হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

শরতের সকাল – বাংলা প্রবন্ধ রচনা

উপস্থাপনা :

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতিটি ঋতুরই ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। শরৎকালে বাংলাদেশের প্রকৃতি এক চমৎকার রূপ ধারণ করে। এই জন্য এ ঋতুটি বাংলাদেশিদের খুব প্রিয় ঋতু হিসেবে আসন করে নিয়েছে। অন্যদের মতো আমার কাছেও এ ঋতুটি খুব প্রিয়। কবি সুফিয়া কামাল শরতের সৌন্দর্য উপভোগ করে বলেছেন-

“আজি এ শরতের সকালে
নয়ন শোভিত দৃশ্যের উল্লাসে,
হৃদয়ের শাণিত বল,
শিঞ্জিত হবে হরষে ভরষে।”

শরতের আগমন : কবির ভাষায়-

শরৎ রানির বীণা বাজে
কমল দলে।
ললিত রাগের সুর করে তাই
শিউলি তলে ।

শাপলা, শালুক, পদ্ম, জুই, কেয়া, আর কাশফুলের সৌরভে শরৎ রানি তার বীণার তারে সুর বাজিয়ে আগমন করে। সেই সুরে মুখরিত হয় বাংলার আকাশ বাতাস। তাইতো নতুন রূপের নতুন আকাশে চারদিকে শ্যামলিমায় সজ্জিত হয়ে আসে ভাদ্র-আশ্বিন মাস । এ দু’মাসই শরৎকাল। বর্ষার গ্লানি মুছে দিতে প্রকৃতি নতুন সাজে সজ্জিত হয় এ ঋতুতে।

আরও পড়ুন : শীতের সকাল – রচনা [ Class – 6, 7, 8, 9 ,10 ] – PDF

শরতের সকাল :

শরতের সকালে শিশিরভেজা শিউলি ফুল অনুপম সৌন্দর্য নিয়ে ঘাসের বুকে হাসে। আকাশে-বাতাসে আর দূর্বাঘাসে শরত্রানি তার স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়ে দেয় । নদীর তীরে কাশবনে চকাচকীর মেলা বসে। কবি ও শিল্পীর মতো সাধারণ মানুষও শরতের সকালের স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ হয়ে ওঠে।

শরতের সকালের আকাশ :

শরতের সকালে মেঘমুক্ত নির্মল, বিস্তীর্ণ আকাশকে দূরে মাঠের উপর দিয়ে যেন বিশাল সামিয়ানার মতোই মনে হয়। আকাশের শরতের মেঘ যেন এক ঝাঁক উড়ন্ত শুভ্র বলাকা। সূর্যের আগমনে রূপ যেন ছবির মতো মনে হয় ।

শরতের সকালে সবুজ মাঠ :

শরতের সকালে অবারিত সবুজ মাঠের রূপ সবাইকে আকর্ষণ করে। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ ফসলের মাঠ। দেখে মনে হয় কোনো শিল্পী তার নিপুণ হাতে তুলির আচড়ে ছবি এঁকেছেন। সত্যিই শরতের প্রকৃতি সবাইকে মুগ্ধ করে তোলে ৷

আরও পড়ুন : শীতের সকাল – রচনা : (২০ পয়েন্ট)

শরতের সকালে ফুল ও পাখি :

বাগানে রাশি রাশি ফুল ফোটে শরতের সকালে। শালিক, দোয়েল, কোয়েল ও ময়না টিয়ের সুরের ঝঙ্কারে বাগান মুখরিত হয়ে ওঠে। নদীর তীরে সাদা কাশফুলে গড়ে ওঠে মনোরম দৃশ্য। ফুলের উপর শিশির বিন্দু পড়ে ফুলের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। কবির ভাষায়-

“শরতের ধরাতল শিশিরে ঝলমল”

শরতের আগমনে মানব-মন :

শরতের সকালে প্রকৃতির সৌন্দর্য সুধা পান করে মানুষ বিস্ময়াভূত হয়ে পড়ে। মানব-মনে পুলকের শিহরণ জাগে। কবি ও শিল্পীর মতো সাধারণ মানুষও আনমনে গেয়ে ওঠে-

আজিকে তোমার মধুর মুরতি
হেরিনু শারদ প্রভাতে,
হে মাতঃ! বঙ্গ শ্যামল অঙ্গ
ঝলিছে অমল শোভাতে।

শরতে কৃষকের আনন্দ :

কৃষকদের মাঝেও আনন্দ এনে দেয় শরতকাল। বর্ষা চলে গেলে মাঠ থেকে পানি সরে যায়। কৃষক আবার জমি চাষ করতে মাঠে যায়। হৈমন্তী ধানের বীজ বোনে, চারা রোপন করে। বুকে বাঁধে সম্ভাবনার স্বপ্ন। সবুজ ফসলের আনন্দে কৃষকেরও মন ভরে ওঠে।

শরতের সকালের বৈশিষ্ট্য :

শরতের সকালে পূর্ব দিগন্তে সূর্য উদিত হয়ে মাঠ ও বিলের অসংখ্য ধানের জমিতে আলোক রশ্মি ছড়িয়ে দেয়। দূর্বাঘাসের উপর সঞ্চিত শিশির বিন্দুকে রুপালি মুক্তার বিন্দুর মতো মনে হয়। এ সময় সর্বত্র শুভ্র ও নাতিশীতোষ্ণ অবস্থা বিরাজ করে। বর্ষার নিবিড় ঘনঘটা অপসারিত হয়ে আকাশ নির্মল হয়ে ওঠে। নদী বক্ষে, শস্য শীর্ষে, বৃক্ষ চূড়ায় যখন সকালের তরুণ সূর্যের আলো এসে পড়ে তখন চারদিক একটা অপূর্ব সোনালি লাবণ্যে চিকচিক করতে থাকে । কবির ভাষায়-

পারে না বহিতে নদী জলভার
মাঠে মাঠে ধান ধরে নাক আর
ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল
তোমার কানন প্রভাতে ।

উপসংহার :

শরতের সকাল শীতকালের আগমনী ঘোষণা করে। বসন্ত প্রচণ্ড গ্রীষ্মের সংকেত দেয়। শরৎ আশা আর বসন্ত দীর্ঘশ্বাস আনয়ন করে। ঋতুরাজ বসন্ত শরতের সকালের কাছে হার মানে। শরতের সকাল এরূপে মনে আনন্দের ফোয়ারা প্রবাহিত করে এবং আশার উৎস যোগায়।
কবি M. K. Rawlings বলেন- “The wonders of an Autumn morning, I get light for turning the motto of life. All the long; to pride. “

Leave a Comment

error: Content is protected !!