হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

মনেরা থেকে অ্যানিমেলিয়া:পাঁচ রাজ্যের বৈশিষ্ট্য,পার্থক্য ও উদাহরণ

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, এখানে মনেরা, প্রোটিস্টা, ফানজাই, প্লান্টি ও অ্যানিমেলিয়া সহ — এই পাঁচ রাজ্যের বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য ও উদাহরণ সহজ ভাষায় নিম্নে আলোকপাত করা করা হলো। আশা করি পোস্টটি তোমাদের অনেক উপকারে আসবে আসবে।

মনেরা রাজ্যের বৈশিষ্ট্য :

  • এরা এককোষী, ফিলামেন্টাস, কলোনিয়াল বা মাইসেলিয়াল ।
  • কোষে ক্রোমোটিন বস্তু থাকে কিন্তু নিউক্লিওলাস ও নিউক্লিয়ার পর্দা থাকে না ।
  • এদের কোষ বিভাজন দ্বি-বিভাজন প্রক্রিয়ায় হয়।
  • এ রাজ্যের প্রাণীরা শোষণ পদ্ধতিতে খাদ্য গ্রহণ করে।
  • এদের কোষে প্লাস্টিড, মাইটোকন্ড্রিয়া, এন্ডোপ্লাজমিক জালিকা নেই ।

মনেরা রাজ্যের উদাহরণ : নীলাভ সবুজ শৈবাল, ব্যাকটেরিয়া।

আরও পড়ুন : প্রোক্যারিওটা ও ইউক্যারিওটা: সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, পার্থক্য

প্রোটিস্টা রাজ্যের বৈশিষ্ট্য :

  • এরা এককোষী বা বহুকোষী। যারা এককোষী তারা এককভাবে বাস করে বা কলোনিবাসী।
  • নিউক্লিয়ার পর্দা ও নিউক্লিওলাসযুক্ত প্রকৃত নিউক্লিয়াস বিদ্যমান ।
  • সালোকসংশ্লেষণসহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি পদ্ধতি বিরাজমান ।
  • এদের ভ্রূণ সৃষ্টি হয় না ।
  • কনজুগেশনের মাধ্যমে যৌন প্রজনন এবং মাইটোসিসের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন ঘটে।
  • এদের অধিকাংশই জলজ ।

প্রোটিস্টা রাজ্যের উদাহরণ : প্রোটোজোয়া (অ্যামিবা, প্যারামেসিয়াম) ও এককোষী শৈবাল। যেমন – ডায়াটম।

ফানজাই রাজ্যের বৈশিষ্ট্য :

  • অধিকাংশই স্থলজ, মৃতজীবী বা পরজীবী ।
  • দেহ এককোষী অথবা মাইসেলিয়াম দিয়ে গঠিত ।
  • এদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত বা ইউক্যারিওটা ধরনের।
  • কোষপ্রাচীর কাইটিন বস্তু দিয়ে গঠিত।
  • খাদ্য গ্রহণ শোষণ পদ্ধতিতে ঘটে।
  • ক্লোরোপ্লাস্ট অনুপস্থিত।
  • হ্যাপ্লয়েড স্পোর দিয়ে বংশবৃদ্ধি ঘটে।
  • মিয়োসিসের মাধ্যমে কোষ বিভাজন ঘটে।

ফানজাই রাজ্যের উদাহরণ : ইস্ট, Penicillium, মাশরুম ইত্যাদি।

প্লান্টি রাজ্যের বৈশিষ্ট্য :

  • এরা প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত সালোকসংশ্লেষণকারী উদ্ভিদ ।
  • এদের উন্নত টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান ।
  • এদের ভ্রূণ তৈরী হয় এবং তা হতে শুরু হয় ডিপ্লয়েড পর্যায় ।
  • প্রধানত স্থলজ তবে অসংখ্য জলজ প্রজাতি আছে।
  • এদের যৌন জনন অ্যানাইসোগ্যামাস ধরনের।
  • এরা আর্কিগোনিয়েট ও পুষ্পক উদ্ভিদ।

প্লান্টি রাজ্যের উদাহরণ : উন্নত সবুজ উদ্ভিদ, বহুকোষী শৈবাল।

আরও পড়ুন : স্পাইরোগাইরা কি? এর অবস্থান, গঠন, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব বর্ণনা

অ্যানিমেলিয়া রাজ্যের বৈশিষ্ট্য :

  • এরা নিউক্লিয়াসবিশিষ্ট ও বহুকোষী প্রাণী ।
  • এদের কোষে কোনো জড় কোষপ্রাচীর, প্লাস্টিড ও কোষগহ্বর নেই।
  • প্লাস্টিড না থাকার কারণে এরা হেটারোট্রফিক অর্থাৎ পরভোজী এবং গলাধঃকরণ ক
  • দেহে জটিল টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান।
  • এরা প্রধানত যৌন জননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।
  • পরিণত ডিপ্লয়েড পুরুষ ও স্ত্রী প্রাণীর জননাঙ্গ হতে তৈরী হয় হ্যাপ্লয়েড গ্যামেট ।
  • ভ্রূণের বিকাশকালীন সময়ে ভ্রূণীয় স্তর সৃষ্টি হয়।

অ্যানিমেলিয়া রাজ্যের উদাহরণ : সকল অমেরুদন্ডী (প্রোটোজোয়া ছাড়া) এবং মেরুদন্ডী প্রাণী।

ফানজাই ও প্লান্টি রাজ্যের পার্থক্য :

ফানজাই প্লানটি
১. অধিকাংশ জীব স্থলজ, মৃতজীবী বা পরজীবী । ১. প্রধানত স্থলজ, তবে অসংখ্য জলজ প্রজাতি আছে।
২. দেহ এককোষী অথবা মাইসেলিয়াম দিয়ে গঠিত। ২. দেহ বহুকোষী ।
৩. দেহে ক্লোরোফিল না থাকায় নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না । ৩. দেহে ক্লোরোফিল থাকায় নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে।
৪. এদের দেহের কোষপ্রাচীর কাইটিন দ্বারা গঠিত। ৪. এদের দেহের কোষপ্রাচীর সেলুলোজ দ্বারা গঠিত ।
৫. এদের দেহে কোনো টিস্যুতন্ত্র থাকে না। ৫. এদের দেহে উন্নত টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান ।
৬. হ্যাপ্লয়েড স্পোরের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে । ৬. দুটি ভিন্নধর্মী গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে যৌন জনন সম্পন্ন করে।
৭. ভ্রূণ সৃষ্টি হয় না এদের কোন । ৭. ভ্রূণ সৃষ্টি হয় এদের এবং তা হতে শুরু হয় ডিপ্লয়েড পর্যায়।

আরও পড়ুন : nostoc এর বৈশিষ্ট্য, কোন রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত, নাইট্রোজেন সংবন্ধনে ভূমিকা

মনেরা ও প্রোটিস্টা রাজ্যের পার্থক্য :

মনেরা প্রোটিস্টা
১. এরা এককোষী । ১. এরা এককোষী বা বহুকোষী।
২. এরা ফিলামেন্টাস কলোনিয়াল বা মাইসেলিয়াল । ২. এরা একক বা কলোনিয়াল বা ফিলামেন্টাস।
৩। এরা সুগঠিত নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট । ৩. এদের নিউক্লিয়াস সুগঠিত নয় ।
৪. মনেরা রাজ্যের জীবগুলো প্রোক্যারিওটার অন্তর্ভুক্ত। ৪. প্রোটিস্টা রাজ্যের জীবগুলো ইউক্যারিওটার অন্তর্ভুক্ত।
৫. এদের কোষ বিভাজন দ্বি-বিভাজন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। ৫. এদের মাইটোসিসের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন এবং কনজুগেশন প্রক্রিয়ায় যৌন প্রজনন সম্পন্ন হয়।

প্রোটিস্টা ও প্লানটি রাজ্যের পার্থক্য :

প্রোটিস্টা প্লানটি
১। প্রোটিস্টা রাজ্যের জীব এককোষী বা বহুকোষী হয়ে থাকে । ১। প্লান্টি রাজ্যের জীবদেহ এককোষী না হয়ে বহুকোষী হয় যা বৈশিষ্ট্যগতভাবে অনেক উন্নত।
২। প্রোটিস্টা রাজ্যের জীবে কোনো জটিল টিস্যুতন্ত্র নেই। ২। প্লান্টি রাজ্যের জীবে জটিল টিস্যুতন্ত্র বিদ্যমান ।
৩। প্রোটিস্টা রাজ্যের জীবে যৌন জনন হলেও ভ্রূণ গঠিত হয় না । ৩। প্লান্টি রাজ্যের জীবে যৌন জননের ফলে ভ্রূণ গঠিত হয়।
প্রোটিস্টা রাজ্যের জীবে গঠনগতভাবে এক, এইরূপ দুটি গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে যৌন প্রজনন ঘটে । ৪। প্লান্টি রাজ্যের জীবের যৌন জনন অ্যানাইসোগ্যামাস অর্থাৎ আকার, আকৃতি অথবা শরীরবৃত্তীয় পার্থক্য বিশিষ্ট ভিন্নধর্মী দুটি গ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

আরও পড়ুন : ইউলোথ্রিক্স (Ulothrix) কি ? এর গঠন এবং কিভাবে জনন ঘটে

মনেরা ও ফানজাই রাজ্যের পার্থক্য

মনেরা ফানজাই
১. এসব জীবে সুগঠিত নিউক্লিয়াস যুক্ত কোষ থাকে না। ১. এসব জীবে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে।
২. এককোষী অণুবীক্ষণিক জীব । ২. এককোষী বা বহুকোষী হতে পারে।
৩. এদের খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া মূলত শোষণ । ৩. এদের খাদ্য গ্রহণ শোষণ ও গ্রহণ পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়।
৪. কোষ বিভাজন দ্বি-বিভাজন প্রক্রিয়ায় ঘটে। ৪. কোষ বিভাজন মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ঘটে।
৫. অপেক্ষাকৃত অনুন্নত জীব । ৫. অপেক্ষাকৃত উন্নত জীব ।
৬. নীলাভ সবুজ শৈবাল (Nostoc), ব্যাকটেরিয়া এ কিংডমের সদস্য। ৬. অ্যামিবা, মাশরুম, ঈস্ট, Penicillium উন্নত সবুজ উদ্ভিদ এ কিংডমের সদস্য।

প্লান্টি রাজ্যের শ্রেণিবিন্যাস :

এটি প্রধানত দুইভাগে বিভক্ত। যথা- ব্রায়োফাইটা ও ট্রাকিওফাইটা ।

ব্রায়োফাইটা: ব্রায়োফাইটা বিভাগের উদ্ভিদের দেহে পানি সংবহনতন্ত্র থাকে না। যেমন: মসবর্গীয় উদ্ভিদ।

ট্রাকিওফাইটা: ট্রাকিওফাইটা বিভাগের উদ্ভিদের দেহে পানি সংবহনতন্ত্র থাকে। এদের আবার ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—১. ফার্নবর্গীয় উদ্ভিদ, ২. নগ্নবীজী উদ্ভিদ ও ৩. আবৃতবীজী উদ্ভিদ

Leave a Comment