণ সাধনকারী।

৪. আদর্শ সমাজজীবনের পথনির্দেশদাতা ।

৫. এ অর্থনীতি হালাল পদ্ধতিতে উপার্জন ও ব্যয় করার প্রশিক্ষণ দেয়।

৬. সুদ চিরতরে নিষিদ্ধ করে ব্যবসায় বৈধ করেছে।

৭. যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু করেছে।

৮. ইসলামী অর্থব্যবস্থায় সম্পদের প্রকৃত মালিক হলেন আল্লাহ তায়ালা ।

৯. ইসলামী অর্থব্যবস্থায় বায়তুল মাল গঠন অপরিহার্য ।

১০. ইসলামী অর্থব্যবস্থায় উত্তরাধিকার আইন বিদ্যমান ।

আরও পড়ুন : ইসলামের আলোকে – জিহাদ ও সন্ত্রাসের মধ্যে পার্থক্য

ইসলামী অর্থনীতির মূলনীতি :

ইসলামী অর্থনীতিতে সাতটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ও কালজয়ী মূলনীতি রয়েছে, যে গুলোর আলোকে ইসলামী অর্থনীতি পরিচালনা হয় ।

১. সকল ক্ষেত্রে ‘আমর বিল মা’রুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার’-এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাযকিয়া ও তাকওয়া অর্জন।

২. সকল কর্মকাণ্ডেই শরিয়ার বিধান মান্য করা।

৩. আদল ও ইহসানের প্রয়োগ ।

৪. ব্যক্তির সম্পদে সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠা ।

৫. ভারসাম্যমূলক জীবন-যাপনের প্রয়াস ।

৬. মৌলিক মানবিক প্রয়োজন পূরণ ও নিশ্চিত করা।

৭. যুগপদ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ অর্জন ।

ইসলামী অর্থনীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য :

সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য। তাই এ ব্যবস্থায় উৎপাদন, উপার্জন, আয়-ব্যয়, বিলি-বণ্টন ও ভোগ-ব্যবহারের সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতি রয়েছে। এতে আয় উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেমন কোনো অন্যায় ও বিধি-বহির্ভূত পন্থা অবলম্বন করা যায় না, তেমনি তার ভোগ-ব্যবহার ও ব্যয়-বণ্টনের ক্ষেত্রেও সকল স্বেচ্ছাচারিতা ও ভোগ-বিলাসের মাধ্যমে সম্পদ বিনষ্ট না করে প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ মানবকল্যাণে ব্যয় করার ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং ইসলামী অর্থব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় পরিবেশ বিরাজ করবে।

আরও পড়ুন : দুর্নীতির বৈশিষ্ট্য, সংজ্ঞা ও প্রতিকারের উপায় সমূহ

ইসলামী অর্থব্যবস্থার অবদান :

ক. যাকাত, সদকা ইত্যাদির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ও সামগ্রিক উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করার বিধান ইসলামে রয়েছে । এতে দরিদ্রতার অবসান ঘটে।

খ. ইসলামী অর্থনীতি চালু হলে সম্পদ কতিপয় লোকের হাতে পুঞ্জীভূত থাকবে না; বরং ধনী ও দরিদ্রের মাঝে অর্থনৈতিক সাম্য বজায় থাকবে।

গ. যাকাতের অর্থের মাধ্যমে বিভিন্ন কলকারখানা স্থাপন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি।

ঘ. ইসলামী অর্থব্যবস্থা অর্থের প্রতি উদগ্র মোহ ও লালসা দূরীভূত করে অর্থকে জীবনের মূল লক্ষ্য হিসেবে নয়; বরং জীবনধারণের একটি উপায় হিসেবে নির্ধারণ করে ।

ঙ. ইসলামী অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যাবতীয় অনাচার ও অবিচার দূর হয়ে সুষ্ঠু ও কল্যাণকর সমাজ গড়ে উঠবে।

Leave a Comment

error: Content is protected !!